তারই ধারাবাহিকতায় বিসিসি অনুমোদিত ইঞ্জিনিয়ারিং কনসাল্টিং এর ২৪টি প্রতিষ্টান গড়ে ওঠে। তাদের সহযোগিতায় নকশা অনুমোদনের জন্য প্রায় এক হাজার বিনিয়োগকারি আবেদন জমা দেয়। কিন্তু আইনী জটিলতায় নকশা অনুমোদন আটকে আছে।
আরো পড়ুন
সরকারকে কঠিন হতে হবে : অভিমত
অ্যাসোসিয়েশন অব বিল্ডিং কনসাল্টটেন্স বরিশালের তথ্য অনুযায়ী, একতলা থেকে ৬তলা পর্যন্ত ৯২৪ জন এবং ৭ম তলা থেকে ১৪তলা পর্যন্ত ৭৬জন বিনিয়োগকারি নকশার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু বিনিয়োগকারিরা প্রায় দুই থেকে পাঁচ বছর ধরে নকশা অনুমোদন পাচ্ছেন না। সিটি করপোরেশনের গড়িমসির কারণে এই খাতের প্রায় ১৮৩০ কোটি টাকার বিনিয়োগ আটকে আছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
ইঞ্জিনিয়ারিং কনসাল্টিং ফার্মের তথ্য অনুযায়ী একতলা থেকে ৬তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের গড় ব্যয় প্রায় ৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে শ্রমিক মজুরিসহ ৯২৪টি ভবনের নির্মাণ ব্যয় গিয়ে দাড়াবে এক হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। আর ৭ম তলা থেকে ১৪তলা পর্যন্ত গড় ব্যয় সাড়ে ৬ কোটি টাকা। সে হিসেবে ৭৬টি বহুতল ভবন তৈরীতে শ্রমিক মজুরি মিলিয়ে নির্মাণ ব্যয় হবে আনুমানিক ৫০০ কোটি টাকা। প্রকৌশলীরা বলছেন, শ্রমিক বাদে পুরো টাকাটাই বিনিয়োগ হবে নির্মানসামগ্রী খাতে।
আরো পড়ুন
বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত চলছে
বরিশাল সিমেন্ট ও লৌহজাত দ্রব্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক মো. হাফিজুর রহমান হিরা বলেন, রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী, প্লাম্বার, সেনেটারি মেটেরিয়ালসের ব্যবসায়ী, টাইলস ও রঙের ব্যবসায়ীসহ আমরা সবাই মন্দার মধ্যে দিন পাড় করছি। এই খাতে আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে কিন্তু বিনিয়োগ অনুপাতে আমাদের কোনো রিটার্ন নেই। প্লান অনুমোদনের ধীরগতির কারনে নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসায় ধস নেমেছে।
শ্রমিক মজুরি ৬৫৫ কোটি
অ্যাসোসিয়েশন অব বিল্ডিং কনসাল্টটেন্স সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী মো. আবু ছালেহ্ কালের কণ্ঠকে বলেন, বহুতল ভবন নির্মাণ ব্যয় প্রতি বর্গমিটার ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা মধ্যে হয়ে থাকে। প্রতিবর্গ মিটারে শ্রমমূল্য ২৫ শতাংশ হারে নির্ধারিত রয়েছে। সেই হিসেবে এক হাজার ভবন নির্মাণে শ্রমিকদের মজুরি আনুমানিক প্রায় ৬৫৫ কোটি টাকা আশপাশে হবে।
জেলা ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক আলাউদ্দিন মোল্লা বলেন, এই খাতে বিনিয়োগের ২৫ শতাংশ শ্রমিকরা পেতেন। ফলে নির্মাণের সঙ্গে জড়িত সকল শ্রেণি উপকৃত হতো। একই সঙ্গে রড, সিমেন্ট, বালু, কাঠ, টাইলস, রং, বিদ্যুৎ ও স্যানিটারিসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসায়ও নেমেছে ধস। তাদের তালিকাভুক্ত চার হাজারসহ অন্তত ২০ হাজার নির্মাণ শ্রমিক রয়েছেন। যাদের ৮০ ভাগের মতো কাজ হারিয়েছেন।
