গোল্ডেন বুট ‘অতিমানব’ এমবাপ্পের

রাহেনুর ইসলাম
রাহেনুর ইসলাম
শেয়ার
গোল্ডেন বুট ‘অতিমানব’ এমবাপ্পের
হ্যাটট্রিক করেও বিশ্বকাপ জেতেননি, গোল্ডেন বুটে কি আর মন ভরে! সেই হতাশাই স্পষ্ট এমবাপ্পের অভিব্যক্তিতে। ছবি : এএফপি

শুরুটা করেছিলেন এনের ভ্যালেন্সিয়া। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই জোড়া গোল। ইকুয়েডরের এই তারকা স্ট্রাইকার জালের দেখা পান নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পরের ম্যাচেও। ইকুয়েডর গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়ায় থামতে হয় ভ্যালেন্সিয়াকে।

তবে ছুটে চলেছিলেন লিওনেল মেসি, কিলিয়ান এমবাপ্পে, হুলিয়ান আলভারেস, অলিভিয়ের জিরুরা। সবচেয়ে বেশি গোল করে তাঁরা গোল্ডেন বুটের লড়াইটা টেনে আনেন ফাইনাল পর্যন্ত। ৩২ দলের ৮৩২ ফুটবলারের লড়াইয়ে শেষ হাসিটা কিলিয়ান এমবাপ্পের। ফাইনালে হ্যাটট্রিকে মোট ৮ গোল করে এই ফরাসি তরুণই জিতলেন এবারের সোনার জুতা।

তাতে বিশ্ব ফুটবলের যুবরাজ থেকে রাজা হওয়ার পথে এগিয়ে গেলেন এক ধাপ। কেবল দুই বিশ্বকাপ খেলে তাঁর গোল ১২টি। এত কম বয়সে এত বেশি গোলের কীর্তি নেই কারো। খোদ তিন বিশ্বকাপজয়ী পেলের গোল ১২টি।

এমবাপ্পে থামবেন কোথায়?

এমবাপ্পে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লক্ষ্যভেদ করে খুলেছিলেন গোলের খাতা। ডেনমার্কের সঙ্গে পরের ম্যাচে করেন জোড়া গোল। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ছিলেন বেঞ্চে। বদলি হয়ে শেষ দিকে নামলেও পাননি গোলের দেখা। শেষ ষোলোতে পোল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর জোড়া গোলেই কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায় ফ্রান্সের।

তবে কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে ভুগেছিলেন গোলখরায়। সেরাটা হয়তো জমা রেখেছিলেন ফাইনালের জন্যই। বড় নামের খেলোয়াড় তো বড় মঞ্চেই জাত চেনাবেন নিজের। আর্জেন্টিনা ৭৯ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে ছিল ২-০ গোলে। সবাই ধরেই নিয়েছিলেন মহানায়ক মেসি-বীরত্বে সহজেই ৩৬ বছরের খরা কাটাতে চলেছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু ৮০ থেক ৮১—এই ৯৭ সেকেন্ডের ঝড়ে এমবাপ্পে তছনছ করে দিলেন সব। দুই গোল করে ফ্রান্সকে ফিরিয়ে আনেন ম্যাচে। পেলে, ভাভাদের মতো গোল করলেন দুই বিশ্বকাপ ফাইনালে। এরপর আর্জেন্টিনা যখন ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে, তখন শেষ বেলায় আরো এক গোল এমবাপ্পের। ১৯৬৬ সালে জিওফ হার্স্টের পর ফাইনালে প্রথম হ্যাটট্রিক করা খেলোয়াড়ের কীর্তিটাও গড়লেন ফরাসি যুবরাজ। নিজেও হয়ে যান কাতারের সর্বোচ্চ গোলদাতা। তবে শিরোপাটা জিতলে পূর্ণতা পেত অর্জনটা। আফসোস, শুধু শিরোপাটাই পাওয়া হয়নি এমবাপ্পের।

