সিলেট উইমেন্স চেম্বার অব কমার্স

আগাগোড়া অনিয়ম আর একনায়কতন্ত্রের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
শেয়ার
আগাগোড়া অনিয়ম আর একনায়কতন্ত্রের গল্প
সংগৃহীত ছবি

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এক দশকে একবারও হয়নি ভোটগ্রহণ। তবে ঠিকই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বৈরতন্ত্র। অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার যেন অনন্য নজির গড়েছে সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। কর্তৃত্ব ধরে রাখতে সদস্য অন্তর্ভুক্তিতে হয়েছে অনিয়ম, আত্মীয়করণসহ নানা কৌশল।

প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে অনুগতদের। টানা ৩ বারের বেশি একপদে থাকার নিয়ম না থাকলেও সভাপতি পদে ৫ বারই ছিলেন দেশ ছেড়ে পালানো স্বর্ণলতা রায়। সেজন্য সংশোধন করেন গঠনতন্ত্র। এভাবেই উইমেন চেম্বারে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন স্বর্ণলতা। এরপর থেকে এসব অনিয়মের খবর প্রকাশ হতে থাকে। নানা সময় স্বেচ্ছাচারিতা ও বঞ্চনার শিকার ব্যবসায়ী নারীরা এখন মুখ খুলছেন। সে তালিকায় যেমন উইমেন চেম্বারের সদস্যরা আছেন, তেমনি নানা কৌশলে সদস্য বঞ্চিতরাও আছেন।

তাদের দাবি, ‘আগে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে সদস্য নবায়ন, তারপর নির্বাচন।’

এসব ব্যবসায়ী নারীদের অভিযোগ, ‘উইমেন চেম্বারের কর্তৃত্ব নিজের মুঠোয় রাখতে স্বর্ণলতা যোগ্য ও নেতৃত্বগুণ সম্পন্নদের সদস্য হতে দেননি নানা কৌশলে। ফলে সিলেটের মতো অঞ্চলে তার আমলে উইমেন চেম্বারের সদস্য সংখ্যা অর্ধশতকে পৌঁছাতে পারেনি। সদস্য সংখ্যা কম থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করতে হয়নি। আবার বিভিন্ন সময়ে বেশি সদস্য দেখানোর প্রয়োজন পড়লে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে একই ব্যক্তির নাম অদলবদল করে একাধিকবার দেখিয়েছেন এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

অনিয়ম ঢাকতেই তড়িঘড়ি নির্বাচনের আয়োজনের চেষ্টা: 

অনিয়ম ও অপকর্ম ঢাকতে তড়িঘড়ি নির্বাচনের আয়োজন চলছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ী নারীদের। তারা বলেছেন, ‘সারা দেশে কোথাও নির্বাচন নেই অথচ যে প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনের সংস্কৃতিই নেই, সেখানে নির্বাচন আয়োজনের তোড়জোড়। মূলত অনুগতদের হাতে নেতৃত্ব রাখতে এই তড়িঘড়ি। এতে অতীতের অনিয়মগুলো চাপা দেওয়া সহজ হবে।’

সদ্য উইমেন চেম্বারের সদস্য হওয়া আরশি বিজনেস হাউসের স্বত্বাধিকারী সামিয়া বেগম চৌধুরী বলেন, ‘এত বছর আমাকে সদস্য হতে দেওয়া হয়নি। সবশেষ গত নভেম্বরেও সদস্য ফরম সংগ্রহ করতে গেলে তারা বললেন, সংগঠনের অফিসে কোনো ফরম নেই। পরে অন্য আরেক উদ্যোক্তার সংগ্রহ করা ফরম চেয়ে নিয়ে সদস্য হয়েছি।’ 

