কীটনাশকে সিন্ডিকেট

কৃষক ঠকিয়ে ২৫০ শতাংশ লাভ ব্যবসায়ীদের

শেয়ার
কৃষক ঠকিয়ে ২৫০ শতাংশ লাভ ব্যবসায়ীদের
সংগৃহীত ছবি

কৃষকের ফসল সুরক্ষার কাজে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় উপকরণ পেস্টিসাইড (বালাইনাশক) এখন সিন্ডিকেটের খপ্পরে।  অভিযোগ উঠেছে, পেস্টিসাইড ব্যবসায়ী নেতাদের একটি অংশ এই পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, জিম্মি করছে অসহায় কৃষকদের। তারা পেস্টিসাইডসংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য হয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে কৃষকের স্বার্থবিরোধী নীতি তৈরি করিয়ে নিচ্ছে। তার পরও ওই নীতি পুরোপুরি মানছে না।

রাজস্ব কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পণ্য আমদানি করছে। এতে নিম্নমানের পণ্যের পাশাপাশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এসংক্রান্ত একটি  সিন্ডিকেটে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অসাধু কর্মকর্তারাও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের  মাধ্যমে ৭৫০টির মতো বেসরকারি পেস্টিসাইড কম্পানিকে আমদানির জন্য প্রায় ১২ হাজার ব্র্যান্ড অনুমোদন দিয়েছে।

অধিদপ্তরের  তথ্য অনুযায়ী, দেশে এই রাসায়নিক উপাদানের বাজার প্রায় ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকার। এই চাহিদার ৯০ শতাংশই আমদানিনির্ভর এবং বাকি ১০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশে উৎপাদন করা হয়। পণ্যটি আমদানিনির্ভর হওয়ায় কৃষকদের জিম্মি করার সুযোগও বেশি।

কৃষকদের ঠকাচ্ছে সিন্ডিকেট

অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘মানিক ২০ এসপি’ বালাইনাশকটি ধানের বাদামি গাছ ফড়িং, সবজির ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা, জাব পোকা, সাদা মাছি ও বিভিন্ন ধরনের শোষক পোকা দমনের কাজে ব্যবহার করা হয়।

বিদেশ থেকে প্রতি কেজি এই পণ্য কেনা হচ্ছে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৯৬ টাকায়। কিন্তু কৃষকের কাছে এই বালাইনাশক বিক্রি করা হচ্ছে তিন হাজার ২৪০ টাকায়।

পেস্টিসাইড ব্যবসায়ী মিলন রহমান জানান, বিদেশ থেকে  কেনার পর আমদানি ব্যয়, পরিবহন, প্যাকিং খরচ, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বাজারজাত—সব মিলিয়ে প্রতিটি পণ্যে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ খরচ হয়। সে হিসাবে ৬৯৬ টাকার পণ্যে সর্বোচ্চ ২৪৪ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ব্যয় হতে পারে। এর সঙ্গে  ১২ শতাংশ লাভ হিসাবে যোগ হতে পারে আরো ১১২ টাকা।

পণ্যটি কৃষকের কাছে এক হাজার ৫২ টাকায় বিক্রি করা উচিত, কিন্তু বিক্রি করা হচ্ছে তিন হাজার ২৪০ টাকায়। 

অন্য একটি বালাইনাশকের রাসায়নিক নাম কারটাপ। এক হাজার ২০ টাকায় কিনে বিক্রি করা হচ্ছে তিন হাজার ৪০০ টাকায়। ‘ম্যানকোজেব মেটাল এক্সিল’ প্রতি কেজি ৪৩৮ টাকায় কিনে বিক্রি করা হচ্ছে দুই হাজার ১০ টাকায়।  ব্যবসায়ীদের একটি অংশ এভাবেই বেশি লাভে (২৫০ থেকে ৩০০ শতাংশ) বিক্রি করে কৃষকদের ঠকিয়ে আসছে। বেশি মূল্যে কীটনাশক বিক্রি করায় কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচও বাড়ছে। 

