<p>মুসলমান মাত্রই মানুষের কল্যাণ কামনা করে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করে। শাশ্বত শান্তির পথে মানুষকে আহ্বান করে। মুসলমান মানুষকে ধোঁকা দেয় না। মানুষের কল্যাণের ধর্ম ইসলাম ধোঁকাবাজিকে চিরতরে নিষিদ্ধ করেছে। হাদিসে আছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। আর যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দেবে, সে-ও আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৪)</p> <p><strong>ধোঁকা দেওয়া গুনাহ</strong> : ধোঁকা দেওয়া মিথ্যাচারের মতো। ধোঁকায় মিথ্যাচারের পাপ লেখা হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আমির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদিন রাসুল (সা.) আমাদের ঘরে বসা অবস্থায় আমার মা আমাকে ডেকে বলেন, এই যে এসো! তোমাকে দেব। রাসুল (সা.) তাকে প্রশ্ন করেন, তাকে কী দেওয়ার ইচ্ছা করেছ? তিনি বলেন, খেজুর। রাসুল (সা.) তাকে বলেন, যদি তুমি তাকে কিছু না দিতে, তাহলে এ কারণে তোমার আমলনামায় একটি মিথ্যার পাপ লেখা হতো।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯১)</p> <p><strong>কিয়ামত দিবসে ধোঁকাবাজির অবস্থা</strong> : ধোঁকার জালে বন্দি হয়ে মানুষ সর্বস্ব হারিয়েছে। সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজ হচ্ছে, জনগণের সঙ্গে যে বিশ্বাসঘাতকতা করে। সাইদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক ধোঁকাবাজের জন্য কিয়ামতের দিন একটি পতাকা থাকবে আর তা তার বিশ্বাসঘাতকতার পরিমাণ অনুযায়ী উঁচু করা হবে। সাবধান! জনগণের শাসক হয়ে যে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তার চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতক আর নেই।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৪৩০)</p> <p><strong>ধোঁকাবাজি শয়তানের কাজ </strong>: শয়তান মানুষের রক্তের শিরা-উপশিরায় চলে। মানুষকে সব সময় খারাপ কাজে লিপ্ত রাখতে চায় সে। তার কাজই মানুষকে ধোঁকায় ফেলে আল্লাহবিমুখ করে রাখা। আর শয়তানের ধোঁকায় পতিত ব্যক্তি আমলে, সত্য ও সভ্যতায় শক্তিশালী হতে পারে না। হাদিসে আছে, ইবলিশ এমন শয়তানের সঙ্গে আলিঙ্গন করে। জাবির (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইবলিশ পানির ওপর তার সিংহাসন স্থাপন করে বাহিনী প্রেরণ করে। তন্মধ্যে তার সর্বাধিক নৈকট্য অর্জনকারী সে-ই, যে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। তাদের একজন এসে বলে, আমি অমুক কাজ করেছি। সে বলে, তুমি কিছুই করোনি। অতঃপর অন্যজন এসে বলে, অমুকের সঙ্গে আমি সব ধরনের ধোঁকার আচরণই করেছি। এমনকি তার থেকে তার স্ত্রীকে আলাদা করে দিয়েছি। তারপর শয়তান তাকে তার নিকটবর্তী করে নেয় এবং বলে, হ্যাঁ, তুমি খুব ভালো। বর্ণনাকারী আমাশ বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছেন, অতঃপর শয়তান তার সঙ্গে আলিঙ্গন করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৯৯৯)</p> <p><strong>ধোঁকাবাজ জান্নাতে যাবে না </strong>: জান্নাত হচ্ছে মুমিনের জন্য। ঈমানদারের জন্য। সচ্চরিত্র মানুষের জন্য। জান্নাতে চিরস্থায়ী সুখময় জীবন উপহার দেওয়া হবে মুমিনকে। ধোঁকাবাজ জান্নাতে যেতে পারবে না। তার জন্য জান্নাতের দরজা বন্ধ। ধোঁকার হৃদয় জান্নাতে প্রবেশের ন্যূনতম যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো কৃপণ, ছদ্মবেশধারী ধোঁকাবাজ, খিয়ানতকারী ও অসচ্চরিত্র ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথম যারা জান্নাতের দরজার কড়া নাড়বে, তারা হবে দাস-দাসী, যদি তারা আল্লাহ ও তাদের মনিবের সঙ্গে ন্যায়সংগত আচরণ করে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৩২)</p>