আলোচিত-১০ (২৭ মার্চ)

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার

সম্পর্কিত খবর

জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রথম জামাতে মুসল্লিদের ঢল

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রথম জামাতে মুসল্লিদের ঢল
ফাইল ছবি

এক মাস সিয়াম সাধনার পর আজ সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপন করছেন দেশবাসী। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদুল ফিতরের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশ নিতে বিপুলসংখ্যক মুসল্লিদের ঢল নেমেছে। 

প্রতি বছরের মতো এবারো জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

যার মধ্যে প্রথম জামাত সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।  এর এক ঘণ্টা পর পর আরো তিনটি জামাত এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। 

জাতীয় মসজিদের প্রথম জামাতে পেশ ইমাম হিসেবে হাফেজ মুফতি মাওলানা মুহিববুল্লাহিল বাকী এবং মুকাব্বির হিসেবে মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. আতাউর রহমান দায়িত্ব পালন করেছেন। 

দ্বিতীয় জামাতে ইমাম হিসেবে সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান এবং মুকাব্বির হিসেব প্রধান খাদেম মো. নাসির উল্লাহ দায়িত্ব পালন করবেন।

 

তৃতীয় জামাতে ইমাম হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস ড. মাওলানা মুফতি ওয়ালিউর রহমান খান এবং মুকাব্বির হিসেবে খাদেম মো. আব্দুল হাদী দায়িত্ব পালন করবেন। 

চতুর্থ জামাত ইমাম হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদ ও সংকলন বিভাগের সম্পাদক ড. মুশতাক আহমদ এবং মুকাব্বির হিসেবে খাদেম মো. আলাউদ্দীন দায়িত্ব পালন করবেন। 

এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাতে ইমাম হিসেব ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মো. আব্দুল্লাহ এবং মুকাব্বির হিসেব খাদেম মো. রুহুল আমিন দায়িত্ব পালন করবেন।

এদিকে মসজিদ ও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

মসজিদে প্রবেশের প্রধান ফটকগুলোতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের অবস্থান দেখা গেছে। 

আরো পড়ুন
সাত বছর পর পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করলেন খালেদা জিয়া

সাত বছর পর পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করলেন খালেদা জিয়া

 

এর আগে সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল ৬টার পর থেকেই এখানে মুসল্লিরা আসতে শুরু করেন। জামাত শুরুর আগেই মসজিদের মূল প্রাঙ্গণ ও বারান্দা কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এছাড়া অভিভাবকদের সঙ্গে প্রথম জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করতে এসেছে অনেক শিশুরা। 

মন্তব্য

রাত পোহালেই খুশির ঈদ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
রাত পোহালেই খুশির ঈদ
সংগৃহীত ছবি

রাত পোহালেই খুশির ঈদ। এক মাস সিয়াম সাধনার পর আজ সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপন করবেন দেশের মুসলিমরা। ইতিমধ্যে ঢাকাসহ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ঈদুল ফিতরের আবহ। সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার পরপরই রেডিও-টেলিভিশনে বেজে চলেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী সেই গান, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ...।

ইসলামের ধর্মীয় বিধান অনুসরণ করা হয় সাধারণত হিজরি বর্ষপঞ্জির চান্দ্র মাসের হিসাবে। সেই মোতাবেক এবার রমজান মাসের সিয়াম সাধনা শুরু হয়েছিল খ্রিষ্টীয় দিনপঞ্জির ২ মার্চ রবিবার।

২৯ রমজান রবিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠকে বসে। বাংলাদেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়।

এরপর সোমবার ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

ঈদ উপলক্ষে আজ পরিবারগুলোতে সাধ্যমতো ভালো খাবার রান্নার চেষ্টা করা হবে। শিশুরা নতুন পোশাক পরে বেড়াতে যাবে নিকটাত্মীয়দের বাড়িতে। ঈদের দিন ঘুম থেকে উঠে গোসল-অজু করে দিনের শুরুতে সেমাই, মিষ্টিমুখ করে মুসল্লিরা যাত্রা শুরু করবেন ঈদের জামাতে অংশ নিতে।

নামাজ আদায় শেষে ঈদগাহ ময়দানে বুকে বুক মেলাবেন। নামাজ আদায় শেষ করে মুসল্লিরা যাবেন কবরস্থানে প্রিয়জনের বিদেহী আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করতে। কবরস্থান থেকে মুসল্লিরা বাসায় ফিরে খাবার খেয়ে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করবেন। প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ-আড্ডায় মেতে উঠবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা

