<p>একজন নেপালি কিশোর পৃথিবীর ১৪টি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয় করে বিশ্বরেকর্ড ভেঙেছেন। ১৮ বছর বয়সী নিমা রিঞ্জি শেরপা স্থানীয় সময় বুধবার ভোর আনুমানিক ৬টা ৫ মিনিটে তিব্বতের মাউন্ট শিষাপাংমার শীর্ষে দাঁড়ান। এর মাধ্যমে তিনি পৃথিবীর ১৪টি ‘আট হাজারি’, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক পর্বতারোহণ ও আরোহণ ফেডারেশনের (ইউআইএএ) স্বীকৃত আট হাজার মিটার উঁচু পর্বতগুলোর শৃঙ্গে আরোহণকারী মাত্র কয়েকজন মানুষের একজন হয়ে ওঠেন।।</p> <p>শেরপা নিমা ১৬ বছর বয়সে উঁচু উঁচু পর্বত আরোহণ শুরু করেন এবং ৭৪০ দিনের মধ্যে সবগুলো আট হাজারি পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন। তিনি ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তার দশম শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষার পরপরই নেপালের মানাসলুর চূড়ায় পৌঁছেন, যা বিশ্বের অষ্টম সর্বোচ্চ উঁচু পর্বত। প্রতিটি অভিযানে নিমার সঙ্গে ছিলেন তার আরোহণ সঙ্গী পাসাং নুরবু শেরপা। ১৪টি আট হাজারি পর্বতের সবগুলো এশিয়ার হিমালয় ও কারাকোরাম পর্বতমালায় অবস্থিত।</p> <p>বুধবারের শিষাপাংমা আরোহণ এই শেরপার জন্য তার বড় অর্জনগুলোর তালিকায় নতুন সংযোজন। তিনি এর আগে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ পর্বতারোহী হিসেবে হিমালয়ের জি ও জি২, কাশ্মীরের নাঙ্গা পর্বত এবং মাউন্ট এভারেস্ট ও ১০ ঘণ্টার মধ্যে কাছের লোৎসে শৃঙ্গ আরোহণ করেও রেকর্ড করেছেন।</p> <p>এদিকে শিষাপাংমার শীর্ষে দাঁড়িয়েও ১৮ বছর বয়সী শেরপার সামনে আরেকটি উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল। তিনি শেরপাদের শুধু বিদেশি পর্বতারোহীদের সহায়ক হিসেবে দেখার পুরনো ধ্যানধারণাকে বদলে দিতে চান। শীর্ষে পৌঁছনোর পর তিনি বলেন, ‘এই শিখর-বিজয় আমার ব্যক্তিগত যাত্রার শেষ নয়, এটি প্রতিটি শেরপার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি, যারা আমাদের জন্য নির্ধারিত ঐতিহ্যবাহী সীমারেখার বাইরে স্বপ্ন দেখার সাহস করেছেন। পর্বতারোহণ শুধু শ্রম নয়, এটি আমাদের শক্তি, ধৈর্য ও আবেগের প্রমাণ।’</p> <p>যদিও ‘শেরপা’ শব্দটি সাধারণত এভারেস্ট এলাকায় পর্বতারোহণ গাইড বা পোর্টারকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, তবে এটি আসলে নেপালের পাহাড়ি এলাকার একটি জাতিগোষ্ঠীর নাম। নিমা রিঞ্জি বলেন, তিনি তরুণ প্রজন্মকে শেরপাদের প্রমাণ করতে চান, তারা শুধু সহায়ক পর্বতারোহী নন, বরং শীর্ষস্থানীয় অ্যাথলেট, অভিযাত্রী ও সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্ব হিসেবেও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।</p> <p>তিনি এদিন আরো বলেন, ‘আমরা শুধু গাইড নই; আমরা পথপ্রদর্শক। প্রতিটি শেরপার প্রতি আহ্বান হোক, যাতে তারা আমাদের কাজের মর্যাদা, আমাদের ঐতিহ্যের শক্তি ও ভবিষ্যতের অসীম সম্ভাবনাকে উপলব্ধি করতে পারে।’</p> <p>নিমা রিঞ্জি শেরপার পরিবারও রেকর্ডধারী পর্বতারোহীদের পরিবার, যারা বর্তমানে নেপালের বৃহত্তম পর্বতারোহণ সংস্থা ‘সেভেন সামিট ট্রেকস’ পরিচালনা করে। এই সংস্থার সঙ্গেই তিনি শিষাপাংমা অভিযান সম্পন্ন করেছেন।</p> <p>রেকর্ডটি স্থাপনের পরপরই বিবিসির সঙ্গে কথা বলেন নিমার বাবা তাশি লাকপা শেরপা। তিনি জানান, স্যাটেলাইট ফোনে নিমা যখন তাকে খবরটি জানান, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘বাবা, আমি চীনা সময় অনুযায়ী ভোর ৬টা ৫ মিনিটে শীর্ষে পৌঁছেছি। আমার সহকর্মী পাসাং নুরবু ও আমি এখানে পৌঁছেছি।’</p> <p>নিমার বাবা বলেন, ‘সে অত্যন্ত পেশাদার, তাই খুব রোমাঞ্চিতও ছিল না; তার জন্য এটি ছিল স্বাভাবিক। আমি বলেছিলাম, আমি তোমার ওপর বিশ্বাস রেখেছি। নিরাপদে ফিরে এসো।’</p> <p>নেপালের পর্যটন বিভাগের অধীনে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম ও মাউন্টেনিয়ারিং শাখার পরিচালক রাকেশ গুরুং বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন, নিমা রিঞ্জি রেকর্ডটি ভেঙেছেন। তিনি বলেন, ‘শিখর-বিজয়টি আজ সকালে নিশ্চিত হয়েছে। এখন শিবিরে ফিরে আসার পর সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যাপার আছে।’</p> <p>এর আগে সবচেয়ে কম বয়সে সব আট হাজারি পর্বত আরোহণের রেকর্ডধারী ছিলেন আরেক নেপালি পর্বতারোহী মিংমা গ্যাবু ‘ডেভিড’ শেরপা, যিনি ২০১৯ সালে ৩০ বছর বয়সে এটি অর্জন করেছিলেন। গুরুং বলেন, নতুন ‘এই রেকর্ডটি ভাঙা এখন বেশ কঠিন হবে’।</p> <p>সূত্র : বিবিসি</p>