পেস্টিসাইড আমদানিকারকদের বাণিজ্য সংগঠনের নাম বাংলাদেশ ক্রপ প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির শীর্ষ পদের ক্ষমতা অপব্যবহার করে পেস্টিসাইড ব্যবসায়ীরা একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বলা হচ্ছে, এই সিন্ডিকেট ২৫০ থেকে ৩০০ শতাংশ মুনাফা তুলে নিচ্ছে অসহায় কৃষকদের কাছ থেকে। ‘মানিক ২০’-এর আমদানিকারক মিমপেক্স অ্যাগ্রোকেমিক্যালস লিমিটেড। কম্পানিটির কর্ণধার এম সাইদুজ্জামান একই সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রপ প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও। অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘একটি গ্রুপ আমার ব্যবসায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

তিন সংস্থা মিলে সিন্ডিকেট

পেস্টিসাইড টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি কমিটি (পিটাক) পেস্টিসাইডসংশ্লিষ্ট সব নীতি নির্ধারণ করে থাকে। পিটাকের সভাপতি কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান। সদস্যসচিব হিসেবে থাকেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের পরিচালক। কমিটিতে সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ক্রপ প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও থাকেন।

এই তিনটি সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়েই সিন্ডিকেট। পিটাক যেহেতু পেস্টিসাইড রেজিস্ট্রেশন অনুমোদন দেওয়ার পাশাপাশি সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, তাই এই তিন সংস্থার সিন্ডিকেটের কারণেই কৃষকরা ঠকছেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন। পিটাকে থেকে ব্যবসায়ী নেতারা আমদানি নীতি ও কৌশল নির্ধারণে প্রভাব রাখেন এবং  তাঁদের সুবিধামতোই নীতি তৈরি করে নেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক সভায় সরকারি এক কর্মকর্তা একই পেস্টিসাইডের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কম্পানির দামের ব্যাপক পার্থক্য হওয়ায় দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রস্তাব রাখেন। কিন্তু এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন বাংলাদেশ ক্রপ প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম সাইদুজ্জামান। তিনি  ছয় বছর ধরে এই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘অন্য কম্পানির পণ্যগুলোর সঙ্গে মিল রেখে আমাদের মূল্য নির্ধারণ করতে হয়। তবে পণ্যের গায়ে যে মূল্য লেখা থাকে তার চেয়ে অনেক কম মূল্যে আমরা পণ্য বিক্রি করে থাকি। যেভাবে মুনাফার তথ্য দেওয়া হয়েছে ততটা মুনাফা হয় না।’

এই সিন্ডিকেটর বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সোসাইটি। মানববন্ধনে এম সাইদুজ্জামানসহ সিন্ডিকেটে জড়িতদের বিচারের দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। কিন্তু কৃষকের কাছে আমদানি করা নিম্নমানের বালাইনাশক ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে উচ্চ মূল্যে বিক্রির কারণে তাঁরা পথে বসছেন এবং আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। নিম্নমানের বালাইনাশক আমদানির কারণে কৃষক তথা সর্বস্তরের জনগোষ্ঠী সমহারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা নিম্নমানের বালাইনাশক আমদানি রোধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।’ ওই কর্মসূচিতে সংগঠনটির সহসভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, পেস্টিসাইড ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সিন্ডিকেট আমদানির ক্ষেত্রেও

জানা যায়, কৃষকদের জিম্মি করার কৌশলের শুরু আমদানির প্রক্রিয়া থেকেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬৮তম পিটাক সভায় বিভিন্ন কম্পানি রেজিস্টার্ড পেস্টিসাইডের শুধু ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে উৎস (উৎপাদনকারী দেশ ও কম্পানির নাম) পরিবর্তন করে আমদানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের পর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নিজেদের মতো উৎস পরিবর্তন করে নেন। এর পরেই উৎস নির্দিষ্ট করার উদ্যোগ নেয় সিন্ডিকেট। ৭৭তম পিটাক সভায় উৎস নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, রেজিস্টার্ড পেস্টিসাইডের উৎস পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্তির প্রথম দুই বছর উৎস পরিবর্তন করা যাবে না। একই সঙ্গে দুই বছর পর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ল্যাবরেটরি টেস্টের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের তিন বছর পর অনুষ্ঠিত ৮৪তম পিটাক সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ অন্য সদস্যদের আপত্তি উপেক্ষা করে একক উৎস নীত অনুমোদন করায় উৎস উন্মুক্তকরণের পথ সরাসরি রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। বলা হয়, উৎস উন্মুক্ত করা যাবে না। অথচ যে ব্যবসায়ী নেতাদের প্রস্তাবে এই নীতি নির্ধারণ করা হয়, তাঁরাও এটি মানেননি। 

