শিক্ষা প্রশাসনে অস্থিরতা

শরীফুল আলম সুমন
শরীফুল আলম সুমন
শেয়ার
শিক্ষা প্রশাসনে অস্থিরতা

বদলি-পদায়নসহ নানা ক্ষেত্রে স্থবিরতায় শিক্ষা প্রশাসনে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে। ফলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় গতি আসছে না। দেড় শতাধিক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকায় মাঠ পর্যায়ে শিক্ষার তদারকি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারকে কাঠামোর বাইরে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন। সংবাদ সম্মেলনে তারা ১৫ দফা দাবি জানিয়ে বলেছে, এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট অগ্রগতি না হলে ৩১ ডিসেম্বর তারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে। এতে পুরো শিক্ষা ক্যাডারেই অস্থিরতা আরো বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।

বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার।

তাদের কর্মকর্তার সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। এই কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই সরকারি কলেজে কর্মরত। তাঁরাই আবার শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তরেও পদায়ন পেয়ে থাকেন।

সূত্র জানায়, সারা দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা স্তরের সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে শিক্ষা ভবন হিসেবে পরিচিত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর।

তাদের অধীনে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা পাঁচ লাখের বেশি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ পদত্যাগ করেন। এরপর মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীমকে মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। সম্প্রতি তাঁকে চলতি দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। তিনি গত সরকারের আমলে অন্যতম সুবিধাভোগী কর্মকর্তা হওয়ায় তাঁর আদেশ-নির্দেশ মানতে চান না অন্য কর্মকর্তারা।
তবে তিনিও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অবসরে যাবেন।

মাউশির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় তিন মাস মহাপরিচালকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়মিত কেউ না থাকায় থমকে ছিল বদলি-পদায়ন। ফলে সরকারি অনেক স্কুলেই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। এ ছাড়া দেড় শতাধিক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পদও শূন্য। যদিও সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা দায়িত্বে আছেন। কিন্তু চলতি দায়িত্ব বা পদোন্নতি না হওয়ায় মাঠ পর্যায়ের কাজকর্মে গতি আসছে না। স্কুল-কলেজের মনিটরিং ব্যবস্থা অনেকটাই অকার্যকর। মাউশি অধিদপ্তরে এখনো অনেক আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা বহাল তবিয়তে আছেন। এ নিয়েও শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মাউশি মহাপরিচালকের পদটি গ্রেড-১ (সচিব) পদমর্যাদার। এটি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ। এই পদে নিয়োগে সরকারপ্রধানের অনুমোদন প্রয়োজন। মাউশি মহাপরিচালক পদে নিয়োগ পেতে আগ্রহীদের দৌড়ঝাঁপ তিন মাস ধরেই চলছে। এ পদের জন্য এখন চলছে ব্যাপক লবিং। রাজনৈতিক আনুকূল্য পেতেও চলছে বিভিন্ন পর্যায়ে দেনদরবার। কেউ কেউ ছাত্রজীবনে ছাত্রদল সমর্থক রাজনীতির অভিজ্ঞতার প্রমাণ ও পারিবারিক সংশ্লিষ্টতাও তুলে ধরছেন সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে।

সূত্র জানায়, মাউশির মহাপরিচালক পদে নিয়োগ পেতে আলোচনায় আছেন মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের ইসলামী শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুস সবুর, মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. খান মইনুদ্দীন আল মাহমুদ সোহেল, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. তৌহিদ আহম্মেদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রুহুল কাদীর প্রমুখ। তাঁরা সবাই ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে এই তালিকার একজনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তিনি অন্য তিনজনের চেয়ে জুনিয়র। আবার একজন সিনিয়রযিনি জোরালোভাবে তদবির করছেন, তাঁর বিরুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গবেষণা প্রবন্ধ লেখার অভিযোগ রয়েছে। ফলে এই তালিকার বাইরে  থেকে নতুন কেউ ডিজি হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা চাই শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে জ্যেষ্ঠ ও যোগ্য কর্মকর্তারা আসুক। এ ছাড়া বদলি-পদায়নের ক্ষেত্রে নীতিমালার বাস্তবায়নও আমরা চাই। কেউ রাজধানীতে একই পদে দীর্ঘদিন থাকবেন, আবার কেউ মফস্বলে দিনের পর দিন পড়ে থাকবেন, তা কাম্য নয়। এত দিন মন্ত্রণালয় হয়তো তা চায়নি। তবে এখন যেন নীতিমালার বাস্তবায়ন হয়, সেটা আমাদের চাওয়া। এ জন্য আমরা চাই, শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা থাকুক।

