প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে যা পেল বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে যা পেল বাংলাদেশ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরে বিশাল বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরছেন। তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং ২০২৮ সাল পর্যন্ত কোটা ও শুল্ক সুবিধারও প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন। সফরে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন এবং বাংলাদেশ চীনের ‘এক চীন নীতি’তে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-

২১০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে বাংলাদেশ ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন।

এর মধ্যে প্রায় ৩০টি চীনা কম্পানি বাংলাদেশের চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে। মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ, অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে। বাকি অর্থ অনুদান ও অন্যান্য ঋণ সহায়তা হিসেবে আসবে।

২০২৮ সাল পর্যন্ত চীনে কোটা ও শুল্ক সুবিধা
চীন বাংলাদেশের জন্য বিদ্যমান শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুবিধা আরো দুই বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০২৮ সাল পর্যন্ত বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর চীনা উপপ্রধানমন্ত্রী ডিং জুয়েশিয়াং এই ঘোষণা দেন।

চীনে আম রপ্তানি
চীন যেমন বাংলাদেশ থেকে আম নিতে আগ্রহী তেমনি বাংলাদেশও চীনে আম পাঠাতে চায়। বাংলাদেশ চীনে আম রপ্তানির জন্য ৬ বছর আগে দেশটির কাছে আবেদন করেছিল। তবে নানা জটিলতায় সেটা আর কার্যকর হয়নি।

তবে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের মধ্যে দিয়ে সে দেশে আম রপ্তানির দুয়ার খুলেছে।  আগামী মে-জুন মাস থেকে চীনে আম রপ্তানি শুরু হবে। এর মধ্যে দিয়ে বিদেশে বাংলাদেশি আমের চাহিদা বাড়বে।

তিস্তা প্রকল্পে সহায়তা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরে তিস্তা নদী প্রকল্পে সহায়তার আশ্বাস পেয়েছেন। এ ছাড়া নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালনার জন্য ৫০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান চেয়েছেন তিনি।

সফরে সে দেশের পানিসম্পদমন্ত্রী লি গোইয়িংয়ের সঙ্গে বৈঠকে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা ও ঢাকার চারপাশের দূষিত পানি পরিষ্কারের বিষয়ে সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন ইউনূস।

এক চীন নীতিতে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি
বাংলাদেশ সব সময় এক চীন নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। তাইওয়ানকে চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেও মনে করে বাংলাদেশ। তবে এবার প্রধান উপদেষ্টার সফরে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে। একইসঙ্গে চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার ব্যাপারে নিজেদের অঙ্গীকারের কথা স্পষ্ট করেছে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের পথচলায় সমর্থনের কথাও বলেছে চীন।

তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিরোধিতা নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়ে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেছেন, এই বাক্যটি হয়তো চীনের আগ্রহে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হোক বা না হোক, এটি কোনো পার্থক্য তৈরি করে না।

৯ চুক্তি-সমঝোতা সই
সফরকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চীনের একটি চুক্তি ও ৮টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং কারিগরি সহযোগিতাসংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের চিরায়ত সাহিত্যের অনুবাদ ও প্রকাশনা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনিময় ও সহযোগিতা, সংবাদ বিনিময়, গণমাধ্যম, ক্রীড়া ও স্বাস্থ্য খাতে সই হয়েছে ৮টি সমঝোতা স্মারক।

গত ২৬ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের চীন সফরে যান। প্রধান উপদেষ্টার এটাই প্রথম কোনো দেশে দ্বিপক্ষীয় সফর। স্থানীয় সময় শনিবার বিকেল ৫টায় বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঈদ শেষে ফিরতি যাত্রায়ও স্বস্তি, এখনো ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঈদ শেষে ফিরতি যাত্রায়ও স্বস্তি, এখনো ঢাকা ছাড়ছে মানুষ
ছবি: কালের কণ্ঠ

পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। দুর্ভোগহীন অন্য রকম এক ঈদ যাত্রায় স্বস্তিতে বাড়ি ফিরেছিল ঘরমুখো মানুষ। একইভাবে স্বস্তিতে ঢাকায় ফিরছে তারা।