নিজেদের  নীতি নিজেরাই মানছেন না

বালাইনাশক শিল্পের আমদানি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আনুমানিক ৭৫০টি দেশীয় কম্পানির মধ্যে একটি সিন্ডিকেট রেজিস্টার্ড সোর্সের বাইরে অনুমোদনহীন কম্পানি থেকে বছরের পর বছর পণ্য আমদানি করে আসছে। অথচ সরকারকে নির্ধারিত ২৩ হাজার টাকা প্রতিটি চালানে জমা দিয়ে বালাইনাশক নীতিমালা অনুযায়ী উৎস পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মাঠে বালাইনাশকের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। 

অভিযোগ রয়েছে,  ওই সিন্ডিকেট এই নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ উৎস  থেকে পেস্টিসাইড আমদানি করে প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করছে। এতে একদিকে যেমন সরকার একটি বড় অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেই সঙ্গে এই নিম্নমানের বালাইনাশক ব্যবহার করে কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

চলতি বছরের জুলাই মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নজরদারি জোরদারের ফলে চট্টগ্রাম পোর্ট থেকে অনুমোদনহীন উৎস থেকে আমদানি করা প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বালাইনাশক আটক করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তৎকালীন উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের পরিচালক ও পিটাকের সদস্যসচিব আশরাফ উদ্দিনের মধ্যস্থতায় অবৈধভাবে এসব পণ্য ছাড় করা হয়। তিনি একটি সরকারি চিঠিতে কৃষি উৎপাদন ও সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার অজুহাত দেখান। কিন্তু এই বালাইনাশক কোনো ধরনের মাঠ পরীক্ষা ছাড়া কৃষকদের কাছে বিক্রি করলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্তও হতে পারেন—এই  বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

একজন ব্যবসায়ী নেতার একটি কম্পানি গত বছর রেজিস্টার্ড ব্র্যান্ডের ৯টি পণ্য ২৮টি এলসির মাধ্যমে অননুমোদিত উৎস থেকে আমদানি করে, যার তথ্য এই প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।  

সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, জুলাইয়ে আগেও অনেক পণ্য অবৈধ উৎস থেকে আনা হলেও সেগুলো ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। বিষয়টি তদন্তের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন সংস্থা এরই মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জমা দিয়েছে।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘কোনো রাসায়নিক দ্রব্য অবৈধ হলে সেগুলো বাজেয়াপ্ত এবং ধ্বংস করে ফেলতে হয়। অবৈধ উৎস থেকে আমদানি করা এসব পণ্য কখনো এতই নিম্নমানের হয় যে নির্দিষ্ট পরিমাণ কার্যকর উপাদান প্রায় শূন্য থাকে। এসব পেস্টিসাইডের রাসায়নিক পরীক্ষা এবং ফসলসংশ্লিষ্ট গবেষণাপ্রতিষ্ঠান  থেকে মাঠ পরীক্ষারও সুযোগ থাকে না।

