বিশ্ব অর্থনীতির রিসেট বাটন চাপতেই ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে বসতে যাচ্ছেন, এমনটা কানাঘুষা চলছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, বিশ্বজুড়ে তাৎপর্যময় অর্থনৈতিক মিত্র গড়াকে ট্রাম্প তাঁর মিশন বানিয়ে নিতে পারেন। এতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নানা মেরুকরণ সৃষ্টি হতে পারে।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের রি-এন্ট্রিতে বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্যে বড় মাপের পরিবর্তন হতে পারে ২০২৫ সালের মধ্যেই।
নিজস্ব ব্লকের মধ্যে অর্থনীতিতে ঘটতে পারে উল্লেখ করার মতো উন্নয়ন, যা তিন বছরের মধেই দৃশ্যমান হয়ে উঠবে। কয়েকটি দেশে এরই মধ্যে নানা খাতে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। এসব দেশ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের অভ্যস্ত করার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের টার্মের মতো এবারও আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি কূটনৈতিক মারপ্যাঁচের মাধ্যমেই ট্রাম্প প্রশাসন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চাইবে।
এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য আইন ও অর্থনৈতিক মিত্রদেশগুলোর মধ্যে আর্থিক প্রণোদনা পুনর্বণ্টন। পাশাপাশি উত্তেজনা সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমেও ট্রাম্প আর্থিক লাভ নিশ্চিত করতে চাইবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণাধীন গ্রিনল্যান্ড দ্বীপকে ট্রাম্প দখল করার হুমকি দিয়ে ফেলেছেন। ডেনমার্ক সংরক্ষণবাদী পদক্ষেপের মাধ্যমে পাল্টা জবাব দিয়েছে। কিন্তু গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ট্রাম্পের পরবর্তী চাল কী হবে অথবা ডেনমার্কের জন্য ট্রাম্প তাঁর আস্তিনে কোনো ধরনের অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছেন, তা কেউ জানে না।
অথবা কানাডার প্রসঙ্গটিও আলোচিত হচ্ছে। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে বসার আগেই উচ্চ শুল্কহার থেকে বাঁচার কৌশল হিসেবে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসব উসকানিমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন আর্থিক লাভ নিশ্চিত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হারানো সিংহাসনটি পুনরুদ্ধার করতে চাইছেন।
এসব সম্ভাব্য বৈশ্বিক পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়ে যাবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।
কারণ তিন বছর ধরে ইইউভুক্ত দেশগুলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সবচেয়ে বেশি আর্থিক সমস্যায় ভুগছে। এই যুদ্ধের কারণে তেল ও গ্যাস আমদানিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ব্যয় যেমন বেড়েছে, তেমনি ইউক্রেনকেও আর্থিক সহায়তা দিয়ে যেতে হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোর কারণে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাণিজ্য ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে। এমনকি ইউরোপের হাজার হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে ন্যাটোর সামরিক খাতে ব্যয় বাড়াতে ট্রাম্প তার ইউরোপিয়ান মিত্রদের ওপর চাপ বাড়িয়েছেন।
এসব কারণে ইউরোপিয়ান অর্থনীতি চিত্রটি আগামী কয়েক বছরের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে। ফ্রান্সের অর্থ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, তাদের বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। জাতীয় ঋণের পরিমাণ জিডিপি ১১২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অর্থনীতির এই করুণ অবস্থা এটাই সংকেত দিচ্ছে, ফ্রান্সের অবস্থা বেশ নড়বড়ে। অন্যদিকে জার্মানির জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার ১ শতাংশেরও নিচে নেমে গেছে। দেশটির জাতীয় ব্যাংকের গভর্নর দেশের আর্থিক খাত সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ বড় মাপের কোনো আশার বাণী শোনাচ্ছে না। রাজনৈতিক সংঘাত বাড়লে আর্থিক অবস্থা বেশ নাজুক হয়ে যেতে পারে। অঞ্চলভেদে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনৈতিক দৃঢ়তা এক রকম নয়। উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর জাতীয় প্রবৃদ্ধি স্থির থাকলেও রাজনৈতিক অবস্থা মোটেও সুখকর নয়। জ্বালানি তেলের দাম ক্রমাগত বাড়ছেই।
ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চলীয় দেশগুলোর পাশাপাশি পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর রাজনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা অনিশ্চিত। এটা এসব দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। তবে লেবানন, সিরিয়া ও ইসরায়েল বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকিতে রয়েছে। বাইরের দেশগুলোর সহায়তা ছাড়া এসব দেশ অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে এগিয়ে যেতে পারবে না। ট্রাম্প প্রশাসনের কারণে ইরানকেও ভাবতে হবে তার বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের দিকগুলো। ট্রাম্প প্রশাসন নতুন অবরোধ আরোপ করলে তা কাটিয়ে ওঠা ইরানের জন্য কঠিন হয়ে যেতে পারে।