ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে তিন চাকার ভয়

  • মহাসড়কের চার হাজার কিলোমিটারে এক হাজার ৮০ স্পটে দুর্ঘটনার আশঙ্কা
জহিরুল ইসলাম
জহিরুল ইসলাম
শেয়ার
ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে তিন চাকার ভয়

দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে দিন দিন বাড়ছে তিন চাকার যানবাহনের সংখ্যা, যা মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম, বরিশাল, মানিকগঞ্জ, রংপুর, গাজীপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মহাসড়কে এসব যানবাহনের চলাচলে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে প্রাণহানি। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাত্রায় শঙ্কা দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহনের কারণে ৭৫৮টি দুর্ঘটনা ঘটে।

এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৪১২ জন এবং আহত এক হাজার ১৮৫ জন।

বিআরটিএর চলতি বছর জানুয়ারি মাসের তথ্য বলছে, তিন চাকার যানবাহনের কারণে গত বছর শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৯৮টি দুর্ঘটনায় ৮৯ জন নিহত ও ২৭৫ জন আহত হয়েছে। গাজীপুর এলাকায় ৮৭টি দুর্ঘটনায় ৪৮ জন নিহত ও ১৩৫ জন আহত হয়েছে। পাটুরিয়া-ঢাকা মহাসড়কে ৭৮টি দুর্ঘটনায় ৩৬ জন নিহত ও ১০০ জনের বেশি আহত হয়েছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য, গত বছর বরিশাল বিভাগে ৯৫টি দুর্ঘটনায় ৪৩ জন নিহত ও ১৪২ জন আহত হয়। ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে ৬৮টি দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত ও ৯০ জন আহত হয়।

দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম দেশের অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়ক হলেও এই সড়কে প্রায়ই সিএনজি, নছিমন, করিমন, ভটভটি ও অন্যান্য তিন চাকার যানবাহন চলে। এ ছাড়া খোলা মাইক্রোবাসে যাত্রী পরিবহন করায় দ্রুতগামী বাস ও ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষের ঝুঁকি তৈরি হয়।

বরিশালের কাউনিয়া, রূপাতলী ও বানারীপাড়ার সড়কে তিন চাকার যানবাহনের আধিক্য ব্যাপক যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-ঢাকা মহাসড়কে প্রায়ই তিন চাকার যান চলাচল করতে দেখা যায়। ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান ও নসিমনের চলাচল ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এতে মহাসড়কে যানজটের সঙ্গে দুর্ঘটনার হারও বাড়ছে।

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা ও টঙ্গী এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ও সিএনজি চলাচল মহাসড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলছে।

অথচ হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৫ সালে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ২২টি মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন (ইজি বাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, ভটভটি ইত্যাদি) নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কোনো তোয়াক্কাই করা হচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মহাসড়কে নির্দিষ্ট গতির নিচে কোনো যান চলতে দেওয়া উচিত নয় এবং বিকল্প সড়ক ব্যবহারের নির্দেশনা কার্যকর করতে হবে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, জাতীয় মহাসড়কের চার হাজার কিলোমিটারে এক হাজার ৮০ স্পটে যানজট ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। মোড়ে মোড়ে ইজি বাইক বসে থাকে। এতে যানবাহনের গতি আটকে দেয়। হঠাৎ রাস্তার পাশে চলে এলে বাস বা দ্রুতগতির বড় গাড়ির চালকরা খেই হারিয়ে ফেলেন এবং দুর্ঘটনা ঘটে যায়।

তিনি বলেন, আগের চেয়ে পুলিশের তৎপরতা কিছু বেড়েছে। পুলিশ শতভাগ নজর দিলে তিন চাকার যানবাহন যদি মহাসড়কে উঠতে না পারে তবে দুর্ঘটনা কম হবে।

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তিন চাকার যানবাহন : ঈদুল ফিতরের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের মহাসড়কে বাড়ছে যানবাহনের চাপ। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ নছিমন, টমটম আর ভটভটি।  কিন্তু  সে তুলনায়  সড়কের প্রশস্ততা না বাড়ানোর কারণে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা।

