সাড়ে চার কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ মামলায় কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু তাহেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
সোমবার (১৭ মার্চ) হাইকোর্টের নির্দেশে কুমিল্লা আদালতের আত্মসমর্পণ করেন অ্যাডভোকেট আবু তাহের। পরে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারপতি মো. মাহবুবুর রহমান তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকু। মামলার বিবরণে জানা গেছে, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সমিতির ৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আবু তাহের এবং হিসাবরক্ষক কাজী সুমনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা আদালতে মামলা করা হয়। অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট আবু তাহের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক। সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের আস্থাভাজন ছিলেন।
অভিযোগে জানা যায়, লেজার বইয়ে ওভার রাইটিং, ভুয়া ও দ্বৈত ভাউচার তৈরি, লেজার বইয়ের বিভিন্ন অংশে ফ্লুইড ব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট আবু তাহের ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই মেয়াদে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে হিসাবরক্ষক কাজী সুমনকে হাতে নিয়ে সর্বমোট ৪ কোটি ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৭২০ টাকা আত্মসাৎ করেন। এর মধ্যে প্রথম মেয়াদে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ কোটির ৩০ লাখ ৩৮ হাজার ১৪৪ টাকা এবং দ্বিতীয় মেয়াদের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ কোটি ১৫ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬ টাকা আত্মসাৎ করেন।
আইনজীবী সদস্যদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এর আগে ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর সমিতির সাধারণ সভার প্রস্তাবক্রমে একই বছরের ২৪ নভেম্বর কার্যকরী কমিটির জরুরি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট আবু তাহেরের কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সদস্য পদ স্থগিত করা হয় এবং একই সঙ্গে হিসাবরক্ষক কাজী সুমনকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে, হাইকোর্টের আগাম জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় অ্যাডভোকেট আবু তাহের মাক্স পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে এলে এজলাসে যাওয়ার পথে অন্য ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা তাকে দেখে ধাওয়া দেয়।
পরে তিনি দৌড় দিলে আইনজীবীরা তাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাথি মারেন। এক পর্যায়ে তিনি এজলাসে ঢুকে পড়েন। পরে আইনজীবীরা এজলাসের বাইরে অবস্থান নেন। শুনানী শেষে বিকাল ৩টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে মাথায় হেলমেট ও শরীরে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরা অবস্থায় তাকে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নেওয়া হয়।