রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এক উপপুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করতে গিয়ে পলাশ হাসান নামের এক বাদী মারধরের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা (সাবেক ডিসি ক্রাইম) শিবলি কায়সারকে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাতেই বদলি করা হয়।
পুলিশ জানায়, রংপুর মহানগরীর নিউ সেনপাড়ার বাসিন্দা ও হারাগাছের বিড়ি ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসা নামের এক আওয়ামী লীগের নেত্রীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে। রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক ও ব্যবসায়ী অমিত বণিক নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্যতা আছে উল্লেখ করে মামলা থেকে তার (লিপি) নাম কাটা ও সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলেন।
ঢাকায় ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা বলে লিপির কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন অমিত। কিন্তু দুই লাখ টাকা দিতে রাজি হয়ে মামলা থেকে নাম কেটে দেওয়ার অনুরোধ করেন লিপি। বর্তমানে ব্যবসা ভালো না, মাসে মাত্র তিন লাখ টাকা ইনকাম, তাই পরে ব্যবসা ভালো হলে আরো দেখবেন বলেও জানান লিপি। এই সংক্রান্ত একটি অডিও কল ভাইরাল হয়। এরই প্রেক্ষিতে অমিতের নামে লিপির ম্যানেজার পলাশ হাসান বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে একটি চাঁদাবাজির মামলা করেন। ওই দিনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার বাদী পলাশ হাসান তার অভিযোগ পত্রে লেখেন, ‘আমি লিপি খান ভরসার ম্যানেজার। তার স্থাবর সম্পত্তি ও ব্যবসা দেখাশোনা করি।
লিপি খান ভরসার সঙ্গে ব্যবসা ও সম্পত্তি নিয়ে আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে বিরোধ আছে। বিরোধের কারণে মামলা আছে। ২০২৪ সালের ২৩ নভেম্বর একটি মামলা হলে সেখানে লিপি খানকে ১৭৯ নম্বর আসামি করা হয়। আমার মালিকের পূর্ব পরিচিত অমিত বনিকের সঙ্গে মোবাইলে কথোপকথন হয়। সেই সময় তিনি জানান, পুলিশের সঙ্গে তার সখ্যতা আছে এবং গত ১৪ জানুয়ারি আমি ও আমার মালিক লিপি খান ভরসাসহ সেন পাড়া লিপি ভিলার সামনে ফোনে কথা হয়। এ সময় ১০ লাখ টাকা দিলে মামলা থাকবে না এবং তিনি সুরক্ষা দিবে। অনেক অনুরোধ করার পরও অমিত বণিক ১০ লাখ টাকা দাবি করেন।'
পুলিশ ও ভুক্তভোগী সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে লিপির পক্ষে কোতয়ালি থানায় মামলায় করতে আসেন পলাশ। তবে, অমিতের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা শিবলি কায়সারের নামেও মামলা হতে পারে এমন খবরে বিকেল ৫টার দিকে কোতোয়ালী থানায় আসেন উপপুলিশ কমিশনার। তখন থানায় আরেক উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) হাবিবুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। শিবলী থানায় ঢুকে পলাশের ওপর চড়াও হন এবং মারধর করেন। এক পর্যায়ে কর্তব্যরত কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে তাকে গুলি করতে উদ্যত হন।
রংপুর মহানগরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান জানান, শুক্রবার দুপুরে অমিত বনিককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার বাদী বলেন, 'এ বিষয়ে ম্যাডামই আপনার সঙ্গে কথা বলবেন।'
উপকমিশনার হাবিবুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিবলী ৫টা বা পৌনে ৫টার দিকে কোতোয়ালী থানায় গিয়েছিল। কে বা কারা তাকে তথ্য দিয়েছিল যে তার বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজি মামলা হতে যাচ্ছে। সেখানে তার নাম আছে। এতে তিনি উত্তেজিত হন এবং মামলার বাদীর সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে বেশি উত্তেজিত হয়ে কর্তব্যরত সেন্ট্রির (থানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল) রাইফেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
উপপুলিশ কমিশনার শিবলীর থানার ভেতরে এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশের উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনার বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি শিবলী কায়সার।
রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী কালের কণ্ঠকে জানান, ডিসি ক্রাইম শিবলি কায়সারকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। লিপি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি। সেই আসামিকে মামলা থেকে বাদ দেওয়া এবং তাকে সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলে পুলিশের নামের ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন ব্যবসায়ী অমিত বণিক। অমিতের নামে চাঁদাবাজির মামলা হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।