<p>মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ম না মেনে ইচ্ছামাফিক স্কুলে যান প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা। এমনকি স্কুলে নিজেদের সুবিধামতো গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও করেন তারা। শিক্ষকদের এমন খামখেয়ালিপনায় শিক্ষার্থীরাও স্কুলে আসতে আগ্রহ হারাচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। </p> <p>রবিবার (৬ অক্টোবর) সকাল ৯-১০টা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখতে পান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শাহ জহুরুল হোসেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইফতেখায়ের হোসেন ভূঁঞা।</p> <p>স্থানীয় সূত্র জানায়, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল ৯টায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারীরা ১০টার আগে বিদ্যালয়েই আসেন না। এমন অভিযোগ পাওয়ার পর রবিবার সকাল ৯-১০টা পর্যন্ত কাদিপুর ইউনিয়নে অবস্থিত আমতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর কৌলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন। জয়চণ্ডী  ইউনিয়নে অবস্থিত গৌরীশংকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মীরশংকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আলমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন। এ সময় অভিযোগের সত্যতা পান তারা। উপজেলার আরো ১৪টি প্রাইমারি স্কুল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পান উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইফতেখায়ের হোসেন ভূঁঞা।</p> <p>শিক্ষার্থীরা জানায়, স্যাররা ১০টায় আসেন। এরপর ক্লাস শুরু হয়। এ কারণে তারা সাড়ে ৯টার পর স্কুলে আসে। ওই তিনটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পাওয়া না গেলেও অন্য শিক্ষকরা জানান, অনেক সময় বিভিন্ন কাজ থাকার কারণে এবং বাড়ি দূরে হওয়ায় বিদ্যালয়ে ঠিক সময়ে আসা যায় না।</p> <p>উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শনে যাই। সকাল ৯-১০টা পর্যন্ত এসব বিদ্যালয়ে সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আসেনি।’ </p> <p>তিনি বলেন, ‘সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে গিয়ে মীরশংকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনজন শিক্ষক, ১১ জন শিক্ষার্থী, ৯টা ২৭ মিনিটে গৌরিশংকর বিদ্যালয়ে তিনজন শিক্ষক, শিক্ষার্থী একজনও নেই, ৯টা ৩৯ মিনিটে আলমপুর বিদ্যালয়ে তিনজন শিক্ষক ও চারজন শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায়। এমন দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে, শিক্ষকরা সব সময় সরকারি নিয়ম না মেনে নিজেদের মতো বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করব।’</p> <p>উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমতৈল প্রাইমারি স্কুলে সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে প্রধান শিক্ষকসহ আরেকজন শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন। তখন ক্লাস শুরু হয়নি। হোসেনপুর প্রাইমারি স্কুলে সকাল ১০টায় তিনজন শিক্ষক উপস্থিত থাকলেও কোনো ক্লাস শুরু হয়নি। এমন দৃশ্য দেখে খুবই হতবাক হয়েছি। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এ ছাড়া সময়মতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য উপজেলার সব শিক্ষককে নিয়ে সোমবার শিক্ষক সমাবেশ করা হবে, যাতে করে শিক্ষকদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও গতিশীলতা ফিরে আসে।’</p> <p>এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইফতেখায়ের হোসেন ভূঁঞা বলেন, প্রথম দিনের উপজেলার ২০টি স্কুল পরিদর্শন করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সময়মতো উপস্থিত হয় না এমন অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য সরকারি সময়সূচি নির্ধারণ করা আছে। নির্ধারিত সময়ে যেসব শিক্ষক স্কুলে উপস্থিত হন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।</p>