<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনে চালকের আসনে (চেয়ার) ফিরে এসেছে বিসিএস ১৯৮২ সালের নিয়মিত ব্যাচ। এর মধ্যে প্রশাসনের শীর্ষ পদ মন্ত্রিপরিষদসচিব ও মুখ্য সচিব পদে নিয়োগ পেয়েছেন এই ব্যাচের কর্মকর্তা ড. শেখ আবদুর রশিদ ও মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে নিয়োগ পেয়েছেন এই ব্যাচের আরো কয়েকজন কর্মকর্তা। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রশাসনের বদলি-পদায়ন ও পদোন্নতির সিদ্ধান্ত দেন প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। তাঁরাই এখন সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কোন দপ্তরে কোন কর্মকর্তা বসবেন, কাকে সচিব বানানো হবে এবং কোন দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হবে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শেখ হাসিনার সরকারের টানা ১৬ বছর শাসনামলের বড় একটি সময় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণও ছিল এই ব্যাচের কর্মকর্তাদের হাতে। এই ব্যাচ থেকেই মন্ত্রিপরিষদসচিব হয়েছেন মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম (বিশেষ)। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হয়েছেন আবুল কালাম আজাদ, ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী ও নজিবুর রহমান। তাঁরাই তখন নিয়ন্ত্রণ করতেন প্রশাসন। এই ব্যাচের বিভিন্ন ক্যাডার থেকে অন্তত ৫৫ জন কর্মকর্তা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব হয়েছেন, যা বিসিএসের অন্য ব্যাচগুলোর বেলায় ঘটেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে সংযুক্ত থাকা উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দেখভাল করছেন। শেখ হাসিনার সময় চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া অন্তত ১০০ কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল হয়েছে। পাশাপাশি অবসরে থাকা হাসিনার সরকারের আমলে বঞ্চিত আট কর্মকর্তাকে সচিব পদে চুক্তিতে নিয়োগের পর তাঁদের সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাঁদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদসচিব পদে নিয়োগ পেয়েছেন বিসিএস ১৯৮২ নিয়মিত ব্যাচের মেধাতালিকায় প্রথম হওয়া ড. শেখ আবদুর রশিদ, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. এম এ মোমেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনি। মূলত তাঁরাই এখন প্রশাসন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে জানা গেছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব পদে নিয়োগ পেয়েছেন বিসিএস ১৯৮৪ ব্যাচের সিদ্দিক যোবায়ের এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হয়েছেন ১৯৮৫ ব্যাচের এ এস এম সালেহ আহমেদ। এখন পর্যন্ত এর বাইরে অন্য ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তাকে সচিব পদে নিয়োগের খবর পাওয়া যায়নি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে শুধু একটি ব্যাচের বঞ্চিতদের মূল্যায়ন ভালো চোখে দেখছেন না বিসিএস ১৯৮২ (বিশেষ) ব্যাচ, ১৯৮৪ ব্যাচ, ১৯৮৫ ব্যাচ, ১৯৮৬ ব্যাচ, নবম, দশম, একাদশ ও ত্রয়োদশ ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অনেকে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাঁদের দাবি, বিসিএস ১৯৮২ নিয়মিত ব্যাচের কর্মকর্তারা অন্তত এক যুগ আগেই অবসরে গেছেন। অথচ বর্তমানে সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন বিসিএস ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে এই ব্যাচের পাঁচ-ছয়জন সচিবও হয়েছেন। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে তাঁদের ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তাদেরও চূক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া উচিত।  </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রশাসনবিষয়ক বহু গ্রন্থ প্রণেতা ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিগত সরকারের কিছু ব্যক্তি প্রশাসন সাজিয়েছিলেন তাঁদের ব্যক্তিগত পছন্দ ও বিদ্বেষকে প্রাধান্য দিয়ে। এতে প্রশাসনের অনেক যোগ্য, দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তা বঞ্চিত হয়েছিলেন। এ সরকারও যদি একই পথে হাঁটে, তাহলে আগের মতো অবস্থার সৃষ্টি হবে। সে ক্ষেত্রে এখন যাঁরা সরকারের প্রশাসনবিষয়ক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাঁদের উচিত ব্যাচভিত্তিক বা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ বাদ দিয়ে মেধাবী, দক্ষ, যোগ্য ও কর্মক্ষম সব ব্যাচের বঞ্চিতদের মূল্যায়ন করা। যিনি যে পদের উপযুক্ত, তাঁকে সেখানে নিয়োগ দেওয়া। কে কার অনুগত, তা দেখা উচিত হবে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানা গেছে, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অন্তত আটটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বর্তমানে সচিব নেই। এসব দপ্তরে দায়িত্ব পাওয়া অতিরিক্ত সচিবরা তাঁদের রুটিন কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। তাঁরা কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি অত্যন্ত ধীর। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পেরও প্রায় একই দশা। এমন পরিস্থিতিতে সব ব্যাচের বঞ্চিত যোগ্য কর্মকর্তাদের উপযুক্ত পদে পদায়নের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অনেকে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিসিএস ১৯৮৪ ব্যাচের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব আবু মোহাম্মদ ইউসুফ কালের কণ্ঠকে জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি চেয়ে আবেদন করেছেন তিনি। তাঁকে বিএনপি-জামায়াত তকমা দিয়ে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সচিব বানানো হয়নি। ব্যাচের মেধাতালিকায় তাঁর পরের জন সুবীর কিশোর চৌধুরীকেও সচিব বানানো হয়েছিল। তাঁর ব্যাচসহ প্রশাসনে তাঁর জুনিয়র অন্তত দেড় শ কর্মকর্তাকে সচিব বানানো হয়েছে। সুতরাং অন্যান্য ব্যাচেও যাঁরা যোগ্যতা থাকার পরও বঞ্চিত হয়েছেন তাঁদের এখন মূল্যায়ন করা উচিত।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একই রকম ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাসিনার সরকারের আমলে বঞ্চিত বিসিএস ১৯৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. সলিমুল্লাহ। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুধু নিয়মিত নামাজ পড়ি বলে বিএনপি-জামায়াত তকমা দিয়ে আমাকে পাঁচ-ছয়বার পদোন্নতিবঞ্চিত করা হয়েছে। যোগ্যতা থাকার পরও আমাকে সচিব বানানো হয়নি। যুগ্ম সচিব হিসেবে ২০২০ সালের ১৭ মে অবসরে যেতে হয়েছে। অথচ আমার ব্যাচের হেলালুদ্দীন আহম্মদ, ফয়েজ আহমদ, আনিছুর রহমান, সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সত্যব্রত সাহা, আক্তার হোসেন, শহীদুজ্জামান, আকরাম আল হোসেনসহ অনেকে সচিব হয়েছেন। এমনকি আমার সিরিয়ালের বহু পরের কর্মকর্তা কবীর বিন আনোয়ার ক্যাবিনেট সচিব হয়েছেন। সুতরাং সব ব্যাচেই বঞ্চিত কর্মকর্তা আছেন। তাঁদেরও মূল্যায়ন করা দরকার।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিসিএস ১৯৮৬ ব্যাচের কর্মকর্তা আরিফুর রহমান অপু বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যোগ্যতা থাকার পরও সচিব হতে পারিনি। খাদ্য অধিদপ্তরের ডিজি থাকার সময় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের অন্যায় আবদারে রাজি হইনি বলে আমাকে বদলি করে তাঁর আস্থাভাজন কর্মকর্তাকে ডিজি করে আনেন। আমি যাতে সচিব হতে না পারি, সে জন্য সবই করেছেন ওই মন্ত্রী। অথচ যে কর্মকর্তা মন্ত্রীর কথামতো অনিয়ম-দুর্নীতিতে সায় দিয়েছেন, তিনি সচিব হয়েছেন, চুক্তি পেয়েছেন। চুক্তির পর পিএসসির সদস্যও হয়েছেন। এখন সময় এসেছে বঞ্চিতদের মূল্যায়ন করার। সব ব্যাচের বঞ্চিতদের উপযুক্ত পদে নিয়োগ দিয়ে মূল্যায়ন করা উচিত।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>