<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সৎ মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। আল্লাহর রাসুল (সা.) সৎসঙ্গকে আতর বিক্রেতার সঙ্গে তুলনা দিয়ে বলেন, সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ মিশক বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপরের মতো। আতর বিক্রেতাদের থেকে শূন্য হাতে ফিরে আসবে না। হয়তো তুমি আতর খরিদ করবে, না হয় তার সুঘ্রাণ পাবে। আর কর্মকারের হাপর হয়তো তোমার ঘর অথবা তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে কিংবা তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে। (বুখারি, হাদিস : ২১০১)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপমার বিশ্লেষণে হাদিসবিশারদরা বলেন, সৎসঙ্গের তুলনা হলো সুগন্ধি বিক্রেতার মতো। সৎসঙ্গে খারাপ অভ্যাস দূর করে, ভুল ক্ষমা করে, দোষ ঢেকে রেখে কল্যাণের কাজে আগ্রহ ও উৎসাহ জোগায়। গুনাহে লিপ্ত হওয়া থেকে বাধা দেয়। এটাই হলো </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সৎসঙ্গে স্বর্গবাস।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্যদিকে অসৎ সঙ্গ হলো কামারের হাপরের মতো। যার পাশে থাকবে হয়তো কাপড় জ্বালিয়ে  দেবে আর না হয় দুর্গন্ধ ছড়াবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই উপমা ওই হতভাগ্য ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য, যে কিয়ামতের দিন কপাল চাপড়ে হা-হুতাশ করবে। কারণ সে এমন কতক পাপিষ্ঠকে বন্ধু বানিয়েছিল, যারা তাকে ইসলামের আদর্শ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে এবং পাপের পথে টেনে নিয়ে গোমরাহির অতলগহ্বরে ডুবিয়েই ক্ষান্ত হয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জালেম সেদিন নিজের দুই হাত দংশন করতে করতে বলবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হায় আফসোস! আমি যদি রাসুলের সঙ্গে পথ অবলম্বন করতাম। হায়, আমার দুর্ভাগ্য! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। আমার কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছিল। শয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোঁকা দেয়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা : আল ফুরকান, আয়াত : ২৭-২৯)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সৎসঙ্গ প্রসঙ্গে জনৈক জ্ঞানী ব্যক্তি কতই না সুন্দর বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রথমে তার সঙ্গীর ব্যাপারে খবর নাও। কারণ প্রত্যেক মানুষ তার সাথির অনুসরণ করে থাকে। যখন তুমি একদল লোকের সঙ্গে থাকবে তখন ভালো লোকদের সঙ্গ গ্রহণ করো; মন্দ সঙ্গ নয়। অন্যথায় খারাপদের সঙ্গে মিশে তুমিও খারাপ হয়ে যাবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (মুখতাসারু তারিখে দিমাশক : ২০/৩৫)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আর বন্ধু গ্রহণ ও বন্ধুত্বের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে নবীজি (সা.)-এর চাচা আবু তালিবের মৃত্যুর সময়কার প্রসিদ্ধ ঘটনা তে আজও ইতিহাস হয়ে আছে। সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালিবের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে আল্লাহর রাসুল (সা.) তার নিকট আসলেন। তিনি সেখানে আবু জাহল ইবনে হিশাম ও আবদুল্লাহ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‌</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ইবনে আবু উমায়্যা ইবনে মুগিরাকে উপস্থিত দেখতে পেলেন। (রাবি বলেন) তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) আবু তালিবকে লক্ষ্য করে বলেন, চাচাজান, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কলেমা পাঠ করুন, তাহলে এর অসিলায় আমি আল্লাহর সমীপে আপনার জন্য সাক্ষ্য দিতে পারব। আবু জাহল ও </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আবদুল্লাহ ইবনে আবু উমায়্যা বলে উঠল, ওহে আবু তালিব! তুমি কি আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম হতে বিমুখ হবে? অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সা.) তার নিকট কলেমা পেশ করতে থাকেন। আর তারা দুজনও তাদের উক্তি পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। অবশেষে আবু তালিব তাদের সামনে শেষ কথাটি যা বলল, তা এই যে, সে আবদুল মুত্তালিবের ধর্মের ওপর অবিচল রয়েছে। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বলতে অস্বীকার করল। এ অবস্থা দেখে আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, আল্লাহর কসম! তবু আমি আপনার জন্য মাগফিরাত কামনা করতে থাকব, যতক্ষণ না আমাকে তা হতে নিষেধ করা হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা নাজিল করেন, (নবীর জন্য সংগত নয়......)  [সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৩]। (বুখারি, হাদিস : ১৩৬০)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইমাম ইবনে কায়্যিম (রহ.) বন্ধুত্বকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। ১. গিজা তথা খাবারের মতো, যা সব সময় জরুরি। তা হলো সৎসঙ্গী। ২. দাওয়া ও ওষুধ। যেকোনো সময় কাজে লাগতে পারে। ভালো-মন্দের মিশেল। ৩. দা বা অসুখ। যা না থাকাই ভালো। অসৎ সঙ্গী। ইমাম মালিক ইবনে দিনার (রহ.) বলেন, সৎ লোকের সঙ্গে পাথর বহন, অসৎ লোকের সঙ্গে বসে খবিস (খেজুর ও ঘি মিশ্রিত এক প্রকার মিষ্টান্ন) আহার করা থেকে উত্তম।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আল্লাহ আমাদের সবাইকে সৎসঙ্গ গ্রহণের তাওফিক দান করুন।</span></span></span></span></p>