সুরা মায়িদা
সুরা মায়িদার সূচনা হয়েছে চুক্তি ও অঙ্গীকার বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়ে। এই সুরায় কয়েকটি ঘটনা ও বিভিন্ন বিধি-বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। বিশেষত এখানে চুক্তি বাস্তবায়ন, আহলে কিতাবের সঙ্গে বিয়ে, মৃত্যুর সময় অসিয়ত, জবাইকৃত বস্তু খাওয়ার বৈধতা, শিকারের বৈধতা, অজু-গোসল থেকে পবিত্রতা, তায়াম্মুম, মদ-জুয়ার অবৈধতা, মুরতাদের শাস্তি, চুরি-ডাকাতির শাস্তি, ইহুদি-খ্রিস্টান, মূর্তি পূজারি ও মুনাফিকদের দাবি খণ্ডন ইত্যাদি বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. মানত আল্লাহর প্রতি বান্দার অঙ্গীকার।
নেক কাজের মানত করলে তা পূরণ করা আবশ্যক। (আয়াত : ১)
২. মৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া হারাম।
(আয়াত : ১)
৩. বায়তুল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রেরিত পশু ক্রয়-বিক্রয় এবং তা দান করা বৈধ নয়। তাতে মিরাসি অধিকারও প্রতিষ্ঠিত হয় না।
(আয়াত : ২)
৪. কোনো পশু রেল বা মোটরযানের আঘাতে মারা গেলে তার গোশত খাওয়া হারাম। (আয়াত : ৩)
৫. শিকারি পশুপাখি কোনো প্রাণী ধরে আনলে শর্ত সাপেক্ষে তা খাওয়া হালাল। (আয়াত : ৪)
৬. নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য পবিত্রতা অর্জন করা আবশ্যক। আর প্রত্যেক ওয়াক্তে নতুন করে অজু করা মুস্তাহাব।
(আয়াত : ৬)
৭. নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য কাপড় থেকে নাপাকি দূর করা আবশ্যক। (আয়াত : ৬)
৮. নেক কাজের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার পাপ মোচন করেন। (আয়াত : ১২)
৯. মুমিনের জীবনে আল্লাহর সন্তুষ্টিই সবচেয়ে বড়। (আয়াত : ১৬)
১০. আল্লাহর কাছে নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরে দোয়া করা উত্তম। (আয়াত : ২৫)
১১. ইবাদতের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ফরজ।
আর নফল ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে। (আয়াত : ২৭)
১২. আমানত রাখা সম্পদ অস্বীকার বা আত্মসাত্ করলে তাকে চুরির শাস্তি দেওয়া হবে না, বরং আদালত তার অবস্থা অনুসারে ভিন্ন শাস্তি নির্ধারণ করবে। (আয়াত : ৩৮)
১৩. বিনা প্রয়োজনে মিথ্যা ও ভ্রান্ত কথা শোনা অন্যায়। (আয়াত : ৪১)
১৪. বিচারপ্রার্থী অমুসলিম হলেও তার প্রতি ন্যায়বিচার করা আল্লাহর নির্দেশ।
(আয়াত : ৪২)
১৫. মানুষের ভয়ে দ্বিনি বিধান গোপন করা এবং তা পরিত্যাগ করা মুমিনের জন্য বৈধ নয়। (আয়াত : ৪৪)
১৬. কিসাস ইসলামী দণ্ডবিধির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পূর্ববর্তী আসমানি ধর্মেও তা ছিল।
১৭. মুরতাদ ও মুসলমান পরস্পরের ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী হয় না। (আয়াত : ৫৪)
১৮. আলেমদের সম্মান করা মুমিনের দায়িত্ব। আলেমদের অসম্মান করা অভিশপ্ত জাতির বৈশিষ্ট্য। (আয়াত : ৭৮)
১৯. আল্লাহ যা হালাল করেছেন তাকে হারাম বলা এবং যা হারাম করেছেন তাকে হালাল বলা বৈধ নয়। (আয়াত : ৮৭)
২০. সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সামাজিকতার নামে ইসলামবিরোধী কাজ করা জায়েজ নেই। সংস্কৃতি গ্রহণ করতে হবে শরিয়তের আলোকেই। (আয়াত : ১০৪)
সুরা আনআম
সুরা আনআমেও আহলে কিতাবের সঙ্গে সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং প্রাণিজগত্ নিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রাণিজগতের বর্ণনার পাশাপাশি আলোচ্য সুরায় মূর্তি পূজার অসারতা, মুশরিকদের দাবির খণ্ডন, পরকালের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস—তাওহিদ তথা আল্লাহর একত্ববাদ, রিসালাত ও পরকালের বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা আছে।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. দ্বিনি আলোচনার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসাসূচক বাক্য উচ্চারণ করা মুস্তাহাব। (আয়াত : ১)
২. তাওহিদ বা একত্ববাদের সাক্ষ্যই সবচেয়ে বড় সাক্ষ্য। (আয়াত : ১৪)
৩. কোরআন সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করলে ঈমান থাকে না। (আয়াত : ২৫)
৪. রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে অস্বীকার করা আল্লাহকে অস্বীকার করার নামান্তর।
(আয়াত : ৩৪)
৫. বিপদগ্রস্ত হওয়ার পরও আল্লাহমুখী না হওয়া নিন্দনীয়। (আয়াত : ৪৩)
৬. পারস্পরিক লেনদেন ও জুলুম পরকালে গুরুতর রূপ ধারণ করবে। (আয়াত : ৪৫)
৭. জানকবজের দায়িত্বে বহু ফেরেশতা নিযুক্ত। তাদের প্রধান হলেন আজরাইল (আ.)। (আয়াত : ৬০)
৮. যে মজলিসে দ্বিনবিরোধী কথা হয়, বিশেষ কোরআন-হাদিস নিয়ে বিদ্রুপ করা হয়, সেখানে অবস্থান করা মুমিনের জন্য বৈধ নয়।
(আয়াত : ৬৮)
৯. যে মজলিসে দ্বিনবিরোধী কথা হয়, বিশেষ কোরআন-হাদিস নিয়ে বিদ্রুপ করা হয়, সেখানে অবস্থান করা মুমিনের জন্য বৈধ নয়।
(আয়াত : ৭৯)
১০. ঈমানের যত্ন নেওয়া এবং তাকে কুফর ও শিরকের মিশ্রণ থেকে রক্ষা করা আবশ্যক। (আয়াত : ৮২)
১১. পার্থিব জীবনে মানুষ আল্লাহকে দেখার ক্ষমতা রাখে না। তবে পরকালে জান্নাতিরা আল্লাহর সাক্ষাত্ লাভ করবে। (আয়াত : ১০৩)
১২. মুসলমানের জন্য অন্য ধর্মের উপাস্যদের গালি দেওয়া নিষিদ্ধ। (আয়াত : ১০৮)
১৩. প্রকাশ্য ও গোপন সব ধরনের পাপ বর্জন করা আবশ্যক। (আয়াত : ১২০)
১৪. ফল-ফসলের জাকাত দিতে হবে।
(আয়াত : ১৪১)
১৫. মৃত প্রাণী, প্রবহমান রক্ত, শূকরের মাংস, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে জবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়া হারাম। (আয়াত : ১৪৫)
গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান