<p>নবী-রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস ছাড়া কোনো ব্যক্তির ঈমানের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ইসলামের দৃষ্টিতে অপরিহার্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রাসুল, তাঁর প্রতি তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ঈমান এনেছেন এবং মুমিনরাও। তাদের সবাই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাবগুলো এবং তাঁর রাসুলদের প্রতি ঈমান এনেছে। তারা বলে, আমরা তাঁর রাসুলদের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৫)</p> <p><strong>নবী-রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস</strong></p> <p>নবী-রাসুলদের প্রতি মুমিনের বিশ্বাসের প্রধান কিছু দিক হলো—</p> <p>১. মৌলিক মর্যাদায় সবাই সমান : মৌলিক মর্যাদার ক্ষেত্রে পৃথিবীতে আগত সব নবী-রাসুলের মর্যাদা সমান। সবার প্রতি সমান বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা আবশ্যক। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে এবং তাঁর রাসুলদেরকেও। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের মধ্যে ঈমানের ব্যাপারে তারতম্য করতে চায় এবং বলে, আমরা কতককে বিশ্বাস করি এবং কতককে অবিশ্বাস করি, তারা মধ্যবর্তী কোনো পথ অবলম্বন করতে চায়।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৫০)</p> <p>২. সব জাতির কাছেই নবী এসেছেন : আল্লাহ পৃথিবীর সব জাতি-গোষ্ঠীর কাছে নবী প্রেরণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর ইবাদত করার এবং তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসুল পাঠিয়েছি।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৩৬)</p> <p>৩. সবাই ছিলেন সত্যের ধারক : নবী-রাসুলগণ আল্লাহর পক্ষ থেকে সুনিশ্চিত সত্য নিয়ে আগমন করেছিলেন। আল্লাহর বাণীর ব্যাপারে তাঁদের কোনো সংশয় ছিল না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আমার রাসুলদেরকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২৫)</p> <p>৪. আল্লাহর বাণী পরিপূর্ণভাবে পৌঁছে দিয়েছেন : নবী-রাসুলগণ তাঁদের কাছে প্রেরিত আল্লাহর বাণী পরিপূর্ণভাবে পৌঁছে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা মোটেই ত্রুটি করেননি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না, তাঁর মনোনীত রাসুল ছাড়া। সে ক্ষেত্রে আল্লাহ রাসুলের সামনে ও পেছনে প্রহরী নিযুক্ত করেন, রাসুলগণ তাঁদের প্রতিপালকের বাণী পৌঁছে দিয়েছেন কি না জানার জন্য। রাসুলদের কাছে যা আছে তা তাঁর জ্ঞানগোচর এবং তিনি সব কিছুর বিস্তারিত হিসাব রাখেন।’ (সুরা : জিন, আয়াত : ২৬-২৮)</p> <p>৫. তাঁরা আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত : আল্লাহর প্রেরিত পুরুষরা পার্থিব জীবনে ও পরকালে তাঁর সাহায্যপ্রাপ্ত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আমার রাসুলদেরকে ও মুমিনদেরকে সাহায্য করব পার্থিব জীবনে এবং যেদিন সাক্ষীরা দণ্ডায়মান হবে।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৫১)</p> <p>৬. অভিন্ন তাওহিদের আহ্বান : পৃথিবীর সব নবী ও রাসুল অভিন্ন তাওহিদ বা একত্ববাদের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করেননি, শিরককে প্রশ্রয় দেননি। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমার আগে এমন কোনো রাসুল প্রেরণ করিনি তার প্রতি এই ওহি ছাড়া যে আমি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, সুতরাং আমারই ইবাদত করো।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ২৫)</p> <p>৭. পরস্পরকে সত্যায়ন : নবী-রাসুলগণ পরস্পরকে সত্যায়ন করেছেন। তাঁরা কখনো পরস্পরকে প্রত্যাখ্যান করেননি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি এর আগে অবতীর্ণ কিতাবের সমর্থক ও সংরক্ষকরূপে।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৪৮)</p> <p>৮. কেউ কেউ বিশেষ মর্যাদার অধিকারী : মৌলিক মর্যাদায় সব নবী-রাসুলই সমান। তবে আল্লাহ কোনো কোনো নবী-রাসুলকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এই রাসুলগণ, তাদের মধ্যে কাউকে কারো ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৩)</p> <p>অন্য আয়াতে পাঁচজন নবীর বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, যখন আমি নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম এবং তোমার নিকট থেকেও এবং নুহ, ইবরাহিম, মুসা ও মারিয়ামপুত্র ঈসার কাছ থেকেও—তাদের কাছ থেকে গ্রহণ করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৭)</p> <p>৯. নবীরাও মানুষ ছিলেন : নবী-রাসুলগণ সবাই মানুষ ছিলেন। তাঁদের কেউ ঈশ্বরপুত্র বা ফেরেশতা ছিলেন না। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের রাসুলরা তাদেরকে বলত, সত্য বটে, আমরা তোমাদের মতো মানুষই, কিন্তু আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া তোমাদের কাছে প্রমাণ উপস্থিত করা আমাদের কাজ নয়। আল্লাহর ওপরই মুমিনদের নির্ভর করা উচিত।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ১১)</p> <p>১০. সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সা.) : মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বশেষ নবী ও রাসুল। আল্লাহ তাঁকে নবী-রাসুলসহ পৃথিবীর সব মানুষের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তিনি বলেন, ‘কিয়ামাতের দিন আমি আদমসন্তানদের ইমাম (নেতা) হব, এতে অহংকার নেই। আল্লাহর প্রশংসার পতাকা আমার হাতেই থাকবে, এতেও গর্ব নেই। সেদিন আল্লাহর নবী আদম (আ.) এবং নবীদের সবাই আমার পতাকার নিচে থাকবেন। সর্বপ্রথম আমার জন্য মাটিকে বিদীর্ণ করা হবে, এতে কোনো অহংকার নেই।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৫)</p> <p> </p>