সিলেট উইমেন্স চেম্বার অব কমার্স

আগাগোড়া অনিয়ম আর একনায়কতন্ত্রের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
শেয়ার
আগাগোড়া অনিয়ম আর একনায়কতন্ত্রের গল্প
সংগৃহীত ছবি

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এক দশকে একবারও হয়নি ভোটগ্রহণ। তবে ঠিকই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বৈরতন্ত্র। অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার যেন অনন্য নজির গড়েছে সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। কর্তৃত্ব ধরে রাখতে সদস্য অন্তর্ভুক্তিতে হয়েছে অনিয়ম, আত্মীয়করণসহ নানা কৌশল।

প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে অনুগতদের। টানা ৩ বারের বেশি একপদে থাকার নিয়ম না থাকলেও সভাপতি পদে ৫ বারই ছিলেন দেশ ছেড়ে পালানো স্বর্ণলতা রায়। সেজন্য সংশোধন করেন গঠনতন্ত্র। এভাবেই উইমেন চেম্বারে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন স্বর্ণলতা। এরপর থেকে এসব অনিয়মের খবর প্রকাশ হতে থাকে। নানা সময় স্বেচ্ছাচারিতা ও বঞ্চনার শিকার ব্যবসায়ী নারীরা এখন মুখ খুলছেন। সে তালিকায় যেমন উইমেন চেম্বারের সদস্যরা আছেন, তেমনি নানা কৌশলে সদস্য বঞ্চিতরাও আছেন।

তাদের দাবি, ‘আগে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে সদস্য নবায়ন, তারপর নির্বাচন।’

এসব ব্যবসায়ী নারীদের অভিযোগ, ‘উইমেন চেম্বারের কর্তৃত্ব নিজের মুঠোয় রাখতে স্বর্ণলতা যোগ্য ও নেতৃত্বগুণ সম্পন্নদের সদস্য হতে দেননি নানা কৌশলে। ফলে সিলেটের মতো অঞ্চলে তার আমলে উইমেন চেম্বারের সদস্য সংখ্যা অর্ধশতকে পৌঁছাতে পারেনি। সদস্য সংখ্যা কম থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করতে হয়নি। আবার বিভিন্ন সময়ে বেশি সদস্য দেখানোর প্রয়োজন পড়লে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে একই ব্যক্তির নাম অদলবদল করে একাধিকবার দেখিয়েছেন এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

অনিয়ম ঢাকতেই তড়িঘড়ি নির্বাচনের আয়োজনের চেষ্টা: 

অনিয়ম ও অপকর্ম ঢাকতে তড়িঘড়ি নির্বাচনের আয়োজন চলছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ী নারীদের। তারা বলেছেন, ‘সারা দেশে কোথাও নির্বাচন নেই অথচ যে প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনের সংস্কৃতিই নেই, সেখানে নির্বাচন আয়োজনের তোড়জোড়। মূলত অনুগতদের হাতে নেতৃত্ব রাখতে এই তড়িঘড়ি। এতে অতীতের অনিয়মগুলো চাপা দেওয়া সহজ হবে।’

সদ্য উইমেন চেম্বারের সদস্য হওয়া আরশি বিজনেস হাউসের স্বত্বাধিকারী সামিয়া বেগম চৌধুরী বলেন, ‘এত বছর আমাকে সদস্য হতে দেওয়া হয়নি। সবশেষ গত নভেম্বরেও সদস্য ফরম সংগ্রহ করতে গেলে তারা বললেন, সংগঠনের অফিসে কোনো ফরম নেই। পরে অন্য আরেক উদ্যোক্তার সংগ্রহ করা ফরম চেয়ে নিয়ে সদস্য হয়েছি।’ 

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সারা দেশে সংস্কারের দাবি উঠেছে। অথচ এখানে তারা অপকর্ম ধামাচাপা দিতে সংস্কার ছাড়াই তড়িঘড়ি নির্বাচন চান। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মূলত তড়িঘড়ি করছেন।’ তার দাবি, নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংস্কার প্রয়োজন। যোগ্য যারা তাদের আগে সদস্য করা হোক। এজন্য প্রশাসক নিয়োগ করে সংস্কার প্রয়োজন।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা:

