সিলেট উইমেন্স চেম্বার অব কমার্স

আগাগোড়া অনিয়ম আর একনায়কতন্ত্রের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
শেয়ার
আগাগোড়া অনিয়ম আর একনায়কতন্ত্রের গল্প
সংগৃহীত ছবি

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এক দশকে একবারও হয়নি ভোটগ্রহণ। তবে ঠিকই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বৈরতন্ত্র। অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার যেন অনন্য নজির গড়েছে সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। কর্তৃত্ব ধরে রাখতে সদস্য অন্তর্ভুক্তিতে হয়েছে অনিয়ম, আত্মীয়করণসহ নানা কৌশল।

প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে অনুগতদের। টানা ৩ বারের বেশি একপদে থাকার নিয়ম না থাকলেও সভাপতি পদে ৫ বারই ছিলেন দেশ ছেড়ে পালানো স্বর্ণলতা রায়। সেজন্য সংশোধন করেন গঠনতন্ত্র। এভাবেই উইমেন চেম্বারে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন স্বর্ণলতা। এরপর থেকে এসব অনিয়মের খবর প্রকাশ হতে থাকে। নানা সময় স্বেচ্ছাচারিতা ও বঞ্চনার শিকার ব্যবসায়ী নারীরা এখন মুখ খুলছেন। সে তালিকায় যেমন উইমেন চেম্বারের সদস্যরা আছেন, তেমনি নানা কৌশলে সদস্য বঞ্চিতরাও আছেন।

তাদের দাবি, ‘আগে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে সদস্য নবায়ন, তারপর নির্বাচন।’

এসব ব্যবসায়ী নারীদের অভিযোগ, ‘উইমেন চেম্বারের কর্তৃত্ব নিজের মুঠোয় রাখতে স্বর্ণলতা যোগ্য ও নেতৃত্বগুণ সম্পন্নদের সদস্য হতে দেননি নানা কৌশলে। ফলে সিলেটের মতো অঞ্চলে তার আমলে উইমেন চেম্বারের সদস্য সংখ্যা অর্ধশতকে পৌঁছাতে পারেনি। সদস্য সংখ্যা কম থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করতে হয়নি। আবার বিভিন্ন সময়ে বেশি সদস্য দেখানোর প্রয়োজন পড়লে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে একই ব্যক্তির নাম অদলবদল করে একাধিকবার দেখিয়েছেন এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

অনিয়ম ঢাকতেই তড়িঘড়ি নির্বাচনের আয়োজনের চেষ্টা: 

অনিয়ম ও অপকর্ম ঢাকতে তড়িঘড়ি নির্বাচনের আয়োজন চলছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ী নারীদের। তারা বলেছেন, ‘সারা দেশে কোথাও নির্বাচন নেই অথচ যে প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনের সংস্কৃতিই নেই, সেখানে নির্বাচন আয়োজনের তোড়জোড়। মূলত অনুগতদের হাতে নেতৃত্ব রাখতে এই তড়িঘড়ি। এতে অতীতের অনিয়মগুলো চাপা দেওয়া সহজ হবে।’

সদ্য উইমেন চেম্বারের সদস্য হওয়া আরশি বিজনেস হাউসের স্বত্বাধিকারী সামিয়া বেগম চৌধুরী বলেন, ‘এত বছর আমাকে সদস্য হতে দেওয়া হয়নি। সবশেষ গত নভেম্বরেও সদস্য ফরম সংগ্রহ করতে গেলে তারা বললেন, সংগঠনের অফিসে কোনো ফরম নেই। পরে অন্য আরেক উদ্যোক্তার সংগ্রহ করা ফরম চেয়ে নিয়ে সদস্য হয়েছি।’ 

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সারা দেশে সংস্কারের দাবি উঠেছে। অথচ এখানে তারা অপকর্ম ধামাচাপা দিতে সংস্কার ছাড়াই তড়িঘড়ি নির্বাচন চান। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মূলত তড়িঘড়ি করছেন।’ তার দাবি, নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংস্কার প্রয়োজন। যোগ্য যারা তাদের আগে সদস্য করা হোক। এজন্য প্রশাসক নিয়োগ করে সংস্কার প্রয়োজন।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা:

সর্বশেষ তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৮ মে উইমেন চেম্বারের নির্বাচন হওয়ার কথা। এর আগে প্রথমবার ঘোষিত তফসিলে ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিন ধার্য হয়। পরে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সালিশি বৈঠকে নির্বাচন পেছানো হয় এবং ১২ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সদস্য অন্তর্ভুক্তির জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।