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সারা দেশে সংস্কারের দাবি উঠেছে। অথচ এখানে তারা অপকর্ম ধামাচাপা দিতে সংস্কার ছাড়াই তড়িঘড়ি নির্বাচন চান। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মূলত তড়িঘড়ি করছেন।’ তার দাবি, নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংস্কার প্রয়োজন। যোগ্য যারা তাদের আগে সদস্য করা হোক। এজন্য প্রশাসক নিয়োগ করে সংস্কার প্রয়োজন।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা:

সর্বশেষ তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৮ মে উইমেন চেম্বারের নির্বাচন হওয়ার কথা। এর আগে প্রথমবার ঘোষিত তফসিলে ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিন ধার্য হয়। পরে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সালিশি বৈঠকে নির্বাচন পেছানো হয় এবং ১২ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সদস্য অন্তর্ভুক্তির জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।

সদস্য না করতে নানা অপকৌলের অভিযোগ: 

সব যোগ্যতা থাকার পরও উইমেন চেম্বারের সদস্য হতে পারেননি এমন অভিযোগ অসংখ্য নারী ব্যবসায়ীর। অনেককে ফরমই দেওয়া হয়নি। আবার অনেকে সদস্য ফি জমা দিয়ে সদস্য হলেও পরবর্তীসময়ে জানানো হয় তিনি সংগঠনের সদস্যই নন। তেমনই একজন স্বনামধন্য অনলাইন শপ ‘প্রিংক’-এর স্বত্বাধিকারী রেহানা আফরোজ খান। 

তিনি বলেন, ‘আমি গত বছরের অক্টোবরে উইমেন চেম্বারের অ্যাসোসিয়েট সদস্য হই। ৩ হাজার ২৫০ টাকা সদস্য ফি জমার মানি রিসিটও আমার সংরক্ষণে আছে। এমনকি উইমেন চেম্বারের ওয়েবসাইটের সাকসেস স্টোরিতেও আমার ও আমার প্রতিষ্ঠানের ছবি-ভিডিওসহ স্টোরি আছে। সেখানেও তারা আমাকে উইমেন চেম্বারের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অথচ যখনই আমি নির্বাচন করার ইচ্ছে পোষণ করি তখন জানানো হয়, আমি নাকি উইমেন চেম্বারের সদস্যই নই। সদস্য হিসেবে আমার কোনো কাগজপত্র তাদের সংরক্ষণে নেই!’ 

তিনি বলেন, ‘এরপর আমি আবারো অর্ডিনারি সদস্য ফরম (গোলাপি ফরম) সংগ্রহ করি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সদস্য ফি’র টাকাসহ লোক মারফতে ফরম জমা দিতে পাঠালে তারা তা গ্রহণ করেননি।’

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ফরম জমা দেওয়ায় ব্যর্থ হয়েছেন এমন অভিযোগ আরো অনেকের। তাদের একজন ইয়াসিন এন্টারপ্রাইজের পরিচালক শেখ আমিনা রহমান শিউলি। তিনি বলেন, ‘আমি সব ধরনের প্রয়োজনীয় কাগজসহ ফরম ফিলআপ করে সদস্য ফি’সহ ফরম জমা দিতে পাঠিয়েছিলাম। তারা জমা রাখেননি।’

এসব বিষয়ে চেম্বারের বর্তমান সভাপতি লুবানা ইয়াসমিন শম্পা বলেন, ‘নানা ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। রেহানা আফরোজ ও ন্যান্সি নামের দুজনের ফরম নিয়ে এক ব্যক্তি এসেছিলেন। ওই ব্যক্তি ন্যান্সির স্টাফ হওয়ায় তার ফরম আমরা রেখেছি। কিন্তু রেহানা আফরোজের ফরম রাখিনি।’ 

সশরীরে আসতে হবে এমন নিয়ম নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মূলত চলমান পরিস্থিতিতে জটিলতা এড়াতে জমা রাখা হয়নি। কারণ পরে তিনিই যদি অস্বীকার করেন, তিনি পাঠাননি।’ 