সর্বশেষ তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৮ মে উইমেন চেম্বারের নির্বাচন হওয়ার কথা। এর আগে প্রথমবার ঘোষিত তফসিলে ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিন ধার্য হয়। পরে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সালিশি বৈঠকে নির্বাচন পেছানো হয় এবং ১২ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সদস্য অন্তর্ভুক্তির জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।

সদস্য না করতে নানা অপকৌলের অভিযোগ: 

সব যোগ্যতা থাকার পরও উইমেন চেম্বারের সদস্য হতে পারেননি এমন অভিযোগ অসংখ্য নারী ব্যবসায়ীর। অনেককে ফরমই দেওয়া হয়নি। আবার অনেকে সদস্য ফি জমা দিয়ে সদস্য হলেও পরবর্তীসময়ে জানানো হয় তিনি সংগঠনের সদস্যই নন। তেমনই একজন স্বনামধন্য অনলাইন শপ ‘প্রিংক’-এর স্বত্বাধিকারী রেহানা আফরোজ খান। 

তিনি বলেন, ‘আমি গত বছরের অক্টোবরে উইমেন চেম্বারের অ্যাসোসিয়েট সদস্য হই। ৩ হাজার ২৫০ টাকা সদস্য ফি জমার মানি রিসিটও আমার সংরক্ষণে আছে। এমনকি উইমেন চেম্বারের ওয়েবসাইটের সাকসেস স্টোরিতেও আমার ও আমার প্রতিষ্ঠানের ছবি-ভিডিওসহ স্টোরি আছে। সেখানেও তারা আমাকে উইমেন চেম্বারের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অথচ যখনই আমি নির্বাচন করার ইচ্ছে পোষণ করি তখন জানানো হয়, আমি নাকি উইমেন চেম্বারের সদস্যই নই। সদস্য হিসেবে আমার কোনো কাগজপত্র তাদের সংরক্ষণে নেই!’ 

তিনি বলেন, ‘এরপর আমি আবারো অর্ডিনারি সদস্য ফরম (গোলাপি ফরম) সংগ্রহ করি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সদস্য ফি’র টাকাসহ লোক মারফতে ফরম জমা দিতে পাঠালে তারা তা গ্রহণ করেননি।’

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ফরম জমা দেওয়ায় ব্যর্থ হয়েছেন এমন অভিযোগ আরো অনেকের। তাদের একজন ইয়াসিন এন্টারপ্রাইজের পরিচালক শেখ আমিনা রহমান শিউলি। তিনি বলেন, ‘আমি সব ধরনের প্রয়োজনীয় কাগজসহ ফরম ফিলআপ করে সদস্য ফি’সহ ফরম জমা দিতে পাঠিয়েছিলাম। তারা জমা রাখেননি।’

এসব বিষয়ে চেম্বারের বর্তমান সভাপতি লুবানা ইয়াসমিন শম্পা বলেন, ‘নানা ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। রেহানা আফরোজ ও ন্যান্সি নামের দুজনের ফরম নিয়ে এক ব্যক্তি এসেছিলেন। ওই ব্যক্তি ন্যান্সির স্টাফ হওয়ায় তার ফরম আমরা রেখেছি। কিন্তু রেহানা আফরোজের ফরম রাখিনি।’ 

সশরীরে আসতে হবে এমন নিয়ম নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মূলত চলমান পরিস্থিতিতে জটিলতা এড়াতে জমা রাখা হয়নি। কারণ পরে তিনিই যদি অস্বীকার করেন, তিনি পাঠাননি।’ 

সদস্য ফি নিয়ে সদস্য করার পর রেহানা আফরোজকে বাদ দেওয়া এবং সদস্য না হলেও ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের সাকসেস স্টোরিতে সদস্য হিসেবে তাকে দেখানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এগুলো আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগের ঘটনা। পূর্বের বিষয়গুলোর দায় আমি নেবো না।’

