গাড়ি ও ফল আমদানির আড়ালে অর্থপাচার

মাসুদ রুমী
মাসুদ রুমী
শেয়ার
গাড়ি ও ফল আমদানির আড়ালে অর্থপাচার

বিলাসবহুল গাড়ি ও ফল আমদানির আড়ালে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হচ্ছে। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম মূল্য দেখিয়ে এ টাকা পাচার করেছেন অসাধু আমদানিকারকরা।

ডলার সংকটেও অর্থপাচার থেমে নেই। যেখানে ডলার সংকটে ঋণপত্র বা এলসি খুলতে হিমশিম খাচ্ছেন শিল্প মালিকরা, সেখানে আমদানির আড়ালে চলছে অর্থপাচার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে ভোগ্য পণ্যের দাম এখন নিম্নমুখী। নানা পদক্ষেপের পরও আমদানি ব্যয় তেমন কমেনি। অথচ বাড়েনি কাস্টম ও কর থেকে সরকারের আয়। এই তথ্য আমদানির আড়ালে অর্থপাচার বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে আনোয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান মানোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ডলার সংকট না কাটলে প্রায় সব শিল্পে কাঁচামালসংকট দেখা দেবে। তাই ডলারের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থপাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা দরকার। ডলার সংকটে আমরা তিন মাস এলসি করতে পারিনি। পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, নানা অভিনব উপায়ে অর্থপাচার হয়ে যাচ্ছে। খোলাবাজার থেকে অনেকে ডলার কিনেও পাচার করছে। যারা বিদেশ যাচ্ছে, তারাও নির্ধারিত কোটার বাইরে বেশি ডলার নিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখা হচ্ছে না। রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ না বাড়ালে এই সংকট শিগগিরই কাটবে না।

বিলাসবহুল গাড়ি আমদানিতে অর্থপাচার : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে চট্টগ্রাম ও মোংলা কাস্টম হাউস দিয়ে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে আনা সাত থেকে আটটি চালানের কাগজপত্র জব্দ করেছেন গোয়েন্দারা।

সূত্র জানিয়েছে, গত বছর দেশে প্রায় ২৫ হাজার গাড়ি আমদানি করা হয়। এর মধ্যে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানি করা গাড়িগুলোর মধ্যে মিত্সুবিশি, মার্সিডিজ বেঞ্জ, নিউ হোন্ডা সিভিক, এক্সপ্যান্ডাও আছে। এসব গাড়ি আমদানিতে গড়ে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কম মূল্য ঘোষণা করে টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে। শুল্ক গোয়েন্দার তদন্তে এ রকম ৩০ থেকে ৪০টি গাড়ি আমদানিতে টাকা পাচারের ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। রিকন্ডিশন্ড গাড়িগুলো আসে প্রধানত জাপান থেকে। নতুন গাড়ি আনা হয় জার্মানি, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশ থেকে। অল্প কিছু নতুন গাড়ি আসে জাপান থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছেন, এক লাখ ডলারের মার্সিডিজের দাম ঘোষণা করা হয় মাত্র ২০ হাজার ডলার। বাকি অর্থ হন্ডিতে পাঠানো হয়।

শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলেছে, আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের অভিযোগে চট্টগ্রাম, কমলাপুর আইসিডি ও মোংলা কাস্টম হাউসের বেশ কিছু বিলাসবহুল গাড়ির চালান আটকে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারক ও পরিবেশক সমিতির (বারভিডা) সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে বছরে প্রায় ২৫ হাজার রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বিক্রি হয়। বর্তমানে নতুন ও রিকন্ডিশন্ড মিলিয়ে গাড়ির বাজার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার। বাজারের ২৫-৩০ শতাংশ নতুন গাড়ির দখলে। ডলার সাশ্রয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে এলসি মার্জিন শতভাগ করায় গাড়ি আমদানি একেবারেই কমে গেছে। এতে ব্যবসার পরিসর কমে আসছে এবং গাড়ির দাম বেড়ে যাচ্ছে।

