ফেসবুকে লাইভে এসে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমানকে পেটানোর হুমকি দিয়েছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন। এই হুমকির পর ওসি মঙ্গলবার রাতে থানায় জিডি করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টা ৩৯ মিনিটে নিজের ফেসবুক লাইভে এসে আরিফ হোসনেক হুমকি দেন সাজ্জাদ হোসেন। ১৯ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের লাইভে এসে তিনি বিভিন্ন কথা বলেন।
আরো পড়ুন
দিনের ভোট রাতেই, বিকেলে শুধু বিজয়ীর নাম ঘোষণা : মান্না
লাইভের ১৬ মিনিটে এসে সাজ্জাদ বলেন, ‘ওসি আরিফ যা করেন একতরফা করেন। পোলাপাইনের মাইর খেয়ে মরে যাবেন। আপনারা সুষ্ঠু একটা তদন্ত করেন। কাকে এনে জেলে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে মামলা দিচ্ছে আমার নামে।
’
এক পর্যায়ে ওসি আরিফকে গালাগাল করে সাজ্জাদ বলেন, ‘ওসি আরিফ আমি তোকে পেটাব। বায়েজিদ থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত পেটাব। দেশের যে প্রান্তেই থাকেন না কেন, আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবেন না। প্রয়োজনে আমি মরে যাব।
কিন্তু হার মানব না। দেখি কার জোর বেশি ।’
লাইভে সাজ্জাদ বলেন, ‘ওসি আরিফ চাঁদাবাজিসহ তার সন্তান হত্যায় জড়িত। তাকে যাতে বদলি করা হয়।’
আরো পড়ুন
প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভিডিও ধারণ, অতঃপর...
পুলিশ জানিয়েছে, সাজ্জাদ হোসেন চট্টগ্রাম শীর্ষ সন্ত্রাসী।
তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজির অভিযোগে ১৪টি মামলা রয়েছে। গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা পুলিশ তাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছিল। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে যান।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফেসবুকে লাইভে এসে শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের হুমকির ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে। মাসখানেক আগেও একবার এমন হুমকি দিয়েছিলেন। যখন তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছি তখনই হুমকি দেন, ফেসবুকে অপপ্রচার চালান। সোমবারও সাজ্জাদের বাহিনীর ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। আমি সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করব। যারা চাঁদাবাজি করে ও যাদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, চলবে। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা কাজ করতেছি। ভয় পাই না। সাজ্জাদ যে সন্ত্রাসী করেন সব ডকুমেন্ট আমাদের কাছে আছে।’
আরো পড়ুন
ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন তানজিনার
সাজ্জাদের বিরুদ্ধে খুন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় ১৪টি মামলা রয়েছে। গেল বছরের ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এই চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের ঘটনার দুই মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়। একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরের চাঁন্দগাঁও থানার অদূরপাড়া জাগরনী সংঘ ক্লাব এলাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে (২৭) গুলি করে হত্যা করে। সেই মামলায়ও সাজ্জাদসহ তার বাহিনীর সদস্যদের আসামি করা হয়েছে। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় শটগান হাতে সাজ্জাদ হোসেনসহ আরো দুজন গুলি করতে করতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশ করেন। এরপর ওই ভবন মালিকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ ছাড়া সাজ্জাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টিরও বেশি মামলা রয়েছে।
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন মোড় এলাকার একটি সাততলা ভবনের পঞ্চম তলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ধরতে অভিযানে যায় পুলিশ। সেখান থেকে পুলিশকে গুলি করে পালিয়ে যায় সাজ্জাদ। গুলিতে পুলিশের দুই সদস্যসহ মোট চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এরপরও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এখনো অধরা শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ। বায়েজিদ ও আশেপাশের এলাকার সহযোগীদের নিয়ে চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপর্কম করে আসছে।