এই অভিযোগ সম্পর্কে এম সাইদুজ্জামান বলেন, ‘আইন অনুযায়ী নির্ধারিত উৎসর বাইরে পেস্টিসাইড আমদানি করা ঠিক নয়। তবে খাদ্য নিরপাত্তর স্বার্থেই এমনটি করা হয়েছে। এ ছাড়া অনেক বালাইনাশকের নিবন্ধিত উৎস কম্পানি  তাদের বালাইনাশক ব্যবসা বন্ধ করার কারণে বাধ্য হয়ে উৎস পরিবর্তন করতে হয়েছে।’ তবে তাঁর এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন অন্য ব্যবসায়ীরা। 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বাংলাদেশে ১৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে চীনের হান্ডা ইন্ডাস্ট্রিজ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
বাংলাদেশে ১৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে চীনের হান্ডা ইন্ডাস্ট্রিজ

বিশ্বব্যাপী উন্নতমানের নিটেড টেক্সটাইল, ডাইং প্রসেস এবং পোশাক উৎপাদনের জন্য স্বনামধন্য চীনের পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হান্ডা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বাংলাদেশে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে।

বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং হান্ডা টেক্সটাইল কোং লিমিটেডের চেয়ারম্যান হেং জেলি নিজ নিজ পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেন।

তারা অর্থনৈতিক অঞ্চলের আওতাধীন টেক্সটাইল ও ডাইং খাতে ১০০ মিলিয়ন ডলার এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের আওতাধীন পোশাক শিল্পে ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

মন্তব্য

ধান-চালের সরকারি দাম নির্ধারণ, কেজিতে বাড়ল ৪ টাকা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ধান-চালের সরকারি দাম নির্ধারণ, কেজিতে বাড়ল ৪ টাকা
সংগৃহীত ছবি

আসন্ন বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সাড়ে ১৭ লাখ টন ধান ও চাল কিনবে সরকার। এর মধ্যে সাড়ে তিন লাখ টন ধান ও ১৪ লাখ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহ করা হবে।

গতবারের তুলনায় কেজি প্রতি চার টাকা করে দাম বেড়েছে।

প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ টাকা আর সিদ্ধ চাল কেনা হবে ৪৯ টাকা কেজি দরে।

বুধবার (৯ এপ্রিল) খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠক শেষে চলতি বোরো মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহ নিয়ে ব্রিফকালে খাদ্য ও ভূ‌মি উপ‌দেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার এই তথ্য জানান। সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

উপদেষ্টা বলেন, গতবারের তুলনায় কেজি প্রতি চার টাকা বেশিতে ধান ও সিদ্ধ চাল কেনা হবে।

চলতি বোরো মৌসুমে ৩৬ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৩ লাখ টন ধান কেনা হবে। আর ৪৯ টাকা কেজি দরে কেনা হবে ১৪ লাখ টন সিদ্ধ চাল।

এ ছাড়া সরকার ৩৬ টাকা কেজি দরে গম কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘লক্ষ্যমাত্রা যেটি নির্ধারণ করা হয়েছে আশা করছি তার চেয়ে বেশি উৎপাদন হবে।

মাঠের পরিস্থিতি দেখে এটি মনে হচ্ছে আমাদের।’

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সাফারি পার্ক থেকে দুর্লভ প্রাণী উধাও, কঠোর অবস্থানে পরিবেশ উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
সাফারি পার্ক থেকে দুর্লভ প্রাণী উধাও, কঠোর অবস্থানে পরিবেশ উপদেষ্টা
সংগৃহীত ছবি

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘গাজীপুর সাফারি পার্কের দুর্লভ প্রাণী হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় যারা দায়ী, তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। শুধু চাকরিচ্যুতি নয়, এমন শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের গাফিলতি করার সাহস না পায়।’

আজ বুধবার গাজীপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। 

উপদেষ্টা জানান, পার্কে ঘুরে তার মনে হয়েছে কিছু প্রাণী প্রাকৃতিক পরিবেশের অনুরূপ পরিবেশে থাকলেও অনেক প্রাণীর জীবনমান পর্যাপ্ত নয়।

কিছু হাতি ও জাগুয়ারের আচরণগত অস্বাভাবিকতা তাকে উদ্বিগ্ন করেছে। তিনি বলেন, ‘এই পার্ক দর্শনার্থীদের জন্য শুধু বিনোদনের নয়, বরং প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা ও সহমর্মিতা শেখার স্থান হওয়া উচিত।’