এক ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সকলকে আনন্দময় ঈদ মোবারক জানাচ্ছি।

আশা করি, ঈদের সময় আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে আপনাদের বাড়িতে যেতে পারবেন এবং আপনাদের পরিবারের সঙ্গে আনন্দের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করবেন।’

প্রধান উপদেষ্টা দেশের জনগণকে তাদের আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করার, দরিদ্র পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়ার এবং তাদের ভবিষ্যৎ কীভাবে উন্নত করা যায় সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনার সন্তানদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন—এটাই আমার ইচ্ছা।’

এ ছাড়া তিনি ঈদের নামাজের সময় যেকোনো মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও পরাজিত শক্তির সব উসকানির মুখে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় থাকার আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ইউনূস প্রার্থনা করেন, ‘সকলের জীবন অর্থপূর্ণ ও আনন্দে ভরে উঠবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সাহায্য করবেন।’

ঈদের জামাত

রাজধানীতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৮টায়। এবার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস নেই। এর পরও কোনো কারণে আবহাওয়া খারাপ হলে জাতীয় ঈদগাহের পরিবর্তে সকাল নয়টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

শনিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক শাহজাহান মিয়া সাংবাদিকদের জানান, এবার জাতীয় ঈদগাহে একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। নারীদের জন্য নামাজের আলাদা জায়গা করা হয়েছে। মুসল্লিদের জন্য অজু করার জায়গা, শৌচাগার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করার জন্য আরামদায়ক কার্পেট বিছানো হয়েছে। তাই কাউকে জায়নামাজ সঙ্গে আনতে হবে না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা–সহায়তার জন্য দুটি মেডিকেল টিম থাকবে।

বায়তুল মোকাররমে পাঁচটি জামাত

বায়তুল মোকাররমে বরাবরের মতোই ঈদুল ফিতরের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত শুরু হবে সকাল ৭টায়, দ্বিতীয় জামাত ৮টায়, তৃতীয় জামাত ৯টায়, চতুর্থ জামাত ১০টায় এবং শেষ জামাত হবে বেলা পৌনে ১১টায়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মুহিববুল্লাহিল বাকী।

এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ঈদগাহ ও পাড়া-মহল্লার জামে মসজিদগুলোতে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

মন্তব্য

শেষ মুহূর্তেও স্বস্তি নিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন ঘরমুখো মানুষ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
শেষ মুহূর্তেও স্বস্তি নিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন ঘরমুখো মানুষ
সংগৃহীত ছবি

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে এবার স্বস্তিতে বাড়ি ফিরেছেন মানুষ। শেষ মুহূর্তেও কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীর তেমন ভিড় দেখা যায়নি, বেশিরভাগ ট্রেন খালি আসন নিয়েই ছেড়ে গেছে।

যাত্রীরা জানিয়েছেন, এবারের ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে অনেক ভালো ছিল। স্টেশনে আগেভাগে এলেও অতিরিক্ত ভিড় বা বিশৃঙ্খলার মুখে পড়তে হয়নি।

প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষমাণ কয়েকজন যাত্রী বলেন, ‘আমরা ভিড়ের আশঙ্কায় আগে এসেছি, কিন্তু এসে দেখলাম পরিবেশ অনেক স্বস্তিদায়ক। টিকিটধারীরাই নির্বিঘ্নে ট্রেনে উঠতে পারছেন।’

রবিবার (৩০ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীরা নির্ধারিত ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন। ট্রেন ছাড়ার আগে টিটিইরা টিকিট যাচাই করেন।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বেশিরভাগ ট্রেন ছেড়ে গেছে। রাত পৌনে ১০টার দিকে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনটি আসন খালি নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে যাত্রা করে।

কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের যাত্রী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ভাবছিলাম ট্রেন পেতে কষ্ট হবে, কিন্তু স্টেশনে এসে দেখলাম পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ট্রেনে উঠতে কোনো ঝামেলা হয়নি, সময়মতো ছাড়ার বিষয়টিও স্বস্তিদায়ক।