প্রশাসনকে প্রভাবিত করার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ: 

সিলেট উইমেন চেম্বারের অস্বচ্ছতা ও অনিয়ম তুলে ধরে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিল ও প্রশাসক নিয়োগের গত ১৫ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠনের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ১০ ব্যবসায়ী নারী। অভিযোগ আমলে নিয়ে ২৪ ডিসেম্বর সিলেটের জেলা প্রশাসককে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে শুরু থেকেই ধীর গতি দেখা দেয় বলে দাবি অভিযোগকারীদের। 

বারবার তাগাদা দেওয়ার পর গত ২৩ জানুয়ারি উভয়পক্ষের শুনানির দিন নির্ধারণ করে প্রশাসন। শুনানি শেষে অভিযোগগুলো লিখিত আকারে দিতে বলা হয়। ২৬ জানুয়ারি অভিযোগকারীরা লিখিতভাবে অভিযোগ জমা দেন। এরপর এক মাসেরও অধিক সময় অতিবাহিত হলেও আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। 

অভিযোগকারীরা বলছেন, ‘এখনো প্রশাসনের আড়ালে ঘাপটি মেরে আছে পতিত সরকারের দোসররা। তাদের মাধ্যমেই স্বর্ণলতা আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ায় কাজ গতি হারাচ্ছে।’

এ বিষয়ে নারী উদ্যোক্তা সামিয়া বেগম চৌধুরী বলেন, ‘জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের অভিযোগগুলো গুরুত্ব দিয়ে নিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে আন্তরিক থাকার পরও এসব কার্যক্রম বারবার গতি হারাচ্ছে। আমাদের ধারণা, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এখনো স্বৈরাচারের দোসররা ঘাপটি মেরে রয়েছে। পূর্বের সভাপতি তাদের মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে সময়ক্ষেপণ করাচ্ছেন। যাতে কোনো সংস্কার ছাড়া ঘোষিত সময়ে নির্বাচন করে ফেলা যায়।’

এ বিষয়ে উইমেন চেম্বার সভাপতি বলেন, ‘অভিযোগ সত্য নয়। বরং তারা নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। আমাদের নথি গায়েব হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।’

বেশি সদস্য দেখাতে জালিয়াতির অভিযোগ: 

সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বেশি দেখাতে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে উইমেন চেম্বার সভাপতি স্বর্ণলতার বিরুদ্ধে। তৎকালীন সদস্য তালিকার ৮ নম্বর সদস্য নাসরিন সুলতানা ও ২৪ নম্বর সদস্য নাসরিন বেগম একই ব্যক্তি বলে নিশ্চিত করেছেন উইমেন চেম্বারের একাধিক সদস্য। একইভাবে ১৪ নম্বরে ফাহিমা আক্তার ও ১৮ নম্বর সদস্য ফাহিমা একই ব্যক্তি, ২৬ নম্বর সদস্য আসমাউল হুসনা খান ও ৩৯ নম্বর সদস্য হাসনা উল হাসনা একই ব্যক্তি। তালিকা ভালোভাবে ঘাটালে এরকম আরো অস্তিত্বহীন ভুয়া সদস্যের সন্ধান মিলবে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে ২৬ নম্বর সদস্য আসমাউল হুসনা খান বলেন, ‘আমার নামকে একটু পরিবর্তন করে ৩৯ নম্বরে আরেকজন হিসেবে দেখানো হয়েছে। এরকম অনেক জালিয়াতি হয়েছে বিগত দিনে। তারা খুবই চতুরতার সঙ্গে এসব করেছেন। অনুসন্ধান করলে আরো অনেককিছু বেরিয়ে আসবে।’

দেশে না থাকায় সাবেক সভাপতি স্বর্ণলতা রায়ের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পাল্টা অভিযোগ: 

যারা সংস্কারের দাবি তুলেছেন তারাই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ চেম্বার সভাপতি লুবানার। তিনি বলেন, পরিচালনা পরিষদ বরখাস্ত করে প্রশাসক নিয়োগের যে আবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে করা হয়েছে তাতেও জালিয়াতি হয়েছে। সেখানে যে ১০ জন স্বাক্ষর করেছেন তারমধ্যে আরমান আরা বেগম যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেছেন। তিনি আবেদনে স্বাক্ষর করলেন কীভাবে?’

