<p>স্কুল-কলেজে পড়ার সময় তার নামের আগে ব্যবহার হতো ‘দুষ্ট’ শব্দটা। কারণ, ক্লাসের ফাঁকে হুট করে গান ধরতেন। বলতেন জোকস। কোন স্যার কিভাবে পড়ান সেটা অভিনয় করে দেখাতে পারতেন। ওইটুকুন বয়সে হুটহাট ধারণ করতে পারতেন যেকোনো চরিত্র। কে জানত সেই অভিনয়, গান গাওয়ার চেষ্টাই একসময় হবে তার পেশা! তিনি তরুণ অভিনেতা শহীদুল্লাহ সবুজ। এখন বাংলা নাটকের অপরিহার্য শিল্পী। যাকে মাসের প্রায় পুরোটা সময় থাকতে হয় শুটিংয়ে।</p> <p>অথচ শুরুটা মোটেও সহজ ছিল না সবুজের। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই পত্রিকায় দেখেন নাট্যকর্মী নিচ্ছে বঙ্গরঙ্গ নাট্যদল। আবেদন, পরীক্ষা শেষে ঢুকে পড়েন সেই দলে। সেই শুরু। সবুজের ভাষায়, ‘থিয়েটার আমাকে আটকে ফেলে। আর বের হতে পারিনি আজও। টানা চার বছর ছিলাম ওই দলে। সেখানে অনেক কিছু শিখেছি। ওই সময় থেকেই সহকারী পরিচালক হিসেবেও কাজ শুরু করি। সঙ্গে টুকটাক অভিনয়। সেই শুরু।’</p> <p>পুরনো গল্পের ঝাঁপি মেলে ধরেন সবুজ। ২০০৯-১০ সালের দিকে লিখন মালাকারের দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং মুরাদ পারভেজের একটি ধারাবাহিক নাটক নিয়ে শুরু করেন ছোট পর্দায় অভিনয়। তারপর নির্মাতা সাজ্জাদ সুমনের ‘অপরাহ্নের গল্প’ নামের একটি টেলিফিল্মের শুটিং করতে গিয়েছিলেন শ্রীমঙ্গল। সেই নাটকে অভিনয় করেছিলেন বরেণ্য অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে। সবুজের অভিনয় দেখে হুমায়ুন ফরীদি কাছে ডেকেছিলেন। জানতে চেয়েছিলাম থিয়েটার করে কি না। অল্প বয়সী সবুজ বলেছিল, ‘করতাম, ছেড়ে দিয়েছি। তত দিনে বঙ্গরঙ্গ থিয়েটার ছেড়েছে সবুজ। উত্তর শুনে ফরীদি হেসে বলেছিলেন, ‘তোমার বয়স কত? ধরলে কবে আর ছাড়লে কবে?’ সবুজ আর উত্তর দিতে পারেনি। তারপর ফরীদি এগিয়ে নিয়েছেন আলাপ। ‘অভিনয় শিখতে চাইলে নাট্যকেন্দ্রে যাও। তারিক আনাম খানের কাছে অভিনয় শেখো ঠিকমতো। তোমার সেন্স ভালো। অভিনয়টা ঠিকমতো করতে পারবে।’</p> <p>এমন গুণী অভিনেতার এতটুকু অনুপ্রেরণাই আলাদীনের চেরাগের মতো জীবন বদলে দিয়েছে শহীদুল্লাহ সবুজের জীবন। ওই সময়ই পরিচয় হয় আরেক অভিনেতা মোশাররফ করিমের সঙ্গে। তিনিও বলেছিলেন নাট্যকেন্দ্রের কথা। তাই ২০১১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে নাট্যকেন্দ্র হলো সবুজের থিয়েটার চর্চার জায়গা।</p> <p>টেলিভিশন নাটকের শুরুর গল্প প্রসঙ্গে সবুজ বলেন, ‘শুরুতে আমার চরিত্রগুলো হত খুব ছোট। কখনো শটের মাঝে হেঁটে যাওয়াই ছিল চরিত্র। কখনো নায়কের বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা। সহজ করে বললে পাসিং শট। অনেক সময় আমাকে বলা হতো তোমার চরিত্র বোয়াল মাছের কিন্তু গিয়ে দেখতাম সেটা পুঁটি মাছের চরিত্র, তা-ও আবার সেখানে চারজনের ভাগ। কিন্তু আমি দমে যাইনি। করে যেতাম।’</p> <figure class="image"><img alt="1" height="600" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/05-11-2023/মোশাররঠি করিম.jpg" width="1000" /> <figcaption>একটি নাটকের দৃশ্যে মোশাররফ করিমের সঙ্গে শহীদুল্লাহ সবুজ</figcaption> </figure> <p>গত এক যুগের বেশি সময় ধরে নিয়মিত অভিনয় করছেন সবুজ। গুণী অভিনেতা মোশাররফ করিমের সঙ্গে অনেক নাটকে দেখা যায় তরুণ এই অভিনেতাকে। তবে শুরুটা ছিল কচি খন্দকার পরিচালিত ‘এফডিসি’ নামের ধারাবাহিকে। তারপর প্রায় দুই শ নাটকে একসঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন মোশাররফ ও শহীদুল্লাহ সবুজ।