<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী বাংলা সংস্কৃতির এক অনন্য সম্পদ পালাগান। সাধারণত কোনো কাহিনিকে অবলম্বন করে কীর্তনের ঢঙে এটি পরিবেশিত হয়। এই গানকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ও বলা হয়। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ধোবার পাট। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পালাগান শুরু হয় একটি টপ্পা গান পরিবেশনের মাধ্যমে। টপ্পার ওপর নির্ভর করে পুরো পালাটি পরিবেশিত হয়। টপ্পার পর থাকে গুরু বন্দনা। এরপর পাঁচালি। পাঁচালি লোকগীতির একটি চলতি ধারা। এই ছন্দে রচিত দেবতার কথা বা ধর্মসংগীতও পালা নামে পরিচিত। মঙ্গলকাব্যে দিনে পরিবেশিত কাহিনি দিবাপালা এবং রাতে পরিবেশিত কাহিনি নিশাপালা নামে অভিহিত। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পালাগানে মূল গায়েন বা বয়াতি থাকেন একজন। তাঁকে পদকর্তা বা অধিকারীও বলা হয়। তিনি দোহারদের সহযোগিতায় গান পরিবেশন করেন। পালাগান কাহিনিমূলক হওয়ায় কথোপকথন আকারে পরিবেশিত হয়। এ ক্ষেত্রে মূল গায়েনই বিভিন্ন চরিত্রে রূপদান করেন। কখনো কখনো দোহাররা তাঁকে এ কাজে সাহায্য করেন। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই গানেরও আঙ্গিক ও বিষয়গত পরিবর্তন ঘটেছে। পৌরাণিক ও দেব-দেবীর কাহিনির পরিবর্তে বিভিন্ন সামাজিক ঘটনা ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক ঘটনা নিয়েও পালাগান রচিত হয়েছে। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মৈফল রাজার পালা, জামাল বাদশার পালা, রাজবিদ্যার পালা ইত্যাদি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পালাগানের উৎসভূমি ময়মনসিংহ। সেখানকার গীতিকাগুলোকে সাধারণভাবে পালা বলা হয়। পূর্ব ময়মনসিংহের অনেক বাস্তব ঘটনা নিয়েও অনেক পালাগান রচিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য রচয়িতার মধ্যে আছেন মনসুর বয়াতি, ফকির ফৈজু, দ্বিজ কানাই, চন্দ্রাবতী, দ্বিজ ঈশান, সুলাগাইনসহ অনেকে। দীনেশচন্দ্র সেন ১৯২৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রাচীন পালাগানের সংকলন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মৈমনসিংহ গীতিকা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রকাশ করেন। এতে থাকা বেশির ভাগ পালাই নায়িকাদের নামানুসারে। এই নায়িকারা আবহমান বাঙালি ঐতিহ্যেরও উজ্জ্বল প্রতিনিধি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পালাগানের উল্লেখযোগ্য ও সুপরিচিত নায়িকাদের মধ্যে আছেন মহুয়া, মলুয়া, চন্দ্রাবতী, ভেলুয়া, কমলা ও কাজলরেখা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একসময় পালাগানের জমজমাট আসর বসত বাংলার পথে-প্রান্তরে। এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে এটি। আশার কথা রাষ্ট্রীয়ভাবে এখন পালাগানের পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার প্রত্যয়ে পালাগানের আসরের আয়োজন করছে। সবাই সচেতন হলে সংস্কৃতির এই ঐতিহ্যবাহী ধারাকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আতিফ আতাউর</span></span></span></span></p>