বেশি গোল করলেই গোল্ডেন বুট—মোটা দাগে নিয়ম এটাই। তবে কাতারে ফাইনালের আগে সমান ৫ গোল ছিল মেসি ও এমবাপ্পের। কিন্তু পুরস্কারটা পাবেন একজনই, যৌথভাবে দেওয়ার সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে নিয়মটা হলো, গোল সমান হলে প্রথমে দেখা হবে কার অ্যাসিস্ট কতটি। মেসির অ্যাসিস্ট তিনটি আর এমবাপ্পের দুটি। তাই পুরস্কারটা পেতেন মেসি।

ফাইনালে যদি এমবাপ্পে একটি অ্যাসিস্ট করতেন তখন সমতায় থাকতেন মেসির। তখন দেখা হতো, কে কত কম মিনিট মাঠে খেলেছেন। ফাইনালের আগে মেসি মাঠে ছিলেন ৫৭০ মিনিট আর এমবাপ্পে ৪৭৭ মিনিট। এই অঙ্কে পুরস্কারটা যেত এমবাপ্পের হাতে। তবে শেষ পর্যন্ত ৮ গোল করেই সোনার জুতাটা পেলেন এমবাপ্পে।

লিওনেল মেসি আগের চারটি বিশ্বকাপে নক আউটে গোলের দেখা পাননি। কাতারে সেই মেসি ৩৫ বছর বয়সে রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য স্নায়ুচাপের নক আউটে। শেষ ষোলোতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গোলের শুরু ৩৫ মিনিটে লক্ষ্যভেদ করে। কোয়ার্টার ফাইনালে কঠিন পরীক্ষা ছিল ডাচদের সঙ্গে। উত্তীর্ণ সেখানেও। তাঁর জাদুকরী পাসে নাহুয়েল মলিনা গোল করার পর আর্জেন্টিনাকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে নেন নিজেই। ৭৩ মিনিটে পাওয়া পেনাল্টিটা ভুল করেননি জালে জড়াতে।

সৌদি আরবের সঙ্গে গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোলের শুরুটা করেছিলেন মেসি। তবে পেনাল্টি মিস করেন পোল্যান্ডের বিপক্ষে। সেমিফাইনালে আবারও পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। সেটা থেকে ভুল করেননি আর। ফাইনালেও ১২ গজের চাপ কাটিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় গোল করলেন পেনাল্টি থেকেই। তাঁর ৬ গোলের ৪টিই পেনাল্টি থেকে। একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে নক আউটের সব ম্যাচে গোল করার কীর্তিটাও হয়েছে তাতে। অলৌকিক পায়ে শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনালে বল জালে জড়িয়েছেন একবার করে। আর ফাইনালে করলেন জোড়া গোল। তা-ও মুহূর্তটা কখন? কিলিয়ান এমবাপ্পে নামের আরেক জাদুকর যখন সবটুকু আলো কেড়ে নিতে যাচ্ছিলেন নিজের দিকে। পেনাল্টির পর অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে জাদুকরী গোলে ফুটবলবিশ্বই যেন আলোকিত করলেন মেসি। সর্বকালের সেরার বিতর্কও কি পেছনে ফেললেন এই কীর্তিতে? পেলে, ম্যারাডোনা, ক্রুইফ, রোনালদো—কত কিংবদন্তি খেলেছেন বিশ্বকাপে। নক আউটের পাহাড়সমান চাপ সামলে টানা চার ম্যাচে গোল নেই কারো। নিজেকে নতুন চূড়ায় তুলে শেষ বিশ্বকাপটা এভাবেই রাঙিয়ে গেলেন ভুবন ভোলানো মেসি।

গত বিশ্বকাপে ৬ গোল করে গোল্ডেন বুট জেতা হ্যারি কেইন নিষ্প্রভ ছিলেন এবার। কাতারে মাত্র ২ গোলই করেছেন ইংলিশ অধিনায়ক। কেইনের মতো ৬ গোল করে ২০১৪ সালে পুরস্কারটা পান কলম্বিয়ার হামেস রোদ্রিগেস। ২০১০ সালে থমাস মুলার আর ২০০৬-এ মিরোস্লাভ ক্লোসে ৫ গোল করেই পান গোল্ডেন বুট। ২০০২ সালে ব্রাজিলের রোনালদো করেছিলেন ৮ গোল। এর আগে ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত টানা ছয় আসরে ৬টির বেশি গোল পাননি কেউই। এবার বদলাল ছবিটা। ৮ গোলে পুরস্কারটা জিতলেন এমবাপ্পে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে চলছে প্রস্তুতি