জানা যায়, চলতি মার্চ মাসের ২৩ দিনে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে অন্তত ১৭টি দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত হয় সাতজন, আহত হয় অন্তত অর্ধশত। একই অবস্থা পিরোজপুরেও। বেকুটিয়া সেতুর কারণে যান চলাচলে গতি বাড়ার কথা থাকলেও তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করিমন, নছিমন, থ্রিহুইলার। প্রয়োজনের তুলনায় সড়কের প্রশস্ততা না থাকায় দুর্ঘটনা কমছে না। এ ছাড়া সর্ব দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালী-কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাসড়কেও চলছে ব্যাটারিচালিত মাহিন্দ্রা, সিএনজি, অটোরিকশা, ইজি বাইকসহ বিভিন্ন ধরনের তিন চাকার যান।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পর্যটন নগরী কুয়াকাটার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার সড়ক পথে বাড়ছে পরিবহনের সংখ্যা। প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন বিলাসবহুল বাস। কিন্তু তিন চাকার ব্যাটারিচালিত যান মহাসড়কে চলার কারণে প্রতিদিন ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে বাধাহীনভাবে চলছে তিন চাকার যানবাহন : ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন বাধাহীনভাবে চলাচল করছে। এ কারণে ব্যস্ততম এই মহাসড়কে বেড়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। ঝুঁকি কমাতে অটোরিকশার চলাচল বন্ধ করতে মামলাসহ নানা পদক্ষেপ নিলেও তা কাজে আসছে না। মহাসড়কে তিন চাকার রিকশা, অটোরিকশা, ভটভটি, নছিমন ও করিমন বন্ধে বিভিন্ন সময় একাধিকবার পরিবহন ধর্মঘটও করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। মহাসড়কটির রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুর অংশে প্রায় ৮০ কিলোমিটারে অবাধে চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ভ্যান। প্রকাশ্যেই চলছে নছিমন, করিমন ও ভটভটি। মহাসড়কের সাদুল্লাপুরের ধাপেরহাট, পীরগঞ্জ বাজার, বড়দরগা, শঠিবাড়ী, মিঠাপুকুর, জায়গীরহাট, মডার্ন মোড়, দর্শনা, টার্মিনাল, মেডিক্যাল মোড়, সিও বাজার, হাজিরহাট, তারাগঞ্জসহ অর্ধশত এলাকায় স্ট্যান্ড করে তিন চাকার যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাড়ছে অবৈধ গাড়ির দাপট : নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলছে তিন চাকার যানবাহন। শুধু যে চলছে তা নয়, মাঝেমধ্যে উল্টোপথে চলছে এসব যান। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেড়েছে অনুমোদনহীন দরজা খোলা অবৈধ গাড়ির দাপট। দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় এসব গাড়িতে চলছে অবাধে যাত্রী পরিবহন। ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে এসব মিনি মাইক্রোবাস দরজা খোলা অবস্থায় মহাসড়কে দাপটের সঙ্গে চলাচল করছে। ফিটনেসবিহীন এসব দরজা খোলা মিনি মাইক্রোবাস মহাসড়কে বড় বড় যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলাচল করছে। সড়ক দুর্ঘটনার এটিও একটি কারণ।

মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার জামালদী, ততৈতলা পাখির মোড়, বালুয়াকান্দি, ভাটেরচর, ভাটেরচর নতুন রাস্তা, আনারপুরা, ভিটিকান্দি, আলীপুরা, ভবেরচর, বাউশিয়া, দড়ি বাউশিয়া, বাউশিয়া পাখির মোড় এলাকায় দুই দিক দিয়েই চলছে তিন চাকার যানবাহন। কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না এসব যানের চালকরা। গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়ার মধ্য বাউশিয়া এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে সাইড দিতে গিয়ে একটি মিনিবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে চার যাত্রী আহত হয়। এর আগে গত ১১ নভেম্বর মহাসড়কের গজারিয়ার আলীপুরায় বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী গুরুতর আহত হয়।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে তিন চাকার যান : নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার নয়াডিঙ্গি বাসস্ট্যান্ড থেকে আরিচা পর্যন্ত প্রায় ৩৭ কিলোমিটার এলাকায় অবৈধভাবে তিন চাকার যানবাহন চলাচল করছে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ মহাসড়ক দিয়েই পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা থেকে দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল করে।