অভিযোগ অস্বীকার করে সামিয়া বেগম চৌধুরী বলেন, ‘এটা মিথ্যাচার। কারণ আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছি ১৫ ডিসেম্বর। আর আরমান আরা বেগম যুক্তরাষ্ট্রে যান ২৪ ডিসেম্বর।’

স্বচ্ছতা ফেরাতে কাজ করছেন বর্তমান সভাপতি: 

স্বর্ণলতা রায় পদত্যাগের পর সভাপতির দায়িত্ব পান সৈয়দা রাবেয়া আক্তার রিয়া। অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি সরে দাঁড়ালে গত ১২ জানুয়ারি উইমেন চেম্বারের সভাপতির দায়িত্ব পান লুবানা ইয়াছমিন শম্পা। দায়িত্ব পেয়ে সংগঠনে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করছেন দাবি জানিয়ে লুবানা বলেন, ‘পালাবদলে আমি সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর সংগঠনে স্বচ্ছতা আনতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। প্রতিষ্ঠার ১০ বছরেও উইমেন চেম্বার ট্যাক্সের আওতায় ছিল না। আমি ট্যাক্সের আওতায় এনেছি। প্রথমবারের মতো অডিট করিয়েছি। ডিভিএস-এর (ডকুমেন্ট ভেরিফাইড সিস্টেম) অন্তর্ভুক্ত অডিট করিয়েছি।’

গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে স্বর্ণলতা রায় টানা ৫ বার সভাপতি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘টানা ৩ বারের বেশি এক পদে না থাকার নিয়ম থাকলেও পরবর্তীসময়ে ২০১৮ সালে সেটি সংশোধন করা হয়। সেসময় আমি যেহেতু পরিচালনা পর্ষদে ছিলাম না, তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব না।’ 

আগে কখনো নির্বাচন হয়নি অভিযোগের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হয়নি এভাবে বলা যাবে না। যেহেতু ভোটার সংখ্যা ৩৩ জন ছিল না। তাই প্রসিকিউর মেইনটেইন হয়েছে, অপ্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচন হয়েছে।’

সিলেটের জেল প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছিল। আমরা সেটা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। পরবর্তী ধাপ তো আর আমাদের হাতে নেই।’
 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মোহনপুরের বিলে পড়ে ছিল মস্তকবিহীন লাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
শেয়ার
মোহনপুরের বিলে পড়ে ছিল মস্তকবিহীন লাশ

রাজশাহীর মোহনপুরে সইপাড়া এলাকায় বিলকুমারী বিলের ডোবা থেকে মস্তকবিহীন একটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ রবিবার ভোরে লাশটি উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, লাশটি গত ৯ মার্চ রাতে নিজ জমিতে সেচ দিতে গিয়ে নিখোঁজ সইপাড়া গ্রামের আলতাফ (৫২) হোসেনের। এর আগে দেহবিহীন তাঁর মস্তক উদ্ধার করা হয়েছিল।

স্থানীয়রা জানান, আলতাফকে হত্যা করে লাশটি সেখানে পুঁতে রাখা হয়েছিল। তবে স্থানীয়রা আজ রবিবার দুপুরে ওই ডোবায় লাশটি দেখতে পান। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হলে পুলিশের একটি টিম ও সিআইডির একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে।

আরো পড়ুন

আ. লীগকে নিষিদ্ধ করেই বাড়ি ফিরব : শরীফ উসমান হাদী

আ. লীগকে নিষিদ্ধ করেই বাড়ি ফিরব : শরীফ উসমান হাদী

 

