ঢাকা, বৃহস্পতিবার ০৬ মার্চ ২০২৫
২০ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৫ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ০৬ মার্চ ২০২৫
২০ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৫ রমজান ১৪৪৬

ব্যথা দূর করার দোয়া

অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
ব্যথা দূর করার দোয়া

উচ্চারণ : আউজু বি-ইজ্জাতিল্লহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু।

অর্থ : আল্লাহর নামে আমি আল্লাহর অসীম সম্মান ও তাঁর বিশাল ক্ষমতার অসিলায় আমার অনুভূত এই ব্যথার ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।

উপকার : ওসমান বিন আবুল আস আসসাকাফি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-এর কাছে মারাত্মক ব্যথা নিয়ে উপস্থিত হলাম, যা আমাকে অকেজো প্রায় করেছিল। রাসুল (সা.) আমাকে বলেন, তুমি তোমার ডান হাত ব্যথার স্থানে রেখে সাতবার এই দোয়া বলো।

(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৫২২)

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব, ৭১১
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : ‘এতদসত্ত্বেও তারা বলে, যেমন বলেছিল পূর্ববর্তীরা। তারা বলে, আমাদের মৃত্যু ঘটলে এবং আমরা মাটিতে ও হাড়ে পরিণত হলেও কি আমরা উত্থিত হবো? আমাদেরকে এ বিষয়েই প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে এবং অতীতে আমাদের পূর্বপুরুষদেরও। এটা সে কালের উপকথা ছাড়া আর কিছুই না।...যার ওপর আশ্রয়দাতা নেই।

যদি তোমরা জানো? তারা বলবে, আল্লাহর। বলো, তবু তোমরা কেমন করে মোহগ্রস্ত হচ্ছো, বরং আমি তাদের কাছে সত্য পৌঁছিয়েছি; কিন্তু তারা নিশ্চিত মিথ্যাবাদী।’  (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৮১-৯০)

আয়াতগুলোতে পরকালে বিশ্বাস স্থাপনের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১. পরকালে বিশ্বাস আসমানি ধর্মগুলোর একটি অভিন্ন দিক।

পৃথিবীর বেশির ভাগ ধর্মে পরকালের বিশ্বাস স্বীকৃত।

২. নিজের মূর্খতা সম্পর্কে ধারণা না রাখা মূর্খতার চরম স্তর। মূর্খকে মূর্খতা সম্পর্কে সচেতন করা দোষের নয়, যদি উদ্দেশ্য সত্ হয়।

৩. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহর আরশ আসমান ও জমিনের চেয়ে বড়।

আর আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলি তার চেয়েও মহান।

৪. প্রচলিত ধারণা, রীতি ও চর্চা কোনো বিষয়ের সত্যতার প্রমাণ বহন করে না, বরং সত্য প্রচলনের বিপরীতও হতে পারে।

৫. চিন্তা-ভাবনা ও জ্ঞান হিদায়াত লাভের মাধ্যম। তবে সঙ্গে ব্যক্তির সদিচ্ছাও বিদ্যমান থাকা শর্ত।

(তাফসিরে মুনির : ৯/৪১৪)

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
রমজান ঐতিহ্য

কাশ্মীরে রোজা ও রমজান

আলেমা হাবিবা আক্তার
আলেমা হাবিবা আক্তার
শেয়ার
কাশ্মীরে রোজা ও রমজান

রমজান মুমিনের মনে বয়ে আনে আনন্দের ধারা। তাই সারা বিশ্বের মুসলিমরা আধ্যাত্মিকতা ও আনন্দের আমেজে রমজান উদযাপন করে। ইসলামের চিরায়ত রীতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে স্থানীয় রীতি-সংস্কৃতির মিশেলে উদযাপিত হয় মাহে রমজান। তাই প্রতিটি অঞ্চলের রমজান সংস্কৃতির ভেতর দেখা যায় কিছুটা ভিন্নতা।