অভিনব উপায়ে ফল আমদানি : এনবিআরের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ফল আমদানি বেড়েছে প্রায় ৯৭ শতাংশ। ২০২২ সালে পাঁচ হাজার ১৭ কোটি টাকার ফল আমদানি করা হয়েছে, যা ২০২১ সালে ছিল দুই হাজার ৫৫০ কোটি টাকা।

এনবিআর সূত্র বলছে, ফল আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অর্থ পাচার করা হচ্ছে। ফল আমদানিতে নিরুৎসাহ করতে আমদানি শুল্ক বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও এখনো কার্যকর হয়নি।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এলসিতে ঘোষণা ছিল ফল আমদানির, আমদানি হয়েছে সিগারেট। এলসি খোলা হয়েছে তিন হাজার ডলারের (প্রায় দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা), কিন্তু আমদানি করা হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকার। আরব আমিরাতে পাচার করা হয়েছে সেই টাকা। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক কোনো ঠিকানা যাচাই ছাড়াই খুলেছে হিসাব। আর সেই হিসাব থেকে একে একে চারবার এলসি করে পাঠানো হয়েছে টাকা। প্রতিবারই ফল আমদানির নাম করে পাঠানো হয়েছে টাকা। আর আমদানি করা হয়েছে সিগারেট।

অর্থপাচার প্রসঙ্গে মানোয়ার হোসেন বলেন, ডলার সংকট মোকাবেলায় আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। তার পরও অর্থপাচার চলছে। আন্ডার ইনভয়েসিং-ওভার ইনভয়েসিং ঠেকানো এই ডিজিটাল যুগে কঠিন কিছু নয়। আমরা শুনি খেজুর আমদানি হয় ১২ টাকা কেজিতে, আর বিক্রি হয় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। যে কাস্টমস কর্মকর্তা খেজুরের অ্যাসেসমেন্ট করেন তিনিও তো খেজুর কেনেন। তাঁর মনে কি কোনো প্রশ্ন আসে না? অর্থপাচার ঠেকাতে এনবিআরসহ সবাইকে তৎপর হতে হবে। বাংলাদেশিরাই যদি বিদেশে টাকা নিয়ে যায়, তাহলে বিদেশিরা কেন এ দেশে টাকা নিয়ে আসবে।

যেভাবে অর্থ পাচার করা হচ্ছে : পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য অতিরিক্ত দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণেও ধরা পড়েছে। আমদানি-রপ্তানির আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অর্থপাচারের কথা সম্প্রতি আবারও বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

গত কয়েক মাসের আমদানির চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে তিনি জানান, বেশি দামের পণ্য কম দামে এলসি খুলে বাকি অর্থ হুন্ডিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এক লাখ ডলারের মার্সিডিস বেঞ্জ গাড়ি মাত্র ২০ হাজার ডলারে আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। বাকি অর্থ হুন্ডিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েস (আমদানি মূল্য বাড়িয়ে দেখানো) হয়েছে। গত জুলাই মাসে এমন আশ্চর্যজনক প্রায় ১০০টি ঋণপত্র বন্ধ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পণ্য আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং মানেই হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংক চ্যানেলেই বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। পণ্যের মূল্যের নামে পাঠানো অতিরিক্ত অর্থ পরবর্তী সময়ে বিদেশেই আমদানিকারকের পক্ষে কেউ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে আন্ডার ইনভয়েসিং ব্যবহার করা হয় পণ্য রপ্তানিতে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আন্ডার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিংয়ের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে বহির্বিশ্বের বছরে গড়ে ৭৫৩ কোটি ডলারের গরমিল রয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকা।

অর্থপাচার রোধে করণীয় : সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে অর্থপাচারের যেসব মামলা হচ্ছে, তার কোনো কূলকিনারা নেই। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে অর্থপাচার থামবে না। অর্থপাচার মামলায় আইনি ব্যবস্থা জোরদার করতে পৃথক ট্রাইব্যুনাল করতে হবে। যারা বিদেশ পালিয়েছে, তাদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমে দেশে এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