সদস্য না করতে নানা অপকৌলের অভিযোগ: 

সব যোগ্যতা থাকার পরও উইমেন চেম্বারের সদস্য হতে পারেননি এমন অভিযোগ অসংখ্য নারী ব্যবসায়ীর। অনেককে ফরমই দেওয়া হয়নি। আবার অনেকে সদস্য ফি জমা দিয়ে সদস্য হলেও পরবর্তীসময়ে জানানো হয় তিনি সংগঠনের সদস্যই নন। তেমনই একজন স্বনামধন্য অনলাইন শপ ‘প্রিংক’-এর স্বত্বাধিকারী রেহানা আফরোজ খান। 

তিনি বলেন, ‘আমি গত বছরের অক্টোবরে উইমেন চেম্বারের অ্যাসোসিয়েট সদস্য হই। ৩ হাজার ২৫০ টাকা সদস্য ফি জমার মানি রিসিটও আমার সংরক্ষণে আছে। এমনকি উইমেন চেম্বারের ওয়েবসাইটের সাকসেস স্টোরিতেও আমার ও আমার প্রতিষ্ঠানের ছবি-ভিডিওসহ স্টোরি আছে। সেখানেও তারা আমাকে উইমেন চেম্বারের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অথচ যখনই আমি নির্বাচন করার ইচ্ছে পোষণ করি তখন জানানো হয়, আমি নাকি উইমেন চেম্বারের সদস্যই নই। সদস্য হিসেবে আমার কোনো কাগজপত্র তাদের সংরক্ষণে নেই!’ 

তিনি বলেন, ‘এরপর আমি আবারো অর্ডিনারি সদস্য ফরম (গোলাপি ফরম) সংগ্রহ করি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সদস্য ফি’র টাকাসহ লোক মারফতে ফরম জমা দিতে পাঠালে তারা তা গ্রহণ করেননি।’

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ফরম জমা দেওয়ায় ব্যর্থ হয়েছেন এমন অভিযোগ আরো অনেকের। তাদের একজন ইয়াসিন এন্টারপ্রাইজের পরিচালক শেখ আমিনা রহমান শিউলি। তিনি বলেন, ‘আমি সব ধরনের প্রয়োজনীয় কাগজসহ ফরম ফিলআপ করে সদস্য ফি’সহ ফরম জমা দিতে পাঠিয়েছিলাম। তারা জমা রাখেননি।’

এসব বিষয়ে চেম্বারের বর্তমান সভাপতি লুবানা ইয়াসমিন শম্পা বলেন, ‘নানা ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। রেহানা আফরোজ ও ন্যান্সি নামের দুজনের ফরম নিয়ে এক ব্যক্তি এসেছিলেন। ওই ব্যক্তি ন্যান্সির স্টাফ হওয়ায় তার ফরম আমরা রেখেছি। কিন্তু রেহানা আফরোজের ফরম রাখিনি।’ 

সশরীরে আসতে হবে এমন নিয়ম নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মূলত চলমান পরিস্থিতিতে জটিলতা এড়াতে জমা রাখা হয়নি। কারণ পরে তিনিই যদি অস্বীকার করেন, তিনি পাঠাননি।’ 

সদস্য ফি নিয়ে সদস্য করার পর রেহানা আফরোজকে বাদ দেওয়া এবং সদস্য না হলেও ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের সাকসেস স্টোরিতে সদস্য হিসেবে তাকে দেখানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এগুলো আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগের ঘটনা। পূর্বের বিষয়গুলোর দায় আমি নেবো না।’

প্রশাসনকে প্রভাবিত করার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ: 

সিলেট উইমেন চেম্বারের অস্বচ্ছতা ও অনিয়ম তুলে ধরে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিল ও প্রশাসক নিয়োগের গত ১৫ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠনের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ১০ ব্যবসায়ী নারী। অভিযোগ আমলে নিয়ে ২৪ ডিসেম্বর সিলেটের জেলা প্রশাসককে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে শুরু থেকেই ধীর গতি দেখা দেয় বলে দাবি অভিযোগকারীদের। 

বারবার তাগাদা দেওয়ার পর গত ২৩ জানুয়ারি উভয়পক্ষের শুনানির দিন নির্ধারণ করে প্রশাসন। শুনানি শেষে অভিযোগগুলো লিখিত আকারে দিতে বলা হয়। ২৬ জানুয়ারি অভিযোগকারীরা লিখিতভাবে অভিযোগ জমা দেন। এরপর এক মাসেরও অধিক সময় অতিবাহিত হলেও আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। 

