<p>সুইস ব্যাংকে জমানো টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছে ‘অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিশেষ বিনিয়োগ তহবিল জাতীয় সংস্থা’ নামের একটি কথিত এনজিও। সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে এমন প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে একটি চক্র।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্থাটি পূর্ব নাম ছিল ‘অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’। বছর দুয়েক আগে বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের সাতুর নতুন বাজারের পল্লী চিকিৎসক রানা মাহমুদ ও মধ্যনগর বাজারের আরেক পল্লী চিকিৎসক সুজিত রায়ের মাধ্যমে এই কার্যক্রম বিভিন্ন গ্রামে পরিচালিত হয়েছিল। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় সেই কার্যক্রম বন্ধ হয়। </p> <p>সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী কলমাকান্দা উপজেলায় এই প্রতারক চক্রের সদস্য রহিমা আক্তার ও লাভলু মণ্ডল নামের দুজন ব্যক্তি কমবয়সী স্মার্ট স্কুলকলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দিয়ে কয়েকটি চক্র গঠন করে বিভিন্ন গ্রামে আবার নতুন করে এই কার্যক্রম শুরু করেছেন।</p> <p>বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষিত ও স্মার্ট যুবক এবং শিক্ষার্থী দেখে উপজেলাভিত্তিক সংগঠক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষকে বোঝানো হচ্ছে, বাংলাদেশের যেসব কালো টাকা সুইস ব্যাংকে জমা পড়ে আছে, সেগুলো কিছুদিনের মধ্যেই উদ্ধার করা হবে। পরে তা গরিব-অসহায় কর্মমুখী মানুষের মধ্যে বিনা সুদে বিতরণ করবে তারা। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে জনপ্রতি দেওয়া হবে এক লাখ টাকা। আর যারা মোটামুটি স্বাবলম্বী কিংবা ব্যবসায়ী তাদের দেওয়া হবে এক কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ। আর ঋণ পেতে কোনো জামানতের প্রয়োজন হবে না।</p> <p>ঋণ পেতে হলে সার্বিক তথ্যের একটি ফরম পূরণের পাশাপাশি জমা দিতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি। কারো কারো কাছে চাওয়া হচ্ছে টাকাও। উপজেলার চার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এমন অভিনব প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে বিভিন্ন গ্রামের সহজ-সরল মানুষ তাদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছে। </p> <p>২০ জন সদস্য একজন সংগঠকের মাধ্যমে ফরম পূরণ করে জমা দিলেই সুদ ছাড়াই মিলবে এক লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ। পরে কিস্তিতে আসল টাকা পরিশোধ করলেই হবে। সুদবিহীন ঋণের কথা শুনে গ্রামের সহজ-সরল লোকজন ফরম পূরণ করে দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সংগঠককে খুশি করতে কেউ কেউ দিচ্ছে টাকাও। </p> <p>এ চক্রের সদস্য উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের নিশিন্তপুর গ্রামের স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল বায়জিদ জানায়, পার্শ্ববর্তী কলমাকান্দা উপজেলা থেকে রহিমা আক্তার তাদের সাধারণ মানুষের তথ্য সংগ্রহের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। তাদের পদবি সংগঠক। এ জন্য তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষকে ঋণ দেওয়ার কথা বলে তাদের নাম, স্বাক্ষর, এনআইডিসহ নানা তথ্য নিচ্ছেন।</p> <p>চক্রের মূল হোতা রহিমা আক্তার ও লাভলু মণ্ডল জানান, এর পূর্বেও এই সংগঠনের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। সংগঠনের কার্যক্রম বুঝিয়ে বলার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মূলত সুইস ব্যাংকে পাচার হওয়া কালো টাকা উদ্ধার করে দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে ঋণ দেওয়ার জন্য মানুষের কাছ থেকে আবেদন নেওয়া হচ্ছে। গত দুই বছরে সংস্থাটি এক কোটি ৪০ লাখ মানুষের তথ্য সংগ্রহ করেছে।</p> <p>মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সজীব রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, এই বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তিনি।</p>