<p>‘সমুদ্র যে শাসন করে, বিশ্বও সেই শাসন করে’—বিশ্ব ইতিহাসে আবহমান কাল ধরে চলে আসা এই প্রবাদবাক্য ভারত মহাসাগরের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। বিশ্বের মোট তেলের দুই-তৃতীয়াংশ, গ্যাসের ৩০ শতাংশ, ইউরেনিয়ামের ৬০ শতাংশ, স্বর্ণের ৪০ শতাংশ মজুদ শুধু ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় রাষ্ট্রগুলোর দখলে। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম এই মহাসাগরের উত্তরে ভারত, পাকিস্তান ও ইরান; পশ্চিমে আরব উপদ্বীপ ও আফ্রিকা; পূর্বে মালয় উপদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়ার সুন্দা দ্বীপ ও অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণে অ্যান্টার্কটিকা। আয়তনে প্রায় ৭ কোটি ৩৪ লাখ ২৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। ভারত মহাসাগরের প্রধান তিনটি শাখা— আরব সাগর (লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর ও পারস্য উপসাগরসহ), বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগর। ইতিহাস বলে, মেসোজোয়িক ও সেনোজোয়িক মহাকালে যখন গন্ডোয়ানাল্যান্ড ভেঙে যেতে শুরু করে তখন থেকে ভারত মহাসাগরের সৃষ্টি শুরু হয়। ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের দক্ষিণে থাকা জাভা খাতকে ভারত মহাসাগরের গভীরতম অঞ্চল বলা হয়। অঞ্চলটি প্রায় ৭ হাজার ৭২৫ মিটার পর্যন্ত গভীর। ভারত মহাসাগরে উপরিভাগে থাকা পানির গড় তাপমাত্রা বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন রকম। একেবারে দক্ষিণে কেরগুয়েলেন দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আবার লোহিত সাগর-পারস্য উপসাগর অংশে তা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়।</p> <p>বৈশ্বিক সমুদ্র বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পথগুলো, বিশেষ করে স্টেট অব হরমুজ, স্টেট অব মালাক্কা, বাব এল মানদেব,  সুন্দ্রা ও লম্বক স্ট্রেট, টেন ডিগ্রি ও সিক্স ডিগ্রি চ্যানেল, সুয়েজ ক্যানেল—সবই ভারত মহাসাগরে অবস্থিত। বাণিজ্যের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসাগর। এশিয়ার বৃহত্তম দেশ চীন মধ্যপ্রাচ্য থেকে যে তেল ও গ্যাস আমদানি করে, সেটি পারস্য উপসাগর ও আরব সাগর হয়ে মালাক্কা প্রণালি দিয়ে পূর্ব চীনে পৌঁছায়। তাই জ্বালানি সরবরাহের পথকে ঝামেলামুক্ত রাখতে প্রতিনিয়ত ভারত মহাসাগরে নিজেদের উপস্থিতি বাড়িয়ে চলছে তারা। মহাসাগরের তীরবর্তী ক্ষুদ্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আরেক জনবহুল দেশ ভারত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্ব অর্থনীতির দুই প্রধান শক্তি হতে চলেছে ভারত ও চীন; এবং দুই দেশের পাঞ্জা লড়ার ক্ষেত্রই হবে ভারত মহাসাগর। চীন ও ভারত ছাড়াও অঞ্চলটির গুরুত্ব রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, রাশিয়াসহ অন্যান্য পরাশক্তির কাছে। বলা চলে, অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মূল স্রোতটি প্রবাহিত হবে ভারত মহাসাগরকে কেন্দ্র করেই।</p> <p> </p> <p>♦ আল সানি</p>