মানসিক ভারসাম্যহীন ও বাক প্রতিবন্ধী নারী আকলিমা আক্তার (২৬) ও তার এক মাসের নবজাতক কন্যা সন্তান মাহিয়া আক্তারকে ঢাকা মিরপুর শাহ্ আলী আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেছে উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা কার্যালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আকলিমা আক্তার ও তার নবজাতক কন্যাকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের আবেদন করেন দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিশেষ আদালতের বিচারক (ম্যাজিস্ট্রেট) মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খাঁন। পরে আজ শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সকাল ১০টায় সমাজ সেবা অধিদপ্তরের ডিজি আল আমিন জামালীর নির্দেশে ওই নারী ও তার সন্তানকে হস্তান্তরের উদ্দেশে ঢাকা মিরপুর শাহ্ আলী আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
আরো পড়ুন
৬৪ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার মো. রায়হানুল ইসলাম, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা বরুণ চন্দ্র দে, থানার এসআই তাছলিমা সিকদার, মানসিক ভারসাম্যহীন আকলিমা ও তার শিশু কন্যাকে দেখভাল করা ভিক্ষুক আয়েশা বেগম, সাংবাদিক ও সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মচারী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
আজ শুক্রবার একটি মাইক্রোবাসে করে দেবীদ্বার থানার এসআই তাছলিমা সিকদারের নেতৃত্বে সমাজ সেবা কার্যালয়ের কর্মচারী ও ওই নারী এবং শিশুর দেখভাল করা সেই ভিক্ষুক আয়শা বেগমসহ কয়েকজনকে দিয়ে শিশুটিকে তার মায়ের সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জানান, আমরা মানসিক ভারসাম্যহীন আকলিমার সন্ধান পাওয়ার পর থেকে গর্ভকালীন সময় পর্যন্ত চিকিৎসা প্রদান, আর্থিক সহায়তাপ্রদানসহ নজরদারিতে রেখেছি। এরই মধ্যে শিশুটি দত্তক নেওয়ার জন্য অসংখ্য লোকজনের আবেদনও পেয়েছি। মা ও শিশুর নিরাপত্তা এবং আইনি জটিলতায় সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়েছি।
সেখানে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয়ের নিকট শিশুটিকে দত্তক নিতে ইচ্ছুকরা আবেদন করতে পারেন। তিনি দত্তক দিতেও পারেন অথবা আজিমপুর ‘ছোটমনি নিবাসেও’ হস্তান্তর করতে পারেন।
আরো পড়ুন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হৃদয়ের পরিবারের পাশে বসুন্ধরা শুভসংঘ
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার মো. রায়হানুল ইসলাম বলেন, ‘মানসিক ভারসাম্যহীন আকলিমা ও তার শিশু কন্যার নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা তাদের সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেছি। সেখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ তাদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা এবং শিশুটির ভবিষ্যৎ উন্নয়নে যাবতীয় ব্যবস্থা নেবেন।
’
কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ৬ নম্বর ফতেহাবাদ ইউনিয়নের ঘোষঘর গ্রামের জব্বর আলী মূন্সীর বাড়ির আয়শা বেগম (৫০) নামে এক ভিক্ষুকের ঘরে ৪ মাস ছিলেন ওই মানসিক ভারসাম্যহীন নারী। পরে গত ১২ মার্চ দিবাগত মধ্যরাতে এক কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন।
ওই নারীকে আশ্রয় দেওয়া আয়েশা বেগম (৫০) জানান, প্রায় তিন মাস আগে কম্বল আনতে সুবিল বাজারে যান আয়েশা। এ সময় তিনি আকলিমাকে সুবিল বাজারে বসে রাস্তার মাটি খেতে দেখেন। পরে তিনি তাকে তার বাড়িতে নিয়ে আসেন।
মানসিক প্রতিবন্ধী ওই নারী তাকে মারধর করলেও তিনি ধৈর্য না হারিয়ে গর্ভপাত পর্যন্ত তার আশ্রয়ে রাখেন।
আরো পড়ুন
বনানীর সিসা বার থেকে রংধনু গ্রুপের হেড অব মিডিয়া সাইফুলসহ আটক ৩
তিনি জানান, তিনি স্বামী পরিত্যাক্তা। বাবার বাড়িতে তার একমাত্র পুত্র সন্তান নিয়ে আশ্রিত আছেন। তার একমাত্র ভাই নূরনবী (৩২) ও প্রতিবন্ধী। নিজ পুত্র এবং প্রতিবন্ধী ভাইয়ের ভরণপোষণও তার ভিক্ষাবৃত্তিতে চলে।
আয়শা বেগম বলেন, ‘আমার আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলে তাদের সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠাতাম না। নিজ সন্তানের মতোই শিশু ও তার মাকে লালন পালন করে আসছিলাম। আজ তাদের বিদায় দিতে খুই কষ্ট হচ্ছে।’
দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খাঁন বলেন, ‘ওই নারীটি অভিভাবকহীন এবং আত্মীয়-স্বজনের কোনো প্রকার খোঁজ না পাওয়ায় তাকে ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১ অনুসারে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রত্যায়িত প্রতিষ্ঠান, মিরপুর-১, রাইনখোলা সরকারি আশ্রয় (অভ্যর্থনা) কেন্দ্রে প্রেরণ করেছি। এ ক্ষেত্রে ওই নারীর গর্ভকালীন সময় পর্যন্ত সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিবর্গ ও সমাজ সেবার কর্মকর্তাদের মানবিক কর্মকাণ্ডে এগিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’