অন্য এক যাত্রী বলেন, ‘অন্যান্য বছর ট্রেনযাত্রা বেশ কষ্টকর হলেও এবার ব্যতিক্রম। ভিড় কম ছিল, ট্রেনের পরিবেশও ভালো ছিল। নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারছি, এটি সত্যিই আনন্দের।’

এর আগে রাত ৯টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে মহানগর এক্সপ্রেস এবং রাত ৯টায় দ্রুতযান এক্সপ্রেস স্টেশন ছাড়ে। রাত ১২টার দিকে সর্বশেষ ট্রেন বেনাপোল এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

এ পর্যন্ত কমলাপুর থেকে ৫০টিরও বেশি ট্রেন ছেড়ে গেছে।

কমলাপুর রেলস্টেশনের মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শেষ ভালো তো সব ভালো। এবারের ঈদযাত্রায় ট্রেন চলাচল স্বস্তিদায়ক ছিল। তবে গতকাল পোশাক কারখানাগুলো ছুটি হওয়ায় স্টেশনে উপচে পড়া ভিড় ছিল। আজকের সব ট্রেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ছেড়ে গেছে, অনেকগুলো ট্রেন খালি আসন নিয়েই যাত্রা করেছে।’

এদিকে মোবাইল অপারেটর কম্পানিগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দুই দিনে প্রায় ৪১ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন।

মন্তব্য

রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
সংগৃহীত ছবি

‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।’

গানটি বেজে উঠলেই ছেলে-বুড়ো সবার মন দুলে ওঠে আনন্দে। প্রায় এক শ বছর ধরে বাঙালির ঈদ-আনন্দের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হয়ে আছে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা গানটি। এ গান বাজার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনের আঙিনায় বানের মতো হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে স্মৃতির লহর।

 

ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে টেলিভিশনে, রেডিওতে বাজতে শুরু করে গানটি। এ গান ছাড়া রমজানের ঈদ আমাদের অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সত্যি বলতে কী, গানটি ছাড়া বাঙালির ঈদুল ফিতরের কথা তো ভাবাই যায় না। এটি হয়ে উঠেছে আমাদের জাতীয় ঈদ-সংগীত।

 

আরো পড়ুন
‘ঈদগাহের মোনাজাতে তাদের স্মরণ করতে ভুলব না’

‘ঈদগাহের মোনাজাতে তাদের স্মরণ করতে ভুলব না’

 

আপামর বাঙালির মননে গেঁথে যাওয়া এই গানটি কাজী নজরুল লিখেছিলেন জনপ্রিয় শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদের অনুরোধে, ১৯৩১ সালে। গানটি লেখার পেছনে আছে অসাধারণ এক গল্প।

আব্বাসউদ্দীন আহমদের আত্মজীবনী ‘আমার শিল্পী জীবনের কথা’ থেকে জানা যায়, নজরুলের সঙ্গে আব্বাসউদ্দীনের ছিল বেশ সুসম্পর্ক। আব্বাসউদ্দিন বয়সে একটু ছোট হলেও দুজনের সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতোই।

নজরুলকে তিনি শ্রদ্ধা করে, ভালোবেসে ডাকতেন কাজীদা। 

কাজী নজরুল ইসলাম তখন শ্যামাসংগীত লিখে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে তার লেখা কিছু গান রেকর্ড করেছেন আব্বাসউদ্দীনও। সেসবের মধ্যে অন্যতম ‘বেণুকার বনে কাঁদে বাতাস বিধুর’, ‘অনেক কিছু বলার যদি দুদিন আগে আসতে’, ‘গাঙে জোয়ার এল ফিরে তুমি এলে কই’, ‘বন্ধু আজও মনে পড়ে আম কুড়ানো খেলা’ ইত্যাদি।

এক রাতে রেকর্ডিং শেষে বাড়ি ফিরছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।

ফেরার পথে তাকে আটকালেন শিল্পী আব্বাসউদ্দীন। বললেন, ‘কাজীদা, একটা কথা মনে হয়। এই যে পিয়ারু কাওয়াল, কাল্লু কাওয়াল এরা উর্দু কাওয়ালি গায়, এদের গানও শুনি অসম্ভব বিক্রি হয়। এই ধরনের বাংলায় ইসলামী গান দিলে হয় না? তারপর আপনি তো জানেন কিভাবে কাফের-কুফর ইত্যাদি বলে বাংলার মুসলমান সমাজের কাছে আপনাকে অপাঙক্তেয় করে রাখার জন্য আদাজল খেয়ে লেগেছে একদল ধর্মান্ধ! আপনি যদি ইসলামী গান লেখেন, তাহলে মুসলমানের ঘরে ঘরে আবার উঠবে আপনার জয়গান।’