নিম্নে ভূস্বর্গ কাশ্মীরের রমজান সংস্কৃতি তুলে ধরা হলো—

১. সাহরিতে জাগিয়ে দেওয়া : রমজান মাসে শেষ রাতে মানুষকে জাগিয়ে দেওয়া হয়। এটা কাশ্মীরের শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য। লোকদের জাগিয়ে দিতে ঢোল বাজানো হয় এবং ‘ওয়াক্তে সাহুর’ বা সাহরির সময় বলে আওয়াজ দেওয়া হয়। যারা সাহরির জন্য জাগিয়ে দেয় তাদের স্থানীয় ভাষায় সেহরি বলা হয়।

স্থানীয় লোকেরা তাদের আওয়াজ শুনে ঘুম থেকে ওঠে।

২. স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ : কাশ্মীরের মুসলিমদের খাদ্যাভ্যাস ভারতবর্ষের অন্য অঞ্চলের মানুষ থেকে ভিন্ন। তারা সাধারণত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে। রমজানেও তারা সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে থাকে।

সাহরিতে তারা ভাত বা রুটি খায়। সঙ্গে থাকে আমিষ ও নিরামিষ সবজি এবং টাটকা দই। এ ছাড়া তারা ফিরনি, কাস্টার্ড ও ফলের সালাদ খায়। এশার নামাজের পর তারা ভারী খাবার গ্রহণ করে।

কাশ্মীরে রোজা ও রমজান৩. বাহারি রুটি : রমজান মাসে কাশ্মীর উপত্যকার বাসিন্দারা নানা ধরনের রুটি খেয়ে থাকে।

তারা সাধারণত খাবারের পর ঐতিহ্যবাহী ‘নুন চা’ (লবণাক্ত চা) দিয়ে রুটি খায়। কাশ্মীরের বিখ্যাত কয়েকটি রুটি হলো—

ক. লাভাসা : বিশেষ ধরনের পাতলা রুটি।

খ. ঘেভ ছোট : ঘি দিয়ে তৈরি নরম রুটি।

গ. শিরমাল : পেস্তা বাদাম ও দুধের তৈরি রুটি।   

ঘ. কাতলাম : পাতলা ও মচমচে ভাজা রুটি।

ঙ. তচভোর : তিল বীজ সমৃদ্ধ মচমচে ভাজা রুটি।

চ. কুলছা : পেস্তা বাদাম ছেটানো গোলাকার রুটি।

ছ. বাকরখানি : ঘি দিয়ে ভাজা ছোট ফোলা রুটি।

৪. তুলসি বীজের শরবত : সারা দিন রোজা রাখার পর কাশ্মীরিরা খেজুর দিয়ে ইফতার করে। এ সময় তারা দুধ, পানি ও তুলসি বীজের শরবত পান করত। স্থানীয়দের ভাষা তার নাম ‘বাবরিবেউল ট্রেইশ’। শরবতটি ক্ষুধা দমন, মানসিক চাপ কমানো, এসিডির সমস্যা কমানো, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা এবং শরীরকে শীতল রাখার উপকার দেয়।

৫. আতিথেয়তা : কাশ্মীরের মুসলিমরা রমজানে অসহায় মানুষকে সাহায্য করা এবং আতিথেয়তাকে গুরুত্ব দেয়, বিশেষ করে পর্যটক ও পথিকদের আপ্যায়ন করতে পছন্দ করে তারা। রমজানে আত্মীয়-স্বজনকেও বাড়িতে আপ্যায়ন করে তারা। এমনকি তারা রমজানে মুক্ত পশুপাখিকেও খাবার দেয়।

 

সূত্র : ডেইলি সাবাহ

 

 

মন্তব্য

তারাবিতে কোরআনের বার্তা

    পর্ব : ৪
শেয়ার
তারাবিতে কোরআনের বার্তা

সুরা মায়িদা

সুরা মায়িদার সূচনা হয়েছে চুক্তি ও অঙ্গীকার বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়ে। এই সুরায় কয়েকটি ঘটনা ও বিভিন্ন বিধি-বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। বিশেষত এখানে চুক্তি বাস্তবায়ন, আহলে কিতাবের সঙ্গে বিয়ে, মৃত্যুর সময় অসিয়ত, জবাইকৃত বস্তু খাওয়ার বৈধতা, শিকারের বৈধতা, অজু-গোসল থেকে পবিত্রতা, তায়াম্মুম, মদ-জুয়ার অবৈধতা, মুরতাদের শাস্তি, চুরি-ডাকাতির শাস্তি, ইহুদি-খ্রিস্টান, মূর্তি পূজারি ও মুনাফিকদের দাবি খণ্ডন ইত্যাদি বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।

