ডিজিএফআই পরিচয়ে স্থানীয় সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম মালু মিয়ার ছেলে রিফাত মিয়াকে (১৯) অপহরণ করার ১৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার করেছে যৌথবাহিনী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার লাউর ফতেহপুর গ্রামে এ অপহরণের ঘটনা ঘটে। এসময় অপহরণের সঙ্গে জড়িত একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এহতেশামুল হক কালের কণ্ঠেকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন
২ বছরে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা বেড়েছে ৩৭ শতাংশ
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকেল ৫ টার দিকে জেলার কসবা থেকে রিফাতকে উদ্ধারসহ এক অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গভীর রাতে রিফাতকে কসবা থেকে নবীনগরে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছিল বলে জানা গেছে।
উদ্ধার হওয়া রিফাতের বাবা ব্যবসায়ী মালু মিয়ার অভিযোগ, খোদ পুলিশের উপস্থিতিতেই আগের দিন সোমবার (৭ এপ্রিল) রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে সন্ত্রাসীরা নিজেদেরকে ডিজিএফআই পরিচয় দিয়ে তার ছেলে রিফাতকে নির্বিঘ্নে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের চার ঘণ্টা পর রাত ৩ টার দিকে মুঠোফোনে ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে নগদ ৩ কোটি টাকা দাবি করা হয় বলেও রিফাতের বাবা সৌদী প্রবাসি শহীদুল ইসলাম মালু কালের কণ্ঠের কাছে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি (মালু) পরদিন মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) নবীনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগও (এজাহার) দাখিল করেছেন।
তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সোমবার রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে ১৭/১৮ জনের একটি সংঘবদ্ধ সশস্ত্র দল আমার লাউর ফতেপুরের বাড়িতে হানা দেয়। এসময় তারা আমার দ্বিতল ভবনের তিনটি গেইট ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে। এসময় আমি দুর্বৃত্তদের আগমণ টের পেয়ে ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে সামান্য দূরে লুকিয়ে থাকি।
অন্ধকারে লুকিয়ে থেকেও আমি প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে আমার বাড়িতে যে তাণ্ডব চালায় সন্ত্রাসীরা, তা প্রত্যক্ষ করি।'
শহীদুল ইসলাম মালু বলেন, 'সংঘবদ্ধ ওই সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তখন নিজেদেরকে 'ডিজিএফআই' পরিচয় দিয়ে বাড়িতে আমাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। এসময় তারা আমার ভবনের ভেতর তছনছ করে স্ত্রীর কাছ থেকে আলমারীর চাবি নিয়ে ঘরে থাকা ২৭ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ ২ লাখ টাকা ও আমার ছোট ছেলে রিফাতকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়।
তবে এই ফাঁকে আমি জমিতে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় নবীনগর থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক স্যারকে ফোন দিয়ে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চাই। ওসি স্যার তখন আমাকে বলেন, তিনি ছুটিতে আছেন।
তবে তিনি পুলিশ পাঠাচ্ছেন।
এর আধ ঘণ্টার মধ্যেই থানা থেকে দুই দারোগা আবদুল মন্নাফ ও রাম কানাই সরকারের নেতৃত্বে ৭/৮ জন পুলিশ আমার বাড়িতে আসেন। কিন্তু দু:খজনক হল, আমি দেখলাম, পুলিশ এসে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের বদলে সেসময় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশ শলা পরামর্শ করল।
আরো পড়ুন
আজ ৯ এপ্রিল, দিনটি কেমন যাবে আপনার?
এ সময় দারোগা মন্নাফ সাহেবকে কমপক্ষে ২০ বার ফোন করি। কিন্তু তিনি আমার ফোন না ধরে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলাপ চারিতা করেই যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে এতগুলো পুলিশের উপস্থিতিতেই নগদ ২ লাখ টাকা, ২৭ ভরি স্বর্ণ ও আমার ছেলেকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা নির্বিঘ্নে আমার বাড়ি থেকে চলে যায়। এদের সঙ্গে পুলিশও আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।'
ব্যবসায়ী মালু আরো বলেন, 'এ ঘটনার ঠিক চার ঘণ্টা পর অপহরণকারীরা ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে আমার কাছে ফোন করে নগদ ৩ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। পরদিন মঙ্গলবার আমি নবীনগর থানায় গিয়ে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লিখিত ভাবে একটি অভিযোগ (এজাহার) দাখিল করি। ওই এজাহারে সন্ত্রাসীদের যে তিনজনকে আমি চিনেছি, তাদের (তিনজন) নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১৫ জনকে আসামি করি।
ওই তিন আসামি হলেন আমার লাউর ফতেপুর গ্রামের কামাল মিয়া ও কামাল খন্দকার এবং বাড়িখলা গ্রামের আবু কালাম আজাদ।'
তিনি দু:খ করে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পুলিশ আমার বাড়িতে আসার পরপরই যদি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বৈঠক না করে এদেরকে গ্রেপ্তার করত। তাহলে আমার ২৭ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ২ লাখ টাকা রাতেই ফেরত পেতাম। কিন্তু কেন পুলিশ উপস্থিত থেকেও আমার ছেলেকে অপহরণ করার সুযোগ করে দিল, আমি সেটিই বুঝতে পারলাম না। তবে ঘটনার ১৮ ঘণ্টা পর যৌথ বাহিনী যেভাবে অভিযান চালিয়ে আমার ছেলেকে উদ্ধারসহ ১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, সেজন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।'
এ বিষয়ে কথা বলতে নবীনগর থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক ও দারোগা আবদুল মন্নাফের মুঠোফোনে বারবার কল দেওয়া হলেও, তাঁরা কল রিসিভ করেননি।
পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এহতেশামুল হক বলেন, 'অপহরণ হওয়া যুবক রিফাতকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং একজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে, ঘটনার তদন্ত চলছে। আপনারা দ্রুতই সব জানতে পারবেন।'