হোয়াইট হাউসে বৈঠক

ট্রাম্প-জেলেনস্কি তীব্র বাগবিতণ্ডা

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ট্রাম্প-জেলেনস্কি তীব্র বাগবিতণ্ডা
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে গতকাল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি : এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির শুক্রবারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তীব্র বাগবিতণ্ডা হয়েছে। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, জেলেনস্কি তাঁর সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করেছেন এবং তাঁদের পূর্বনির্ধারিত যৌথ সংবাদ সম্মেলন বাতিল হয়ে যায়।

৪৫ মিনিটব্যাপী বৈঠকের শেষ ১০ মিনিট ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স ও জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। জেলেনস্কি বহু বছর ধরে মস্কোর অঙ্গীকার ভঙ্গের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে কূটনীতিতে রাশিয়ার প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেন।

বাক্যবিনিময়টি শুরু হয় যখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স জেলেনস্কিকে বলেন, ‘মি প্রেসিডেন্ট, সম্মানের সঙ্গেই বলছি, আমি মনে করি ওভাল অফিসে এসে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমের সামনে আপনার এই অভিযোগ তোলা অসম্মানজনক।’

জেলেনস্কি এতে আপত্তি জানানোর চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, ‘আপনি লাখো লোকের জীবন নিয়ে বাজি খেলছেন।’

ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন এবং আপনি যা করছেন, তা এই দেশটির জন্য অসম্মানজনক, যে দেশটি আপনাদের এতটাই সমর্থন দিয়েছে, যা অনেকের মতে তাদের চেয়ে অনেক বেশি।’

এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার বলেন যে তিনি এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভের লাভজনক ‘রেয়ার আর্থ’ খনিজের ওপর অধিকার পাবে, যা কিনা রাশিয়ার সঙ্গে তিন বছরব্যাপী যুদ্ধে ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে যে অস্ত্র পাঠিয়েছিল, এর দাম পুষিয়ে নেবে।

এর আগে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর এই নতুন মেয়াদের প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন, এই চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য এবং যুদ্ধের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য জেলেনস্কি  শুক্রবার হোয়াইট হাউসে আসছেন। এই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের পর সেই চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি।

হোয়াইট হাউসে বসে দুই রাষ্ট্রনেতার আলোচনায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি উঠে আসে। সেখানেই জেলেনস্কিকে মস্কোর সঙ্গে কিয়েভের শান্তি চুক্তির জন্য ইউক্রেনকে কিছু সমঝোতা করতে হবে।

ট্রাম্পের মুখোমুখি হয়ে জেলেনস্কি সাফ জানান, ‘খুনি পুতিনের’ সঙ্গে ইউক্রেন কোনো সমঝোতার রাস্তায় যাবে না। জেলেনস্কি এই মর্মে যুদ্ধাপরাধসংক্রান্ত একাধিক ছবি দেখান ট্রাম্পকে।

ট্রাম্প বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে হত্যা বন্ধ দেখতে চায়। মার্কিন অর্থ ইউক্রেন পুনর্গঠনে যাতে ব্যবহার হয়, সেই প্রত্যাশা জানান ট্রাম্প।

ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেনের পুনর্গঠনে অর্থায়নের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুগান্তকারী অর্থনৈতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে বলে আশা করা হচ্ছিল।

বহু বছর ধরে এই চুক্তির দিকে তাকিয়ে দুই দেশ।

এর আগে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের তিন বছরেরও বেশি সময় পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সর্বপ্রথম মস্কোর বৈঠক হয়। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের পশ্চিমা মিত্রদের বিস্মিত করেছে।

এর আগে জেলেনস্কিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য দায়ী করে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আপনি তিন বছর ধরে সেখানে আছেন। আপনার এটি শেষ করা উচিত ছিল, এটি শুরুই করা উচিত ছিল না। আপনি একটি চুক্তি করতে পারতেন।’

