<p>রাজধানীতে তিন দিনব্যাপী প্রাচীন থেকে সমকালীন মুদ্রার প্রদর্শনী চলছে। ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে মুদ্রা ও ব্যাংক নোটের ভেতর দিয়ে ইতিহাস দর্শনের এই আয়োজন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. কবির আহমেদ এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। </p> <p>বাংলাদেশ নিউমিসম্যাটিক কালেক্টরস সোসাইটি (বিএনসিএস) আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে জায়গা পেয়েছে প্রাচীনকালের বিভিন্ন আকার-আকৃতির দুষ্প্রাপ্য মুদ্রা। শনিবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য খোলা থাকবে। এই প্রদর্শনীতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ২৯ জন সংগ্রাহক ও ছয়জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। </p> <p>বৃহস্পতিবার বিএনসিএসর সভাপতি রবিউল ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন যমুনা ব্যাংক পিএলসির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ। </p> <p>অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, বিভিন্ন শতকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন আর অর্থনৈতিক উন্নতিতে মুদ্রার গঠন, বৈশিষ্ট্য আর মূল্যমান কীভাবে বদলে গেছে তার একটি চিত্র এই প্রদর্শনীতে পাওয়া যাবে।</p> <p>প্রদর্শনীতে জায়গা পেয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব ছয়শত বছর আগের মুদ্রা থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের বিভিন্ন সময়কার স্বর্ণ, রৌপ্য ও বিভিন্ন ধাতুর মুদ্রা। ‘পঞ্চম বিএনসিএস মুদ্রা প্রদর্শনী-২০২৪’ শীর্ষক এই প্রদর্শনীর আরেক আকর্ষণ হলো খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ বছর আগের বঙ্গ জনপদের মুদ্রার সংগ্রহ। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলায় মুদ্রার যে ক্রমবিকাশ ঘটেছে তারও একটি ধারাবাহিক ফিরিস্তি দর্শনার্থীদের জন্য উপভোগ্য করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। </p> <p>ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত সর্বপ্রথম ইসলামি মুদ্রা, প্রাচীন বাংলা অঞ্চলের বিভিন্ন রাজবংশের মুদ্রা, প্রাচীন ভারতীয় ছাপাঙ্কিত মুদ্রা জায়গা পেয়েছে প্রদর্শনীতে। এ ছাড়া বাংলার সুলতানি শাসনামল, মোঘল সাম্রাজ্য, ব্রিটিশ ভারতীয়, পাকিস্তান (১৯৪৭-১৯৭১) ও বাংলাদেশের সব প্রচলিত ও স্মারক মুদ্রার সমাহার ঘটানো হয়েছে প্রদর্শনীটিতে।</p> <p>এতে আরো জায়গা পেয়েছে মধ্যযুগীয় বাংলার সোনারগাঁ টাকশালের মুদ্রা, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত ত্রিপুরা রাজ্যের উল্লেখযোগ্য মুদ্রা, ভারতীয় বিভিন্ন প্রিন্সলি স্টেট এবং স্বাধীন রাজ্যের মুদ্রা, বিশ্বের বিলুপ্ত এবং বর্তমানে বিভিন্ন দেশে প্রচলিত মুদ্রা, বিভিন্ন সময় ও দেশের অস্বাভাবিক আকারের, ছিদ্রযুক্ত, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মুদ্রা এবং মেডেল সাজিয়ে রাখা হয়েছে প্রদর্শনীতে। </p> <p>মুদ্রার বাইরে বাংলাদেশের সব নকশার প্রচলিত এবং নমুনা ব্যাংকনোট, বিভিন্ন প্রকার ত্রুটিযুক্ত নোট, বিশ্বের সর্ববৃহৎ আকারের এবং সর্বক্ষুদ্র আকারের প্রচলিত ও স্মারক ব্যাংকনোট, বিখ্যাত ব্যক্তির ছবিযুক্ত, কৃষি বিষয়ক, পাহাড়ের ছবিযুক্ত, গ্রেডিংযুক্ত এবং ব্রিটিশ ভারতীয়, পাকিস্তানের ১৯৪৭-৭১ সময়কার ব্যাংকনোট ও প্রাইজবন্ড ঠাঁই পেয়েছে এ প্রদর্শনীতে। </p> <p>প্রদর্শনীতে বিক্রয়ের জন্য ‘ব্যাংকনোট ও মুদ্রায় আরবি ক্যালিগ্রাফি’ শীর্ষক একটি গবেষণামূলক বই রয়েছে। লেখক শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম জানান, আন্তর্জাতিক ব্যাংকনোট ও মুদ্রায় ক্যালিগ্রাফির যেসব শৈলী ব্যবহৃত হয়েছে, সেগুলোর তালিকা ও বর্ণনা এতে উপস্থাপন করা হয়েছে। একজন ক্যালিগ্রাফার হিসেবে পৃথিবীর যতগুলো দেশের ব্যাংক নোটে আরবি ক্যালিগ্রাফি আছে তার নমুনা শৈলীভিত্তিক সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছেন তিনি। </p> <p>লেখকের মতে, যারা ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন এবং লিগ্যাল টেন্ডার ও কমেমোরেটিভ নোটে বিচিত্র আরবি ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, তাদের জন্য এটা দেখার বিশেষ সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। যারা ক্যালিগ্রাফি কলমে কাজ করেন এই প্রদর্শনী তাদের জন্য একটি চিন্তার দুয়ার খুলে দিবে।</p>