আরো পড়ুন
বেড়েই চলেছে সন্দ্বীপের আয়তন (ভিড়িও সহ)

বেড়েই চলেছে সন্দ্বীপের আয়তন (ভিডিওসহ)

 

সম্প্রতি প্রাণী নিখোঁজের ঘটনায় উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, ‘একটি লেমুর হারিয়ে গেলে বুঝতে হবে ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি আছে। দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলে, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি চিহ্নিত করেছি।

’ তিনি জানান, তদন্তে স্বচ্ছতা আনতে বন্য প্রাণী ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, ‘সরকারি প্রকল্প এলেই কাজ করবেন–এমনটা হতে পারে না। সাফারি পার্ক একটি জাতীয় সম্পদ। এর উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে নিয়মিত বরাদ্দ ও সদিচ্ছা প্রয়োজন।

’ তিনি জানান, হাতিদের জন্য শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ভারতের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে এবং ক্যাপটিভ হাতিদের কল্যাণে নতুন একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা গাজীপুরে থাকেন, তাদেরই প্রথম দায়িত্ব নিতে হবে এই জাতীয় সম্পদ রক্ষা করার জন্য। প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা রোধ, অবৈধভাবে পাখি বিক্রি বন্ধ ও নিখোঁজ প্রাণী উদ্ধারে প্রশাসনের পাশাপাশি জনসচেতনতাও জরুরি।’

এ সময় বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন, পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক, বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক সানাউল্লাহ পাটোয়ারী, সেন্ট্রাল সার্কেলের বন সংরক্ষক এ এস এম জহির উদ্দিন আকন, গাজীপুর সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। 

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান পরিদর্শন করেন এবং বন বিভাগের চম্পা সম্মেলন কক্ষে গাজীপুরস্থ বন অধিদপ্তর এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

তিনি এ সময় গাজীপুর পরিবেশ ও বন সংরক্ষণে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি কর্মকর্তাদের কাছে সমস্যার কথা শোনেন এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কাঁদলেন ড. ইউনূস

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কাঁদলেন ড. ইউনূস

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের সময় মানুষের নিদারুণ কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের সময় মানুষের নিদারুণ কষ্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওই সময় প্রায় ১৫ লাখ মানুষ খাদ্যের অভাবে মৃত্যুবরণ করে।’ এ কথা বলেই আবেগাপ্লুত হয়ে নীরব হয়ে যান প্রধান উপদেষ্টা।

এক পর্যায়ে কেঁদেও ফেলেন তিনি। এ সময় উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, স্যরি। পরে চোখ ছলছল অবস্থায় আবারও বলতে শুরু করেন।

অধ্যাপক ইউনূস ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারী ক্ষমতায়নের কথাও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ক্ষুধায় মানুষ মারা গেছে। আমাদের দেশের অনেক বড় একটা দুর্ভিক্ষ ছিল। ১৫ লাখ মানুষ মারা গেছে। তখন স্বাধীন বাংলাদেশ ছিল।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা (বছরে) একটিই ফসল ফলাতাম তখন। আমাদের অন্য কোনো উপায় জানা ছিল না। আমাদের দেশের মানুষ কৃষক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। কারণ তাদের আর কোনো পেশা ছিল না। আর তাদের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশের নিজের কোনো জমি ছিল না।

জীবন অনেক কঠিন ছিল।’

১৯৭৪ থেকে ২০২৫ সালের এই যাত্রা অনেক চমৎকার একটি সফর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বড় বড় শিল্প নিয়ে আমরা আলাপ করছি, বিদেশি অনেক কম্পানি আরো শিল্প-কারখানা এখানে গড়ে তুলতে চায়, বড় বড় বাজার নিয়ে কথা হয়, তরুণ জনগোষ্ঠী নিয়ে আলাপ হয়। খুব অল্প সময়ে অনেক পথ পেরিয়ে, এটি এখন বাংলাদেশ।’

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