শিক্ষা প্রশাসনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। তারা সারা বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করে থাকে। এই দপ্তরের পরিচালক হয়ে এসেছিলেন অধ্যাপক কাজী মো. আবু কাইয়ুম শিশির। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সম্প্রতি তাঁকে বদলি করা হয়েছে। এই দপ্তরের যুগ্ম পরিচালক মো. আবুয়াল কায়সারের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তাঁর একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তিনি একজন অধ্যাপককে হুমকি দিচ্ছেন। এ ছাড়া এই দপ্তরের পরিদর্শকদের বেশির ভাগই টাকা আয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি একজন সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক কক্সবাজারের একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছে ঘুষ চেয়ে মারধরেরও শিকার হন।

শিক্ষা ভবনেই অবস্থিত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। যারা সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে থাকে। গত ৫ আগস্টের পর ইইডির প্রধান প্রকৌশলী পদত্যাগ করেন। এরপর প্রধান প্রকৌশলীর রুটিন দায়িত্ব পান বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের অন্যতম নেতা মো. রায়হান বাদশা। তবে তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় গত ২১ নভেম্বর তাঁকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় মো. জালাল উদ্দিন চৌধুরীকে। কিন্তু নিয়মিত প্রধান প্রকৌশলী না থাকায় বদলি-পদায়নসহ বড় ধরনের ব্যয়ের কাজ থমকে আছে।

পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব ১১ শিক্ষা বোর্ডের। আর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান সব বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু এই বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারও এ মাসেই অবসরে যাচ্ছেন। চেয়ারম্যান হতে একাধিক অধ্যাপক জোরালোভাবে তদবির করছেন। শিক্ষা প্রশাসনের আরো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পদায়ন চান অনেকেই। যা নিয়েও অস্থিরতা বিরাজ করছে।

শিক্ষার একাধিক প্রকল্প পরিচালক জানান, তাঁদের প্রকল্পের সব ধরনের কেনাকাটা আটকে গেছে। এতে প্রকল্পের কাছে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারলে আবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে হবে। এতে বড় ধরনের ঝামেলায় পড়তে হবে। এ ছাড়া অনেক স্কুল-কলেজে দীর্ঘদিন নির্মাণকাজ চলায় পড়াশোনার পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। 

অন্যদিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) নতুন কর্মকর্তারা দায়িত্ব নিলেও বই ছাপা নিয়ে মহাসংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চের আগে শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই যাবে না। এতে পদায়নকৃত কর্মকর্তাদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া এনসিটিবিতে সচিব হিসেবে পদায়ন পেয়েছেন শাহ মুহাম্মদ ফিরোজ আল ফেরদৌস। তিনি গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ আমলের অন্যতম সুবিধাভোগী কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন ধরেই এনসিটিবিতে রয়েছেন। অথচ আওয়ামী সরকার পতনের পর তাঁকে আরো উচ্চ পদে পদায়ন করা হয়েছে। এতে এনসিটিবিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বই ছাপার কাজও ব্যাহত হচ্ছে।

জানা যায়, শিক্ষা প্রশাসনের নানা সমস্যার মধ্যে নতুন অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে জনপ্রশাসন সংক্রান্ত কমিশনের সুপারিশ। শিক্ষা ক্যাডারকে ক্যাডারবহির্ভূত রাখার সুপারিশ করেছে কমিশন, যা নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা। এরই মধ্যে তাঁরা ওই সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করে ১৫ দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবির ব্যাপারে সুস্পষ্ট অগ্রগতি না এলে আগামী ৩১ ডিসেম্বর তাঁরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেবিসিএস সাধারণ শিক্ষাকে ক্যাডারবহির্ভূত করার পরিকল্পনা ও উদ্যোগ থেকে সরে আসার সুস্পষ্ট ঘোষণা; সকল প্রকার কোটা-বৈষম্য তুলে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে সরকারের উপসচিব পদে যোগদান নিশ্চিত করা; মন্ত্রণালয়সহ ক্যাডার সংশ্লিষ্ট সকল পদে নিজ নিজ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন; শিক্ষা ক্যাডারে ছয় স্তরের পদসোপান প্রতিষ্ঠা; অধ্যাপক পদকে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত ও আনুপাতিক হারে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রেডের পদ সৃষ্টি; অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের প্রাধিকারের ভিত্তিতে গাড়ি প্রদান; ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে শিক্ষা ক্যাডারের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করা।

অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, এরই মধ্যে শিক্ষার অনেক দপ্তর আমাদের ক্যাডারের হাতছাড়া হয়ে গেছে। আমরা ১৫ দফা দাবি জানিয়েছি। সেগুলোর বাস্তবায়ন না হলে ৩১ জানুয়ারি আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ক্রিকেটার সাকিবের সম্পদ জব্দের আদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ক্রিকেটার সাকিবের সম্পদ জব্দের আদেশ
সাকিব আল হাসান

চার কোটি টাকার চেক ডিজ-অনার মামলায় জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালত এ আদেশ দেন। আদালতের পেশকার রিপন মিয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, বাদীপক্ষ সাকিবের সম্পদ জব্দ চেয়ে আবেদন করেন।

শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্মের ম্যানেজিং ডিরেক্টর গাজী শাহাগীর হোসাইন, সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্মের ডিরেক্টর ইমদাদুল হক ও ডিরেক্টর মালাইকা বেগম। তাঁদের মধ্যে মালাইকা বেগম মারা গেছেন। অন্য দুজন জামিনে রয়েছেন।

এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের রিলেশনশিপ অফিসার মো. শাহিবুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলার পর তাঁকে আদালতে হাজিরের জন্য ১৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়। তবে ওই দিন সাকিব ও গাজী শাহাগীর হোসাইন আদালতে হাজির না হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৪ মার্চ দিন ধার্য করেন আদালত।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান হিসেবে সাকিব দায়িত্ব পালন করছেন। কম্পানিটির কার্যক্রম সাতক্ষীরায়। কম্পানিটি ২০১৭ সালে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে এক কোটি এবং টার্ম লোন হিসেবে দেড় কোটি টাকা বনানী শাখার আইএফআইসি ব্যাংক থেকে নেন। পরে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে নেওয়া টাকা সময়মতো পরিশোধ না করায় ব্যাংকটি এই টাকা মেয়াদি লোনে পরিবর্তন করে। টাকা ফেরত চেয়ে কয়েক দফা নোটিশ দেওয়ার পর কম্পানিটি ব্যাংককে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর চার কোটি ১৪ লাখ টাকার দুটি চেক দেয়।

তবে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে যথেষ্ট টাকা না থাকায় চেক বাউন্স করে। পরে ঋণের টাকা ফেরত চেয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের বনানী শাখা নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুুমেন্টস অ্যাক্ট অনুযায়ী দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। তবে নোটিশ পাঠানোর ৩০ দিন পার হলেও তা না পেয়ে আদালতে এসে মামলা করে।

 

 

মন্তব্য

হান্নান মাসুদের সভায় বিএনপির হামলা

    প্রতিবাদে এনসিপির বিক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হান্নান মাসুদের সভায় বিএনপির হামলা
হামলায় আহত আব্দুল হান্নান মাসুদ

নোয়াখালীর হাতিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদের পথসভায় বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছেন। এতে হান্নান মাসুদসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় জাহাজমারা ইউনিয়নের জাহাজমারা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

হামলার প্রতিবাদে গতকাল রাত ১২টায় ঢাকায় তাত্ক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে এনসিপি।

বাংলামোটর থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি শাহবাগ ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড় ঘুরে আবার বাংলামোটরে এসে শেষ হয়।

এনসিপির নেতারা এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও তাদের রাজনৈতিক দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।

হামলার ঘটনার পর হান্নান মাসুদ বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপি নামধারী সন্ত্রাসীরা হাতিয়ায় চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। আমার ঘোষণা ছিল এসব চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।

সেই বিএনপি নামধারী চাঁদাবাজরা আজ আমার পথসভায় হামলা চালিয়েছে। হামলায় ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।