সদস্য ফি নিয়ে সদস্য করার পর রেহানা আফরোজকে বাদ দেওয়া এবং সদস্য না হলেও ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের সাকসেস স্টোরিতে সদস্য হিসেবে তাকে দেখানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এগুলো আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগের ঘটনা। পূর্বের বিষয়গুলোর দায় আমি নেবো না।’

প্রশাসনকে প্রভাবিত করার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ: 

সিলেট উইমেন চেম্বারের অস্বচ্ছতা ও অনিয়ম তুলে ধরে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিল ও প্রশাসক নিয়োগের গত ১৫ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠনের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ১০ ব্যবসায়ী নারী। অভিযোগ আমলে নিয়ে ২৪ ডিসেম্বর সিলেটের জেলা প্রশাসককে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে শুরু থেকেই ধীর গতি দেখা দেয় বলে দাবি অভিযোগকারীদের। 

বারবার তাগাদা দেওয়ার পর গত ২৩ জানুয়ারি উভয়পক্ষের শুনানির দিন নির্ধারণ করে প্রশাসন। শুনানি শেষে অভিযোগগুলো লিখিত আকারে দিতে বলা হয়। ২৬ জানুয়ারি অভিযোগকারীরা লিখিতভাবে অভিযোগ জমা দেন। এরপর এক মাসেরও অধিক সময় অতিবাহিত হলেও আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। 

অভিযোগকারীরা বলছেন, ‘এখনো প্রশাসনের আড়ালে ঘাপটি মেরে আছে পতিত সরকারের দোসররা। তাদের মাধ্যমেই স্বর্ণলতা আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ায় কাজ গতি হারাচ্ছে।’

এ বিষয়ে নারী উদ্যোক্তা সামিয়া বেগম চৌধুরী বলেন, ‘জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের অভিযোগগুলো গুরুত্ব দিয়ে নিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে আন্তরিক থাকার পরও এসব কার্যক্রম বারবার গতি হারাচ্ছে। আমাদের ধারণা, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এখনো স্বৈরাচারের দোসররা ঘাপটি মেরে রয়েছে। পূর্বের সভাপতি তাদের মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে সময়ক্ষেপণ করাচ্ছেন। যাতে কোনো সংস্কার ছাড়া ঘোষিত সময়ে নির্বাচন করে ফেলা যায়।’

এ বিষয়ে উইমেন চেম্বার সভাপতি বলেন, ‘অভিযোগ সত্য নয়। বরং তারা নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। আমাদের নথি গায়েব হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।’

বেশি সদস্য দেখাতে জালিয়াতির অভিযোগ: 

সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বেশি দেখাতে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে উইমেন চেম্বার সভাপতি স্বর্ণলতার বিরুদ্ধে। তৎকালীন সদস্য তালিকার ৮ নম্বর সদস্য নাসরিন সুলতানা ও ২৪ নম্বর সদস্য নাসরিন বেগম একই ব্যক্তি বলে নিশ্চিত করেছেন উইমেন চেম্বারের একাধিক সদস্য। একইভাবে ১৪ নম্বরে ফাহিমা আক্তার ও ১৮ নম্বর সদস্য ফাহিমা একই ব্যক্তি, ২৬ নম্বর সদস্য আসমাউল হুসনা খান ও ৩৯ নম্বর সদস্য হাসনা উল হাসনা একই ব্যক্তি। তালিকা ভালোভাবে ঘাটালে এরকম আরো অস্তিত্বহীন ভুয়া সদস্যের সন্ধান মিলবে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে ২৬ নম্বর সদস্য আসমাউল হুসনা খান বলেন, ‘আমার নামকে একটু পরিবর্তন করে ৩৯ নম্বরে আরেকজন হিসেবে দেখানো হয়েছে। এরকম অনেক জালিয়াতি হয়েছে বিগত দিনে। তারা খুবই চতুরতার সঙ্গে এসব করেছেন। অনুসন্ধান করলে আরো অনেককিছু বেরিয়ে আসবে।’