 

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. মানত আল্লাহর প্রতি বান্দার অঙ্গীকার।

নেক কাজের মানত করলে তা পূরণ করা আবশ্যক। (আয়াত : ১)

২. মৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া হারাম।

(আয়াত : ১)

৩. বায়তুল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রেরিত পশু ক্রয়-বিক্রয় এবং তা দান করা বৈধ নয়। তাতে মিরাসি অধিকারও প্রতিষ্ঠিত হয় না।

(আয়াত : ২)

৪. কোনো পশু রেল বা মোটরযানের আঘাতে মারা গেলে তার গোশত খাওয়া হারাম। (আয়াত : ৩)

৫. শিকারি পশুপাখি কোনো প্রাণী ধরে আনলে শর্ত সাপেক্ষে তা খাওয়া হালাল। (আয়াত : ৪)

৬. নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য পবিত্রতা অর্জন করা আবশ্যক। আর প্রত্যেক ওয়াক্তে নতুন করে অজু করা মুস্তাহাব।

(আয়াত : ৬)

৭. নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য কাপড় থেকে নাপাকি দূর করা আবশ্যক। (আয়াত : ৬)

৮. নেক কাজের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার পাপ মোচন করেন। (আয়াত : ১২)

৯. মুমিনের জীবনে আল্লাহর সন্তুষ্টিই সবচেয়ে বড়। (আয়াত : ১৬)

১০. আল্লাহর কাছে নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরে দোয়া করা উত্তম। (আয়াত : ২৫)

১১. ইবাদতের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ফরজ।

আর নফল ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে। (আয়াত : ২৭)

১২. আমানত রাখা সম্পদ অস্বীকার বা আত্মসাত্ করলে তাকে চুরির শাস্তি দেওয়া হবে না, বরং আদালত তার অবস্থা অনুসারে ভিন্ন শাস্তি নির্ধারণ করবে। (আয়াত : ৩৮)

১৩. বিনা প্রয়োজনে মিথ্যা ও ভ্রান্ত কথা শোনা অন্যায়। (আয়াত : ৪১)

১৪. বিচারপ্রার্থী অমুসলিম হলেও তার প্রতি ন্যায়বিচার করা আল্লাহর নির্দেশ।

(আয়াত : ৪২)

১৫. মানুষের ভয়ে দ্বিনি বিধান গোপন করা এবং তা পরিত্যাগ করা মুমিনের জন্য বৈধ নয়। (আয়াত : ৪৪)

১৬. কিসাস ইসলামী দণ্ডবিধির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পূর্ববর্তী আসমানি ধর্মেও তা ছিল।

১৭. মুরতাদ ও মুসলমান পরস্পরের ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী হয় না। (আয়াত : ৫৪)

১৮. আলেমদের সম্মান করা মুমিনের দায়িত্ব। আলেমদের অসম্মান করা অভিশপ্ত জাতির বৈশিষ্ট্য। (আয়াত : ৭৮)

১৯. আল্লাহ যা হালাল করেছেন তাকে হারাম বলা এবং যা হারাম করেছেন তাকে হালাল বলা বৈধ নয়। (আয়াত : ৮৭)

২০. সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সামাজিকতার নামে ইসলামবিরোধী কাজ করা জায়েজ নেই। সংস্কৃতি গ্রহণ করতে হবে শরিয়তের আলোকেই। (আয়াত : ১০৪)

 

সুরা আনআম

সুরা আনআমেও আহলে কিতাবের সঙ্গে সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং প্রাণিজগত্ নিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।

প্রাণিজগতের বর্ণনার পাশাপাশি আলোচ্য সুরায় মূর্তি পূজার অসারতা, মুশরিকদের দাবির খণ্ডন, পরকালের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসতাওহিদ তথা আল্লাহর একত্ববাদ, রিসালাত ও পরকালের বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা আছে।

 