বরিশাল ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মাহামুদ বেগ বলেন, বহুতল ৫৪ টি ভবনের প্লান আটকে আছে সেই দুই বছর ধরে। যদি সঠিক সময়ে বিসিসি বহুতল ভবনগুলোর নকশা অনুমোদন দিতো তাহলে আবাসন খাতে শতশত কোটি টাকা বিনিয়োগ হতো। নকশা অনুমোদন না পাওয়ায় আবাসন খাতের বিনিয়োগ থমকে আছে।
বিসিসির আয় ২৫ কোটি
বিসিসির তথ্য অনুযায়ী, একতলা থেকে ৬তলা পর্যন্ত গড়ে নকশা ফি ৪০ হাজার, ল্যান্ড সার্ভে প্রতিবেদনের জন্য ১০ হাজার, হোল্ডিং ৪ হাজার, পানির সংযোগ বাবদ ১১ হাজার এবং গভীর নলক‚পের জন্য ১৮ হাজার টাকা নির্ধারিত রয়েছে। ছয় তলা পর্যন্ত প্রতিটি ভবনের জন্য নকশা অনুমোদন পেতে বিনিয়োগকারিকে গড়ে ৮৫ হাজার টাকা করে বিসিসির অনুক‚লে ব্যাংকে জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। এই খাতে এক হাজার ভবনের নকশা অনুমোদন ফি বাবদ বিসিসির রাজস্ব আয় গিয়ে দাড়াতো প্রায় ১১ কোটি টাকা।
বিসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, এই খাত থেকে প্রতিবছর বিসিসি হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে রাজস্ব আয় ৬ কোটি টাকা হতো। পানির বিল বাবদ আরো ৮ কোটি টাকার রাজস্ব আসতো এই খাত থেকে। সবমিলিয়ে বিসিসির রাজস্ব আয়ে প্রতিবছর এই খাত থেকে ১৪ কোটি টাকা যুক্ত হতো। নতুন নকশা অনুমোদন দিলে বিসিসি এই খাত থেকে অন্তত ২৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারতো।
বরিশাল নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সদস্য সচিব প্রকৌশলী মো. আবু ছালেহ বলেন, প্লান অনুমোদনের দাবীতে উপকারভোগীরা গতবছরের নভেম্বর থেকে আন্দোলন শুরু করেন। আমাদের দাবী হচ্ছে, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ১৯৯৬ বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি বরিশাল ইমারত নির্মাণ নীতিমালা ২০২০ বাস্তবায়ন করতে হবে। যে সমস্ত এলাকায় কিংবা বাড়িতে পানির সরবরাহ লাইন সংযোগ করা হয়নি সেই সব এলাকার জনগণকে পানির বিল হইতে অব্যাহতি দিতে হবে। ভবনে বসবাস শুরু করার পূর্বপর্যন্ত হোল্ডিং ও পানির বিল নেয়া যাবে না।
বিসিসি যা বলছে
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী বলেন, গতবছরের ২৬ ডিসেম্বর ৫০টি প্লান অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সবগুলোই সর্বোচ্চ ৬ তলা ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জমাকৃত প্লানগুলো পর্যায়ক্রমের ছেড়ে দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, ১৯৯৬ বিধিমালা অনুযায়ী যদি প্লানটা হলে তাহলে আমাদের সুবিধা হয়, তবে দেয়া গেছে বেশির ভাগ আবেদনই ১৯৯৬ সালের ইমারত আইন বিধিমালার মধ্যে নেই। তাই অনুমোদন প্রক্রিয়ায় গতি পাচ্ছে না।