অভিযোগের বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ রাজিব বলেন, হান্নান মাসুদ আওয়ামী লীগের পদধারী পলাতক সন্ত্রাসীদের নিয়ে জাহাজমারা বাজারে মিছিল করছিলেন দেখে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাতে বাধা দেন। শুনেছি এ সময় হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।

মন্তব্য

শহীদ আবু সাঈদের বাবাকে সেনাপ্রধানের আর্থিক সহায়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শহীদ আবু সাঈদের বাবাকে সেনাপ্রধানের আর্থিক সহায়তা
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে রংপুরের আলোচিত শহীদ আবু সাঈদের বাবাকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে। ছবি : আইএসপিআর

গত জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে রংপুরের আলোচিত শহীদ আবু সাঈদের বাবাকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সোমবার (২৪ মার্চ) সেনানিবাসে আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন সেনাপ্রধান।

গত বছরের ১৬  জুলাই রংপুরে আন্দোলন চলাকালে নিরস্ত্র অবস্থায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আবু সাঈদ।

গত ১০ ডিসেম্বর শহীদ আবু সাঈদের বাবা হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে রংপুর থেকে সিএমএইচ ঢাকায় আনা হয় এবং উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।

এর আগে রবিবার জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সেনাবাহিনী প্রধানের আমন্ত্রণে আবু সাঈদের বাবাও উপস্থিত ছিলেন।

 

মন্তব্য

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একাত্তরের বধ্যভূমি সংরক্ষণ প্রকল্প

    সাড়ে ৬ বছরে কাজের অগ্রগতি মাত্র ১৫ শতাংশ ২৮১টির মধ্যে কাজ শেষ ৪৩টির আসছে জুনের মধ্যে শেষ হবে আরো ১২টির কাজ
খায়রুল কবির চৌধুরী
খায়রুল কবির চৌধুরী
শেয়ার
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একাত্তরের বধ্যভূমি সংরক্ষণ প্রকল্প

জুলাই বিপ্লবে ক্ষমতার পালাবদলের পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একাত্তরের বধ্যভূমি সংরক্ষণ প্রকল্প। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক নির্বিচার গণহত্যার সাক্ষী হিসেবে ২৮১টি বধ্যভূমি সংরক্ষণে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর ২০১৮ সালে চালু হওয়া এ প্রকল্পটি জমি অধিগ্রহণসহ নানা কারণে বন্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকার। তবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, ইতিহাস রক্ষার খাতিরেই এই বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য।

মন্ত্রণালয় সূত্র ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শুরু থেকেই ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতাসহ বেশ কিছু সমস্যার কারণে প্রকল্পটি এগিয়েছে শামুকের গতিতে। গত সাড়ে ছয় বছরে মাত্র ৪৩টি বধ্যভূমির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা।

বর্তমানে প্রকল্পটির অধীনে ৯টি বধ্যভূমির কাজ চলমান রয়েছে, আরো তিনটির কাজ শুরু হবে।

অর্থাৎ সব মিলিয়ে ২৮১টির মধ্যে ৫৫টি বধ্যভূমি সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রকল্পটির সমাপ্তি টানা হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, এটি ক্লোজ (বন্ধ) করে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের টার্গেট ছিল (বন্ধের আগে) ৫৭টি বধ্যভূমির কাজ শেষ করা। কিন্তু ৫৫টা করেই বন্ধ করে দেওয়া হবে।

আগামী জুনের মধ্যেই শেষ করা হবে। শুধু রায়েরবাজার বধ্যভূমির কাজ শেষ করতে ডিসেম্বর লেগে যাবে।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম কালের কণ্ঠকে বলেন, যেসব বধ্যভূমি আমরা নিরঙ্কুশ পেয়েছি সেগুলোর কাজ শেষ হবে। আর যেগুলোর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে সেগুলো আমরা বাতিল করেছি। একজন লোক জানে তার জমিতে বধ্যভূমি আছে।

কিন্তু যদি এটা (জমি) দামি জমি হয়, তাহলে তার কাছে এর (বধ্যভূমি) কোনো পবিত্রতা বা ভ্যালু নেই।

তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ আকর এসব বধ্যভূমি আর সংরক্ষণ করা হবে না? এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, মানুষের জায়গা অধিগ্রহণ করে সরকার এটা সংরক্ষণ করবে না। স্বেচ্ছায় যদি কেউ জমি দেয় তাহলে আমরা এটা করব।