এদিকে গত ৯ মার্চের পর সইপাড়া গ্রামের আলতাফ হোসেনের প্রতিবেশী রুস্তমের ছেলে শরিফুল ও রাসেল এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।

 

আরো পড়ুন

করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখে উন্নীত করার প্রস্তাব দিল সিপিডি

করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখে উন্নীত করার প্রস্তাব দিল সিপিডি

 

মোহনপুর থানার ওসি আতউর রহমান জানান, ‘পারিবারিক কলহের জেরে আলতাফ হোসেনকে খুন করা হয়। এর আগে, তার দেহবিহীন মাথা উদ্ধার করা হয় বিল থেকে। আজ রবিবার বিলকুমারী বিল থেকে যে দেহটি উদ্ধার করা হলো, সেটি আলতাফ হোসেনের বলেই ধারণা করা হচ্ছে।’

মন্তব্য

২ শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১

কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি
কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি
শেয়ার
২ শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১
প্রতীকী ছবি

যশোরের কেশবপুরে দুই শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে আব্দুল হামিদ নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার (১৬ মার্চ) তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

হামিদ সুফলাকাটি ইউনিয়নের আডুয়া গ্রামের বাসিন্দা

পুলিশ জানায়, শুক্রবার দুই শিশুকে (৭) বাড়ির পাশে ডেকে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন হামিদ। পরে বাড়িতে গিয়ে মায়ের কাছে এ কথা জানায় তারা।

এ ঘটনা জানাজানি হলে হামিদকে ধরে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা।

কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনা উল্লেখ করে এক শিশুর মা হামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন।

মন্তব্য

বাহুবলে হত্যা মামলার পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
শেয়ার
বাহুবলে হত্যা মামলার পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের চাঞ্চল্যকর তাজুল হত্যা মামলার পলাতক আসামি মারুফ মিয়াকে (৩৭) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গতকাল শনিবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে করাঙ্গী ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তার মারুফ মিয়া দক্ষিণ দৌলতপুর গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে।

র‌্যাব-৯ সিলেটের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম শহিদুল ইসলাম সোহাগ জানান, র‌্যাব-৯ শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্পের একটি অভিযানিক দল মারুফ মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে।

তাকে বাহুবল থানায় হস্তান্তর করা হলে রবিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। 

মন্তব্য

১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আলু নিয়ে গেলেন স্বেচ্ছাসেবক ও শ্রমিক লীগের নেতারা

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
শেয়ার
১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আলু নিয়ে গেলেন স্বেচ্ছাসেবক ও শ্রমিক লীগের নেতারা
ছবি : কালের কণ্ঠ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় আদালতের জারি করা ১৪৪ ধারা অমান্য করে কৃষকদের মালিকানাধীন জমির ফসল (আলু) তুলে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। শনিবার (১৫ মার্চ) হাজীপুর ইউনিয়নের সাধনপুর এলাকায় এ কাজ করেন তারা।  

এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুই পক্ষের মারামারির ঘটনাও ঘটে। এ সময় ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশকে জানান ভুক্তভোগী কৃষকরা।

তখন পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ফারুক আহমদ পান্না জড়িতদের মদদ দিচ্ছেন। 

স্থানীয় সূত্র ও থানায় করা অভিযোগ থেকে জানা গেছে, হাজীপুর ইউনিয়নের সাধনপুর গ্রামে বাড়উগাঁও মৌজায় বিভিন্ন দাগে দুই একর কৃষিজমি চাষ করেন কৃষক মুহিবুর রহমান, নাইওর মিয়া, আব্দুল বাছিত বাচ্চু, আব্দুল গফুর, আব্দুস শহীদ, আব্দুল মন্নান, আব্দুল আজিজ, ফয়সল মিয়া গং। তাদের কৃষিজমি থেকে কয়েক দফায় ফসল (আলু) তুলে নিয়ে যান হরিচক গ্রামের বাসিন্দা, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর রহমান (৩৫), দুই নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক খালিস মিয়া ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কয়ছর মিয়া (৪০)।