তবে সরকারি দীর্ঘ ছুটি থাকায় এখনো জমে ওঠেনি ফিরতি যাত্রা।

বাস-ট্রেনে যাত্রী থাকলেও নেই আগে ফেরার প্রতিযোগিতা। তবে বুধবারও (২ এপ্রিল) অনেককে রাজধানী ছাড়তে দেখা গেছে।

ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে টানা ৯ দিনের ছুটি চলছে। সরকারি ছুটি অনুযায়ী, আগামী শনিবার (৫ এপ্রিল) পর্যন্ত ছুটি উপভোগ করবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ট্রেনে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ, ফিরছেও : বুধবার কমলাপুর রেলস্টেশন ও বিমানবন্দর স্টেশনে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় দেখা গেছে। অনেক কর্মজীবী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। ঈদের সময় প্রিয়জনের কাছে যাওয়ার সময়-সুযোগ করতে না পারা অনেকে এখন বাড়ি ফিরছেন। ফিরতি ট্রেনগুলোর বেশির ভাগ আসন পূর্ণ থাকলেও তুলনামূলকভাবে আগের চেয়ে চাপ কম।

বুধবার কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীর তেমন ভিড় দেখা যায়নি। বেশির ভাগ ট্রেন খালি আসন নিয়েই ছেড়ে গেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ফিরতি যাত্রা এখনো স্বস্তিদায়ক থাকলেও আগামী কয়েক দিনের মধ্যে চাপ বাড়তে শুরু করবে।

যাত্রীরা জানিয়েছেন, এবারের ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে অনেক ভালো ছিল। স্টেশনে আগেভাগে এলেও অতিরিক্ত ভিড় বা বিশৃঙ্খলার মুখে পড়তে হয়নি।

বুধবার কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের এক যাত্রী দুপুর ১টায় ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ফয়সাল মাহমুদ নামের ঢাকাগামী ওই যাত্রী জানান, গত ২৭ মার্চ তিনি বাড়ির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। আসার সময় তেমন ঝামেলায় পড়তে হয়নি। ফিরতি যাত্রায়ও ট্রেন অনেকটা ফাঁকাই দেখছেন।

কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের এক যাত্রী বলেন, ‘ভাবছিলাম ট্রেন পেতে কষ্ট হবে, কিন্তু স্টেশনে এসে দেখলাম পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ট্রেনে উঠতে কোনো ঝামেলা হয়নি, সময়মতো ছাড়ার বিষয়টিও স্বস্তিদায়ক।’
কমলাপুর রেলস্টেশনের মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এবারের ঈদ যাত্রায় ট্রেন চলাচল স্বস্তিদায়ক ছিল। তবে শেষ দিকে পোশাক কারখানাগুলো ছুটি হওয়ায় স্টেশনে উপচে পড়া ভিড় ছিল। ট্রেন ছাড়তে দেরি বা কোনো ধরনের ভোগান্তি হয়নি যাত্রীদের।’

সড়কে চাপ নেই : ঈদের চাপ কেটে গেছে। রাজধানীর প্রবেশপথ ও বহির্মুখগুলোতে নেই যাত্রীদের চিরচেনা উপচে পড়া ভিড়। বরং এখনো অনেকে যেমন ঢাকা ছাড়ছেন, আবার কেউ কেউ ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরছেন।

বুধবার সকালে রাজধানীর অন্যতম প্রবেশমুখ হিসেবে পরিচিত গাবতলী বাস টার্মিনাল ও এর আশপাশের এলাকায় দেখা যায়, স্বজনদের সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে ঢাকায় ফিরছেন অনেক কর্মজীবী। গ্রাম থেকে ঢাকায় প্রবেশ করা গাড়িগুলো থেকে বেশ ভালোই যাত্রী নামতে দেখা গেছে। একইভাবে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া গাড়িগুলোর আসনও তেমন ফাঁকা থাকছে না।