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. দ্বিনি আলোচনার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসাসূচক বাক্য উচ্চারণ করা মুস্তাহাব। (আয়াত : ১)

২. তাওহিদ বা একত্ববাদের সাক্ষ্যই সবচেয়ে বড় সাক্ষ্য। (আয়াত : ১৪)

৩. কোরআন সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করলে ঈমান থাকে না। (আয়াত : ২৫)

৪. রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে অস্বীকার করা আল্লাহকে অস্বীকার করার নামান্তর।

(আয়াত : ৩৪)

৫. বিপদগ্রস্ত হওয়ার পরও আল্লাহমুখী না হওয়া নিন্দনীয়। (আয়াত : ৪৩)

৬. পারস্পরিক লেনদেন ও জুলুম পরকালে গুরুতর রূপ ধারণ করবে। (আয়াত : ৪৫)

৭. জানকবজের দায়িত্বে বহু ফেরেশতা নিযুক্ত। তাদের প্রধান হলেন আজরাইল (আ.)। (আয়াত : ৬০)

৮. যে মজলিসে দ্বিনবিরোধী কথা হয়, বিশেষ কোরআন-হাদিস নিয়ে বিদ্রুপ করা হয়, সেখানে অবস্থান করা মুমিনের জন্য বৈধ নয়।

(আয়াত : ৬৮)

৯. যে মজলিসে দ্বিনবিরোধী কথা হয়, বিশেষ কোরআন-হাদিস নিয়ে বিদ্রুপ করা হয়, সেখানে অবস্থান করা মুমিনের জন্য বৈধ নয়।

(আয়াত : ৭৯)

১০. ঈমানের যত্ন নেওয়া এবং তাকে কুফর ও শিরকের মিশ্রণ থেকে রক্ষা করা আবশ্যক। (আয়াত : ৮২)

১১. পার্থিব জীবনে মানুষ আল্লাহকে দেখার ক্ষমতা রাখে না। তবে পরকালে জান্নাতিরা আল্লাহর সাক্ষাত্ লাভ করবে। (আয়াত : ১০৩)

১২. মুসলমানের জন্য অন্য ধর্মের উপাস্যদের গালি দেওয়া নিষিদ্ধ। (আয়াত : ১০৮)

১৩. প্রকাশ্য ও গোপন সব ধরনের পাপ বর্জন করা আবশ্যক। (আয়াত : ১২০)

১৪. ফল-ফসলের জাকাত দিতে হবে।

(আয়াত : ১৪১)

১৫. মৃত প্রাণী, প্রবহমান রক্ত, শূকরের মাংস, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে জবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়া হারাম। (আয়াত : ১৪৫)

 

গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান

 

 

মন্তব্য

রোজা না রাখার ভয়াবহতা

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
রোজা না রাখার ভয়াবহতা

রোজা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর পবিত্র রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, রমজান মাসযে মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য (আদ্যোপান্ত) হিদায়াত এবং এমন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি সংবলিত, যা সঠিক পথ দেখায় এবং (সত্য ও মিথ্যার মধ্যে) চূড়ান্ত ফয়সালা করে দেয়। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে, সে যেন এ সময় অবশ্যই রোজা রাখে।

আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তবে অন্য দিনে সে সমান সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের পক্ষে যা সহজ সেটাই চান, তোমাদের জন্য জটিলতা চান না, এবং (তিনি চান) যাতে তোমরা রোজার সংখ্যা পূরণ করে নাও এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যে পথ দেখিয়েছেন, সে জন্য আল্লাহর তাকবির পাঠ করো এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।

(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৫)

এই আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য পূর্ণ রমজান মাস রোজা রাখা ফরজ করে দিয়েছেন। অবশ্য যারা সফর অথবা তীব্র অসুস্থতায় রোজা রাখতে অক্ষম হবে, তাদের জন্য পরে কাজা করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

আবার যারা অতি বৃদ্ধ, রোজা রাখার শক্তি নেই এবং ভবিষ্যতে রোজা রাখার মতো শক্তি ফিরে আসারও কোনো আশা নেই, তাদের জন্যও রাখা হয়েছে ফিদিয়ার ব্যবস্থা। কিন্তু এর বাইরে রোজা ত্যাগ করার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি।

