টগবগে যুবক মেহেদী হাসান নবাব। নেত্রকোনার জেলা শহরের একটি কলেজে অনার্সে অধ্যয়নরত। স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে পুলিশে চাকরি করবেন। কিন্তু পুলিশের বুলেটেই সেই স্বপ্ন ভেঙে গেল নবাবের।
২৪-এর জুলাই আন্দোলনে পুলিশের বুলেট কেড়ে নিয়েছে তার এক চোখের দৃষ্টি। টাকার অভাবে চিকিৎসা না হওয়ায় আরেক চোখের দৃষ্টিও নিভে যাওয়ার পথে।
নেত্রকোনার মদন উপজেলার চানগাঁও ইউনিয়নের মৈধাম গ্রামের খোকন মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান নবাব। ৫ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি।
ছোট কাল থেকেই নবাব রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। মদন উপজেলার চানগাঁও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তিনি। ২৪-এর জুলাই আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল খুবই সক্রিয়। আন্দোলনে তিনি একটি চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন। এর সঙ্গে চিকিৎসায় ব্যয় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ নিয়ে নিজেকে এখন পরিবারের বোঝা মনে করছেন তিনি।
মেহেদী হাসান নবাব বলেন, ‘স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে পুলিশের চাকরি নিব। কিন্তু পুলিশের বুলেটে আমার সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। আমার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।
চিকিৎসার অভাবে আরেকটি চোখ নষ্টের পথে। জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছি। কিন্তু নিজের চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত তেমন সহযোগিতা পাইনি। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ১ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছিলাম। এগুলো শুধু গাড়ি ভাড়ায় খরচ হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত পরিবার ৬ লাখ টাকার বেশি খরচ করেছে। কিন্তু আর সম্ভব হচ্ছে না। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।’
মেহেদী হাসান নবাবের বাবা খোকন মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে আন্দোলনে গিয়ে একটি চোখ হারিয়েছে। আরেকটি চোখ নষ্ট হচ্ছে। টাকার জন্য ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছি না। দলীয় ভাবেও কোনো সহযোগিতা মিলছে না। সরকার যেন আমার ছেলের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রকোনা জেলা শাখার যুগ্ম আহব্বায়ক সাঈদ বিন ফজল জানান, ‘জুলাইয়ের আন্দোলনে মদন উপজেলার প্রায় ৮০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৩ জনের নাম সরকারি তালিকায় এসেছে এবং ২৩ জনের গ্যাজেট প্রকাশ হয়েছে। আহত মেহেদী হাসান নবাবের একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। আরেকটি চোখ নষ্ট হওয়ার পথে। এখন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাহিরে নিতে হবে। এর জন্য আমরা সব জায়গায় যোগাযোগ করছি।’
গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কারের আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসাবে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দেয় শিক্ষার্থীরা। সেই কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে মদন উপজেলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টা থেকে মদন সরকারি কলেজ মোড়ে জড়ো হতে থাকে। একই সঙ্গে পুলিশও সেই স্থানে অবস্থান নেয়। সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদের দিকে আসতে থাকে। পরে পুলিশ ডাক বাংলো মোড়ে ব্যারিকেড দেয়। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে পাবলিক হলের দিকে রওনা হয়।
একই সময় আন্দোলনের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করে আওয়ামী লীগের অঙ্গসহযোগী সংগঠন। দুটি মিছিল উপজেলা খাদ্য গুদামের সামনে মুখোমুখি হলে প্রশাসন মিছিল দুটিকে ছত্রভঙ্গ করে আলাদা করে দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা শহীদ আব্দুল কদ্দুছ মগড়া সেতুর পূর্ব পাড়ে অবস্থান নেয়।
এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী দলের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে যোগ দেয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন মেহেদী হাসান নবাব। এ ছাড়াও সেই সময় আরো ১২/১৩ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশত মানুষ আহত হয়।’