শেয়ার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে চলছে প্রস্তুতি
পহেলা বৈশাখে বাঙালি মেতে উঠবে বর্ষবরণে। বাংলা বছরের প্রথম দিনকে স্বাগত জানাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে চলছে প্রস্তুতি। শিক্ষার্থীদের কেউ ব্যস্ত রঙিন মুখোশ বানাতে, কেউ মাটির সরা রাঙাতে। আবার কেউ গ্রামবাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলছেন তুলির আঁচড়ে। গতকাল তোলা। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সাধারণ মানুষ চায় এই সরকার আরো পাঁচ বছর থাক

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট ও সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট ও সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
শেয়ার
সাধারণ মানুষ চায় এই সরকার আরো পাঁচ বছর থাক
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, সাধারণ মানুষ চাচ্ছে এই সরকার আরো পাঁচ বছর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাক। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ থানা পরিদর্শনে এসে তিনি এ কথা বলেন।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, কিছুদিন আগে আমাদের থানাগুলোর নিজস্ব অনেক হাতিয়ার হারিয়েছে। এগুলো উদ্ধারে কাজ চলছে।

হারানো হাতিয়ার উদ্ধার হলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে।

শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এসব প্রশ্ন পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে করবেন। তবে ভারতের সঙ্গে আমাদের অপরাধীদের আনার চুক্তি আছে। সেটার আলোকে ফেরত আনার চেষ্টা চলবে।

হাওরের কৃষির উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, হাওরসহ সারা দেশে অনেক জমি পড়ে আছে। আমরা এই জমি চাষের আওতায় আনতে ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছি। যার মাধ্যমে পতিত জমি চাষের আওতায় আনা হবে।

থানা পরিদর্শনের পর স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরে ধানকাটা কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা উন নবী, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মুশফেকুর রহমান, জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া প্রমুখ।

লালগালিচা দেখে রেগে গেলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পরিদর্শনে আসবেন তাই সিলেট বিমানবন্দর থানায় তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়ার আয়োজন করে পুলিশ প্রশাসন। এসব আয়োজন দেখে রেগে আগুন হয়ে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেনেন্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

ঢাকা থেকে বিমানে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেনেন্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এরপর সেখান থেকে তিনি যান বিমানবন্দর থানা পরিদর্শনে।

উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষে বিমানবন্দর থানায় বিছানো হয় লালগালিচা। আয়োজন করা হয় গার্ড অব অনারের। এসব দেখে রেগে গিয়ে পুলিশ কমিশনারসহ কর্মকর্তাদের ভর্ত্সনা করেন তিনি। রেগে গিয়ে তিনি বলেন, যেটা না করি সেটা আকামটা করো। কামটা না করে আকামটা করো।

মন্তব্য

শেখ হাসিনা-পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শেখ হাসিনা-পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

রাজধানীর পূর্বাচলে দশ কাঠার প্লট জালিয়াতির ঘটনায় করা মামলায় পলাতক আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার এই আদেশ দেন। এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৪ মে তারিখ ধার্য করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা-পুতুল ছাড়াও অপর ১৬ জন আসামি হলেন জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান এবং তদন্তে প্রাপ্ত আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

এর আগে গত ১২ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে শেখ হাসিনা ও তাঁর মেয়ে পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। একই সঙ্গে মামলার অভিযোগপত্রে ১৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকায় নিজের ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও সেটি গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা এবং আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করে মা শেখ হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকা অবস্থায় তাঁর ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে প্রকল্পের বরাদ্দ বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত গণকর্মচারীদের প্রভাবিত করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইনসম্মত পারিশ্রমিক না হওয়া সত্ত্বেও, আইনমতে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ১৭ নম্বর প্লট সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন। প্রতারণামূলক অবৈধ পারিতোষিক দেওয়া ও নেওয়া এবং অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ ও বেআইনি অনুগ্রহ প্রদর্শনের মাধ্যমে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে দণ্ডযোগ্য অপরাধ করেছেন।

