টানা ৯ মাস ধরে বেতনভাতা বন্ধ রয়েছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ৫৪ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডারের (সিএইচসিপি)। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসেও বেতন পাননি তারা। এমন পরিস্থিতিতে স্ত্রী, সন্তান ও পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।
ফলে ঈদের আনন্দ নেই তাদের পরিবারে।
কবে নাগাদ বেতনভাতা পাবেন সে নিশ্চয়তাও নেই।
জানা গেছে, গ্রামের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দিতে ১৯৯৮ সালে গ্রামে গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়। মির্জাপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে ৫৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১১ সালে এসব ক্লিনিকে ৫৪ জন সিএইচসিপি নিয়োগ দেয় সরকার।
নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে গ্রামের দরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ দিয়ে আসছেন তারা। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার প্রতিষ্ঠান থেকে বেতনভাতা পান তারা। ওই বছরের জুলাই মাস থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের বেতনভাতা বন্ধ থাকে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট্রের আওতায় নেওয়া হলেও বেতনভাতা পাচ্ছেন না সিএইচসিপিরা।
২০১৬ সালের ১৪ জুন কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও তিন দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি করে সরকার। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিদের বেতনভাতা বৃদ্ধিসহ সুযোগসুবিধা বাড়ানো হয়নি।
এ অবস্থায় সারা দেশে কর্মরত সিএইচসিপিরা তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। এর ফলে, চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের আশ্বাসও পান তারা। কিন্তু গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট্রের আওতায় নেওয়া হয় সিএইচসিপিদের।
দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে নয় মাসের বেতন ও ভাতা বকেয়া পড়েছে তাদের।
মহেড়া ইউনিয়নের গবড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মাঞ্জুরুল ইসলাম তালুকদার জানান, তার স্ত্রী ফারহানা আশা পৌর এলাকার কান্ঠালিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত আছেন। তাদের দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। কর্মরত দুুইজনের বেতনভাতা ৯ মাস যাবৎ বন্ধ। দুই শিশু সন্তান ও পরিবার নিয়ে মানবেতন জীবনযাপন করছেন।
বড়দাম কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক স্বপন চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান বাজারে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সামান্য বেতনে সংসার চালাতে এমনিতেই কষ্ট হয়। এরমধ্যে গত ৯ মাস ধরে বেতন বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করছি।’
উপজেলা সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও উপজেলার আজগানা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো. সুমন সিকদার বলেন, ‘এতদিন ধার-দেনা করে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চালাতে হয়েছে।’
মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের আগে (বৃহস্পতিবার) শেষ কর্মদিবসে তাদের সাড়ে তিন মাসের বেতন ও বোনাস পাওয়ার কথা ছিল।’