ভারত সীমান্ত ঘেঁষা একটি গ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের মাঝিগাছা। ওই গ্রামের একটি জায়গার নাম দরবার বাজার। নামে বাজার হলে সেখানে দোকান দুই-তিনটি। এর মধ্যে খোলা থাকা একটি দোকানে চোখ আটকায়।
ভারত সীমান্ত ঘেঁষা একটি গ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের মাঝিগাছা। ওই গ্রামের একটি জায়গার নাম দরবার বাজার। নামে বাজার হলে সেখানে দোকান দুই-তিনটি। এর মধ্যে খোলা থাকা একটি দোকানে চোখ আটকায়।
দোকানের সামনে একটি ব্যানারে লেখা, ‘হানিফ ভাই এর দোকানে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে বিশেষ অফার। এক টাকা লাভে রমজানের যাবতীয় পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করা হয়।’
সোমবার বিকেলে গিয়ে দোকান মালিক মো. হানিফকে ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়। অজপাড়া গায়ের দোকানে এমন অফারে পণ্য বিক্রি বেশ সাড়া ফেলেছে।
মো. বাছির নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘রমজান মাস উপলক্ষে হানিফ এক টাকা লাভে পণ্য বিক্রি করছেন। আমাদের এলাকায় এটি বেশ সাড়া ফেলেছে। শহরের বাজার থেকে পণ্য না নিয়ে এলাকার মানুষ এখান থেকেই ইফতার কেন্দ্রিক বিভিন্ন পণ্য নিয়ে যাচ্ছে। আমারা ওনার উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
কথা হয় মনিয়ন্দ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) দুলাল মৃধার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গ্রামের দোকানে এটি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। আমাদের গ্রামের মানুষ এখান থেকে স্বস্থিতে পণ্য কিনতে পারছে। এ উদ্যোগ এলাকায বেশ সাড়া ফেলেছে।’
দোকানী মো. হানিফ বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে যেসব পণ্যের প্রয়োজন হয় যেমন তেল, ছোলাবুট, ডাল, পিঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি আমি মাত্র এক টাকা লাভে বিক্রি করছে।
সম্পর্কিত খবর
‘গত ঈদে বাড়িতে ছিল। ঈদের নামাজ শেষে কোথায় যেন ঘুরতে চলে গিয়েছিল। দেরিতে বাড়ি ফেরার কারণে অনেক শাসিয়েছি। এবারের ঈদে নাই।
‘নিজেরা খেয়ে-না খেয়ে ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছিলাম। মৃত্যুর পরে জানতে পারলাম, আমাদের ছেলে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে।’
চোখের পানি মুছতে মুছতে কালের কণ্ঠের কাছে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিটঘর (দ. পাড়া) গ্রামের তানজিল মাহমুদ সুজয়ের মা তাহমিনা আক্তার।
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এবারের ঈদে বাকরুদ্ধ তার গোটা পরিবার। সুজয়ের দুই বোন এনি ও স্বর্ণা এখনও ভাইয়ের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে আছেন। তারা বলল দুষ্টুমির বয়স শেষ হয়নি আমার ভাইয়ের। এ বয়সে দেশের জন্য শহীদ হয়ে বাংলাদেশকে নতুন করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।
সুজয়ের বাবা মো. সফিকুল ইসলাম আগে গাজীপুরে বেকারি ব্যবসায়ী ছিলেন। এখন আর ব্যবসা করেন না। সপরিবারে সেখানেই থাকতেন। দুই মেয়ে আছে তার। গত ঈদেও কেনাকাটা করে গ্রামের বাড়ি নবীনগরে চলে এসেছিলেন।
লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হয়ে সংসারের হাল ধরবে একমাত্র ছেলে সুজয়, এমনটাই চাওয়া ছিল তার। তবে স্বপ্ন যেন স্বপ্নই রয়ে গেল। গাজীপুর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র ছিল সুজয় (১৯)। গত ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান সুজয়।
তারপর ঢাকা থেকে চলে এসে সপরিবারে এখন গ্রামে বসবাস করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে সুজয়ের বাবা বলেন, ‘জুলাই ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে নগদ সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছি। তবে কী হবে তাতে? আমার ছেলে সুজয় কি আর ফিরবে?’
