গাজীপুরের শ্রীপুরের সাফারি পার্ক থেকে একসঙ্গে তিনটি লেমুর চুরি হয়েছে। রবিবার (৬ এপ্রিল) রাতে চুরির ঘটনাটি বাইরে জানাজানি হয়। ২৩ মার্চ রাতে চুরি হয় লেমুর তিনটি। পরদিন ওই ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগে ‘চুরি তথ্য’ গোপন রাখেন কর্মকর্তারা।
গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে ৩ লেমুর চুরি
আঞ্চলিক প্রতিনিধি, গাজীপুর

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, রাতে কে বা কারা বেষ্টনীর জাল কেটে তিনটি লেমুর নিয়ে গেছে। ফলে পার্কটিতে আর কোনো লেমুর নেই।

নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে যা বললেন সারজিস আলম
সাফারি পার্কটির এই কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা করলেও পুলিশ তৎপর নয়। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় পার্কটিতে পুলিশ যায়নি।
তবে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মণ্ডল কালের কণ্ঠকে বলেন, পার্কটির কর্মকর্তারা একটি লিখিত অভিযোগ রেখে গেছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত (গতকাল সন্ধ্যা) মামলা হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর ২২ নভেম্বর রাতে একই কায়দায় দুটি ম্যাকাও পাখি চুরি হয়। এ ঘটনায় মামলা করার পর পুলিশ টঙ্গী বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি ম্যাকাও উদ্ধারসহ জড়িত মো. আরিফ (২৩) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে।

ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানি শিল্পী আয়মা বেগ
২০১৮ সালের ৬ আগস্ট হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রাণীর সঙ্গে দুটি লেমুর উদ্ধার করা হয়েছিল। বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে সেগুলো অন্য দেশে পাচার করা হচ্ছিল। পরে লেমুর দুইটিকে এই সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়। উদ্ধার করা লেমুর দুটির মধ্যে একটি ছিল মাদি ও আরেকটি মর্দা।
সাফারি পার্কের কর্মকর্তারা জানায়, ২৩ মার্চ রাতে কোনো এক সময় কে বা কারা লাম চিতা-১ বেষ্টনীর জাল কেটে তিনটি লেমুরই নিয়ে যায়। পরদিন সকালে সেখানে গিয়ে জাল কাটা ও বেষ্টনী ফাঁকা পান তারা। চুরি হওয়া লেমুর তিনটির মধ্যে দুইটিই ছিল পুরুষ। সেগুলোর মধ্যে একটি ছিল প্রাপ্তবয়স্ক।
সাফারি পার্কের কর্মকর্তাদের দাবি, দেশে অন্যকোনো সাফারি পার্কে এ প্রাণীটি নেই।

জামালপুরে ইউএনওসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা, তদন্তের নির্দেশ
পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, পার্কটির নিরাপত্তা-ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। ওই সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। তার ধারণা, কে বা কারা সীমানাপ্রাচীর টপকে বেষ্টনীর জাল কেটে লেমুর তিনটি নিয়ে গেছে।
সম্পর্কিত খবর

প্রতিবন্ধী মা-দুই মেয়ে, ভিক্ষার টাকায় চলে সংসার
বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে দিন পার করছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শিবরামপুর ইউনিয়নের গণোপৌত বিলপাড়া গ্রামের প্রমিলা ও তার দুই কন্যা। পরিবারের পাঁচ সদস্যের এই সংসার চলছে চরম অভাব-অনটনের মধ্যে, যাদের একমাত্র আয়ের পথ ভিক্ষাবৃত্তি।
প্রমিলা নিজেই শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। তার দুই মেয়ে—অনামিকা (১০) ও সনজিতা (৮)—জন্ম থেকেই একই প্রতিবন্ধকতায় ভুগছে।
সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পে একটি ঘর মিললেও নেই খাবারের নিশ্চয়তা, নেই কোনো স্থায়ী আয়ের উৎস। প্রমিলা ও তার মেয়েরা প্রতিবন্ধী ভাতা এবং তার বৃদ্ধা মা জোছনা বয়স্ক ভাতা পান।
অভাবের মাঝেও প্রমিলা তার দুই কন্যাকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন। অনামিকা স্থানীয় বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে এবং সনজিতা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
স্থানীয় দোকানদার ফয়েজ উদ্দিন বলেন, এই পরিবারটা খুব অসহায়। প্রশন্ন মাঝে মাঝে দোকানে এসে সাহায্য চায়, আমি যা পারি করি।
শিবরামপুর ইউনিয়নের মুরারিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহিমউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রমিলাদের অবস্থা খুব করুণ। সমাজের হৃদয়বান মানুষদের এখনই পাশে দাঁড়ানো উচিত।
এলাকাবাসীরও দাবি, এই পরিবারকে বাঁচাতে শুধু সরকারি সহায়তা নয়, দরকার বেসরকারি সংস্থা ও সমাজের বিত্তবানদের মানবিক সহযোগিতা।

