<p>কক্সবাজারের পেকুয়ায় পরিত্যক্ত পুকুর থেকে এক স্কুলশিক্ষকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে পেকুয়া সদর চৌমুহনী এলাকা থেকে অপহরণের শিকার হন স্কুলশিক্ষক মোহাম্মদ আরিফ (৪৬)। পরিবারের অভিযোগ, অপহরণের পর মুক্তিপণের ৪০ লাখের মধ্যে কিছু টাকা দেওয়া হলেও জীবিত ফেরত পাননি আরিফকে।</p> <p>স্কুলশিক্ষক আরিফ পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মাতবরপাড়া মৃত বজল আহমদের পুত্র। তিনি পেকুয়া সদরের সেন্ট্রাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। </p> <p>স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১১ অক্টোবর) স্থানীয় এক মাছ শিকারি বড়শি দিয়ে দিয়ে পুকুরে মাছ ধরছিলেন। ওই সময় নাকে দুর্গন্ধ পেলে আরিফের পরিবারকে জানায়। পরে বিকেলে ৫টার দিকে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে পুকুর থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় আরিফের লাশ উদ্ধার করেন।</p> <p>অপহৃতের পরিবার জানিয়েছে, অপহরণের পর মুক্তিপণ হিসেবে বিভিন্ন মাধ্যমে তিন দফায় ৪০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল পরিবারের কাছে। তন্মধ্যে কিছু টাকা মুক্তিপণ হিসেবে দেওয়া হলেও জীবিত ফেরত পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত নিজ বাড়ির পাশের পুকুরেই মিলল বস্তাভর্তি মরদেহ।</p> <p>পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে বাড়ি থেকে বের হন আরিফ। পরে রাত ৯টার দিকে তাকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর স্বজনদের কাছে ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে ৪০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। এই ঘটনার দুই দিন পর পেকুয়া থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে অপহরণ মামলা করেন শিক্ষক আরিফের ভাই মোহাম্মদ রিয়াদুল ইসলাম।</p> <p>রিয়াদুল ইসলাম বলেন, ‘বড় ভাই আরিফের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী নাছির উদ্দিনের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে স্থানীয়ভাবে একটি সালিস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি তিনি। অপহরণের পর রাতে ভাইয়ের নম্বর থেকে মাকে ফোন করে অপহরণের বিষয়টি জানানো হয়। রাত ২টার দিকে আবার ভাবিকে ফোন করে তারা। ভাবি ও মাকে চট্টগ্রাম নগরীর ফ্রি-পোর্টে গিয়ে ভাইকে নিয়ে আসার জন্য বলেন তারা। পরদিন (সোমবার) সকালে চট্টগ্রাম ফ্রি-পোর্ট এলাকায় যান ভাবি। তখন ভাইয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। দুপুর আড়াইটার দিকে ভাবির মোবাইল ফোনে কল দিয়ে মুক্তিপণ বাবদ ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরে তারা ভাবিকে চট্টগ্রাম নগরের নতুন ব্রিজ এলাকার পুলিশ বক্সের সামনে যেতে বলেন এবং ঘটনা পুলিশ বা র‌্যাবকে জানাতে নিষেধ করেন।’</p> <p>পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল মোস্তফা বলেন, পরিত্যক্ত পুকুর থেকে বস্তাভর্তি অবস্থায় উদ্ধারকৃত লাশটি নিখোঁজ শিক্ষক আরিফেরই। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে অপহরণের ছদ্মাবরণে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে কি না, তা তদন্তে বের করা হবে এবং প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত করা হবে।  </p> <p>এ বিষয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. রকীব উর-রাজা কালের কণ্ঠকে বলেন, শিক্ষক আরিফকে অপহরণের কয়েক দিনের মাথায় হত্যা করা হয়। পরে লাশটি রশি দিয়ে পেঁচিয়ে সঙ্গে ইট ঢুকিয়ে বস্তাবন্দি করে ওই পুকুরে ফেলা হয়। অনেক দিন হয়ে যাওয়ার কারণে লাশের শরীরে পচন ধরেছে। তাই আরিফকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে এলেই জানা যাবে।</p>