দেশে না থাকায় সাবেক সভাপতি স্বর্ণলতা রায়ের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পাল্টা অভিযোগ: 

যারা সংস্কারের দাবি তুলেছেন তারাই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ চেম্বার সভাপতি লুবানার। তিনি বলেন, পরিচালনা পরিষদ বরখাস্ত করে প্রশাসক নিয়োগের যে আবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে করা হয়েছে তাতেও জালিয়াতি হয়েছে। সেখানে যে ১০ জন স্বাক্ষর করেছেন তারমধ্যে আরমান আরা বেগম যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেছেন। তিনি আবেদনে স্বাক্ষর করলেন কীভাবে?’

অভিযোগ অস্বীকার করে সামিয়া বেগম চৌধুরী বলেন, ‘এটা মিথ্যাচার। কারণ আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছি ১৫ ডিসেম্বর। আর আরমান আরা বেগম যুক্তরাষ্ট্রে যান ২৪ ডিসেম্বর।’

স্বচ্ছতা ফেরাতে কাজ করছেন বর্তমান সভাপতি: 

স্বর্ণলতা রায় পদত্যাগের পর সভাপতির দায়িত্ব পান সৈয়দা রাবেয়া আক্তার রিয়া। অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি সরে দাঁড়ালে গত ১২ জানুয়ারি উইমেন চেম্বারের সভাপতির দায়িত্ব পান লুবানা ইয়াছমিন শম্পা। দায়িত্ব পেয়ে সংগঠনে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করছেন দাবি জানিয়ে লুবানা বলেন, ‘পালাবদলে আমি সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর সংগঠনে স্বচ্ছতা আনতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। প্রতিষ্ঠার ১০ বছরেও উইমেন চেম্বার ট্যাক্সের আওতায় ছিল না। আমি ট্যাক্সের আওতায় এনেছি। প্রথমবারের মতো অডিট করিয়েছি। ডিভিএস-এর (ডকুমেন্ট ভেরিফাইড সিস্টেম) অন্তর্ভুক্ত অডিট করিয়েছি।’

গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে স্বর্ণলতা রায় টানা ৫ বার সভাপতি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘টানা ৩ বারের বেশি এক পদে না থাকার নিয়ম থাকলেও পরবর্তীসময়ে ২০১৮ সালে সেটি সংশোধন করা হয়। সেসময় আমি যেহেতু পরিচালনা পর্ষদে ছিলাম না, তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব না।’ 

আগে কখনো নির্বাচন হয়নি অভিযোগের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হয়নি এভাবে বলা যাবে না। যেহেতু ভোটার সংখ্যা ৩৩ জন ছিল না। তাই প্রসিকিউর মেইনটেইন হয়েছে, অপ্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচন হয়েছে।’

সিলেটের জেল প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছিল। আমরা সেটা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। পরবর্তী ধাপ তো আর আমাদের হাতে নেই।’
 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ভোলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুসহ দুজনের মৃত্যু

ভোলা প্রতিনিধি
ভোলা প্রতিনিধি
শেয়ার
ভোলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুসহ দুজনের মৃত্যু
সংগৃহীত ছবি

ভোলার দৌলতখান উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একই দিনে প্রাণ হারিয়েছে শিশুসহ ২ জন। তাদের মধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় গুরুতর আহত হওয়া তাহিয়া নামের ৪ বছরের এক শিশু ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। অপরদিকে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হওয়া আব্দুস সাত্তার (৫৫) নামের এক মাদরাসা সুপার ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

নিহত তাহিয়া উপজেলার চরখলিফা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেহেদী হাসান ইকরামের মেয়ে।

নিহত আব্দুস সাত্তার উপজেলার মধ্য জয়নগর দাখিল মাদরাসার সুপার ছিলেন।

আরো পড়ুন
ঘোড়ার মাংস খাওয়া কি জায়েজ?