অপার সম্ভাবনা, পর্যটনে পিছিয়ে কয়রা
ওবায়দুল কবির সম্রাট, কয়রা, খুলনা

খুলনার কয়রা উপজেলা সুন্দরবনের সবচেয়ে কাছাকাছি জনবসতি হওয়া সত্ত্বেও পর্যটন খাতে এখনো পিছিয়ে। অথচ এখান থেকে হিরণপয়েন্ট, শেকের টেক, কলাগাছিয়া ও বঙ্গোপসাগর খুব সহজেই দেখা যায়। রয়েছে ৯০০ বছরের প্রাচীন মসজিদকুঁড় মসজিদ, রাজা প্রতাপাদিত্যের বাড়ি, খালে খাঁর দিঘির মতো ঐতিহাসিক স্থাপনাও। তবুও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারছে না এলাকাটি।
২০২১ সালে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কয়রার গোলখালীতে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দিলেও বন বিভাগের আপত্তির কারণে কাজ শুরু হয়নি। পরে স্থান পরিবর্তন করে কেওড়াকাটায় কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু চার বছর পার হলেও কাজের গতি মন্থর। অন্যদিকে, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা ও পটুয়াখালীতে সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলেও খুলনার কয়রা উপজেলায় এখনো কোনো উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা শরিফুল আলম বলেন, সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক আসেন, কিন্তু মানসম্মত হোটেল, রিসোর্ট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবের কারণে তারা দ্রুত চলে যান।
খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, কয়রায় পর্যটন সুবিধা বাড়াতে নতুন ওয়াচ টাওয়ার ও জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সড়ক ও হোটেলের সমস্যা দূর করতে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলি বিশ্বাস জানান, মসজিদকুঁড় মসজিদ ও কেওড়াকাটায় পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুন্দরবনে ২ লাখ ১১ হাজার ৫৭ জন পর্যটক ভ্রমণ করেছেন, যার মধ্যে বিদেশি পর্যটক ছিলেন ২ হাজার ৬২২ জন। রাজস্ব আয় হয়েছে ৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। তবে কয়রার মতো সম্ভাবনাময় এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলে এই আয় কয়েক গুণ বাড়তে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা।
সুন্দরবন-নির্ভর জেলেদের জন্য পর্যটন একটি বিকল্প আয়ের উৎস হতে পারে বলে মনে করেন সমাজকর্মী আশিকুজ্জামান।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কয়রাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা গেলে এখানকার অর্থনীতি যেমন চাঙ্গা হবে, তেমনি বিশ্বের দরবারে সুন্দরবনের সৌন্দর্য আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে।

নরসিংদীতে স্ত্রীকে গলাটিপে হত্যার পর পালিয়ে গেল স্বামী
নরসিংদী প্রতিনিধি

নরসিংদীর শিবপুরে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে গলাটিপে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে রবিবার দুপুরে শিবপুর থানার ভরতেরকান্দি গ্রামের বসত ঘর হতে মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এর আগে শনিবার দিবাগত রাতে স্ত্রী খাদিজা আক্তারকে (৩৫) গলাটিপে হত্যার পর স্বামী তারেক মিয়া (৪০) পালিয়ে যায় বলে ধারণা করছে পুলিশ ও স্থানীয়রা।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনেরা জানান, রবিবার সকালে সাড়া না পেয়ে বাড়ির লোকজন ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে গৃহবধূ খাদিজার মরদেহ দেখতে পায়।
শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, নিহতের গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হত্যার পর হতে স্বামী তারেক মিয়া পলাতক রয়েছে। প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সাত সন্তান নিয়ে ক্ষুধার সংসার, এক মায়ের হাহাকার
দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই সুলেমা খাতুনের জীবন যেন অন্ধকারে ঢেকে গেছে। দুই বছর আগে স্বামী সাদত আলী মারা যান। এখন সাত সন্তান ও অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। চন্ডিগড় ইউনিয়নের মউ গ্রামের সেই ছোট্ট ঘরে প্রতিদিনের লড়াই শুধু বেঁচে থাকার।
গত শনিবার বিকেলে সুলেমার ঘরে গিয়ে দেখা যায়, সন্তানরা ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদছে। ঘরে অল্প চাল আছে, কিন্তু তরকারি নেই। বড় ছেলে রফিক (১৪) আইসক্রিম বিক্রি করে যা আনে, তাতেই কোনোমতে চলে তাদের দিন।
সুলেমা বলেন, আশপাশের বাড়িতে কাজ পেলে কিছু টাকা পাই।
প্রতিবেশী হাসিনা বেগম বলেন, সুলেমার কষ্ট দেখে আমরা যতটা পারি সাহায্য করি।
সুলেমার আকুতি একটাই—সন্তানদের পেট ভরে খাওয়ানো আর অল্পস্বল্প পড়াশোনা করানো। কিন্তু অভাবের কাছে হার মানতে হচ্ছে তাকে।
রফিক বলে, আইসক্রিম বিক্রি করে যা পাই, তাই দিয়ে মাকে সাহায্য করি। কিন্তু এতে সংসার চলে না।
স্থানীয়রা জানান, সুলেমার জামাইও অসুস্থ ছিলেন। তিনিও ভিক্ষা করতেন। এখন সুলেমাই একমাত্র ভরসা। তার সংসারে আলো ফোটার আশা এখনও অধরা।