২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রায় ৪৪২ কোটি (৪৪২ কোটি ৪০ লাখ ১৩ হাজার) টাকার প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।

এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ বেড়েছে দুই দফায়। কাজের তেমন অগ্রগতি না থাকায় ২০২১ সালে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। ২০২৩ সালের মধ্যেও কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় আবারও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়।

তবে দুই দফা মেয়াদ বাড়ালেও প্রকল্পটির অগ্রগতির চিত্র হতাশাজনক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৩টি বধ্যভূমির কাজ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ অগ্রগতি মাত্র ১৫.৩ শতাংশ। এ ছাড়া আরো ১২টি বধ্যভূমির কাজ শেষ করা হবে।

মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেশির ভাগ বধ্যভূমির জায়গাই ব্যক্তি মালিকানাধীন। বধ্যভূমির জন্য ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব পুরোটাই জেলা প্রশাসনের ওপর। মন্ত্রণালয় থেকে জায়গার জন্য চাহিদা দেওয়া হয়। এরপর দাগ ও বিভিন্ন নথি দেখে জায়গা চূড়ান্ত করে দিলে অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই জায়গা চূড়ান্ত হচ্ছে না, অধিগ্রহণও হচ্ছে না।

ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যার পর লোকবল সংকটকে সবচেয়ে বড় কারণ বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয় সূত্র। নেই কোনো স্থায়ী পরিচালক। দীর্ঘদিন ধরেই অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রকল্প পরিচালকের কাজ করছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাহাঙ্গীর আলম। মন্ত্রণালয়ের রুটিন কাজের বাইরে তাঁকে এই দায়িত্বটি পালন করতে হয়।

জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি দেখার জন্য মাঠ পর্যায়ে কোনো লোক নেই। ফলে এই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার কিছু কাজ কখনো কখনো অন রিকোয়েস্টে  প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণপূর্ত অধিদপ্তরকে দিয়ে করানো হয় বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জমিই তো পাওয়া যায় না। জায়গার সমস্যা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যার মধ্যেই আমরা বন্ধ করে দিলাম। কারণ এভাবে এগোনো যায় না।

গণহত্যার বেদনাবিধুর স্মারক বধ্যভূমি, রক্ষা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চালানো নৃশংস গণহত্যার বিভিন্ন স্মৃতি ও ক্ষতচিহ্ন আজও অনেকটা অনাদরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে দেশজুড়ে। ২০১৭ সাল থেকে খুলনায় অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর  ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর জেলাভিত্তিক গণহত্যার জরিপকাজ পরিচালনা করছে। জরিপে দেখা গেছে, কেবল ৪২টি জেলায়ই ২১ হাজার ৮৫৬টি গণহত্যা, গণকবর, বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্রের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে ১৮ হাজার ৪৮১টি। বধ্যভূমি শনাক্ত হয়েছে  ৮৮৮টি।  এ ছাড়া গণকবর এক হাজার ৩১৩টি ও নির্যাতনকেন্দ্র শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ১৭৪টি। ৬৪ জেলার জরিপ শেষে গণহত্যা, গণকবর, বধ্যভূমি ও নির্যাতনকেন্দ্রের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে ধারণা করছেন জাদুঘরের গবেষকরা।

এমন বাস্তবতায় সরকারের বধ্যভূমি সংরক্ষণের চিন্তা থেকে সরে আসা এবং এগুলোকে অবহেলা করা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করা অবশ্যই কর্তব্য। আমাদের তো ইতিহাসকে রক্ষা করতে হবে এবং চর্চা করতে হবে। এর জন্য ইতিহাসের স্মৃতিগুলো রাষ্ট্রের সংরক্ষণ করতে হবে। না হলে মানুষ তো সব ভুলেই যাবে। শহীদদের আত্মত্যাগকে ভুললে চলবে না।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের নির্বিচার গণহত্যা, নৃশংসতা ও বেদনার সাক্ষ্য বহন করে। এর স্মারক হচ্ছে বধ্যভূমিগুলো। ফলে পরিকল্পিতভাবে বধ্যভূমি সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজন। আমি আশা করছি, বধ্যভূমি সংরক্ষণের বিষয়টি সরকার পুনরায় বিবেচনা করবে।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