রাজদূত পরিবহনের টিকিট কাউন্টারের এক কর্মী বলেন, ‘আমাদের ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া গাড়িগুলোর কোনোটারই সিট ফাঁকা যাচ্ছে না। আবার ঢাকামুখো গাড়িও সব আসনে যাত্রী নিয়েই ফিরছে।’

রাজাপুর ট্রাভেলসের টিকিট বিক্রেতা কামাল বলেন, কাঙ্ক্ষিত যাত্রী আছে। তবে ঈদের আগের দিনের মতো উপচে পড়া ভিড় নেই। মানুষ স্বস্তিতে যাওয়া-আসা করছে।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে তিশা প্লাস কাউন্টারের আব্দুল হাকিম নামের একজন জানান, ঈদের আগের তুলনায় এখন যাত্রী ভালো আছে। ঢাকা ছাড়ার গাড়িতেও সিট ফাঁকা থাকছে না, ঢাকায় ফেরার গাড়িতেও সিট ফাঁকা নেই।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক কাজী মো. জুবায়ের মাসুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবারের ঈদ যাত্রায় বাস মালিক সমিতির অবস্থা তেমন ভালো না। ঈদ যাত্রার যাত্রী নামিয়ে ফিরতি যাত্রায় বাস খালি আসায় অনেক লস গুনতে হয়েছে মালিকদের। তার পরও যাত্রীদের স্বস্তির যাত্রা উপহার দিতে পেরে আমরা সন্তুষ্ট।’

গণপরিবহনে যাত্রী কম : ঢাকার রাস্তাগুলো এখনো বেশ ফাঁকা। যাঁরা ঢাকায় আছেন, যানজটহীন পরিবেশ উপভোগ করছেন। গণপরিবহনগুলোর যাত্রীসংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় কম।

যাত্রীরা বলছেন, তাঁরা এখন এক থেকে দেড় ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে পারছেন ১৫ মিনিটেই। অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, এত অল্প যাত্রীতে তেলের খরচই উঠবে না।

সরেজমিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজগেট, আসাদগেট, ধানমণ্ডি, কারওয়ান বাজার ও বাংলামোটর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই দিনের তুলনায় সড়কে পথচারী চলাচল ও যানবাহন বেড়েছে। তবে বেশির ভাগ গণপরিবহনে আসন ফাঁকা থাকছে।

মন্তব্য

ইউনূস-মোদির বৈঠক হচ্ছে

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ইউনূস-মোদির বৈঠক হচ্ছে
সংগৃহীত ছবি

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের (সিএও) একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বাসসকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

রোহিঙ্গা সংকট ও সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

বুধবার (২ এপ্রিল) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে এই বৈঠক (দুই দেশের নেতাদের মধ্যে) আয়োজনের অনুরোধ করেছি... এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. খলিলুর বলেন, বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নেতারা সংস্থাটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করবেন, তাই অধ্যাপক ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠক হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

আগামী ৪ এপ্রিল অধ্যাপক ইউনূসকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে।

বিমসটেক সম্মেলন ২ থেকে ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

মন্তব্য

কালুরঘাটে রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ১৪ মে

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
কালুরঘাটে রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ১৪ মে
সংগৃহীত ছবি

কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাটে আগামী ১৪ মে নতুন রেল ও সড়ক সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম (বীরপ্রতীক)। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বলেও জানান তিনি।

বুধবার (২ এপ্রিল) চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ইঞ্জিনিয়ার ওমরের কবর জিয়ারত ও ওমরের পরিবারের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন উপদেষ্টা। শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে তিনি এ কথা বলেন।

ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘আগামী ১৪ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আসবেন চট্টগ্রামের সন্তান প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। খুব সম্ভাবনা রয়েছে এ সময় তিনি এই সেতু নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন।’

তিনি বলেন, ‘শহীদ পরিবার তাদের প্রিয়জনকে আর ফিরে পাবেন না, তবে আমরা তাদের পাশে আছি। অন্যায় করলে বিচার হবে না, এমনটি হতে পারে না।

