<p>ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর পরিস্থিতিতে রয়েছেন শিক্ষার্থী সজীব ইসলাম সানি (২৩)। বেশির ভাগ আহতরা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলেও এখনো হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগিতা না পেয়ে সজীবের ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে তার পরিবার। </p> <p>জানা যায়, সজীব ইসলাম সানি (২৩) ঢাকার সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অসহায় পরিবারের সন্তান হওয়ায় পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালাতেন এবং পরিবারের ভরণ-পোষণ চালাতেন সজীব। আহতদের তালিকানুযায়ী তার সিরিয়াল ৩২ নম্বর।</p> <p>জেলা সিভিল সার্জনের তথ্য অনুসারে, জেলায় আহতের সংখ্যা ৭৫জন। নিহতের সংখ্যা ৭ জন। নিহতদের একজনের ঘটনাস্থল ফরিদপুরে আর বাকি ৬জন জেলার বাইরে ঘটনাস্থল।</p> <p>পারিবারিক সূত্রে জানা যায়,  সজীব ইসলাম সানি ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের রসায়ন বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। বাবা প্রয়াত আব্দুল মালেক ছিলেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। এই সদস্যের অসুস্থতা এখন পুরো পরিবারকে ভোগাচ্ছে। বিধবা মা আর ছোট দুই বোনকে নিয়ে পৌর শহরের বায়তুল আমানের সফির ব্রীজ সংলগ্ন আশরাফ খাঁর ডাঙ্গি এলাকায় বসবাস তার। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট বোন ফরিদপুর কমার্শিয়াল কলেজে লেখাপড়া করে।</p> <p>সজীব ইসলাম সানি বলেন, টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচের পাশাপাশি সংসারও চালানো লাগত আমার। গত ৪ আগস্ট সকালে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজের সামনে থেকে বের হওয়া ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেই। শহরের থানা রোডে সাউন্ড গ্রেনেড আর কাঁদানে গ্যাসের শিকার হয়ে আত্মরক্ষার জন্য হিতৈষী স্কুলের দিকে গেলে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলায় আমার ডান হাত ভেঙে যায়। এ সময় আমাকে বেধড়ক পেটানো হয়। আহত অবস্থায় ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার সিএমএইচে পাঠানো হয়। ডান হাতের কব্জিতে অপারেশন করার পর এখন আর হাত কাজ করে না। হাড় ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে হাতের নার্ভ ড্যামেজ হয়ে গেছে। রড ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে অপারেশনের স্থানে। এরপর গত ১৬ নভেম্বর সাভারের সিআরপিতে ভর্তি রয়েছে আমি। আর্থিক অনটনে ভালো নেই বাড়িতে থাকা মা আর ছোট বোনটি। ধারদেনা করে জীবিকা নির্বাহ করা লাগতেছে।</p> <p>তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনে আহত হয়ে হাসপাতালের চিকিৎসার খরচ প্রথমদিকে আমার নিজেরই জোগাড় করতে হয়েছে। পরে হাতের অপারেশনের সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিনামূল্যে করে দেয় হাসপাতাল থেকে। তবে রড, স্ক্রু ও অনান্য ওষুধের খরচ নিজের দিতে হয়েছে। এখনো সরকারি পর্যায় থেকে কোনো রকমের সাহায্য-সহযোগিতা পাননি বলে তিনি জানান।</p> <p>ফরিদপুর সিভিল সার্জন ডা. সাজেদা বেগম পলিন জানান, ফরিদপুর জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতের সর্বশেষ ৭৫ জনের একটি তালিকা অনলাইন প্রকাশ করা হয়েছে। এ জেলার বাসিন্দা হিসেবে আন্দোলনে সাত জন নিহত হয়েছে। সরকার তালিকা করছেন নিহত-আহতদের পরিবারের জন্য কিছু করার। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের আর্থিক সহযোগিতা এসব পরিবারের জন্য আসেনি।</p>