প্রবাস আয়ে নতুন রেকর্ড

রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪৯.৪৯%

  • সরকারের উদ্যোগে কমেছে হুন্ডির দৌরাত্ম্য
  • পাওয়া যাচ্ছে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪৯.৪৯%

ঈদের আগে চলতি মাসের প্রথম ২৬ দিনে ২৯৪ কোটি ডলারের প্রবাস আয় এসেছে। শেষ দুই দিনে এসেছে ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এতে প্রথমবারের মতো তিন বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে দরকার আর অল্প কিছু প্রবাস আয়ের।

গতকাল বৃহস্পতিবারও প্রবাস আয় এসেছে, যার হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।

মাস শেষ হতে আর চার দিন বাকি। প্রবাস আয়ের ধারা বিবেচনা করলে অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, চলতি মাসে নতুন রেকর্ড করতে যাচ্ছে প্রবাস আয়।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, ঈদের সময় দেশে রেমিট্যান্সপ্রবাহ এমনিতেই বাড়ে। কারণ সব প্রবাসী তাঁর পরিবারের কাছে বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠান।

তা ছাড়া নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রেমিট্যান্স পাঠানো বেড়েছে। একই সঙ্গে কমেছে হুন্ডি ব্যবসা ও অর্থপাচার। খোলাবাজারের মতোই ব্যাংকে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
আড়াই শতাংশ প্রণোদনাও পাচ্ছেন প্রবাসীরা। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে আরো বেশি বেড়েছে রেমিট্যান্সের গতিপ্রবাহ।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে সব মিলিয়ে প্রবাস আয় এসেছিল ২৫২ কোটি ডলার। এ মাসে প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি ৩২ লাখ ডলার এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি মার্চ মাসের প্রথম ২৬ দিনে ২৯৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এলেও গত বছরের একই সময় আসে ১৯৭ কোটি ডলার; হিসাব অনুযায়ী যা আগের বছরের তুলনায় ৪৯.৪৯ শতাংশ বেশি।

গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম ঈদ সমাগত। বিদেশ থেকে প্রবাসীরা বৈধ পথে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয় পাঠাচ্ছেন। ব্যাংকাররা বলছেন, মূলত অর্থপাচার কমে আসায় প্রবাসীরা তাঁদের আয় পাঠাতে বৈধ পথ বেছে নিয়েছেন। এর ফলে পবিত্র রমজান মাসে প্রবাস আয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।

প্রবাস আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোয় ডলারের যে সংকট চলছিল, তা অনেকটা কেটে গেছে বলে কর্মকর্তারা জানান। তাঁরা বলেন, ডলারের দাম নিয়ে অস্থিরতাও কমেছে। ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যেই প্রবাস আয় কিনছে।

মার্চ মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহ : বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে প্রবাস আয় আসে ১৬৬ কোটি ডলার। চার দিন পর, অর্থাৎ ১৯ মার্চে ব্যাংকিং চ্যানেল তথা বৈধ পথে আসা প্রবাস আয় দাঁড়ায় ২২৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে শুধু ১৯ মার্চ এক দিনেই এসেছে ১৩ কোটি ডলার। আবার ১ থেকে ২২ মার্চ তথা মাসের প্রথম ২২ দিনে প্রবাস আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪৩ কোটি ডলার, যা ২৪ মার্চে বেড়ে ২৭০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। ২৬ দিনে আয় বেড়ে হয় ২৯৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ১১ কোটি এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ে ১২ কোটি ডলার করে এসেছে।

সাধারণত দুই ঈদের আগে প্রবাস আয় বছরের অন্য যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি আসে। গত বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে পাঁচ দিনেই ৪৫ কোটি ডলারের প্রবাস আয় এসেছিল। অর্থাৎ দিনে গড়ে ৯ কোটি ডলার করে এসেছিল। পরের চার দিনে প্রবাসীরা অর্থ পাঠানো আরো বাড়িয়ে দেন।

দেশে গত বছরের আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে সাত মাস ধরে প্রতি মাসে ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এ বছরের জানুয়ারিতে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাস আয় ৩ শতাংশ বেশি আসে।

সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাস জুলাই-মার্চে প্রবাসীরা দেশে এক হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাস আয় এসেছিল এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা করে প্রবাস আয়ের ডলার কেনা এখন অনেকটা কমে এসেছে। এতে ডলারের দাম ১২৩ টাকার মধ্যেই রয়েছে। এতে পণ্য আমদানিতেও ডলারের দাম কম পড়ছে। ফলে আমদানি খাদ্যপণ্যের দাম সেভাবে বাড়েনি। আগে একসময় প্রতি ডলারের দাম ১২৮ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, অর্থপাচার প্রতিরোধে বর্তমান সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। আবার ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠিয়ে প্রণোদনাসহ এখন যে পরিমাণ টাকা পাওয়া যাচ্ছে, তা খোলাবাজারের চেয়েও বেশি। সাধারণভাবে হুন্ডি চাহিদা কমলে এমন হয়। অন্যদিকে রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। ফলে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। রিজার্ভও স্থিতিশীল হয়ে এসেছে।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অর্থপাচার প্রতিরোধে বর্তমান সরকার বেশ সক্রিয়। পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ১১টি যৌথ বিশেষ টিম কাজ করছে। শেখ হাসিনা পরিবার এবং ১০টি ব্যবসায়ী গ্রুপের অর্থপাচার, অনিয়ম ও জালিয়াতির তথ্য উদঘাটনে এসব টিম বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। রেমিট্যান্স চাঙ্গা হওয়ার পেছনে এসব উদ্যোগের ভূমিকা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন দেশের ব্যাংকগুলোতে ১২২ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে ডলার। খোলাবাজারের সঙ্গে ব্যাংক রেটের পার্থক্য দুই থেকে আড়াই টাকা। কারণ খোলাবাজারে ১২৪ থেকে ১২৪.৫ টাকার মধ্যেই লেনদেন হচ্ছে প্রতি ডলার।

তথ্য বলছে, গত (২০২৪) বছরের মার্চে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলারের নির্ধারিত দাম ছিল ১১০ টাকা। কিন্তু নির্ধারিত দামে ডলার পাওয়া যাচ্ছিল না। আমদানি বিল পরিশোধের জন্য নির্ধারিত দামের বাইরে প্রতি ডলারে আরো ১৩ টাকা পর্যন্ত পে-অর্ডারের মাধ্যমে দিতে হয়েছে। এতে প্রতি ডলারের দাম পড়েছে ১২৩ টাকা। খোলাবাজারে ডলারের উত্তাপ ছিল আরো বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের সব ব্যাংকের নথিপত্রে আমদানিতে ডলারের সর্বোচ্চ দর ১১০ টাকা। তবে বাস্তবে ডলারের দাম আরেক। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বছর কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধানকে জরিমানাও করা হয়। তবে ২০২৫ সালের ঈদে সেই চিত্র একেবারেই ভিন্ন।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রবাসীরা সব সময় দেশে টাকা পাঠান। তবে যেকোনো উৎসবে তাঁরা রেমিট্যান্স বেশি পাঠান। কারণ ওভারটাইম, বোনাস ইত্যাদি পেলে পরিবারের কাছে তাঁরা বেশি টাকা পাঠান। তা ছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলে এখন পাচার প্রায় বন্ধ। হুন্ডি বন্ধ না হলেও আগের মতো হচ্ছে না। এটা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। এসব কারণে রেমিট্যান্স বেড়েছে। হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ ও পাচার বন্ধের বিষয়টি নতুন সরকার ভালোভাবে ম্যানেজ করছে। তা ছাড়া এখন স্কিলড লেবার পাঠানের প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে, যাঁদের বেতন তুলনামূলক বেশি। এখন খোলাবাজার ও ব্যাংকের রেটে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। ১২২ টাকা, ১২৪ টাকা ভালো রেট। সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত এবং ক্যাম্পেইন করলে প্রতিবছর ৩৫ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স সংগ্রহ করা সম্ভব। প্রবাসী ভাইদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা, যাতায়াতে ভোগান্তি দূর করাসহ রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়ার পরামর্শ এই বিশ্লেষকের। 

 

 

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ছুটির ঘোষণা

শেয়ার
ছুটির ঘোষণা

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩০-৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল কালের কণ্ঠ বন্ধ থাকবে। তাই ৩১ মার্চ এবং ১-২ এপ্রিল পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। পবিত্র ঈদুল ফিতর ১ এপ্রিল হলে ৩ এপ্রিলও পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে ঈদের ছুটিতে কালের কণ্ঠ অনলাইন চালু থাকবে।

সম্পাদক

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

শেয়ার
শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা গতকাল বিজয়নগরে শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে বসে পড়েন।ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই উসকানি দেন।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের মনে কী আছে (হোয়াটস অন বাংলাদেশস আর্মি চিফস মাইন্ড?) শিরোনামে ইন্ডিয়া টুডেতে একটি সংবাদ বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়। সেখানে মূলত সেনাপ্রধান বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বেন কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করা বিবিসি ও রয়টার্সের সাবেক সাংবাদিক সুবির ভৌমিকের লেখায় বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একজন রক্ষণশীল ও পেশাদার কর্মকর্তা, যিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন। তাঁর সহকর্মীরা জানান, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে সামরিক শাসন কার্যকর নয়। ইতিহাস, বিশেষ করে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁকে এই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে কঠোর দমন-পীড়ন না চালাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ সতর্ক করেছিল এবং তা কার্যকর হয়েছিল।