আরো পড়ুন
ঈদুল ফিতরের জন্য বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা যেভাবে সাজে

ঈদুল ফিতরের জন্য বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা যেভাবে সাজে

 

এ প্রস্তাব পেয়ে নজরুল পড়ে গেলেন দোটানায়। কারণ বাজারে তখন শ্যামা সংগীতের মোটামুটি একচ্ছত্র আধিপত্য। স্বয়ং নজরুলও শ্যামা সংগীত লেখেন, সুর করেন। ইসলামী ধারার গানের বাজারই গড়ে ওঠেনি তখন। এই অবস্থায় স্রোতের বিপরীতে গিয়ে কাজ করে সফল হতে না পারলে ক্যারিয়ারই বরবাদ হয়ে যেতে পারে। 

অন্যদিকে ইসলামের সঙ্গেও যে নজরুলের আবেগ জড়িয়ে আছে! ইসলামকে তো তিনিও ভালোবাসেন। কিন্তু চাইলেই তো গান রেকর্ড করে ফেলা যায় না, সেজন্য লাগে সরঞ্জাম, লাগে লগ্নি। এসব বন্দোবস্তের জন্য ধরনা দিতে হবে গ্রামোফোন কোম্পানির রিহার্সেল-ইন-চার্জ ভগবতী ভট্টাচার্যের কাছে। তাই নজরুল বললেন, 'আব্বাস, তুমি ভগবতীবাবুকে বলে তাঁর মত নাও। আমি ঠিক বলতে পারব না।'

এবার আব্বাসউদ্দীন গেলেন গ্রামোফোন কম্পানির রিহার্সেল-ইনচার্জকে ভগবতী ভট্টাচার্যের কাছে। প্রস্তাব শুনে ভগবতী বাবু তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন। এককথায় মানা করে দিলেন ইসলামি ধারার গান করার প্রস্তাব। চলতি স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে গান করে ব্যবসায় লালবাতি জ্বালাতে রাজি না তিনি। অগত্যা মনের দুঃখ মনে চেপে চুপ মেরে গেলেন আব্বাসউদ্দীন। 

এরপর প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেল। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে একদিন দুপুরে। নিজের অফিস থেকে গ্রামোফোন কম্পানির রিহার্সেল ঘরে গেছেন আব্বাসউদ্দীন। গিয়ে দেখেন একটা ঘরে বেশ ফুরফুরে মেজাজে গল্প করছেন ভগবতীবাবু। তার খোশমেজাজ দেখে আব্বাসউদ্দীন ভাবলেন, এই তো সুবর্ণ সুযোগ।

আব্বাসউদ্দীন ঝটপট বলে ফেললেন, 'যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে বলি। সেই যে বলেছিলাম ইসলামি গান দেবার কথা, আচ্ছা, একটা এক্সপেরিমেন্টই করুন না, যদি বিক্রি না হয় আর নেবেন না, ক্ষতি কী?' 

এত জনপ্রিয় শিল্পীকে এবার আর ফেরাতে পারলেন না ভগবত বাবু। হেসে বললেন, 'নেহাতই নাছোড়বান্দা আপনি, আচ্ছা আচ্ছা, করা যাবে।'

আরো পড়ুন
বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় ঈদ শুভেচ্ছা

বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় ঈদ শুভেচ্ছা

 

সেদিন আব্বাসউদ্দীনের ভাগ্য ছিল ভীষণ ভালো। ওখানে বসেই শুনলেন পাশের ঘরেই আছেন আছেন কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি তৎক্ষণাৎ গিয়ে নজরুলকে বললেন যে ভগবতবাবু রাজি হয়েছেন। 

নজরুল তখন ইন্দুবালাকে গান শেখাচ্ছিলেন। খবর শুনে তিনি ইন্দুবালাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে গান লিখতে বসলেন আব্বাসউদ্দীনের জন্য। তার জন্য এক ঠোঙা পান আর চা আনিয়ে দিলেন আব্বাসউদ্দীন। তারপর দরজা বন্ধ করে আধ ঘণ্টার মধ্যেই নজরুল লিখে ফেললেন সেই বিখ্যাত গান—'ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ'।