অভিযোগকারীরা বলছেন, ‘এখনো প্রশাসনের আড়ালে ঘাপটি মেরে আছে পতিত সরকারের দোসররা। তাদের মাধ্যমেই স্বর্ণলতা আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ায় কাজ গতি হারাচ্ছে।’

এ বিষয়ে নারী উদ্যোক্তা সামিয়া বেগম চৌধুরী বলেন, ‘জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের অভিযোগগুলো গুরুত্ব দিয়ে নিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে আন্তরিক থাকার পরও এসব কার্যক্রম বারবার গতি হারাচ্ছে। আমাদের ধারণা, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এখনো স্বৈরাচারের দোসররা ঘাপটি মেরে রয়েছে। পূর্বের সভাপতি তাদের মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে সময়ক্ষেপণ করাচ্ছেন। যাতে কোনো সংস্কার ছাড়া ঘোষিত সময়ে নির্বাচন করে ফেলা যায়।’

এ বিষয়ে উইমেন চেম্বার সভাপতি বলেন, ‘অভিযোগ সত্য নয়। বরং তারা নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। আমাদের নথি গায়েব হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।’

বেশি সদস্য দেখাতে জালিয়াতির অভিযোগ: 

সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বেশি দেখাতে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে উইমেন চেম্বার সভাপতি স্বর্ণলতার বিরুদ্ধে। তৎকালীন সদস্য তালিকার ৮ নম্বর সদস্য নাসরিন সুলতানা ও ২৪ নম্বর সদস্য নাসরিন বেগম একই ব্যক্তি বলে নিশ্চিত করেছেন উইমেন চেম্বারের একাধিক সদস্য। একইভাবে ১৪ নম্বরে ফাহিমা আক্তার ও ১৮ নম্বর সদস্য ফাহিমা একই ব্যক্তি, ২৬ নম্বর সদস্য আসমাউল হুসনা খান ও ৩৯ নম্বর সদস্য হাসনা উল হাসনা একই ব্যক্তি। তালিকা ভালোভাবে ঘাটালে এরকম আরো অস্তিত্বহীন ভুয়া সদস্যের সন্ধান মিলবে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে ২৬ নম্বর সদস্য আসমাউল হুসনা খান বলেন, ‘আমার নামকে একটু পরিবর্তন করে ৩৯ নম্বরে আরেকজন হিসেবে দেখানো হয়েছে। এরকম অনেক জালিয়াতি হয়েছে বিগত দিনে। তারা খুবই চতুরতার সঙ্গে এসব করেছেন। অনুসন্ধান করলে আরো অনেককিছু বেরিয়ে আসবে।’

দেশে না থাকায় সাবেক সভাপতি স্বর্ণলতা রায়ের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পাল্টা অভিযোগ: 

যারা সংস্কারের দাবি তুলেছেন তারাই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ চেম্বার সভাপতি লুবানার। তিনি বলেন, পরিচালনা পরিষদ বরখাস্ত করে প্রশাসক নিয়োগের যে আবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে করা হয়েছে তাতেও জালিয়াতি হয়েছে। সেখানে যে ১০ জন স্বাক্ষর করেছেন তারমধ্যে আরমান আরা বেগম যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেছেন। তিনি আবেদনে স্বাক্ষর করলেন কীভাবে?’

অভিযোগ অস্বীকার করে সামিয়া বেগম চৌধুরী বলেন, ‘এটা মিথ্যাচার। কারণ আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছি ১৫ ডিসেম্বর। আর আরমান আরা বেগম যুক্তরাষ্ট্রে যান ২৪ ডিসেম্বর।’

স্বচ্ছতা ফেরাতে কাজ করছেন বর্তমান সভাপতি: 

স্বর্ণলতা রায় পদত্যাগের পর সভাপতির দায়িত্ব পান সৈয়দা রাবেয়া আক্তার রিয়া। অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি সরে দাঁড়ালে গত ১২ জানুয়ারি উইমেন চেম্বারের সভাপতির দায়িত্ব পান লুবানা ইয়াছমিন শম্পা। দায়িত্ব পেয়ে সংগঠনে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করছেন দাবি জানিয়ে লুবানা বলেন, ‘পালাবদলে আমি সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর সংগঠনে স্বচ্ছতা আনতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। প্রতিষ্ঠার ১০ বছরেও উইমেন চেম্বার ট্যাক্সের আওতায় ছিল না। আমি ট্যাক্সের আওতায় এনেছি। প্রথমবারের মতো অডিট করিয়েছি। ডিভিএস-এর (ডকুমেন্ট ভেরিফাইড সিস্টেম) অন্তর্ভুক্ত অডিট করিয়েছি।’

গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে স্বর্ণলতা রায় টানা ৫ বার সভাপতি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘টানা ৩ বারের বেশি এক পদে না থাকার নিয়ম থাকলেও পরবর্তীসময়ে ২০১৮ সালে সেটি সংশোধন করা হয়। সেসময় আমি যেহেতু পরিচালনা পর্ষদে ছিলাম না, তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব না।’ 

আগে কখনো নির্বাচন হয়নি অভিযোগের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হয়নি এভাবে বলা যাবে না। যেহেতু ভোটার সংখ্যা ৩৩ জন ছিল না। তাই প্রসিকিউর মেইনটেইন হয়েছে, অপ্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচন হয়েছে।’

সিলেটের জেল প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছিল। আমরা সেটা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। পরবর্তী ধাপ তো আর আমাদের হাতে নেই।’
 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ফেনীতে ২২ কেজি গাঁজাসহ ২ নারী আটক

ফেনী প্রতিনিধি
ফেনী প্রতিনিধি
শেয়ার
ফেনীতে ২২ কেজি গাঁজাসহ ২ নারী আটক
সংগৃহীত ছবি

ফেনীর মহিপালে ২২ কেজি গাঁজাসহ দুই নারীকে আটক করেছে র‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍‍্যাব)। রবিবার (১৬ মার্চ) সকালে ফেনীর মহিপাল বাস স্টেশন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলেন কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার পাইপ বাগান এলাকার কাদের হোসেনের মেয়ে রশিদা বেগম (৬০) ও একই এলাকার আবদুর শুক্কুরের মেয়ে সুফিয়া খাতুন (৪৫)।

র‍্যাব জানায়, রবিবার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক পাচারের খবর পেয়ে উপজেলার বাসস্টেশন এলাকায় অভিযান চালায় র‌্যাব।

এ সময় চট্টগ্রামগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের সামনে ২ নারীসহ একটি সিএনজি এসে দাঁড়ায়। সিএনজিতে থাকা নারীরা র‍্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে র‍্যাব সদস্যরা দুই নারীকে আটক করেন। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিএনজিতে তল্লাশি চালিয়ে ২২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়।

ফেনী র‌্যাব-৭-এর মিডিয়া ইউং সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এ আর এম মোজাফফর হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, আটককৃতরা কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মাদক সংগ্রহ করে সুকৌশলে চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার আশপাশের এলাকায় বিক্রি করে আসছিল।

ওই দুই নারীর বিরুদ্ধে ফেনী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের ও আসামিদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুজ্জামান বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে।’

মন্তব্য

সাভারে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের সহযোগী গ্রেপ্তার

সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা
সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা
শেয়ার
সাভারে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের সহযোগী গ্রেপ্তার
সংগৃহীত ছবি

হত্যা মামলায় সাভারের সাবেক উপজেলা চেয়্যারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজিবের একান্ত সহযোগী মামুনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিবার (১৬ মার্চ) সাভারের ব্যাংক কলোনি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা জেলা উত্তর (ডিবি) পুলিশ।

মামুন সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের ভরারী এলাকার বিল্লাল হোসেনের ছেলে।

ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ইনচার্জ মো. জালাল উদ্দীন বলেন, জুলাই আন্দোলনে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে ছাত্র-জনতার হামলা চালিয়ে হত্যার মামলাসহ মামুনের বিরুদ্ধে সাভারের হেমায়েতপুর ভরারী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে জমি দখলসহ একাধিক মামলা ও অভিযোগ রয়েছে।

এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

মন্তব্য

ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় বৃদ্ধকে পেটালেন যুবদল নেতা

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, নেত্রকোনা
আঞ্চলিক প্রতিনিধি, নেত্রকোনা
শেয়ার
ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় বৃদ্ধকে পেটালেন যুবদল নেতা
সংগৃহীত ছবি

ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় প্রতিবন্ধী বৃদ্ধকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে সাকের খান নামের এক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। আহত অবস্থায় ওই বৃদ্ধকে স্বজনরা উদ্ধার করে মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে।