 

মন্তব্য
মানবতাবিরোধী অপরাধ

চূড়ান্ত পর্যায়ে চার মামলা তদন্তে আরো ৩৫টি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
চূড়ান্ত পর্যায়ে চার মামলা তদন্তে আরো ৩৫টি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ পর্যন্ত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ৩৩০টি অভিযোগ জমা পড়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে ৩৯টি অভিযোগের তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের খবর সংগ্রহকারী সাংবাদিকদের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ, মামলার তদন্ত ও আসামিদের গ্রেপ্তারের হালনাগাদ তথ্যের একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ২২টি মিসকেস (বিবিধ মামলা) করা হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্ত ১৪১ জন। প্রসিকিউশনের আবেদনে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরোয়ানা জারির পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫৪ জনকে।

বাকি ৮৭ জন পলাতক।

অভিযুক্ত ১৪১ জনের মধ্যে বেসামরিক ব্যক্তি রয়েছেন ৭০ জন, পুলিশ সদস্য ৬২ জন এবং সামরিক বাহিনীর ৯ জন সদস্য রয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে ৮ আগস্ট গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার।

এই সরকারে আইন উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে অধ্যাপক আসিফ নজরুল ঘোষণা দেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা হবে। সে ঘোষণা অনুযায়ী প্রথমে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠনের পর ১৪ অক্টোবর রাতে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে ১৭ অক্টোবর বিচারকাজে বসেন পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল। বিচারিক কাজের প্রথম দিনই শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরে বিভিন্ন সময় ৯৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

 

চার মামলার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে

তদন্তকাজের অগ্রগতি তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি মামলাসহ মোট চারটি মামলার তদন্ত প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে।

স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এসব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হতে পারে। এই চার মামলার মধ্যে অন্য তিনটি হলো সাভারের আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলা, রাজধানীর চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা এবং রাজধানীর রামপুরায় কার্নিশে ঝুলে থাকা ব্যক্তির ওপর গুলির ঘটনায় হওয়া মামলা। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করলে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

এতে আরো বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত এক হাজার জনের বেশি ব্যক্তির সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ভিডিওসহ ডিজিটাল সাক্ষ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে এক হাজারের বেশি ভিডিও ক্লিপ রয়েছে। এ ছাড়া গুমবিষয়ক তদন্ত কার্যক্রমে ঢাকা শহরের তিনটি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় গুমের তিনটি কেন্দ্র (আয়নাঘর, হাসপাতাল, এলআইসি ইত্যাদি বিভিন্ন কোড নেমে পরিচিত) পরিদর্শন ও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা, সিলেট, রংপুরসহ ১৫টি জেলায় তদন্তকাজ চালানো হয়েছে। তদন্তকাজে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসা পর্যায়ে চারটি গণশুনানি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পতিত সরকারের আজ্ঞাবহ ব্যক্তিরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য-প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা করছে। থানা, হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দলিলপত্র পুড়িয়ে বা লুকিয়ে নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পলাতক সুবিধাভোগীরা বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে তদন্ত কার্যক্রম এবং বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।

 

বোমা হামলা-ষড়যন্ত্র

গুমের অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে আয়নাঘর নামে পরিচিত গোপন বন্দিশালা বা নির্যাতনকক্ষে টাইমারসহ বোমা উদ্ধারের কথা চিফ প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের আগেই জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং প্রসিকিউশন টিমের ওপর সরাসরি প্রাণঘাতী বোমা হামলার চেষ্টা হয়েছে। প্রসিকিউটরদের সম্পর্কে গুজব ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে জনমনে, বিশেষ করে শহীদ পরিবারগুলোকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। তদন্ত ও বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত করতে বিদেশি লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনতে বিপুল টাকা ব্যয়ে ব্রিটেনের বিখ্যাত ডটি স্ট্রিট চেম্বার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মতবিনিময়সভায় প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার, মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামিম, আবদুল্লাহ আল নোমান, সাইমুম রেজা ও আব্দুস সাত্তার পালোয়ান উপস্থিত ছিলেন।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