তাদের নেতৃত্বে সহযোগী শাহিন মিয়া, আব্দুস সালাম সুরুজ, আব্দুর রশীদ, ছবদর আলী, আকমল ও ওয়াজিদ গং ছিল। 

এ ঘটনায় ভূমি দখলের অভিযোগ এনে ২৭ ফেব্রুয়ারি কৃষক মুহিবুর রহমান বাদী হয়ে ফজলুর গংয়ের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় আদেশ অনুযায়ী উভয় পক্ষকে বিরোধপূর্ণ ভূমিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কুলাউড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মুহিত মিয়া ১৪৪ ধারার নোটিশ জারি করেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ফজলুর ও কয়ছর গং শনিবার সকালে মুহিবুর গংদের কৃষিজমিতে জোরপূর্বক লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে প্রবেশ করে কয়েক লাখ টাকার আলু তুলে নিয়ে যান।

 

১১ মার্চ দুপুরে ফজলুর গং লুৎফুর রহমান সুমনসহ স্থানীয় কৃষকদের মালিকানাধীন জমি থেকে মাটি কেটে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করার কারণ জানতে চাইলে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হন লুৎফুর। 

পরে ফজলুর গংয়ের বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় অভিযোগ করেন লুৎফর। অন্যদিকে অবাধে মাটি কাটা ও কৃষিজমি থেকে ফসল আলু তোলার বিষয়ে বাধা দিতে গেলে প্রতিপক্ষের হামলায় মুহিবুর ছেলে মাহবুব হোসাইন (৩০) আহত হন।

মুহিবুর রহমান, নাইওর মিয়া, লুৎফুর রহমানসহ আরো অনেক কৃষক বলেন, ‘প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের দোসর ফজলুর ও কয়ছর গং আমাদের মৌরসি জমি জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। মনু নদীর চর এলাকায় আমাদের জমিতে আলুসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করি।

জমি থেকে ফসল উত্তোলনের সময় আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বাধা দেয় তারা। ওই ঘটনায় কুলাউড়া থানা ও আদালতে মামলা করি। পরে আদালতের নির্দেশ ভঙ্গ করে প্রতিপক্ষরা ফসলিজমি থেকে প্রায় ৪০০ মণ আলু তুলে নিয়ে যায়। যার বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। কিন্তু পুলিশ তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের হাজীপুর ইউনিয়নে বিএনপি নেতা পান্না প্রতিপক্ষকে মদদ দিচ্ছেন।’ 

ফজলুরকে একাধিকবার কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে কয়ছর তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা কেন কৃষকদের জমি থেকে আলু তুলব এবং মাটি বিক্রি করব। ঠিকাদার মাটি আনছে ডিসি খতিয়ানের জমি থেকে এবং কিছু মাটি কৃষকদের টাকা দিয়ে আনছে।’ 

অভিযোগ অস্বীকার করে পান্না বলেন, ‘আসন্ন হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ মহল আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। যারা কৃষকদের জমি থেকে ফসল ও মাটি কেটেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বলেছি।' 

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আল-আমিন সরকার বলেন, ঠিকাদার যদি কৃষকদের জমি থেকে ক্ষতিপূরণ ছাড়া মাটি নিয়ে থাকে, তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আর কৃষকের জমির মালিকানা থাকলে তাকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হবে। 

এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মুহিত মিয়া বলেন, জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ থাকায় আদালতের নির্দেশে ১৪৪ ধারার নোটিশ দিয়েছি। নোটিশ ভঙ্গকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।  

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আপছার বলেন, আদালতের নির্দেশ ভঙ্গ করে কৃষকদের জমি থেকে ফসল তোলার অভিযোগ পেয়েছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন বলেন, কৃষকদের মালিকানাধীন জমি থেকে এভাবে কেউ মাটি কেটে নিতে পারবে না। কৃষকদের পক্ষে লিখিত অভিযোগ পেলে মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