শরিয়ত সমর্থিত কোনো ওজর ছাড়া রোজা ত্যাগ করা আল্লাহর বেঁধে দেওয়া সীমানা অতিক্রম করার নামান্তর। অথচ মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে রোজার বিধি-বিধান সংক্রান্ত আয়াতে বলেছেন, এসব আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমা।

সুতরাং তোমরা এগুলোর নিকটে যেয়ো না। এভাবে আল্লাহ মানুষের সামনে স্বীয় নিদর্শনাবলি স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।

(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৭)

অতএব, কোনো মুসলমান ইচ্ছাকৃত রোজা ত্যাগ করতে পারে না। এটা জঘন্যতম অপরাধ। হাফিজ ইমাম যাহাবি (রহ.) বলেছেন : মুমিনদের কাছে এটা স্থির সত্য যে কেউ যদি বিনা অজুহাতে, বিনা অসুস্থতায় এবং কোনো বৈধ কারণ ছাড়াই রমজানের রোজা ছেড়ে দেয়, তবে সে ব্যভিচারী, ঘুষখোর আর মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তির চেয়েও নিকৃষ্ট; বরং তার ঈমান আছে কি না, সে ব্যাপারেও সন্দেহ হয়।

তাকে দেখে মনে হয়, সে জিন্দিক কিংবা ধর্মদ্রোহী হয়ে গেছে।

(আল-কাবায়ির, পৃষ্ঠা-৬৪)

নাউজুবিল্লাহ। রোজা ত্যাগ করার শাস্তি যে কতটা ভয়াবহ হবে, তা আমাদের নবীজি (সা.)-কে স্বপ্নযোগে দেখানো হয়েছে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, আবু উমামা বাহেলি (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, একদা আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, এমন সময় (স্বপ্নে) আমার কাছে দুই ব্যক্তি উপস্থিত হলেন। তাঁরা আমার উভয় বাহুর ঊর্ধ্বাংশে ধরে আমাকে এক দুর্গম পাহাড়ের কাছে উপস্থিত করলেন এবং বললেন, আপনি এই পাহাড়ে চড়ুন। আমি বললাম, এ পাহাড়ে চড়তে আমি অক্ষম। তাঁরা বললেন, আমরা আপনার জন্য চড়া সহজ করে দেব। সুতরাং আমি চড়ে গেলাম। অবশেষে যখন পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে পৌঁছলাম তখন বেশ কিছু চিৎকার-ধ্বনি শুনতে পেলাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এ চিৎকার-ধ্বনি কাদের? তাঁরা বললেন, এ হলো জাহান্নামবাসীদের চিৎকার-ধ্বনি। পুনরায় তাঁরা আমাকে নিয়ে চলতে লাগলেন। হঠাত্ দেখলাম একদল লোক তাদের পায়ের গোড়ালির ওপর মোটা শিরায় (বাঁধা অবস্থায়) ঝুলানো আছে, তাদের গাল ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং চোয়াল বেয়ে রক্তও ঝরছে। নবী (সা.) বলেন, আমি বললাম, ওরা কারা? তাঁরা বললেন, ওরা হলো তারা, যারা সময় হওয়ার পূর্বেই ইফতার করে নিত।

(ইবনে খুযাইমাহ : ১৯৮৬, ইবনে হিব্বান : ৭৪৯১, হাকেম : ১৫৬৮, সহীহ তারগিব : ১০০৫, ২৩৯৩)

নাউজুবিল্লাহ, প্রত্যেক মুসলমানের চিন্তা করা উচিত যদি সময়ের আগে ইফতার করে ফেলার শাস্তি এতটা ভয়াবহ হয়, তাহলে এটা পরিপূর্ণ ত্যাগ করার শাস্তি কতটা ভয়াবহ হবে? মহান আল্লাহর রোজার পুরস্কার যেমন অনেক বড় ঘোষণা করেছেন, তেমনি যারা তা ত্যাগ করবে তাদের শাস্তিও নিশ্চয়ই সে রকম ভয়াবহ হবে।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রোজার প্রতি যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