গত বৃহস্পতিবার কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে আলোচনার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সাংবাদিকরা জেলেনস্কির সঙ্গে আসন্ন বৈঠকের বিষয়ে প্রশ্ন করেন। তখন তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা, আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হবে।’

প্রথা অনুযায়ী দুই প্রেসিডেন্ট হাত মেলানোর মধ্য দিয়ে বৈঠক শুরু করলেও তাদের দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে বৈঠক বারবার সংঘাতে রূপ নেয়।

হোয়াইট হাউসের সংবাদদাতা ট্রাম্প-জেলেনস্কির এ বৈঠককে উত্তেজনার এক নজিরবিহীন মুহূর্ত বলে বর্ণনা করেছেন।

বৈঠক শেষে জেলেনস্কি হোয়াইট হাউস ছেড়ে যান। আর ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লেখেন, ‘তিনি (জেলেনস্কি) যখন শান্তির জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবেন, তখন ফিরে আসতে পারেন।’ সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা, টাইমস অব ইন্ডিয়া, বিবিসি

মন্তব্য

অভ্যুত্থানে আহত ১৪০১ জনকে ‘জুলাই যোদ্ধা’র স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
অভ্যুত্থানে আহত ১৪০১ জনকে ‘জুলাই যোদ্ধা’র স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত এক হাজার ৪০১ জনকে জুলাই যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। শ্রেণিতে অতি গুরুতর আহত ৪৯৩ জন এবং শ্রেণিতে গুরুতর আহত ৯০৮ জনকে নিয়ে পৃথক দুটি গেজেট প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

গত বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট অধিশাখা গেজেট দুটি প্রকাশ করেছে। গেজেটে আহতদের মেডিক্যাল কেস আইডি, নাম, পিতা ও মাতার নাম এবং স্থায়ী ঠিকানা প্রকাশ করা হয়েছে।

এ ছাড়া শুধু আহতদের জন্য শ্রেণির তালিকাও গেজেট আকারে প্রকাশ করবে মন্ত্রণালয়, যেখানে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে আরো ১০ হাজার ৬৪৮ জনের নাম।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ জানুয়ারি অভ্যুত্থানে ৮৩৪ জন শহীদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। মূলত এসব তালিকা ধরে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের সহায়তা দেবে সরকার।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, চলতি (মার্চ) মাস থেকেই ভাতা কার্যক্রম শুরু হতে পারে।

সরকারের প্রেস উইং জানিয়েছে, প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে এককালীন ৩০ লাখ টাকা এবং প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধাসরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন। এ ছাড়া আহতরা তিন ক্যাটাগরিতে এককালীন অর্থ, মাসিক ভাতা ও চিকিৎসা সুবিধাসহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পাবেন।

আহত জুলাই যোদ্ধারা তিনটি মেডিক্যাল ক্যাটাগরিতে চিকিৎসা পাবেন।

এগুলো হলো : শ্রেণি বা অতি গুরুতর আহত, শ্রেণি বা গুরুতর আহত ও শ্রেণি বা আহত। তিন ক্যাটাগরিতে থাকা ব্যক্তিদের সবাই পরিচয়পত্র পাবেন।

 

কোন শ্রেণিতে কারা, যেসব সুবিধা থাকছে

প্রকাশিত গেজেটে শ্রেণিতে অতি গুরুতর আহত ৪৯৩ জন জুলাই যোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন। সরকারের প্রেস উইং জানিয়েছে, যাঁরা চিকিৎসার পরও শারীরিক অসামর্থ্যের কারণে অন্যের সহায়তা ছাড়া জীবনযাপনে অক্ষম তাঁরা এই শ্রেণিতে রয়েছেন। তাঁদের সবাইকে এককালীন পাঁচ লাখ টাকা ও প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে।

বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধা এবং উপযুক্ত মেডিক্যাল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাবেন তাঁরা। কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা পাবেন।

