ডিএনএ (ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড) প্রতিবেদন না পাওয়ায় চট্টগ্রাম নগরীর ৬১০টি ধর্ষণ মামলা তদন্তেই আটকে আছে। ২০২১ সাল থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসব মামলার কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেলেও ডিএনএ রিপোর্ট না পাওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে পারছেন না মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা। মানবাধিকার সংগঠন ও আইনজীবীরা বলছেন, নারী ও শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলাগুলোর ডিএনএ প্রতিবেদন সবার আগে দেওয়া উচিত।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের জামালখান এলাকায় শিশু বর্ষাকে ধর্ষণের পর হত্যা এবং লাশ গুমের ঘটনা ঘটে।
এই মামলা তদন্তকাজ শেষ পর্যায়ে। কিন্তু ডিএনএ রিপোর্ট না পাওয়ায় চার্জশিট তৈরি করে আদালতে জমা দিতে পারছেন না মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুধু বর্ষার ধর্ষণ মামলা নয় ২০২২ সালের ২৩৩টি মামলার কার্যক্রম ডিএনএ প্রতিবেদনের জন্য থমকে আছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার ৯, সদরঘাট ২, চকবাজার ৩, বাকলিয়া৭, খুলশী ২১, বায়েজিদ বোস্তামী ২৭, পাঁচলাইশ ৭, চান্দগাঁও ৭, পাহাড়তলী ১০, আকবরশাহ থানা ৯, হালিশহর ৬, ডবলমুরিং ৭, বন্দর ১৬, ইপিজেড ১৪, পতেঙ্গা ১০ ও কর্ণফুলী থানাতে ৬টি মামলা।
আরো পড়ুন
ঈদযাত্রায় নৌযানে অতিরিক্ত ভাড়া নিলে কঠোর শাস্তি : নৌ উপদেষ্টা
২০২১ সালের ২৯টি মামলার ডিএনএ প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি। আর ২০২৩ সালের ২৩৩টি মামলার ডিএনএ প্রতিবেদনের কারণে মামলার তন্ত কাজ থমকে আছে। এর মধ্যে কোতোয়ালি থানার ২৮, সদরঘাট ৯, চকবাজার ২, বাকলিয়া ৮, খুলশী ১১, বায়েজিদ বোস্তামী ২৫, পাঁচলাইশ ৪, চান্দগাঁও ৪০, পাহাড়তলী ২২, আকবরশাহ ১৫, হালিশহর ১৫, ডবলমুরিং ৭, বন্দর ১১, ইপিজেড ৮, পতেঙ্গা ১০ ও কর্ণফুলী থানাতে ১৮টি মামলা ডিএনএ প্রতিবেদনের অপক্ষোয় তদন্তকাজ থমকে আছে।
২০২৪ সালে ১৭০টি মামলা ডিএনএ প্রতিবেদনের জন্য তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া যাচ্ছে না আদালতে।
এর মধ্যে কোতোয়ালি থানার ৫, সদরঘাট ১, চকবাজার ৭, খুলশী ১১, বায়েজিদ বোস্তামী ১৪, পাঁচলাইশ ৬, চান্দগাঁও ৩১, পাহাড়তলী ৬, আকবরশাহ ১৮, হালিশহর ১৫, ডবলমুরিং ১৪, বন্দর ৭, ইপিজেড ১২, পতেঙ্গা ১২ ও কর্ণফুলী থানাতে ১১টি মামলা ডিএনএ প্রতিবেদনের অপক্ষোয় তদন্তকাজ থমকে আছে।
আর ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ১৭টি মামলা ডিএনএ প্রতিবেদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এগুলো এখনো আসেনি।
শিশু বর্ষা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নওশের কোরেশী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মামলার তদন্তকাজ শেষ। ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পেলে মামলার চার্জশিট তৈরি করে আদালতে জমা দিতো পারব।
আমি এখন ডিএনএ রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি।’
আরো পড়ুন
গরমে ফিট থাকতে যে ধরনের পানীয় এড়িয়ে চলবেন
আড়াই বছর হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বর্ষার বড় বোন সাহেলা রুবী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আড়াই বছর হয়ে গেছে এখনো মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে না পারা কষ্টের। দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু করে দরকার। আমার বোনকে যে ধর্ষণের পর হত্যা করছে তার বিচার দ্রুত দেখতে চাই।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত ৫ বছরে ডিএনএন প্রতিবেদনের জন্য ৬১০টি ধর্ষণ মামলা তদন্তেই আটকে আছে। ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়া গেলে এসব মামলার মধ্যে বেশির ভাগ মামলারই চার্জশিট জমা দেওয়া যেত। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত ডিএনএ রিপোর্টগুলো পাওয়ার জন্য।’
মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ও চট্টগ্রামের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডিএনএ প্রতিবেদনের ক্ষত্রে শিশুদের ঘটনায় যে মামলাগুলো হয়, সেগুলো অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। দ্রুত ডিএনএ প্রতিবেদন দিতে হবে মামলা ৯০ দিনে শেষ করতে হলে। আগে পুলিশের গাফিলতির কারণে মামলা বিলম্ব হতো। এখন ডিএনএ টেস্ট করা ল্যাবের কারণে মামলার কার্যক্রম দেরি হচ্ছে।’
আরো পড়ুন
২৭৩ কোটি টাকার ভোজ্য তেল ও মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যে পরিমাণ মামলা হচ্ছে সে পরিমাণ জনবল ও ল্যাব নেই আমাদের। ল্যাব স্বল্পতার কারণে ডিএনএ প্রতিবেদন রিপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে। দ্রুত ডিএনএ ল্যাব স্থাপন করা দরকার। সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দক্ষ জনবল তৈরি করা দরকার।’
এইদিকে গত সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, ধর্ষণের বিচারের দীর্ঘসূত্রতার অন্যতম কারণ হলো পর্যাপ্ত ডিএনএ ল্যাবের অভাব। বর্তমানে দেশে একটি মাত্র ডিএন ল্যাব রয়েছে। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আরো দুটি ডিএনএ ল্যাব স্থাপন করা হবে।