শনিবার (১৬ মার্চ) উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আহত বৃদ্ধ হক মিয়া (৬০) একই ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের মৃত ডেন্ডু মিয়ার ছেলে।

অভিযুক্ত সাকের খান ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বাসিন্দা। তিনি প্রায় এক যুগ আগে মদন উপজেলা তিয়শ্রী গ্রামে বিয়ে করে ঘর জামাই থেকে যান। পরে মদন উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পান তিনি। এর আগেও সাকের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
 

স্থানীয় লোকজন ও ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন জানায়, হক মিয়া একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার। নিজের ৩ শতাংশ বসতভিটে ছাড়া কোনো জমিও নেই। সরকারি একটি ঘর পেতে তথাকথিত সাংবাদিক পরিচয়ধারী ও যুবদল নেতা সাকের খানকে ৪ বছর আগে ১৪ হাজার টাকা ঘুষ দেন।

৪ বছর ধরে ঘর দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বৃদ্ধকে মাসের পর মাস ঘুরিয়েছেন। ঘর না দিতে পেরে সম্প্রতি ঘুষের ৩ হাজার টাকা ফেরতও দিয়েছে। বাকি টাকা দিই দিচ্ছি বলে সময় অতিবাহিত করছেন।

আরো পড়ুন
‘কাড়ি কাড়ি টাকা ঢেলে জামাইকে নিয়ে আসব’—সাজ্জাদের স্ত্রী

‘কাড়ি কাড়ি টাকা ঢেলে জামাইকে নিয়ে আসব’—সাজ্জাদের স্ত্রী

 

শনিবার বিকেলে বৃদ্ধ হক মিয়া টাকা চাইতে তিয়শ্রী গ্রামে সাকের খানের শ্বশুর বাড়িতে যান। টাকা চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সাকের খান ওই বৃদ্ধকে লাঠিপেটা করে গুরুতর আহত করে।

পরে স্থানীয় লোকজন ও স্বজনরা আহত বৃদ্ধকে উদ্ধার করে মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, সাকের খান ঘর জামাই থাকেন। সে নানা অপকর্মের সঙ্গে তিনি জড়িত। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি, তদবির বাণিজ্যসহ সব ধরনের অপরাধ করে গেছেন। এর আগে ২০১৯ সালে মামলা তদবির করার জন্য নায়েকপুর গ্রামের হাসিম উদ্দিম নামের বৃদ্ধের কাছ থেকে ঘুষ নেন। কাজ না করেই টাকা আত্মসাৎ করায় পাওনা টাকা ফেরত চাইলে পিতা-পুত্রকে পিটিয়ে আহত করেছিল। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ হলেও বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। বিভিন্ন অফিসেও নানা অপকর্ম করায় তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকলেও সংশ্লিষ্টরা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বার বার অপকর্ম করলেও কোন শাস্তি না হওয়ায় এখন তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। 

ভুক্তভোগী হক মিয়া জানান, আমি গরীব মানুষ। ঘর দিবে বলে সাকের খান ১৪ হাজার টাকা ঘুষ নেন। ৪ বছর ঘুরে ৩ হাজার টাকা ফেরত নিয়েছি। বাকি টাকা ফেরত চাওয়ায় আমাকে মারপিট করেছে। আমি তার বিচার চাই।  

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাকের খানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

তবে মদন উপজেলা যুবদলের সভাপতি গোলাম রাসেল রুবেল বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। আহত হক মিয়ার স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়েছে। টাকার লেনদেন পরিশোধ করে বিষয়টি সমাধান করার জন্য তাদের বলেছি। 

মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাঈম মোহাম্মদ নাহিদ হাসান জানান, এ ঘটনায় এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 


 

মন্তব্য

রাত ৮টার ট্রেন ছাড়ে ভোরে, ভোরেরটি বিকেলে!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
শেয়ার
রাত ৮টার ট্রেন ছাড়ে ভোরে, ভোরেরটি বিকেলে!
ছবি: কালের কণ্ঠ

রেলপথে সিলেট থেকে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের দূরত্ব ৩০০ কিলোমিটার। সিলেট-ঢাকা-সিলেট পথে চলা একমাত্র মেইল ট্র্রেনটির নাম ‘সুরমা মেইল’। চলার পথে ট্রেনটি ৫০টির মতো স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়।