অন্যদিকে শ্রেণিতে তালিকাভুক্ত হয়েছেন গুরুতর আহত ৯০৮ জন। পর্যাপ্ত চিকিৎসার পরও শারীরিক অসামর্থ্যের কারণে যেসব যোদ্ধার জীবন যাপন করতে অন্য ব্যক্তির আংশিক সহায়তা প্রয়োজন তাঁরা এই শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। গুরুতর আহতরা এককালীন তিন লাখ টাকা ও প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। এ ছাড়া কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি-আধাসরকারি কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন তাঁরা।

সরকারের প্রেস উইং জানিয়েছে, শ্রেণিতে আরো ১০ হাজার ৬৪৮ জন আহত হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, যাঁরা চিকিৎসার পর বর্তমানে সুস্থ। তবে শ্রেণির তালিকাটি এখনো গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়নি। এই শ্রেণিতে আহতরা এককালীন এক লাখ টাকা এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। এ ছাড়া পুনর্বাসন সুবিধাও থাকছে।

মন্তব্য
কক্সবাজারে সেনাপ্রধান

মেরিন ড্রাইভ রেসে পুরস্কার বিতরণ এরিয়া পরিদর্শন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মেরিন ড্রাইভ রেসে পুরস্কার বিতরণ এরিয়া পরিদর্শন
ওয়াকার-উজ-জামান

কক্সবাজারের নৈসর্গিক সৌন্দর্য বিশ্বব্যাপী উপস্থাপন এবং সর্বস্তরে সুস্থতার চেতনা জাগ্রত করার লক্ষ্যে রাইড ফর গ্লোরি এই বার্তাকে ধারণ করে প্রথমবারের মতো  সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং জেলা প্রশাসন, কক্সবাজারের উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার মেরিন ড্রাইভ রেস-২০২৫ (সাইক্লিং প্রতিযোগিতা) আয়োজন করা হয়। এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ছয়টি ক্যাটাগরিতে ২৬ জন নারী, ৩৭৪ জন পুরুষসহ মোট ৪০০ জন দেশি-বিদেশি সাইক্লিস্ট অংশ নেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।

আইএসপিআর জানায়, প্রতিযোগিতা শেষে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।

এ প্রতিযোগিতায় প্রফেশনাল (১৩ থেকে ৪৪ বছর বয়সী) ১১০ কিলোমিটার গ্রুপে নারী ও পুরুষদের মধ্যে সেরা বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন যথাক্রমে করপোরাল ফাতেমা খাতুন (বাংলাদেশ সেনাবাহিনী) ও মিজানুর রহমান। অ্যামেচার (১৩ থেকে ৪৪ বছর বয়সী) ৫৫ কিলোমিটার গ্রুপে নারী ও পুরুষদের মধ্যে সেরা বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন যথাক্রমে লরা তুরিনি (ব্রাজিল) ও সৈয়দ মুবিন। এ ছাড়া নারী-পুরুষ উভয় ক্যাটাগরির (১৩ থেকে ৪৪ বছর বয়সী) প্রথম ১০ জনকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সাইক্লিং ফেডারেশনের অভিজ্ঞ বিচারকরা এই প্রতিযোগিতা আয়োজনে সার্বিক সহায়তা করেন।

মেরিন ড্রাইভ রেস-২০২৫ পর্যটন শহর হিসেবে কক্সবাজারের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি সর্বসাধারণের মনঃদৈহিক সুস্থতা বজায় রাখতে যথেষ্ট উৎসাহ ও সচেতনতা সৃষ্টি করেছে।

কক্সবাজার এরিয়া পরিদর্শনকালে গত বুধবার সেনাবাহিনী প্রধান ট্রাস্ট ব্যাংক কর্তৃক আয়োজিত করপোরেট নাইট-২০২৫ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।

 

মন্তব্য

বইমেলায় বইয়ের সংখ্যা ও বিক্রি কমেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বইমেলায় বইয়ের সংখ্যা ও বিক্রি কমেছে

শেষ হয়েছে লেখক-প্রকাশকের মহোৎসব অমর একুশে বইমেলা ২০২৫। এবারের মেলায় বই প্রকাশের সংখ্যা এবং বিক্রি দুটোই কমেছে। মেলা নিয়ে লেখক-প্রকাশকের অসন্তোষের মধ্যেই গতকাল শুক্রবার পর্দা নেমেছে বইমেলার।

