<p>চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ)-এর জমি দখল করে দোকান ও শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, নির্মাণাধীন আধাপাকা সেই দোকানঘর রক্ষায় ঢাল হিসেবে রাতারাতি নির্মাণ হচ্ছে মসজিদ। মসজিদ ঘর নির্মাণ না হতেই প্রস্তুত করা হয় মিম্বর, এরই মধ্যে সেখানে কালেমা তাইয়্যেব লেখা, কাবা শরীফ ও মিনার অংকিত টাইলস বসানো হয়েছে। এমন অনৈতিক কাজ না করতে এলাকাবাসী জমি দখলকারীকে নিষেধ করেছে। তারপরও তা অমান্য করে নির্মাণ ও দখল অব্যাহত রেখেছে। দখলদার দুই সহোদরের নাম শাহজাহান ও রাজা। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। </p> <p>রবিবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বলেছেন, আমরা খবর শুনে তৎপর হয়েছি। সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানোর পর তারা রবিবার কাজ বন্ধ করেছে।</p> <p>প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পৌর এলাকার কাছিয়াড়া মৌজার ডায়াবেটিস হাসপাতালের পাশে প্রায় পাঁচ শতাংশ জমি (১৩৬নং ফরিদগঞ্জ মৌজা, খতিয়ান নম্বর ৪, দাগ নম্বর ৩০৮৪)’র মালিক মো. শাহজাহান। তিনি সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা মঞ্জিল হোসেনের বড় ভাই। ওই জমিতে গত কয়েক মাসে প্রায় ১৫টি দোকান ঘর নির্মাণ করেছেন মো. শাহজাহান ও তার ছোট ভাই রাজা। এলাকাবাসী দাবি করেছেন, দক্ষিণ পূর্ব কোণে অন্তত তিনটি দোকান ও সম্পূর্ণ টয়লেট সওজের জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে। ওই নির্মাণকাজ শেষ না হতেই রাস্তার পাশে রাতারাতি মসজিদ নির্মাণ চলছে।</p> <p>সরেজমিনে দেখা গেছে, মসজিদের জন্য দেয়াল, চালা ও ঘর নির্মাণ হয়নি। কিন্তু, তার আগেই মিম্বর প্রস্তুত করে সেখানে কালেমা তাইয়্যেব লেখা, কাবা শরীফ ও মিনার অংকিত টাইলস বসানো হয়েছে। এ দৃশ্য দেখে ধর্মপ্রাণ মানুষ নিন্দার ঝড় তুলেছেন। তারা বলেছেন, এভাবে সরকারি জমি দখলে রাখার জন্য এক ব্যক্তি মসজিদ ঘরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবে এমনটা মেনে নেওয়া যায় না। </p> <p>এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার সময় পাশে উপস্থিত মো. আবুল কালাম (৬৫) বলেন, আমরা কয়েক বছরেও একটি মসজিদ ঘর নির্মাণ সম্পন্ন করতে পারি না। অথচ, রাতারাতি মসজিদ হয়ে যাচ্ছে। তদুপরি, ঘর নির্মাণ না হতে মিম্বর ও আল্লাহর নাম লেখা টাইলস স্থাপন করা একটি বড় রকমের শয়তানির শামিল। মো. সুলতান আহমেদ (৫৬) নামে আরেকজন বলেছেন, এ কাজ বন্ধ করে তাদেরকে আইনের আওতায় নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে এমনতর অন্যায় বন্ধ হবে না। এত বড় জুলুমবাজের বিচার হওয়া প্রয়োজন। </p> <p>এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. রাজা স্বীকার করে বলেন, হ্যাঁ, নিজের জায়গার সামনের এই জমি- সরকারের একোয়ার করা। মসজিদ নিজেদের সম্পত্তিতে না করে সরকারি জমিতে করছেন কেন। এমন প্রশ্নের একপর্যায়ে বলেন, মানুষের নামাজ পড়ার জন্য রাস্তার পাশে মসজিদ করেছি। অন্যায় তো কিছু করিনি। অপর প্রশ্নে বলেন, সারা দেশে সরকারি জমিতেই বেশির ভাগ মসজিদ হচ্ছে। তাই এটি করে আমি কোনো অন্যায় করি নাই। তবে দোকানঘর ও টয়লেটের বিষয়ে তিনি কোনো উত্তর দেননি। </p> <p>এদিকে, ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুলতানা রাজিয়া বলেছেন, আমরা সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক তৎপর হয়েছি। সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে গুরুত্ব সহকারে কথা বলেছি। এরইমধ্যে রবিবার বিকালে ওই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সওজ পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরো কঠোর এবং প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেওয়া হবে। </p>