<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জুলাই বিপ্লবের সময় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের হত্যা করেছেন নিরাপত্তা বাহিনী ও রাজনৈতিক দলের সদস্যরা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ফোরটিফাই রাইটস গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে। গত জুলাই ও আগস্টে বাংলাদেশে প্রবল ছাত্র আন্দোলনের সময় শহীদ ও আহতদের বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে ফোরটিফাই রাইটস। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><img alt="আন্দোলনকারীদের হত্যা করেছে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক কর্মীরা" height="515" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11.November/13-11-2024/990000.jpg" style="float:left" width="348" />স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত জুলাই ও আগস্টে আন্দোলনে এক হাজারের বেশি হত্যার তথ্য জানিয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বিগত সরকারের দমনপীড়নের শিকার ৪৪ ব্যক্তি, প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে সাক্ষাৎকার নিয়েছে ফোরটিফাই রাইটস। সংস্থাটি পুলিশ, বিজিবির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলায় শহীদ ও সহিংসতার তথ্য লিপিবদ্ধ করেছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ফোরটিফাই রাইটস বলেছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে গত জুলাই ও আগস্টে আন্দোলনকারীদের ওপর তৎকালীন সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকারি দলগুলোর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের জবাবদিহি নিশ্চিত করা উচিত। শহীদদের পরিবার এবং সহিংসতায় প্রাণে রক্ষা পাওয়া ব্যক্তিদের সহায়তা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ফোরটিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সহিংসতার নকশাকারদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কুইনলি বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নতুন অন্তর্বর্তী সরকার সহিংসতা থেকে বেঁচে যাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারগুলোকে সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতনসহ অতীতের অপরাধগুলোর জবাবদিহি ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ফোরটিফাই রাইটসকে জুলাই-আগস্টের সহিংসতার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে প্রায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। দুজন প্রত্যক্ষদর্শী গত ২১ জুলাই ঢাকার ডেমরার কোনাপাড়ার সাইনবোর্ড এলাকায় একদল পুলিশ সদস্য কিভাবে গুলি চালিয়েছে এবং ২২ বছর বয়সী তথ্য-প্রযুক্তির শিক্ষার্থী সাজেদুর রহমান ওমরকে হত্যা করেছে, তার বর্ণনা ফোরটিফাই রাইটসকে দিয়েছেন। সাজেদুর রহমান ওমরের বন্ধু ইন্টারনেটের দোকানের কর্মী। তিনি বলেন, সেদিন দুপুরের দিকে তাঁরা আন্দোলন করছিলেন। আন্দোলনকারীরা সংখ্যায় ছিলেন মাত্র ৬০ জন। তাঁদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। অন্যরাও তরুণ।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সাজেদুর রহমান ওমরের বন্ধু বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে নির্মীয়মাণ ১০ তলা ভবনে পুলিশ ছিল। আমি অবাক হয়েছিলাম। এত দূর থেকেও তারা গুলি করতে পারে! আর আমরা সেদিন ভাবিওনি যে আমাদের লক্ষ্য করে তারা গুলি করবে। তাই আমরা সামনে এগিয়ে গিয়েছিলাম। এরপরই তারা গুলি করতে থাকে। আহতদের বাঁচানোর জন্য আমরা কোথাও যেতে পারছিলাম না।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সাজেদুর রহমান ওমরের বন্ধু আরো বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমি কেবল আমার বন্ধুকে গুলিবিদ্ধ হতে ও পড়ে যেতে দেখেছি। প্রায় টানা গুলি চলছিল। সে (সাজেদুর রহমান ওমর) ঠিক আমার পাশে ছিল। আমি একটি ছোট দেয়ালের পেছনে লুকিয়েছিলাম। আমি দেখেছি, তার মাথায় গুলি লেগেছে এবং সে পড়ে গেছে। টানা গুলি চলতে থাকায় আমি তাকে বাঁচাতে পারিনি। এরপর আরেকটা ছেলে এসে আমাকে টেনে অন্যত্র নিয়ে যায়।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২০ বছর বয়সী ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, পুলিশ সেদিন সেখানে চারজনকে গুলি করেছিল। কেবল সাজেদুর রহমান ওমর নিহত হন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সাজেদুর রহমান ওমরের আরেক বন্ধু বলেছেন, সাজেদুর রহমান ওমর গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়েছিলেন। সে সময়ও চার থেকে পাঁচ রাউন্ড গুলি চালানো হয়। এতে আরো দুজন গুলিবিদ্ধ হন। ওমরকে রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, দুটি সরকারি হেলিকপ্টার থেকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। ওই প্রত্যক্ষদর্শী আরো বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গুলির আগে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় ছিলেন। কারো হাতে পতাকা ও বিভিন্ন চিহ্ন ছিল। কেউই সহিংস ছিলেন না। কেউ পাথর ছুড়ছিলেন না। এর পরও কেন গুলি করা হলো, তা আমি জানি না।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ফোরটিফাই রাইটস বলেছে, শুধু আন্দোলনকারীরাই নন, পথের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিরাও হতাহত হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৪১ বছর বয়সী এক নারী বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে ধানমণ্ডিতে তাঁর ১৬ বছর বয়সী ছেলের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সেদিন ধানমণ্ডির ৩ নম্বর সড়কে অনেক টিয়ার গ্যাস ছোড়া হয়েছিল। আমি হেলিকপ্টার থেকেও গুলি ছুড়তে দেখেছি। হেলিকপ্টার থেকে তাজা গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছোড়া হচ্ছিল। সেখানে নারী আন্দোলনকারীরা তাঁদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছিলেন।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৪১ বছর বয়সী ওই নারী জানান, একজন নারী আন্দোলনকারী আহত হন। সে সময় তাঁর ছেলে ওই নারীকে উদ্ধারে এগিয়ে যায়। আহত নারী আন্দোনকারীকে পুলিশ বক্সের কাছে আনার পর তিনি তাঁর ছেলেকে অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে দেখছিলেন। এরপর তার ছেলে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। তিনি গুলির শব্দ শুনতে পান। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সন্তানহারা ওই নারী বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মাত্র ৪০ থেকে ৫০ মিটার দূর ছিল। আমি তাকে (তার ছেলে) দেখতে পাচ্ছিলাম। আমি দেখছিলাম, একজন আন্দোলনকারী তার (ছেলের) মাথায় টি-শার্ট বেঁধে দিচ্ছে। আর মাথা গড়িয়ে রক্ত পড়ছে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ওই নারী দৌড়ে ছেলের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন। আর পুলিশ তখনো গুলি করছিল। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মোহাম্মদ শুভ নামের এক শহীদের ছবি যাচাই করে ফোরটিফাই রাইটস বলেছে, মরদেহে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল। আর তার মেডিক্যাল তথ্যও মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ফোরটিফাই রাইটস এ ধরনের আরো বেশ কিছু হত্যাকাণ্ডের তথ্য লিপিবদ্ধ করেছে। জুলাই বিপ্লবে নিহতদের এক স্বজন ফোরটিফাই রাইটসকে বলেছেন, গুলির আদেশ যিনিই দিয়ে থাকুক না কেন, তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>