বিদ্যুৎ খাত

৯০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ

সজীব আহমেদ
সজীব আহমেদ
শেয়ার
৯০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ

কোনো বিদ্যুৎ না নিয়েই গত ১১ বছরে সরকার বিদ্যুৎ কম্পানিগুলোকে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। এটি ক্যাপাসিটি চার্জ বা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতার ভাড়া নামে পরিচিত। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

এই অর্থ দেশের বিদ্যুৎ খাতে ব্যয়ের বোঝা বাড়াচ্ছে।

এই বোঝা হালকা করতে সরকারকে যেমন ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, তেমনি বিদ্যুতের দামও বাড়াতে হচ্ছে। এতে শেষ পর্যন্ত টাকাটা গ্রাহকদের পকেট থেকে বের হয়ে যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাম্প্রতিক বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জানানো হয়, সরকারি-বেসরকারি ৯০টি কেন্দ্রকে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ১৬ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। এই হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ভাড়া দিতে হয়েছে এক হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা।

এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে এলএনজিভিত্তিক তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতেও থাকছে ক্যাপাসিটি চার্জ।   

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে সব বিদ্যুৎকেন্দ্র মিলিয়ে ২৫ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু এ পর্যন্ত দিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট।

কম্পানিগুলোর সঙ্গে সরকারের করা ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী, সক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎ উৎপাদন বা কেনা না হলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ভাড়া বাবদ নির্দিষ্ট হারে অর্থ (ক্যাপাসিটি চার্জ) পরিশোধ করতে হবে। এই ৯০ হাজার কোটি টাকা সেই অর্থ, যা কম্পানিগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই পেয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের ধারণা ছিল, ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের অর্থনীতি যেভাবে এগোবে, তাতে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে সেভাবে বিদ্যুিভত্তিক উৎপাদন বা শিল্প-কারখানা হয়নি। তাই এখন পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

তা না হলে, অতিরিক্ত দামের বিদ্যুতের কারণে শিল্পপণ্যের উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যাবে।  

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, তেলভিত্তিক কিছু কেন্দ্র আছে, যেগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে না, অথবা সারা বছরে অল্প পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। সেগুলোকে শতকোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। এমন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।

ম. তামিম বলেন, মূলত বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র রিজার্ভ রাখতে হয়। এই কেন্দ্রগুলো যখন বসে থাকবে, তখন শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ পাবে। তবে রিজার্ভে রাখার বিষয়টি হিসাব-নিকাশ করে রাখতে হবে, যাতে কোনোভাবেই অতিরিক্ত না হয়।

গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, ক্যাপাসিটি চার্জ বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত প্রক্রিয়া। যদি কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে না রাখা হয়, তাহলে পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা ১০ হাজার মেগাওয়াট থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উঠে গেলে সেই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ কে দেবে? পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য বাকি সময় অলস বসে থাকার জন্য যে চার্জ দেওয়া হয় তা-ই ক্যাপাসিটি চার্জ।

এলএনজিভিত্তিক তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রও ক্যাপাসিটি চার্জ পাবে

বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে টাকা ব্যয়ের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে সামিট, ইউনিক ও রিলায়েন্সের এক হাজার ৯০০ মেগাওয়াটের বেশি সক্ষমতার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক (এলএনজি) আরো তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্র তিনটি নির্মাণ করা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাটে। সামিট পাওয়ার, ইউনিক গ্রুপ ও ভারতের রিলায়েন্স গ্রুপ পৃথকভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্মাণ করছে।

চলতি বছরের অক্টোবরে দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে যাওয়ার কথা। বাকিটির উৎপাদনের সময় আগামী বছরের মার্চ নাগাদ শুরুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম ব্যাপক বেড়েছে। এ অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদনে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত হয়ে গেলে গ্যাসের অভাবে চালু করতে না পারলেও এগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে পিডিবিকে।

এই বিষয়ে অধ্যাপক ম. তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, এই তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের এলএনজি কোথা থেকে আসবে, তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। এলএনজির অভাবে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘এটা একটা মারাত্মক ভয়ের ব্যাপার। সামনে এই কেন্দ্রগুলো আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। এলএনজি না দিতে পারলে একসময় এমন হতে পারে, দেশের বিভিন্ন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখে এগুলোকে নিজস্ব গ্যাস সরবরাহ করতে হতে পারে। গ্যাসসংকটে এখনই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ’

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইনও কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এলএনজিভিত্তিক এই তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে গ্যাসসংকটের কারণে কিছুটা সমস্যা তৈরি হতে পারে। এমন সংকট যে চলে আসবে, তা তো আগে জানার উপায় ছিল না। তবে এই কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসতে আসতে দেশীয় কূপগুলো থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়তে পারে। ’