আর এসব গাড়ির সামনে দিয়ে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ ঘোষিত তিন চাকার সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান, লেগুনা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজি বাইক, মাহেন্দ্রা ও টমটম। এসব যানের অদক্ষ চালকদের বিপজ্জনক ওভারটেকিং ও বেপরোয়া গতির কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, বিআরটিএ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। মহাসড়কে শুধু অনুমোদিত যানবাহন চলাচলের জন্য কড়া আইন প্রয়োগ করা জরুরি। তিন চাকার যানের চালকদের জন্য নির্ধারিত রুট তৈরি করলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকটাই কমতে পারে।

হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা কালের কণ্ঠকে বলেন, ঈদে শান্তিপূর্ণ যাত্রা নিশ্চিত করতে থ্রি-হুইলারগুলো যেন মহাসড়কে না ওঠে সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের সদস্যরা কাজ করছেন। কেননা, দ্রুতগতির গাড়ির মাঝে যদি তিন চাকার গাড়ি ঢুকে পড়ে তাহলে যানজট তৈরি হয়। এতে করে ভোগান্তি ও দুর্ঘটনার শঙ্কা বেশি থাকে। তাই তাদের (তিন চাকার যান) অনুরোধ করছি মহাসড়কে যেন না ওঠে।

মোটরসাইকেলে যাতায়াতকারীদের উদ্দেশে হাইওয়ে পুলিশপ্রধান বলেন, প্রতি ঈদে মোটরসাইকেলের যাত্রায়ও দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। অনেকে নারী-শিশু ও একাধিক ব্যাগসহ দ্রুতগতিতে ছোটেন। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। তাই যাঁরা নাড়ির টানে বাড়ি যাবেন, তাঁদের উদ্দেশে বলছি, খেয়াল রাখতে হবে যেন অতি দ্রুতগতির কারণে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। নির্দিষ্ট গতিতে যাবেন। একই সঙ্গে সার্ভিস রোড ব্যবহার করবেন।

(প্রতিবেনটিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন)

 

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ছুটির ঘোষণা

শেয়ার
ছুটির ঘোষণা

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩০-৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল কালের কণ্ঠ বন্ধ থাকবে। তাই ৩১ মার্চ এবং ১-২ এপ্রিল পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। পবিত্র ঈদুল ফিতর ১ এপ্রিল হলে ৩ এপ্রিলও পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে ঈদের ছুটিতে কালের কণ্ঠ অনলাইন চালু থাকবে।

সম্পাদক

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

শেয়ার
শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা গতকাল বিজয়নগরে শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে বসে পড়েন।ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই উসকানি দেন।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের মনে কী আছে (হোয়াটস অন বাংলাদেশস আর্মি চিফস মাইন্ড?) শিরোনামে ইন্ডিয়া টুডেতে একটি সংবাদ বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়। সেখানে মূলত সেনাপ্রধান বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বেন কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করা বিবিসি ও রয়টার্সের সাবেক সাংবাদিক সুবির ভৌমিকের লেখায় বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একজন রক্ষণশীল ও পেশাদার কর্মকর্তা, যিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন। তাঁর সহকর্মীরা জানান, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে সামরিক শাসন কার্যকর নয়। ইতিহাস, বিশেষ করে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁকে এই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে কঠোর দমন-পীড়ন না চালাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ সতর্ক করেছিল এবং তা কার্যকর হয়েছিল।

তবে ওয়াকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি গুলি চালানোর অনুমতি দেননি এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর উপদেষ্টাদের নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেন।

সম্প্রতি কিছু ব্লগার ও অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা অভিযোগ করেছেন, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভারতের প্রতি অনুগত এবং তিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। তবে সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠরা বলেন, তিনি কোনো গোষ্ঠীর অনুগত নন, বরং তিনি পেশাদার ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অনুকরণ করে রাজনীতির বাইরে থাকতে চান।