গত বছরের তুলনায় এবার অমর একুশে বইমেলায় প্রায় সাড়ে চার শ বই কম প্রকাশিত হয়েছে।

গতকাল মেলার শেষ দিনে নতুন বই এসেছে ৩৩৫টি। এ নিয়ে ২০২৫ সালের বইমেলায় আসা নতুন বইয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ২৯৯টি। ২০২৪ সালে নতুন বই প্রকাশের সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৭৫১টি। এর আগের বছর বই প্রকাশিত হয়েছিল তিন হাজার ৭৩০টি।
প্রতিবছরই সাধারণত বই প্রকাশের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বিক্রিও বাড়ে। এবার গত বছরের তুলনায় ৪৫২টি বই কম প্রকাশিত হয়েছে।

গত বছর বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, ২০২৪ সালের বইমেলায় ৬০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের বই বিক্রি হয়েছে।

এর আগের বছর ২০২৩ সালে বিক্রি ছিল প্রায় ৪৭ কোটি টাকা। এবার বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে ২০২৫ সালের বইমেলায় মোট কত টাকার বিক্রি হয়েছে তা জানানো হয়নি। তবে এবার শুধু বাংলা একাডেমি তাদের স্টল ও প্যাভিলিয়ন থেকে বিক্রি করেছে ৬১ লাখ ৬৫ হাজার ৫৯৩ টাকার বই। ২০২৪ সালে মেলায় এক কোটি ৩৬ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছিল বাংলা একাডেমি। এর আগের বছর ২০২৩ সালে তা ছিল এক কোটি ৩৩ লাখ টাকার বই।

বইমেলার মোট বিক্রির তথ্য না জানানোর কারণ জানতে চাইলে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ড. সরকার আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা প্রকাশকদের জরিপের কাগজ দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা ফেরত আসেনি। এখন নিশ্চিত না হয়ে তো পরিমাণ বলা উচিত নয়।

প্রায় সব প্রকাশক এবার বিক্রির পরিমাণ কমেছে বলে মন্তব্য করেছেন। হাওলাদার প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মাকসুদ হাওলাদার গণমাধ্যমকে জানান, শেষ দিন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত বেচাকেনার আশায় ছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ দিনেও হতাশ হতে হয়েছে। স্টল নির্মাণ, ভাড়া, স্টাফদের খরচ সব মিলে যে বেচাকেনা হয়েছে, তাতে তাঁর মন ভরেনি। তিনি বলেন, অথচ গত বছর ১৭ লাখ টাকা বিক্রি করেছি। এবার ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র পাঁচ লাখ টাকার বই বিক্রি হলো।

গত বছর অধিবর্ষ (লিপ ইয়ার) হওয়ায় ফেব্রুয়ারি মাস ছিল ২৯ দিনের। গতবার মাসের শেষ দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। এ কারণে শুরুর দিকে প্রস্তুতির ঘাটতির কথা বলে প্রকাশকরা পরের দুটি ছুটির দিন মেলা বাড়ানোর আবেদন করেছিলেন। কর্তৃপক্ষ তা মেনে নেয়। এ কারণে গতবার মেলা হয় ৩১ দিন। গতবারের তুলনায় এবার মেলা তিন দিন কম হয়েছে।

এবারের বইমেলায় ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে এক হাজার ৮৪ ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৪২টি, আর ইউনিট ছিল ৯৪৬টি। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৬০৯টি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এবার মোট প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ছিল ৩৭টি, যার মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল ৩৬টি। এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর করা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায়। সেখানে ১৩০টি লিটল ম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত অনেক লিটল ম্যাগ স্টল খোলেনি। এ ছাড়া শিশু চত্বরে ৭৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১২০ ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয় এবার। গত বছর শিশু চত্বরে ৬৮টি প্রতিষ্ঠানকে ১০৯ ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