সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেছেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশে স্বাধীন সংবাদপত্রের পথ অবারিত করেছেন। বাকশালী শাসনামলে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করার পর জিয়াউর রহমান সংবাদপত্রকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দেন। সংবাদমাধ্যম অবারিত করে তিনিই প্রথম সংবাদপত্রের দ্বার উন্মোচন করেছেন। শুক্রবার (১৪ মার্চ) বিকেলে জেলা প্রশাসন ও জেলা তথ্য অফিসের আয়োজনে বগুড়া প্রেসক্লাবে শিক্ষার্থী বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, শহীদ জিয়া ক্ষমতায় না আসলে সাংবাদিক হতে পারতাম না; সাংবাদিক নেতাও হতে পারতাম না; সর্বোপরি আজকের এই সম্মানজনক জায়গাটুকুও পেতাম না।
তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত মুক্ত স্বাধীন সাংবাদিকতা না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে রাখতে হবে। চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি নতুন দেশ পেলেও আমরা এখনও ফ্যাসিবাদ মুক্ত হতে পারিনি। ফ্যাসিবাদের দোসররা গণমাধ্যমে এখনো ঘাপটি মেরে আছে।
সুযোগ পেলেই তারা দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট একটি সাংবাদিক কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান। অসুস্থ, বেকার, অসচ্ছল ও অসুবিধাগ্রস্ত সাংবাদিকদের কল্যাণের লক্ষ্যেই কাজ করবে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট।
সরকারের বাজেট এবং ব্যাংকে জমানো কিছু অর্থ থেকে এই অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে এই প্রতিষ্ঠানটিকে শুধুমাত্র দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দল, মতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের সকল সাংবাদিকের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকরা কঠিন বাস্তবতার মধ্যে জীবন যাপন করেন। কখনও এমন হয়, তার চিকিৎসার জন্য ঔষধ কেনার টাকা থাকেনা।
এ দফায় বগুড়ায় ২৩ জন সাংবাদিক ও ১৩ জন সাংবাদিক সন্তান শিক্ষাবৃত্তি পেয়েছে। সাংবাদিক সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, অনার্স ও মাস্টার্স এ পর্যন্ত পর্যায়ে দেশে ৩০৫ জন বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যেন এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। একজন সাংবাদিক জীবনের শেষ পর্যন্ত ঢেলে দিয়ে কাজ করেছেন, সেই সাংবাদিককে যেন মাসিক ভাতার আওতায় আনা যায়, সেলক্ষ্যে কাজ চলমান রয়েছে। নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে প্রায়। পবিত্র রমজান উপলক্ষে সারাদেশে দেড় হাজারেরও অধিক সাংবাদিককে ফুড প্যাকেট উপহার দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই সাংবাদিকদের জন্য ফেলোশিপের ব্যবস্থা করা হবে।
জেলার সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা মানেই ঝুঁকিপূর্ণ জীবন। তাই সাংবাদিক কেবলমাত্র একটি পেশা নয়, তারা সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ সেবাদানকারি।
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহকারী মহাসচিব ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন বলেন, সাংবাদিকতা পেশা শারীরিক ও মানুষিক ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। যারা বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি দপ্তরে ৯ টা ৫ টা কাজ করেন, তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করেন একজন সাংবাদিক। জীবনে সর্বোচ্চ ঝুঁকি থাকলেও নেই ঝুঁকি ভাতা, নেই মানসম্মত বেতন-বোনাস। তবুও অদ্যাবধি এই দেশে সেভাবে স্বীকৃতি মিলছেনা সাংবাদিকতার।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বগুড়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) তার বক্তব্যে বলেন, আমরা নতুন সুন্দর যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, সেই দেশ গড়তে সাংবাদিকদের অগ্রণী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে এবং গঠনমূলক সমালোচনা করতে হবে। সাংবাদিকদের জন্য ডাটাবেজ তৈরি করে ট্যালেন্ট হান্ট করে পুরস্কৃত করা প্রয়োজন।
বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজার সভাপতিত্বে এবং সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি গণেশ দাস ও সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সাঈদ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বগুড়া প্রেসক্লাবের আহবায়ক ওয়াসিকুর রহমান বেচান, সদস্য সচিব সবুর শাহ লোটাস, দৈনিক বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রেজাউল হাসান রানু, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি মতিউল ইসলাম সাদীসহ জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।