<p>বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাসের সঙ্গে ছাত্র আন্দোলন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে মহান স্বাধীনতা—ছাত্ররা বরাবরই অধিকারের জন্য লড়েছে রাজপথে। এই সময়ে এসেও নানা দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলনে নামে। কখনো কখনো সেই আন্দোলন হাতছাড়া হয়ে যায়, সুযোগ নেয় রাজনৈতিক পক্ষগুলো। ছাত্র আন্দোলন নিয়ে যদি কখনো চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, সেখানে কী কী বিষয় থাকবে? দেশের আলোচিত চার নির্মাতার কাছে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজেছেন কামরুল ইসলাম।</p> <p><strong>অভিভাবকরা দূরে না ঠেলে কাছে ডেকে কথা বলবে (শিহাব শাহীন)</strong><br /> রোম্যান্টিক গল্পের জন্য প্রসিদ্ধ তিনি। তবে থ্রিলারেও যে ছক্কা হাঁকাতে জানেন, তার প্রমাণও দিয়েছেন। এবারের ছাত্র আন্দোলন থেকেও কিছু গল্পের প্লট খুঁজে পেয়েছেন তিনি। তবে সেটা বলতে নারাজ।</p> <p>শিহাব শাহীন বলেন, ‘আমি একটু মেটাফোরিক পন্থায় গল্প বলতে পছন্দ করি, সরাসরি স্লোগান আমার পছন্দ না। অনেক প্লট মাথায় এসেছে। অবশ্য সেটা বাস্তবায়ন করতে পারব কি না, জানি না।’ ভাবনার দুয়ারে যেহেতু গল্পেরা কড়া নেড়েছে, তাতে কী কী বিষয় জায়গা পাবে? নির্মাতার জবাব, ‘ছাত্ররা সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। শুধু নিজেদের স্বার্থ বা চাহিদার জন্য নয়, দেশের দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ—সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলবে। এ বিষয়গুলো রাখব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে তো এটাই। ছাত্রদের প্রতি আমি সংবেদনশীল। তাদের আন্দোলন বেহাত হয়, নানা মানুষ-পক্ষ সুযোগ নেয়। তবে আমার গল্পে ছাত্রদের যৌক্তিক দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকব। অভিভাবক পর্যায়ে যাঁরা আছেন, তাঁরা ছাত্রদের দূরে না ঠেলে কাছে ডেকে কথা বলবে।’</p> <p><strong>ভাবনা আছে, এখনই বলতে চাই না (আশফাক নিপুণ)</strong><br /> দেশ, সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে সচেতন নির্মাতা হিসেবে তাঁর পরিচিতি আছে। গল্প-নির্মাণেও সেসবের ছাপ রাখেন। ছাত্র আন্দোলন নিয়ে কনটেন্ট বানানোর চিন্তা রয়েছে তাঁর। তবে এখনই সেটা মুখ ফুটে বলতে চান না। </p> <p>নিপুণ বলেন, ‘আমার গল্পে কী কী রাখব, সেটা এখন বলে দিলে তো সবাই জেনেই যাবে। তাহলে আর কনটেন্ট বানিয়ে কী হবে! তার চেয়ে বরং বিষয়বস্তুটা আমার কাছেই থাকুক। সামগ্রিক ছাত্র আন্দোলন নিয়ে কিংবা আন্দোলনের খুব ছোট একটা অংশ নিয়েও গল্প হতে পারে। ছাত্র আন্দোলন তো অনেক বড় এবং স্পর্শকাতর বিষয়। এটা নিয়ে কনটেন্ট নির্মাণের ভাবনা সবারই থাকে, আমারও আছে। তবে ভাবনা থাকলেই তো হবে না, যথাযথ পড়াশোনা ও গবেষণার দরকার আছে। যা কিছু আমি দেখিনি, সেটা সম্পর্কেও জানতে হবে। পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিয়ে তবেই এ রকম বিষয় নিয়ে কাজ করা উচিত।’</p> <p><strong>দেশ যখন সংকটে থাকে তখন কিছু ভাবা যায় না (মিজানুর রহমান আরিয়ান)</strong><br /> দর্শক তাঁকে বলেন ‘ভালোবাসার গল্পকথক’। প্রেম-ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে ছাত্র আন্দোলনের মতো বিষয় নিয়ে কি কোনো কনটেন্ট বানাবেন তিনি? চলমান পরিস্থিতিতে কোনো গল্প কি খুঁজে পেয়েছেন? আরিয়ান বলেন, ‘দেশ যখন এ রকম সংকটে থাকে, তখন আসলে কিছু ভাবা যায় না। এখন পর্যন্ত সেভাবে ভাবিনি। যখন ভাবব, সে সময়টা কেমন, ওটা ধরার চেষ্টা করব। কারণ ছাত্রদের আন্দোলন বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন দাবিতে হয়েছে। ওই মুহূর্তে ছাত্রদের যে দাবিটা আমাকে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করবে, তা নিয়েই বানাব। আলাদা করে এখন বলতে পারছি না।’</p> <p>ছাত্র আন্দোলন বেহাত হওয়ার প্রসঙ্গ রাখার বিষয়ে আরিয়ানের ভাবনা এ রকম, ‘আমার তো একটা বোধ আছে। আন্দোলন কখন কতটুকু ছাত্রদের থাকে, সেটা তো বুঝি। ধরুন ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কনটেন্ট বানাব, তখন তো এই বেহাত হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ আসবে না। অর্থাৎ কোন আন্দোলনটা নিয়ে কাজ করব, সেটাই বলে দেবে রাজনৈতিক প্রসঙ্গটা থাকবে কি না।’</p> <p><strong>ছাত্রদের আন্দোলনকেই প্রাধান্য দেব (ভিকি জাহেদ)</strong><br /> ঢাকাই শোবিজে রহস্যের কাণ্ডারি হয়ে উঠেছেন তিনি। কেউ কেউ বলেন ‘মিস্টার টুইস্ট’। তাঁর নির্মাণে ছাত্র আন্দোলনের প্রসঙ্গ উঠে আসবে—এমন প্রত্যাশা দর্শকের মনে থাকতেই পারে। নিশ্চয়তা না দিলেও ভিকি তাঁর ভাবনা জানালেন এভাবে, ‘বায়ান্ন কিংবা একাত্তরের ছাত্র আন্দোলন তো দেখিনি, পড়ে জেনেছি। এই সময়ে এসে কিছু ছাত্র আন্দোলনের সাক্ষী হয়েছি। একটা বিষয় পরিষ্কার—ছাত্র আন্দোলন বরাবরই দেশ ও সমাজের কোনো অসংগতি বা বৈষম্যের বিরুদ্ধে হয়েছে। যদি কখনো ছাত্র আন্দোলন নিয়ে ছবি বা কনটেন্ট বানাই, সেখানে এ বিষয়টা থাকবে। ছাত্রদের আন্দোলন তো অরাজনৈতিক আন্দোলন। এটা সত্য, এর সুযোগ নেয় রাজনৈতিক দলগুলো। তবে আমার নির্মাণে সেসব রাখব না। আমি ছাত্রদের আন্দোলনকেই প্রাধান্য দেব।’</p> <p>চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে অবশ্য কোনো গল্প ভাবেননি ভিকি। বলেন, ‘পুরো সময়টা দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলাম। আমাদের মাথায় সব সময় নতুন নতুন গল্প ঘোরে। কিন্তু এই সময়টাতে একেবারে ব্ল্যাঙ্ক ছিলাম।’</p>