আজ রবিবার সিলেট থেকে ঢাকা অভিমুখী ট্রেনটিতে যাত্রীদের জন্য ছিল মাত্র দেড়টি বগি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনটি ১০ ঘণ্টার বেশি বিলম্বে পৌঁছায়। ঢাকা যেতে ট্রেনটির বিলম্ব আরো বাড়বে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

আখাউড়া রেলওয়ে জংশনে দেখা যায়, ট্রেনটির মোট ছয়টি বগির মধ্যে তিনটিই মালবাহী। একটিতে রেলওয়ে মেইল সার্ভিসের (আরএমএস) বিশেষ বগি।

একটির অর্ধেক বগিতে গার্ড ব্রেক ও মালামাল রাখার জায়গা। বাকি দেড় বগি যাত্রীদের বসার জন্য বরাদ্দ। যাতে সিট আছে ১০০টির মতো। বসে ও দাঁড়িয়ে মাত্র দুই থেকে আড়াই শ যাত্রী একসঙ্গে যাতায়ত করতে পারে ট্রেনটিতে।

৯ ঘণ্টার বেশি বিলম্বে ট্রেনটি দুপুর ২টা ৯ মিনিটে আখাউড়া রেলওয়ে জংশনে প্রবেশ করে। লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ঘুরিয়ে ট্রেনটি বিকেল ৩টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বেলা পৌনে ৪টায় ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ছাড়ে।

চলার পথে যাত্রীরা তাদের দুর্ভোগের কথা জানান। একইসঙ্গে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের দাবিও করেন তারা।

এটিকে ভোগান্তির ট্রেন উল্লেখ করেন একাধিক যাত্রী। তারা ‘নিরাপদ বাহন’ হিসেবে পরিচিত ট্রেনকে আরো ভালো সার্ভিস দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। এত বেশি দূরত্বে চলাচলকারী একটি ট্রেনে মাত্র দেড় বগি যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ রাখার বিষয়টি তারা ‘হাস্যকর’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, একই ট্রেন, অর্থাৎ একটি রেক সিলেট-ঢাকা-সিলেট পথে চলাচল করে। যে কারণে প্রায়ই বেশ বিলম্ব হয়। ট্রেনটি প্রতিদিন ঢাকা ও সিলেট থেকে ছেড়ে যায়। সিলেট থেকে রাত ৮টা ২০ মিনিটে ও ঢাকা থেকে সোয়া ৯টায় ছাড়ে ট্রেনটি। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছার পর আবার ফিরতি পথে যায়। শনিবার দুপুরে সিলেট পৌঁছার কথা থাকলেও সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে পৌঁছায় ট্রেনটি। যে কারণে ফেরার নির্ধারিত সময় ৮টা ২০ মিনিটে ট্রেনটি সিলেট থেকে ছাড়তে পারেনি।

আরো পড়ুন
সাশ্রয়ী দামে আধুনিক ফার্নিচার সরবরাহ করবে সরকার : রিজওয়ানা

সাশ্রয়ী দামে আধুনিক ফার্নিচার সরবরাহ করবে সরকার : রিজওয়ানা

 

ট্রেনযাত্রী মো. জামাল জানান, তিনি মাজার জিয়ারত করতে ঢাকা থেকে সিলেট যান। সুরমা মেইল ট্রেনটি শনিবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা। সেই থেকে তিনি অপেক্ষা করছিলেন। শেষ পর্যন্ত ভোর ৪টায় ট্রেনটি সিলেট থেকে ছাড়ে। পথে বেশিরভাগ স্টেশনেই এটি যাত্রাবিরতি দেয় এবং অনেক স্টেশনেই দীর্ঘ সময় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এ কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। কখন ঢাকায় পৌঁছাবে তার কোনো ঠিক নেই।’

মো. জামির হোসেন নামে আরেক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ ট্রেনে খুব বিরক্ত লাগছে। এই রোজার মধ্যে খুব কষ্ট হচ্ছে। ট্রেন কখন ঢাকায় পৌঁছাবে এর কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। এভাবে চললে ট্রেনের প্রতি মানুষের ভরসা উঠে যাবে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে কথা হয় ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) মো. ইমরান হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ট্রেনটি শনিবার নির্ধারিত সময় থেকে অনেক দেরিতে সিলেট পৌঁছায়। যে কারণে আসার পথেও দেরি হয়। আখাউড়া থেকে ভোর ৫টার আগে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি বিকেল ৩টায় ছাড়ে।’

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