ঘোড়ার মাংস খাওয়া কি জায়েজ?

 

তাহিয়ার পরিবার সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বিকেলের দিকে বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল শিশুটি। এ সময় দ্রুতগামী একটি অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শিশুটিকে ধাক্কা দেয়। পরে স্থানীয়রা শিশুটিকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৪টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।

অপর দিকে ভোলার উপশহর বাংলাবাজারের দক্ষিণ পাশে টেকনিক্যাল কলেজের সামনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে মাদরাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মধ্য জয়নগর দাখিল মাদরাসার সুপার আবদুস সত্তার গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার প্রথমে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পিজি হাসপাতালে পাঠান। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বুধবার ভোর ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

আরো পড়ুন
হাইওয়ে পুলিশের হাতে ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক কারবারি আটক

হাইওয়ে পুলিশের হাতে ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক কারবারি আটক

 

দৌলতখান থানার ওসি মো. জিল্লুর রহমান দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে কালের কণ্ঠকে জানান, শিশু তাহিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। আর মারাসার সুপার আব্দুস সাত্তারের মৃত্যুর বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য

শাহীন ক্যাডেট স্কুলের বিরুদ্ধে এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
শেয়ার
শাহীন ক্যাডেট স্কুলের বিরুদ্ধে এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ
ছবি: কালের কণ্ঠ

গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সফিপুর এলাকার শাহীন ক্যাডেট স্কুলের বিরুদ্ধে এসএসসি-২০২৫ পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত পরীক্ষার ফি ২৫০০ টাকা হলেও এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে জন প্রতি ৮০০০-১০০০০ টাকা আদায় করছে শাহিন ক্যাডেট স্কুল। যা কোচিং ও পরীক্ষার ফি বাবদ দেখানো হচ্ছে।

এ ছাড়া টেস্ট পরীক্ষার জন্য পুনরায় ৭০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী না দিতে পারলে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারবে না। 

প্র্যাকটিক্যাল খাতার জন্যও ১০০০ টাকা করে নির্ধারিত করেছে তারা। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের বেতন না দিলে  প্রবেশ পত্র দেওয়া হবে না বলেও অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।

অপরদিকে শাহীন ক্যাডেট স্কুলের সফিপুর শাখার নিজস্ব কোনো ইন নম্বর না থাকায় অন্য স্কুলের নামে পরীক্ষা দেওয়ানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আশপাশে কোনো কিন্ডারগার্টেন ও কেজি স্কুল স্থাপন করা সরকারি নিয়ম বহির্ভূত থাকলেও নিয়ম নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে সফিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সফিপুর মালেক চৌধুরী মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ১০০ ফিট পাশেই এই শাহীন ক্যাডেট স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে সরকারি স্কুল শিক্ষার্থী সংকটে পড়েছে।

পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, 'ফরম পূরণের জন্য অতিরিক্ত ফি, কোচিং বাণিজ্য, প্রাকটিক্যাল খাতা, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বেতন, অবৈধভাবে নামে-বেনামে বাড়তি টাকা আদায় করছে শাহীন ক্যাডেট স্কুল।

যা আমাদের জন্য কষ্টকর। এ ছাড়া আমাদের কোনো খেলার মাঠ নেই। বিনোদনের কোনো জায়গায়ও নেই।'

শাহীন ক্যাডেট স্কুল সফিপুর শাখার পরিচালক আওলাদ হোসেন ও ইকবাল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোচিং ফি, এসএসসির ফরম ফিসহ অন্যান্য ফি বাবদ ৮০০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। যা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে অবগত করা হয়েছে।

আমাদের স্কুলের ইন নম্বর না থাকায় অন্য স্কুলের নামে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা অংশগ্রহণ করানো হয়।