লেখার সঙ্গে সঙ্গে সুরসংযোগ করে শিখিয়ে দিলেন আব্বাসউদ্দীনকে। পরদিন তাকে ঠিক একই সময় যেতে বললেন নজরুল। পরদিন তিনি লিখলেন: 'ইসলামের ঐ সওদা লয়ে এলো নবীন সওদাগর'।

লেখার চারদিন পরে রেকর্ড করা হলো গান দুটো। তার দু-মাস পরে ঈদুল ফিতর। আব্বাসউদ্দীনকে বলা হলো, ঈদের সময় গান দুটো বাজারে বের হবে।

ঈদের ছুটিতে কলকাতা থেকে বাড়ি গেলেন আব্বাসউদ্দীন। বন্ধের সঙ্গে আরও বিশ-পঁচিশ দিন বাড়তি ছুটি নিয়েছিলেন। তাই নতুন ইসলামি গান কেমন চলল, তা জানার সুযোগ পাননি। তারপর ঈদে যে গানটি বাজারে ছাড়ার কথা রয়েছে, সে কথা ভুলেই গেলেন।

ঈদের ছুটি শেষে কলকাতা ফিরে এসে ট্রামে চড়ে অফিসে যাচ্ছেন আব্বাসউদ্দীন। হঠাৎ শুনলেন ট্রামে তার পাশে বসা এক যুবক গুনগুন করে গাইছে, 'ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে।' 

আরো পড়ুন
ঈদের নামাজ যেভাবে পড়বেন

ঈদের নামাজ যেভাবে পড়বেন

 

শুনে একটু অবাকই হলেন আব্বাসউদ্দীন। এই যুবক এ গান শুনল কীভাবে? অফিস ছুটির পর গড়ের মাঠে বেড়াতে গিয়েও শোনেন মাঠে বসে একদল ছেলের মাঝে একটি ছেলে গেয়ে উঠল—'ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে।' 

তখন আব্বাসউদ্দীনের মনে পড়ল এ গান তো ঈদের সময় বাজারে বের হবার কথা। সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলেন সেনোলা রেকর্ড কোম্পানীর বিভূতিদার দোকানে গেলাম। আব্বাসউদ্দীনকে দেখেই তাকে জড়িয়ে ধরলেন বিভূতিবাবু। সন্দেশ, রসগোল্লা, চা আনিয়ে খেতে দিলেন। আব্বাসউদ্দীনের গান দুটো আর আর্ট পেপারে ছাপানো তার বিরাট ছবির একটা বান্ডিল সামনে রেখে বললেন, 'বন্ধু-বান্ধবদের কাছে বিলি করে দিও। আমি প্রায় সত্তর আশী হাজার ছাপিয়েছি, ঈদের দিন এসব বিতরণ করেছি। আর এই দেখ দু'হাজার রেকর্ড এনেছি তোমার।'

এ কথা শুনে আনন্দে নেচে উঠল আব্বাসউদ্দীনের মন। সঙ্গে সঙ্গে ছুটলেন কাজী নজরুলের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে শুনলেন নজরুল রিহার্সেল রুমে গেছেন। সটান সেখানে গিয়ে হাজির হলেন আব্বাসউদ্দীন। তার গলার স্বর শুনে লাফিয়ে উঠলেন দাবা খেলায় মগ্ন নজরুল। তাকে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, 'আব্বাস তোমার গান কী যে—' 

ওইটুকু কথাতেই বুঝিয়ে দিলেন, তাদের গান তোলপাড় ফেলে দিয়েছে বাজারে। বাংলার মুসলমানের ঘরে ঘরে বাজছে তাদের গান। আনন্দে চট করে নজরুলকে কদমবুসি করে ফেললেন আব্বাসউদ্দীন।

ওদিকে গানের সাফল্যে মহাখুশি ভগবতীবাবুও। এরপর একের পর এক ইসলামি ধারার গান লিখলেন নজরুল, গাইলেন আব্বাসউদ্দীন। নতুন জোয়ার এল বাংলা গানের ধারায়। 

এভাবেই জন্ম হলো এক অবিস্মরণীয় গানের আর সেই গান হয়ে উঠল আমাদের ঈদ উদযাপনের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। আমাদের সবার শৈশব-কৈশোরের ঈদ উদযাপনের রঙিন স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে গেল ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’ গানটি।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