</p> <p>দীর্ঘ সময়ে আস্তে আস্তে পরিপক্ব হয়েছেন শহীদুল্লাহ সবুজ। এখন মাসের ২৫ দিনই শুটিং করেন তিনি। তাকে কেন্দ্রীয় চরিত্র করেও নাটক নির্মাণ হয়েছে। ১০টির বেশি নাটকে একেবারে ‘নায়ক’ হয়ে এসেছেন এই অভিনেতা। নাটকগুলো মুক্তিও পাচ্ছে। সাড়াও পাচ্ছেন বেশ। বেশিরভাগ ধারাবাহিকেও আছেন প্রধান চরিত্রে। </p> <p>তাই সহজেই বলা যায়, শহীদুল্লাহ সবুজ হয়ে উঠেছেন এক নির্ভরশীল অভিনেতা। পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করে সবুজ জানান, প্রথম সম্মানি পেয়েছিলেন মাত্র ৫০০ টাকা। এখন সেটা ছাড়িয়েছে প্রায় ৪০ গুণ। তার জীবনে টেলিভিশন নাটকের সংখ্যা প্রায় ৫০০। ক্যারিয়ারে যুক্ত হয়েছে ‘জিরো ডিগ্রি’ ও ‘কমলা রকেট’ নামে দুটি দারুণ সিনেমা। ওটিটিতেও আছে তার কাজ।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="মোশাররফ করিমের সঙ্গে অভিনয় করতে চান মোনালিসা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/05/13/1715595870-4652e88e415dd9af43d7013a6332cba7.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>মোশাররফ করিমের সঙ্গে অভিনয় করতে চান মোনালিসা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/entertainment/2024/05/13/1387518" target="_blank"> </a></div> </div> <p>তবে এসব করতে করতে গিয়ে মঞ্চ ছাড়েননি। এখনো নাট্যকেন্দ্রের হয়ে মঞ্চ আঁকড়ে ধরে আছেন। কখনো মঞ্চে ওঠেন, কখনো পেছনে থেকে কাজ করেন। আপাদমস্তক এই অভিনেতার এখন টেলিভিশনে চলছে বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক। উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিকগুলোর মধ্যে আছে- বাংলাভিশনে চলছে মানস পালের রচনা ও শামস করিমের পরিচালনায় দীর্ঘ ধারাবাহিক ‘বাওকুমটা বাতাস’। এনটিভিতে চলছে শফিকুর রহমান শান্তনুর রচনা ও সাজিন আহমেদ বাবুর পরিচালনায় দীর্ঘ ধারাবাহিক ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’, এটিএন বাংলায় শুরু হয়েছে সজীব খানের রচনা ও ইমরাউল রাফাতের পরিচালনায় দীর্ঘ ধারাবাহিক  ‘অদ্ভুত পরিবার’। এ ছাড়া প্রচারের অপেক্ষা আছে, মাহফুজ খানের গল্পে, নাজমা নাজের রচনায় ও ফরিদুল হাসানের পরিচালনায় নাটক ‘হাউজ হাসবেন্ড’ এবং মেজবাহ উদ্দিন সুমনের রচনা ও আবু হায়াত মাহমুদের পরিচালনায় দীর্ঘ ধারাবাহিক ‘জেন জেড’। এ ছাড়া কিছু একক নাটক সম্প্রচারের অপেক্ষায়।</p> <figure class="image"><img alt="1" height="600" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/05-11-2023/সবুজ (1).jpg" width="1000" /> <figcaption>নানা চরিত্রে শহীদুল্লাহ সবুজ। ছবি : ফেসবুক থেকে নেওয়া</figcaption> </figure> <p>কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার গুনাইঘর গ্রামের এই তরুণের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে সেখানেই। প্রাইমারিতে পড়েছেন নিজের গ্রামের সরকারি প্রাথমিক স্কুলে। তারপর দেবীদ্বারের রিয়াজ উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি। আর ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স। মাঝে অবশ্য আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন দুই বছর। তবে পড়াশোনাকেন্দ্রিক ক্যারিয়ারের ভাবনা কখনোই ছিল না তার। সহজ করে বললেন, ‘চলতি পথে নানা মানুষের সঙ্গে দেখা হয়। সেসব দেখে আমার সব পেশাই টানত বা এখনো টানে। এ কারণে আমি একেক সময় একেকটা হতে চেয়েছি। পরিবারের লোকজনই চাইত আমি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা নিদেনপক্ষে একজন সরকারি চাকরিজীবী হই। কিন্তু সেসব আমাকে দিয়ে হয়নি। কারণ আমার মনে হয়েছে সব কিছুই হতে, পারব যদি আমি অভিনেতা হই। কারণ একজন অভিনেতাই নানা চরিত্র হয়ে ওঠেন। উঠতে পারেন। এ কারণেই আমি অভিনেতা হয়েছি। সারা জীবন এখানেই থাকতে চাই।’</p>