তবে ওয়াকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি গুলি চালানোর অনুমতি দেননি এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর উপদেষ্টাদের নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেন।

সম্প্রতি কিছু ব্লগার ও অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা অভিযোগ করেছেন, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভারতের প্রতি অনুগত এবং তিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। তবে সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠরা বলেন, তিনি কোনো গোষ্ঠীর অনুগত নন, বরং তিনি পেশাদার ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অনুকরণ করে রাজনীতির বাইরে থাকতে চান।

এদিকে সেনাপ্রধান চাইলে দেশে জরুরি অবস্থা জারিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সমর্থন দিতে পারেন বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিয়া আমীর।

আওয়ামী লীগপন্থী এই আইনজীবী বলেন, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন; আর এ ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান তাঁকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করতে পারেন। এর ফলে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করে দ্রুত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবেন। সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে পারবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে।

তবে তানিয়া আমীরের এমন মন্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা।

এক সেনা কর্মকর্তা ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, তিনি (সেনাপ্রধান) সেনা ও বাইরের সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চান। তিনি সেনা কর্মকর্তা ও অন্যান্য দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা না করে তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। কারণ তিনি একটি ঐকমত্য চান।

অন্যদিকে এক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, যাঁর অধীনে সেনাপ্রধান আগে চাকরি করেছেন, তিনি বলেন, যদি মনে হয় তাঁকে (সেনাপ্রধান) সরিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তাহলে তিনি কঠোর ভূমিকা পালন করবেন।

ইন্ডিয়া টুডের সংবাদ বিশ্লেষণে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সম্প্রতি আফ্রিকা সফর শেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না, যা আমি করতে চাই না। এতে বোঝা যায়, তিনি কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হতে পারেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। তাঁর বাবা ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম কিনেছিলেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের জন্য।

মন্তব্য

রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করে তোলেন। রমজান এলেই মাছ-মাংস, শাক-সবজি থেকে শুরু করে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। বিশেষ করে রোজার ভোগ্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বছরের পর বছর ধরে এমন চিত্রই দেখে আসছে দেশবাসী।

তবে এবার ভিন্ন চিত্র। এবার রোজার ভোগ্যপণ্যের বাজার অনেকটাই স্থিতিশীল। ভোক্তারা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার রজমানে পণ্যের দাম সবচেয়ে কম। বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যই ক্রেতাসাধারণের হাতের নাগালে রয়েছে।

রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এবার রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে অসাধু ব্যবসায়ীদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল তা এখন ভেঙে গেছে। এ ছাড়া এ বছর রমজান সামনে রেখে ট্যাক্স-ভ্যাট কমার পাশাপাশি পণ্য আমদানি বেড়েছে, যার সুফল মিলছে বাজারে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার ব্যাপক হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা। এতে গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমে বিক্রি হয়েছে ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, দেশি রসুন, আলু ও আদাসহ কয়েকটি পণ্য। সবজি ও মুরগির বাজারেও কিছুটা স্বস্তি ছিল। 

এবার রমজানে পেঁয়াজ ও আলু গত বছরের তুলনায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বেশির সবজি গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কম দামে বিক্রি হয়েছে। রমজানে ইফতারসামগ্রীর বাজারেও তেমন বাড়াবাড়ি নেই। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত তদারকি জোরদার করায় সবজির বাজার সিন্ডিকেট কাঁচা মরিচ ও বেগুনের দাম বাড়াতে পারেনি।

গত রমজানে রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, যা গত বছর রমজানে বিক্রি হয় ৪০ টাকা কেজি। পাকা টমেটো কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর বিক্রি হয় মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এখন ঈদ ঘিরে মুরগির দাম বাড়লেও রোজার শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত অনেকটাই সহনীয় দরেই এবার মুরগি বিক্রি হয়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। ঈদ উপলক্ষে এখন মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ছিল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, রোজার আগে আগে যা ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। দাম কমে চিনি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, গত বছরের রমজানের তুলনায় এ বছর বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় রয়েছে গম, ডাল, মুরগি, ডিম, মাছ, সয়াবিন, পামঅয়েল, চিনি, লবণ, আলু, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও হলুদ।

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় এবার রমজানে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয়।

এদিকে এবার রোজায় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারের একাধিক সংস্থা মাঠে আছে। সংস্থাগুলো হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মনিটরিং টিম। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিও করা হচ্ছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