সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। দেশের সবচেয়ে বড় ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। এবার ১৯৮তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় শুরু হবে।
এতে ইমামতি করবেন ১৫ বছর আগে রাজনৈতিক কারণে বাদ দেওয়া ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। মুসল্লিদের জন্য থাকছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার মুসল্লি আরো বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, এবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সাজানো হয়েছে সব আয়োজন।
ঈদের দিন ঈদগাহে আসার প্রতিটি রাস্তায় থাকবে তল্লাশিচৌকি। মোতায়েন থাকবে বিপুলসংখ্যক র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্য। সাদাপোশাকে দায়িত্ব পালন করবেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। থাকবে সেনাসদস্যদের বিশেষ টহল। তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে। সব মিলিয়ে দেড় হাজারের ওপরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন উপস্থিত থাকবেন।
আরো পড়ুন
যেভাবে একটি অন্যায়ের সম্মিলিত প্রতিবাদ হলো
মাঠে নজরদারির জন্য ইতিমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে ছয়টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এ ছাড়া ঈদ জামাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্যামেরাযুক্ত শক্তিশালী চারটি ড্রোন মুসল্লিদের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করবে। তিনটি আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে মেটাল ডিটেক্টরের তল্লাশির মাধ্যমে মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করানো হবে।
ঈদগাহে মুসল্লিরা শুধু জায়নামাজ ও জরুরি প্রয়োজনে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে ছাতা, ব্যাগ ও অন্যান্য ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকছে।
মুসল্লিদের বিশ্বাস, বড় জামাতে অংশ নিলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। এমন বিশ্বাস থেকে ঈদের দিন মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে। কয়েক লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেন একসঙ্গে। পুরো এলাকা জমসমুদ্রে পরিণত হয়। শোলাকিয়ার ঈদ জামাত সবার কাছে বাড়তি আনন্দ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
এদিকে, শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইমাম নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছে পরিচালনা কমিটি। ১৫ বছর আগে রাজনৈতিক কারণে বাদ দেওয়া আলোচিত ও সবার গ্রহণযোগ্য ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহকে ফেরানো হয়েছে। তিনি এবার ঈদ জামাতে ইমামতি করবেন।
এ প্রসঙ্গে ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ বলেন, ‘ইমামতি ফিরে পেয়ে আমি খুশি। আশা করি ভবিষ্যতে আর কেউ ধর্মীয় বিষয় নিয়ে জোর জবরদস্তি করবে না। এবার জামাতে এক লাখ নতুন মুসল্লি যুক্ত হবে।’
আরো পড়ুন
আওয়ামী লীগের সময়ে মানুষ স্বস্তিতে ঈদ করতে পারেনি : সারজিস
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টায় ঐতিহ্য ও রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে পরপর তিনবার বন্দুকের ফাঁকা গুলি ছুড়ে এ ময়দানে শুরু হবে ঈদুল ফিতরের জামাত। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রোডে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।
জায়নামাজ এবং মোবাইল ছাড়া কোনও কিছু নিয়ে মাঠে প্রবেশ না করার জন্য মুসল্লিদের উৎসাহিত করছে প্রশাসন। র্যাব-১৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি নাইমুল হাসান বলেন, ‘নিরাপত্তা জোরদার করতে পোশাকের পাশাপাশি সাদাপোশাকেও র্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। নাশকতাকারী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, পকেটমার, মলম পার্টিসহ অন্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা কন্ট্রোল রুম স্থাপন করবো। ওয়াচ টাওয়ার থাকবে, এর মাধ্যমে আমরা সার্ভিলেন্স করবো।’
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘ঈদ জামাতকে ঘিরে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। এখানে ছয় লাখের ওপরে মুসল্লি হয়। এবার মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে পারে। সে অনুযায়ী নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করতে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার, চারটি ড্রোন ক্যামেরাসহ পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া সাদাপোশাকে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। আশা করি, নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করে ঘরে ফিরতে পারবেন।’
আরো পড়ুন
জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রথম জামাতে মুসল্লিদের ঢল
স্থানীয় সূত্র জানায়, শোয়ালাকিয়া ঈদগাহ মাঠে ৭০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করার সুযোগ পান। মাঠের ভেতর জায়গার সংকুলান না হওয়ায় মূল মাঠের তিন পাশের রাস্তাঘাট, আশপাশের বাড়িঘরের ছাদ, উঠান, নরসুন্দা নদীর পাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় আরও শত শত মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। ‘কিশোরগঞ্জের ইতিহাস-ঐতিহ্য’ বইয়ে উল্লেখ আছে, মোগল আমলে এখানকার পরগনার রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল শ লাখ টাকা, মানে এক কোটি টাকা। কালের বিবর্তনে শ লাখ থেকে বর্তমান শোলাকিয়া হয়েছে। অন্য আরেকটি বিবরণে রয়েছে, ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে ঈদগাহটি একসময় শোয়ালাকিয়া ঈদগাহ মাঠ হিসেবে পরিচিতি পায়।