<p style="text-align:justify">বরিশালের বানারীপাড়ায় দরিদ্রতাকে জয় করে অদম্য মেধাবী মারিয়া খানম ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) চান্স পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। এ যেন গরিবের জীর্ণ কুটিরে চাঁদের আলোর মতো। মারিয়া বসুন্ধরা শুভসংঘের বানারীপাড়া উপজেলা শাখার কার্যনির্বাহী সদস্য। </p> <p style="text-align:justify">মারিয়া ঠিকমতো তিনবেলা খাবার, প্রয়োজনমতো প্রাইভেট ও ভালো পোষাক পড়তে না পারলেও অদম্য ইচ্ছে শক্তি ও নিরলস অধ্যবসায় তার শিক্ষা জীবনে একের পর এক সাফল্যের পালক এনে দিচ্ছে। ডুয়েটে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে চান্স পাওয়ার পরেও ভর্তি ফি, বইপুস্তক কেনা, আবাসন ও খাওয়ার খরচসহ লেখাপড়ার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন নিয়ে দুশ্চিন্তায় দুচোখে তার ঘোর অমানিশার অন্ধকার। </p> <p style="text-align:justify">বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের আলতা গ্রামের প্রয়াত তাহের শরীফের ছোট মেয়ে মারিয়া। সিএনজিচালিত মাহেন্দ্র-আলফা চালক তার বাবা তাহের শরীফ ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা না পেয়ে দীর্ঘ ৫ বছর শয্যাশায়ী থাকার পর ২০২০ সালের ৬ জুলাই না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা ও অসহায় হয়ে পরে দরিদ্র পরিবারটি। দুই বোন ও এক ভাইকে লেখাপড়া করতে হয় দারিদ্রতার সঙ্গে চরম সংগ্রাম করে। </p> <p style="text-align:justify">মারিয়া বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখা থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তার এ সাফল্যের পথে নানাভাবে সহায়তা, অনুপ্রেরণা, আন্তরিকতা ও উৎসাহ যুগিয়েছেন। পরে মারিয়া স্কুল জীবনে কর্নেল (অব.) আনোয়ার হোসেন ও তার ভাই দেলোয়ার হোসেনের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা বৃত্তির জমানো ১০ হাজার টাকা দিয়ে গৌরনদী সরকারি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন। সেখানে টিউশনি করে লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করতো মারিয়া।  </p> <p style="text-align:justify">মারিয়ার বড় বোন মুনিয়া আক্তার বীথি টিউশনি ও সেলাই মেশিন চালিয়ে এবং ভাই নাঈম শরীফ ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেদের লেখাপড়া ও পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের পাশাপাশি মারিয়ার লেখাপড়ায়ও সহায়তা করতেন। মারিয়া গৌরনদী সরকারি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ২০২৩ সালে কৃতিত্বের ধারাবাহিকতায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। </p> <p style="text-align:justify">এরপর ডুয়েটে ২০২৩-২৪ সেশনে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে মারিয়া। তবে চান্স পাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলেও স্বস্তি নেই তার মনে। ভর্তি ফি, বইপুস্তক কেনা, আবাসন ও খাওয়ার খরচসহ ব্যয়বহুল লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন নিয়ে তার কাপালে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। অদম্য মেধাবী মারিয়ার উচ্চশিক্ষা অর্জন নিয়ে তার বিধবা মা মাকছুদা বেগম, ভাই নাঈম শরীফ ও বোন মুনিয়া আক্তার বিথীকেও দুশ্চিন্তা তাড়া করে বেড়াচ্ছে। </p> <p style="text-align:justify">বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ও ভোকেশনাল শিক্ষক সমিতির বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি মো. জাকির হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মারিয়ার এ ধারাবাহিক সাফল্যে শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির নেতা, শিক্ষার্থী ও সহপাঠীরা ব্যাপক উচ্ছ্বসিত। </p>