সরজমিনে বুধবার (১৯ মার্চ) ওই স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, বাসা-বাড়ির জন্য নির্মাণ করা একটি ভবনে স্কুলের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ছোট ছোট শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে। নেই বিনোদনের কোনো জায়গা বা খেলার মাঠ। নিয়মনীতির কোনো কিছুই নেই সেখানে। একটি জাতীয় পতাকা টানানো রয়েছে যা খুবই নোংরা ও পুরাতন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শওকত আকবর খান বলেন, কোচিং বাণিজ্যের কোনো বিধান নেই। ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়ের কোনো নিয়ম নেই। এ ছাড়া কোনো কোচিং বাণিজ্য করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য

রূপগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ১

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
শেয়ার
রূপগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ১
জেলার মানচিত্র

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়া পূর্নবাসন কেন্দ্র এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় হাসিব (৪০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৩জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক গুরুতর আহত হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পূর্নবাসন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

নিহত হাসিব উপজেলার চনপাড়া পূর্নবাসন কেন্দ্র এলাকার ৬নং ওয়ার্ডের মৃত আয়নাল হোসেনের ছেলে।

 

আরো পড়ুন
হাইওয়ে পুলিশের হাতে ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক কারবারি আটক

হাইওয়ে পুলিশের হাতে ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক কারবারি আটক

 

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাতে চনপাড়ার আধিপত্য নিয়ে শামীম ও তার লোকজনের সঙ্গে  রাব্বানী, রফিক, শাকিল ও তার লোকজনের বৈঠক হয়। এ বৈঠকে শামীম ও রাব্বানীর দুই গ্রুপের লোকজনের মাঝে কথা কাটাকাটি ও বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে দুই গ্রুপের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় একপক্ষ অপর পক্ষকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করতে থাকে।

এ সময় এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাতভর সংঘর্ষে দারোয়ার বাবুর ভাই হাসিবসহ ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়। হাসিবকে আহত অবস্থায় প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথেই হাসিবের মৃত্যু হয়।
এছাড়া সংঘর্ষের উভয়পক্ষের বিজয়, রানা, বিল্লালসহ প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হয়। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে হাসিবের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে চনপাড়া ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় উভয় গ্রুপের সদস্যরা। এসময় আপনের ঘর, বশিরের ঘরসহ শতাধিক বাড়িঘর ও দোকানপাটে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এমনি লুটপাটে বাদ যায়নি মহিলাদের কানের দুল ও গলার চেইনও।

এ ঘটনায় পুরো এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।  খবর পেয়ে যৌথ বাহিনী চনপাড়া অভিযান পরিচালনা করছে সকাল থেকেই। দিনব্যাপী যৌথ বাহিনী এ অভিযান পরিচালিত হয়। পুলিশ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। 

এ ব্যাপারে জেলা গ সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান বলেন, চনপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শামীম ও রাব্বানী গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে চনপাড়া অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। দোষী যেই হউক তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

হাইওয়ে পুলিশের হাতে ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক কারবারি আটক

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
শেয়ার
হাইওয়ে পুলিশের হাতে ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক কারবারি আটক

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ আবু সাঈদ (২৩)  নামের এক যুবককে আটক করেছে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানা পুলিশ। উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বিশ্বম্ভরদী এলাকা থেকে বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুরে তাকে আটক করা হয়। 

আটক আবু সাঈদ যশোর জেলার বেনাপোল উপজেলার পুটখালী গ্রামের বাসিন্দা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান।

 

মো. রোকিবুজ্জামান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বরিশাল মহাসড়কের গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের বিশ্বম্ভরদী এলাকা অভিযান চালানো হয়। অভিযানে একটি যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশির সময় ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ আবু সাঈদ নামের ওই যুবকে আটক করা হয়। 

তিনি বলেন,‘মাদকসহ আটক আবু সাঈদের বিরুদ্ধে হাইওয়ে থানা পুলিশ বাদী হয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছে। তাকে আগামীকাল গোপালগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