আমরা যদি ন্যায়বিচার নিশ্চিত না করি, তাহলে কিভাবে ন্যায়ের সমাজ গড়ে উঠবে? ন্যায়ের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আরো কত মানুষকে আত্মত্যাগ করতে হবে? তাই অবশ্যই গণহত্যাকারীদের বিচার হতে হবে।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ, বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম সারোয়ার, উপজেলা জামায়াতের আমির ডা. খোরশেদুল আলম ও নায়েবে আমির ডা. আবু নাছের প্রমুখ।

মন্তব্য

ভারতের সংখ্যালঘু অধিকার লঙ্ঘনের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে : দেবপ্রিয়

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ভারতের সংখ্যালঘু অধিকার লঙ্ঘনের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে : দেবপ্রিয়

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘নয়াদিল্লির মনে রাখা উচিত তাদের দেশে মুসলিমসহ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে।’

ভারতের পাক্ষিক ম্যাগাজিন ফ্রন্টলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) ম্যাগাজিনটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

ফ্রন্টলাইনের এক প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, ‘সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা গণনার একাধিক উপায় আছে।

কেউ অস্বীকার করে না যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদায়ের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। পুলিশ বাহিনী বিপর্যস্ত ছিল। কিছু সময়ের জন্য নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর হাতে চলে গিয়েছিল, তবে পরিস্থিতি অস্থির ছিল।’

উপরন্তু বাংলাদেশের অনেক ধর্মীয় সংখ্যালঘু ঐতিহাসিকভাবে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে।

সুতরাং কিছু ক্ষেত্রে কোনো হিন্দু ব্যক্তির ওপর হামলা তার ধর্মের কারণে ছিল নাকি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমর্থক হওয়ার কারণে ছিল, তা আলাদা করা কঠিন। তবে আরেকটি দিক বিবেচনা করার আছে। বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা—যেমন হিন্দু ও বৌদ্ধরা ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ। একইভাবে ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা—যেমন মুসলমানরা বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ।

সুতরাং ভারত যখন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে হওয়া আচরণ নিয়ে মন্তব্য করে, তখন দেশটিকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে তার নিজের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কী আচরণ হচ্ছে, সেটাও অন্যরা খতিয়ে দেখছে।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন সদস্য হয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাংলাদেশে নিরাপদ কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি হয়তো এ প্রশ্নের জন্য সেরা উদাহরণ নই। আমি দুইবার ভারতে শরণার্থী হয়েছিলাম। প্রথমবার, ১৯৬০-এর দশকের দাঙ্গার পর—১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত এবং দ্বিতীয়বার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়। কিন্তু আমার মা-বাবা কখনোই বাংলাদেশ ছেড়ে যাননি।

আমি ফিরে এসেছি, আমার মাতৃভূমিতে বিনিয়োগ করেছি এবং এখানেই আমার জীবন গড়েছি। আমি আমার দেশের জন্য অবদান রাখতে গিয়ে মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পদ ছেড়ে দিয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার পরিবারের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচার বিভাগীয় ইতিহাসে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমার মা আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য ছিলেন এবং আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিযুক্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। কিন্তু এই ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো আমার পেশাদারি এবং তথ্যভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে না।’

ব্যক্তিগতভাবে আমি বাংলাদেশে থাকার ঝুঁকিগুলো মেনে নিয়েছি। তবে আমি বিশ্বাস করি যে পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি যেখানে একটি ভূমিকা রাখে, এমন যেকোনো দেশের যেকোনো নাগরিকের জন্যই এ ধরনের ঝুঁকি বিদ্যমান। আমি আরো বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবাধিকার এবং সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের—হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত সংখ্যালঘু এবং সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর—সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্তর্ভুক্তির প্রতি এই অঙ্গীকারই জাতি গঠনের মূল ভিত্তি।

বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিগুলোর মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে বহুত্ববাদকে প্রতিষ্ঠিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে দেবপ্রিয় বলেন, ‘বিষয়টি এখনো আলোচনার টেবিলে। এই পর্যায়ে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো অপরিণত কাজ হবে, কারণ এটি এখনো পর্যালোচনাধীন।’

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