এদিকে সেনাপ্রধান চাইলে দেশে জরুরি অবস্থা জারিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সমর্থন দিতে পারেন বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিয়া আমীর।

আওয়ামী লীগপন্থী এই আইনজীবী বলেন, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন; আর এ ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান তাঁকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করতে পারেন। এর ফলে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করে দ্রুত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবেন। সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে পারবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে।

তবে তানিয়া আমীরের এমন মন্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা।

এক সেনা কর্মকর্তা ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, তিনি (সেনাপ্রধান) সেনা ও বাইরের সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চান। তিনি সেনা কর্মকর্তা ও অন্যান্য দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা না করে তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। কারণ তিনি একটি ঐকমত্য চান।

অন্যদিকে এক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, যাঁর অধীনে সেনাপ্রধান আগে চাকরি করেছেন, তিনি বলেন, যদি মনে হয় তাঁকে (সেনাপ্রধান) সরিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তাহলে তিনি কঠোর ভূমিকা পালন করবেন।

ইন্ডিয়া টুডের সংবাদ বিশ্লেষণে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সম্প্রতি আফ্রিকা সফর শেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না, যা আমি করতে চাই না। এতে বোঝা যায়, তিনি কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হতে পারেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। তাঁর বাবা ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম কিনেছিলেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের জন্য।

মন্তব্য

রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করে তোলেন। রমজান এলেই মাছ-মাংস, শাক-সবজি থেকে শুরু করে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। বিশেষ করে রোজার ভোগ্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বছরের পর বছর ধরে এমন চিত্রই দেখে আসছে দেশবাসী।

তবে এবার ভিন্ন চিত্র। এবার রোজার ভোগ্যপণ্যের বাজার অনেকটাই স্থিতিশীল। ভোক্তারা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার রজমানে পণ্যের দাম সবচেয়ে কম। বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যই ক্রেতাসাধারণের হাতের নাগালে রয়েছে।

রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এবার রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে অসাধু ব্যবসায়ীদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল তা এখন ভেঙে গেছে। এ ছাড়া এ বছর রমজান সামনে রেখে ট্যাক্স-ভ্যাট কমার পাশাপাশি পণ্য আমদানি বেড়েছে, যার সুফল মিলছে বাজারে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার ব্যাপক হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা। এতে গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমে বিক্রি হয়েছে ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, দেশি রসুন, আলু ও আদাসহ কয়েকটি পণ্য। সবজি ও মুরগির বাজারেও কিছুটা স্বস্তি ছিল। 

এবার রমজানে পেঁয়াজ ও আলু গত বছরের তুলনায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বেশির সবজি গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কম দামে বিক্রি হয়েছে। রমজানে ইফতারসামগ্রীর বাজারেও তেমন বাড়াবাড়ি নেই। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত তদারকি জোরদার করায় সবজির বাজার সিন্ডিকেট কাঁচা মরিচ ও বেগুনের দাম বাড়াতে পারেনি।

গত রমজানে রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, যা গত বছর রমজানে বিক্রি হয় ৪০ টাকা কেজি। পাকা টমেটো কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর বিক্রি হয় মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এখন ঈদ ঘিরে মুরগির দাম বাড়লেও রোজার শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত অনেকটাই সহনীয় দরেই এবার মুরগি বিক্রি হয়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। ঈদ উপলক্ষে এখন মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ছিল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, রোজার আগে আগে যা ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। দাম কমে চিনি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, গত বছরের রমজানের তুলনায় এ বছর বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় রয়েছে গম, ডাল, মুরগি, ডিম, মাছ, সয়াবিন, পামঅয়েল, চিনি, লবণ, আলু, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও হলুদ।

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় এবার রমজানে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয়।

এদিকে এবার রোজায় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারের একাধিক সংস্থা মাঠে আছে। সংস্থাগুলো হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মনিটরিং টিম। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিও করা হচ্ছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