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র : দুই বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ ৪,৫০০ কোটি টাকা

এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ না হওয়ায় এখন কেন্দ্রটি সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। উৎপাদন শুরু হয়েছে দুই বছর আগে। কেন্দ্রটি থেকে পূর্ণ সক্ষমতার বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে না পারলেও গত দুই বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ গুনতে হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।

পিডিবি সূত্রে জানা যায়, পায়রা কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রটির জন্য বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ করছে পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। সঞ্চালন লাইন নির্মাণ চলতি বছরের ডিসেম্বরেও শেষ করতে পারবে না প্রতিষ্ঠানটি। ফলে এই কেন্দ্র থেকে পুরো বিদ্যুৎ কেনা ছাড়াই আরো ছয় মাসের বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে যেতে হবে।

জানতে চাইলে ম. তামিম বলেন, সঞ্চালন লাইনের জন্য পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ আনা যাচ্ছে না। কয়েক মাস পর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রও উৎপাদনে আসবে। রামপালের বিদ্যুৎও একই সঞ্চালন লাইন দিয়ে আসবে। তাই এই সঞ্চালন লাইন যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে করা না যায় তাহলে পায়রার মতো রামপালকেও বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে।

রেন্টাল, কুইক রেন্টালের ‘স্বল্প মেয়াদ’ দীর্ঘ হচ্ছে

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবেলায় অতি দ্রুত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের তাত্ক্ষণিক পরিকল্পনায় স্বল্প মেয়াদি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন শুরু করে। এরপর পেরিয়ে গেছে এক যুগ। সেই আপৎকালীন ‘স্বল্প মেয়াদ’ আজও শেষ হয়নি। অর্থনীতির ওপর বোঝা তৈরি করার পরও বারবার বাড়ানো হচ্ছে স্বল্পমেয়াদি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে মোট ১৮টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি কেন্দ্র ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ নীতিতে চলছে। বাকি আটটিকে আগের নিয়মে ক্যাপাসিটি চার্জসহ যাবতীয় খরচ দিতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে চুক্তি ছিল তিন থেকে পাঁচ বছরের। এরপর এগুলোর সঙ্গে একই শর্তে কেন চুক্তি নবায়ন করা হলো তা আমি বুঝতে পারছি না। সম্প্রতি আরো কয়েকটির সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সুবিধা দিতে করা হয়েছে বলে মনে হয়। ’

তবে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন দাবি করেন, রেন্টাল, কুইক রেন্টাল এখন আর নেই। এখন যেগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে, সেগুলো ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হবে না।

বিদ্যুৎ আমদানিতেও ক্যাপাসিটি চার্জ

ভারত থেকে বর্তমানে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এ জন্য গত তিন অর্থবছরে প্রায় পাঁচ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে।

বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য ভারতের ঝাড়খণ্ডে আদানি গ্রুপের নির্মাণ করা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একটি ইউনিট আগামী মাসের শেষ দিকে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম ইউনিটের ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসার কথা থাকলেও সাবস্টেশন নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় প্রাথমিকভাবে ৪০০ মেগাওয়াট দেশে আনা হতে পারে। চুক্তি অনুসারে ২৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে আদানি গ্রুপকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা দিতে হবে।

জানতে চাইলে ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ক্যাপাসিটি চার্জ একটা স্বীকৃত পদ্ধতি। কিন্তু বাংলাদেশে যা হয়েছে তা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে লাভবান করতে করা হয়েছে। প্রথমত, ক্যাপাসিটি চার্জ অনেক বেশি ধরা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, অপ্রয়োজনে চুক্তি করা হয়েছে।

শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুতের চাহিদাই সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। এগুলো বিদ্যুতের জন্য করা হয়নি। ব্যবসা দেওয়ার জন্য করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে সরকারের টাকা নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য

আলোচিত-১০ (১২ এপ্রিল)

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার

আদানির একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আদানির একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু
সংগৃহীত ছবি

ভারতের আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় গত শুক্রবার রাতে। এর ১৭ ঘণ্টা পর শনিবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে ফের একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ ছিল ৪৬ মেগাওয়াট। ক্রমান্বয়ে বিদ্যুতের পরিমাণ বাড়বে।

জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে দায়িত্বে থাকা একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট থেকে গড়ে এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়েছে ৮ এপ্রিল। আর দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ হয় গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে।

এতে দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ঘাটতি তৈরি হয়। পরবর্তীতে আজ সন্ধ্যায় একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে আদানি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) মো. জহুরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‌‌ত্রুটি দেখা দেওয়ায় আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ঘাটতি পূরণে গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানো হয়।

আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়ে বিরোধ আছে। এটি নিয়ে আদানি ও বিপিডিবির মধ্যে আলোচনা চলছে। বকেয়া শোধ নিয়েও বিভিন্ন সময় তাগাদা দিয়েছে আদানি। গত বছর একবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করেছিল আদানি। এরপর নিয়মিত চলতি বিল পরিশোধ করায় তারা একটি ইউনিটের উৎপাদন চালু করে।

গত ফেব্রুয়ারিতে পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহের অনুরোধ করে বিপিডিবি। গত মার্চে শুরু থেকেই দুটি ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে তারা।

পিজিসিবি ও বিপিডিবি সূত্র বলছে, শনিবার ছুটির দিন থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম আছে। আজ বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ চাহিদা উঠেছে ১৩ হাজার ৫৫২ মেগাওয়াট। এ সময় ৪২৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ শুরু না হলে রবিবার লোডশেডিং আরো বৃদ্ধি পেত। ঘাটতি মেটাতে পেট্রোবাংলার কাছে বাড়তি গ্যাস সরবরাহও চেয়েছিল বিপিডিবি।

আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে এই কেন্দ্রে। এতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বাংলাদেশ। প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় একই বছরের জুনে। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে বিপিডিবি। আদানির সঙ্গে বিপিডিবির চুক্তি পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত একটি কমিটি কাজ করছে।

মন্তব্য

সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার
সংগৃহীত ছবি

আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

শনিবার ঐকমত্য কমিশনের দুই সদস্যের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই তাগিদ দেন। বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এতে অংশ নেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ এবং সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য গঠন) মনির হায়দার এ সময় উপস্থিত ছিলেন। 

আরো পড়ুন
আন্দোলনের নামে সহিংসতা-ভাঙচুর হলে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কায় পড়বে : ড. ফাহমিদা

আন্দোলনের নামে সহিংসতা-ভাঙচুর হলে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কায় পড়বে : ড. ফাহমিদা

 

বৈঠকে প্রফেসর আলী রীয়াজ ও ড. বদিউল আলম মজুমদার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে কমিশনের চেয়ারম্যানকে অবহিত করেন। তারা জানান, বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা চলমান রয়েছে। শনিবার পর্যন্ত মোট ৮টি দলের সঙ্গে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে।

আগামী বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে আলোচনার সময়সূচি নির্ধারণ করা আছে। 

তারা আরো জানান, সংস্কার কার্যক্রমের বিষয়ে জনমত যাচাই এবং সে বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। 

এ সময় কমিশনের সভাপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ডিসেম্বর মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা তথা সামগ্রিক সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দেন।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

আন্দোলনের নামে সহিংসতা-ভাঙচুর হলে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কায় পড়বে : ড. ফাহমিদা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আন্দোলনের নামে সহিংসতা-ভাঙচুর হলে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কায় পড়বে : ড. ফাহমিদা
সংগৃহীত ছবি

দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি অনুকূল না থাকলে বৈদেশিক বিনিয়োগ ব্যাহত হবে উল্লেখ করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, ‘আন্দোলনের নামে সহিংসতা ও ভাঙচুর হলে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কায় পড়বে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, তা বাস্তবায়িত হলে ক্ষমতার পালাবদলেও রাষ্ট্রীয় নীতিমালার পরিবর্তন হবে না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা হলে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি হবে।’

শনিবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর এফডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কহারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ফাহমিদা খাতুন।

অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ কর আরোপের প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ। তবে ট্রাম্পের উচ্চ শুল্কনীতি আমাদের জন্য ওয়েকআপ কল। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর আমরা বেশি সময় কর সুবিধা পাব না।

তাই আমাদের বাণিজ্যিক সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তুতি খুবই জরুরি।’

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘অতিরিক্ত শুল্ক গ্রহণে ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ বাংলাদেশের জন্য কিছুটা স্বস্তির। এই সময়ে সম্ভাব্য ঝুঁকি নিরসনে বাণিজ্য কূটনীতি জোরদার ও অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘মার্কিন প্রশাসন শুল্কহার বৃদ্ধিতে কোনো নিয়ম-কানুনের ধার ধারেনি।

ফলে সারা বিশ্বে এখন শুল্ক-ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক আরোপ নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশও এই চ্যালেঞ্জের বাইরে নয়।’

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে ঘোষিত নতুন শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করায় বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও অনিশ্চয়তা কাটেনি। তবে এই স্থগিতাদেশের পর বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা বন্ধ হওয়া ক্রয়াদেশ ফিরে পাওয়া শুরু করছে।

অন্যদিকে চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের কারণে তাদের ক্রয়াদেশ স্থগিত হচ্ছে। চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করবে। এ ছাড়া চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাবে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এই কঠিন অবস্থার মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা ফিরে পেলে আমাদের রপ্তানি খাত আরো বেশি প্রসারিত হবে, বলে জানান তিনি।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