পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে খাল খনন না করেই বরাদ্দের টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। খাল খননের নামে হয়েছে কচুরিপানা পরিষ্কার এবং মাছ শিকারের মহা উৎসব। এমনটি অভিযোগ করেছেন খালপারের বাসিন্দারা। দু-এক জায়গায় যা একটু খনন হয়েছে তার জন্য স্থানীয়দের গুনতে হয়েছে টাকা।
খালের মাটি খালে রেখে সরকারি টাকা পুরোটাই হয়েছে ভাগ-বাটোয়ারা। খনন না করলেও প্রায় শতভাগ বিল দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের বেতবুনিয়া ও চাকরখালী খালের প্রায় ১.৩৭৫ কিলোমিটারের খনন (পলি নিষ্কাশন) রেগুলেটার মেরামত ও অফিস মেরামতের জন্য ১৫ লাখ ৯২ হাজার ২২১ টাকা ব্যয়ে কাজটি পায় চৈতা বাজিতা পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি। পাঁচটি এলসিএস কমিটির মাধ্যমে এই কাজ সম্পন্ন করার কথা।
আর কাজটি পরিচালনা করে মির্জাগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি। নিয়ম মতে, খাল খননের বিল উত্তোলন করতে এলসিএস কমিটির সদস্যদের উপস্থিত থাকতে হয়। কিন্তু নিয়মের তোয়াক্কা না করে এলসিএস কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের স্বাক্ষর জাল করে জাহাঙ্গীর গাজী ও বেলাল মৃধা নামে দুই ব্যক্তি বিল উত্তোলন করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ এলসিএস কমিটির সভাপতি এবং সম্পাদকদের।
সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোনো রকম খনন বা নিষ্কাশনের চিহ্ন দেখা যায়নি খালগুলোর।
এক হাত পরিমাণ পানি নেই খালে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা মো. হাবিবুর রহমান মৃধা বলেন, ‘খাল তো কাটতে দেখি নাই। শুধু মাছ ধরছে আর কচুরিপানা পরিষ্কার করছে।’
খালপারের আরেক বাসিন্দা আবু হানিফ জোমাদ্দার বলেন, ‘সরকারিভাবে খালের কোনো স্থানই কাটা হয়নি। স্থানীয়রা যারা টাকা দিয়েছে তাদের বাড়ি সামনে দিয়ে ঘণ্টা হিসাব করে কেটেছে।
’
এলসিএস কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল খান বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আমাদের কাজের পার্টনার ছিলেন। এসব কাজের বিল যৌথ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়। এ জন্য আমার এবং এই এলসিএস কমিটির সভাপতি শিউলি বেগমের সাথে যৌথ চেক জাহাঙ্গীরের কাছে ছিল। শুনছি কাজের বিল উত্তোলন করে নিয়েছেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু আমাদের চেকে কোনো স্বাক্ষর নেননি তিনি।’
খননকাজ চলাকালীন সময়ের চৈতা বাজিতা পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি মো. বাবুল মাস্টার বলেন, ‘খাল খননের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এলসিএস কমিটির জাহাঙ্গীর গাজী এবং বেলাল মৃধা কাজ করিয়েছেন। লোকমুখে শুনেছি ঠিকমতো খাল খনন করা হয়নি। এখন তারা দুজন এই সমিতির সভাপতি এবং সম্পাদক।’
চৈতা বাজিতা পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলী আকন বলেন, ‘খননকাজে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতেই পারে। তবে যতটুকু সম্ভব প্রাক্কলন অনুসারেই খননকাজ হয়েছে। সব অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয়।’
অভিযুক্ত ও বর্তমান সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘এ কাজ যে সময় বাস্তবায়ন হয়েছে তখন আমি ছিলাম না। আমার পূর্বে যে কর্মকর্তা ছিলেন তার সঙ্গে কথা বলেন। তার পরও দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত লোক পাঠিয়ে খতিয়ে দেখা হবে।’