সেই ঘরে থাকেন না, তালা ঝুলছে। দ্বিতীয় ধাপে নির্মিত ৭৩টি ঘরের মধ্যে বর্তমানে ২২টি ঘরে লোকজন অনিয়মিতভাবে বসবাস করলেও বাকি সব ঘরেই ঝুলছে তালা। ওই তালা ঝোলানো ঘরগুলো যারা পেয়েছেন। তাদের সবারই জায়গা-জমি রয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সকালে ওই আশ্রয়ণে গিয়ে জানা যায়, এখানে বেশ কয়েকটি তালাবদ্ধ ঘরের মধ্যে আবু হানিফা নামের একজনের দখলে রয়েছে দুটি ঘর। পাশের ভাটিপাড়া গ্রামে বিত্তশালী ব্যক্তি, অঢেল সম্পত্তির মালিক তিনি। অন্যদিকে বালু ব্যবসায়ী কামাল মিয়ারও রয়েছে দুটি। এভাবেই বিত্তশালী অনেকের নামে রয়েছে একাধিক ঘর। তাদের বরাদ্দকৃত ঘরে শুরু থেকেই তালা ঝুলছে।
আবু হানিফার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে জানা যায়, তিনি বাড়ির পেছনে ফসলি খেতে তিল ও বাদাম মাড়াই করছেন। ৫ শতাংশ জমিতে তিল ও ৪ শতাংশ জমিতে বাদাম চাষ করেছেন তিনি।
দুটি ঘরের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘একটা আমার স্ত্রীর নামে আরেকটা মেয়ের নামে।’ এত সহায়-সম্পদ থাকলেও কেনো ভূমিহীনদের দেওয়া ঘর বরাদ্দ নিলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তহনের নাইব (মো. আনোয়ার হোসেন) আমার পরিচিত ছিল তাই তিনি কইলে আমি আপত্তি করছি না।’ এর জন্য কোনো টাকা দিতে হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন, ‘এইডা তো কিছু আছেই।’
কামালের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। ফোন নম্বর সংগ্রহ করে জানতে চাইলে কামাল ঘর বরাদ্দের কথা স্বীকার করে বলেন, তার মেয়ের নামে বরাদ্দ। খোঁজ নিয়ে জানা যায় মেয়ের স্বামী মালয়েশিয়ায় বসবাস করেন। মেয়ে ভাড়া বাসা নিয়ে স্থানীয় মধুপুর বাজারে বসবাস করেন।
জানা যায়, প্রতিটি ঘর নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে দুই লাখ ৫৯ হাজার টাকা করে। এই ঘরে গৃহহীন, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী ও অসহায় পরিবার বসবাস করার কথা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের ২১ জুলাই ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে দেশের অন্যান্য আবাসন প্রকল্পের সঙ্গে এই প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন।
এ উপলক্ষে আবাসন প্রকল্পের পাশের আঙ্গিনায় শামিয়ানা টানিয়ে জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিরাট সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে ৭৩টি ঘরের মালিকানা দলিল ও চাবি নির্ধারিত ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে প্রকল্পের বাসিন্দারা নানা ধরনের বঞ্চনা ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এসব কারণে অন্যত্র থাকার মত জায়গা না থাকায় কয়েকটি পরিবার এখানে বাধ্য হয়ে বসবাস করলেও বেশির ভাগ পরিবার ঘরে তালা দিয়ে অন্যত্র গিয়ে বসবাস করছে। ফলে তৎকালীন সরকার যে উদ্দেশ্য নিয়ে এ প্রকল্পটি চালু করেছিল সেটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। প্রতিটি ঘরে রয়েছে দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি শৌচাগার। রয়েছে বিদ্যুৎ আর সুপেয় পানির ব্যবস্থা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ঘরেই তালা ঝুলছে। ঝোপঝাড়ে ঘিরে ধরেছে ফাঁকা ঘরগুলো। বারান্দা ও আশপাশে জমে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা ও গোবর। কয়েকটি ঘরের বারান্দায় গবাদিপশু রাখা রয়েছে। কয়েকটি ঘরের মধ্যে পাটখড়ি রাখা রয়েছে। কোনো কোনো ঘরের উঠানে ময়লার স্তূপ। ৭৩টি ঘরের মধ্যে ২২টিতে লোকজন বসবাস করছে। বাকি ঘরগুলোর প্রতিটির দরজায় তালা দেওয়া। যেসব ঘরে লোকজন বসবাস করছে সেসব ঘরের মধ্যে অনেকগুলো আবার বসবাসকারীদের নামে বরাদ্দ নেই। যাদের নামে বরাদ্দ তারা কেউ এখানে বসবাস করে না।
অভিযোগ রয়েছে কেউ কেউ এসব ঘর অন্যের কাছে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। আশ্রয়ণের সঙ্গই রয়েছে নরু মিয়ার বাড়ি। সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকেন।
চর বেতাগৈর ইউপি সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন জানান, অনেকেই জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। তাই প্রকৃতরা বরাদ্দ পায়নি বলেই ঘরগুলো তালাবদ্ধ থাকছে। তা ছাড়া এখানকার আশ্রিতদের বেশিরভাগেরই স্থায়ী ঠিকানা এখানে নয়, তাই নিয়মানুযায়ী সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নন তারা।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ফয়েজুর রহমান জানান, এসব বিষয়ে তিনি সম্পূর্ণ কিছু জানেন না। তার পরও খোঁজ নেওয়া হবে।