তিনি বলেন, ‘বাড়ির সামনে শিবপুর নামক স্থানে সরকারি জায়গায় আমার ছেলেকে ভালোবেসে সকলে মিলে সুজয় স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করছেন। কাজ চলমান আছে। এপ্রিলের ৫ তারিখ উদ্বোধন হবে।’
টানা ৯ মাস ধরে বেতনভাতা বন্ধ রয়েছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ৫৪ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডারের (সিএইচসিপি)। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসেও বেতন পাননি তারা। এমন পরিস্থিতিতে স্ত্রী, সন্তান ও পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।
ফলে ঈদের আনন্দ নেই তাদের পরিবারে।
জানা গেছে, গ্রামের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দিতে ১৯৯৮ সালে গ্রামে গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়। মির্জাপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে ৫৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১১ সালে এসব ক্লিনিকে ৫৪ জন সিএইচসিপি নিয়োগ দেয় সরকার।
নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে গ্রামের দরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ দিয়ে আসছেন তারা। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার প্রতিষ্ঠান থেকে বেতনভাতা পান তারা। ওই বছরের জুলাই মাস থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের বেতনভাতা বন্ধ থাকে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট্রের আওতায় নেওয়া হলেও বেতনভাতা পাচ্ছেন না সিএইচসিপিরা।
২০১৬ সালের ১৪ জুন কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও তিন দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি করে সরকার। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিদের বেতনভাতা বৃদ্ধিসহ সুযোগসুবিধা বাড়ানো হয়নি।
এ অবস্থায় সারা দেশে কর্মরত সিএইচসিপিরা তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। এর ফলে, চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের আশ্বাসও পান তারা। কিন্তু গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট্রের আওতায় নেওয়া হয় সিএইচসিপিদের।
মহেড়া ইউনিয়নের গবড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মাঞ্জুরুল ইসলাম তালুকদার জানান, তার স্ত্রী ফারহানা আশা পৌর এলাকার কান্ঠালিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত আছেন। তাদের দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। কর্মরত দুুইজনের বেতনভাতা ৯ মাস যাবৎ বন্ধ। দুই শিশু সন্তান ও পরিবার নিয়ে মানবেতন জীবনযাপন করছেন।
বড়দাম কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক স্বপন চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান বাজারে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সামান্য বেতনে সংসার চালাতে এমনিতেই কষ্ট হয়। এরমধ্যে গত ৯ মাস ধরে বেতন বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করছি।’
উপজেলা সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও উপজেলার আজগানা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো. সুমন সিকদার বলেন, ‘এতদিন ধার-দেনা করে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চালাতে হয়েছে।’
মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের আগে (বৃহস্পতিবার) শেষ কর্মদিবসে তাদের সাড়ে তিন মাসের বেতন ও বোনাস পাওয়ার কথা ছিল।’
সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্ট এলাকায় কাঠের বোটের ইঞ্জিন বিকল হয়ে চরে আটকে যাওয়া তিন জেলেকে উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। জেলেরা বাগেরহাটের রামপাল এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) তাদেরকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান কোস্ট গার্ডের পশ্চিম জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মাহবুব হোসেন জানান।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এর মাধ্যমে জানা যায়, হিরণ পয়েন্ট এলাকায় তিনজন জেলে ইঞ্জিনচালিত কাঠের বোট বিকল হয়ে চরে আটকে পড়েছেন।
পরে হিরণ পয়েন্ট পোর্টসংলগ্ন এলাকায় কোস্ট গার্ডের উদ্ধারকারী দল তিন জেলেকে উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত জেলেদের বিসিজি আউটপোস্ট দুবলায় নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে জেলেদের বোটসহ মালিকপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
জ্ঞাতআয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় পুলিশের সাবেক পরিদর্শক শেখ সিরাজুল ইসলামকে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন যশোরের একটি আদালত।
সাজাপ্রাপ্ত শেখ সিরাজুল ইসলাম যশোর নতুন উপশহর এ ব্লকের শেখ মোহাম্মদের ছেলে ও ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার সাবেক পরিদর্শক।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) এসএম নূরুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পিপি সিরাজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুর্নীতির মামলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বৃহস্পতিবার আদালত তাকে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড, দুই হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত শেখ সিরাজুল ইসলাম পলাতক।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, জ্ঞাতআয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়ায় বাগেরহাট পুলিশের তৎকালীন (ডিআইও) পরিদর্শক শেখ সিরাজুল ইসলামকে যশোর জেলা দুর্নীতি দমন ব্যুরো নোটিশ জারি করে। কিন্ত সিরাজুল ইসলাম তখন নোটিশটি গ্রহণ করেননি।
১৯৯৮ সালের ১৭ মে যশোর ডিএসবির মাধ্যমে নোটিশটি আবার বাগেরহাটে পাঠানো হলে তিনি গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে এ নোটিশ বাগেরহাট পুলিশ সুপারের মাধ্যমে পাঠানো হয়। কিন্তু সেবারও তা গ্রহণ না করে পদোন্নতি পেয়ে ঝিনাইদহ জেলায় চলে যান সিরাজুল ইসলাম।
তিনি ঝিনাদহের শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় এ নোটিশ পুলিশ সুপারের মাধ্যমে আবার পাঠায় দুর্নীতি দমন ব্যুরো যশোর।
অবশেষে ২০০০ সালের ১১ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন যশোরের তৎকালীন উপ-পরিচালক এমএ সোহবান আসামি শেখ সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে জ্ঞাতআয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কোতয়ালি থানায় মামলা করেন।
এ মামলার তদন্ত শেষে সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে অবৈধভাবে প্রায় কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় আাসামি সিরাজুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি দুদক যশোরের তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ আদালতে চার্জশিট জমা দেন।