<p>পিতৃহীন তোফাজ্জল পরিবারের ঋণের বোঝা কমাতে কাজ করতেন গাজীপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তার আয়ে চলত সংসার। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার অধিকার আদায়ের মিছিলে অংশ নিতে গিয়ে প্রাণ হারান এই তরুণ। তোফাজ্জলের মৃত্যুর পর তার পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার।</p> <p>২০ বছর বয়সী তোফাজ্জল নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মাসকা ইউনিয়নের পিজাহাতি গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। পরিবারের ঋণ শোধের দায় মাথায় নিয়ে প্রায় তিন বছর আগে গাজীপুরে আরএকে সিরামিক টাইলস কম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন।</p> <p>ছেলের মৃত্যুতে শোকাহত মা হারেছা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো অন্যায় করেনি। সে শুধু মিছিলে যোগ দিয়েছিল। সন্ত্রাসীরা কেন তাকে নির্মমভাবে হত্যা করল? আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল, কাজ করে আমাদের সংসারের অভাব দূর করবে। কিন্তু এখন সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।’</p> <p>৪ আগস্ট বিকেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেওয়া তোফাজ্জলকে সন্ত্রাসীরা পুলিশের সহযোগিতায় দা-রামদা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। ছোট ভাই মোফাজ্জল তাকে উদ্ধার করে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে কোনো হাসপাতাল তাকে ভর্তি নেয়নি। পরে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ আগস্ট সকালে তার মৃত্যু হয়।</p> <p>তার মরদেহ ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।</p> <p>তোফাজ্জলের বড় বোন আকলিমা আক্তার বলেন, ‘আমার ভাইয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। সে সংসারের সব দায়দায়িত্ব নিয়েছিল। আমাদের ঋণের বোঝা কমাতে দিন-রাত পরিশ্রম করত। তার বিয়ের স্বপ্ন ছিল, আমাদের বোনদের বিয়ের ব্যবস্থা করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। আমরা সরকারের কাছে তার হত্যার বিচার চাই এবং ক্ষতিপূরণের দাবি জানাই।’</p> <p>সরেজমিনে তোফাজ্জলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দোচালা টিনের ঘরটি ফাঁকা। মা হারেছা খাতুন, ছোট ভাই মোফাজ্জল এবং অন্য সদস্যরা কাজে বাইরে গেছেন। প্রতিবেশীরা জানান, তোফাজ্জলের মৃত্যুতে পরিবারটি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। তাদের এখন সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।</p> <p>ছেলের মৃত্যুতে শোকের পাশাপাশি চোখে-মুখে ভর করেছে অনিশ্চয়তার ছায়া। ‘আমার ছেলের রোজগারের টাকা দিয়ে সংসার চলত। এখন আমি কিভাবে সংসার চালাব? কিভাবে ঋণের বোঝা শোধ করব?’ —এমন প্রশ্ন করেন তার মা হারেছা খাতুন।</p> <p>ছেলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি সবার কাছে দোয়া চান। তার দাবি, ‘আমার ছেলের কোনো অন্যায় ছিল না। যারা তাকে হত্যা করেছে, তাদের উপযুক্ত শাস্তি হোক।’</p> <p>বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ২০২৪-এর সময় দেশজুড়ে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের দাবিতে বড় বড় মিছিল হয়। এসব মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন তোফাজ্জল। পরিবারের দাবি, এ আন্দোলনে যোগ দেওয়াই তার জন্য কাল হলো। তাদের প্রশ্ন, একটি যুবকের স্বপ্ন কিভাবে সন্ত্রাসীদের হাতে এভাবে ধূলিসাৎ হয়ে যায়?</p> <p>সরকারের কাছে তাদের শেষ আকুতি—তোফাজ্জলের হত্যার সুষ্ঠু বিচার এবং পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হোক। পরিবারটি যেন অন্তত একটু শান্তিতে বাঁচতে পারে।</p>