রমজানে উপহার বিনিময়ে ভিন্ন মাত্রা

তানজিদ শুভ্র
তানজিদ শুভ্র
শেয়ার
রমজানে উপহার বিনিময়ে ভিন্ন মাত্রা
ছবি : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি

রমজান শুধু আত্মসংযমের মাস নয়, এটি আত্মশুদ্ধি ও ইবাদত করার অনন্য সুযোগ। উপহার বিনিময় ইসলামী সংস্কৃতিরই এক সুন্দর অংশ, যা সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়ায় এবং হৃদয়ের বন্ধন দৃঢ় করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা একে অন্যকে উপহার দাও, এটি পারস্পরিক ভালোবাসা বাড়ায় এবং মন থেকে শত্রুতা দূর করে দেয়। (তিরমিজি)

আর যদি সেই উপহার হয় ইসলামী মূল্যবোধে সমৃদ্ধ, তাহলে তা শুধু ভালোবাসার প্রতীক নয়, বরং প্রিয়জনের আত্মিক উন্নতির পথেও হতে পারে দারুণ অনুপ্রেরণা।

প্রিয়জনের রমজান ও আসন্ন ঈদকে আরো বেশি অর্থবহ করতে পারে নিচে এমন কয়েকটি উপহার তুলে ধরা হলো

কোরআন ও ইসলামিক বই

পবিত্র কোরআন সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মীয় গ্রন্থ। একটি সুন্দর কোরআন শরিফ উপহার দেওয়া মানে প্রিয়জনকে আল্লাহর বাণীর সঙ্গী করে দেওয়া। এটি শুধু একটি বই নয়, বরং জীবনের পথপ্রদর্শক, আলোর দিশারি। বাংলা অনুবাদ, ব্যাখ্যাসহ কোরআন উপহার দিতে পারেন, যা সহজবোধ্য হবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা কোরআন তিলাওয়াত করো, কারণ কোরআন কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে। (মুসলিম)

এ ছাড়া ইসলামী বইও হতে পারে জ্ঞান অর্জন ও আত্মশুদ্ধির পথচলায় অনন্য সঙ্গী। হাদিসের বই, রাসুল (সা.)-এর জীবনী, সাহাবিদের গল্প, দোয়ার বই, ইসলামী আদর্শ বা রমজানের বিশেষ আমল নিয়ে লেখা বইগুলো প্রিয়জনের জন্য হতে পারে এক চমৎকার উপহার।

জায়নামাজ ও তসবিহ

একটি নরম, আরামদায়ক, কুশনযুক্ত এবং সুন্দর ডিজাইনের জায়নামাজ উপহার দেওয়া মানে প্রিয়জনকে নামাজের প্রতি আরো মনোযোগী হতে অনুপ্রাণিত করা।

রমজানে তারাবি, তাহাজ্জুদ, নফল নামাজ ও অন্য ইবাদতের পরিমাণ বাড়ে; তাই একটি ভালো মানের জায়নামাজ ইবাদতের আরাম ও খুশুখুজু বাড়িয়ে দিতে পারে। আজকাল নানা ধরনের ভাঁজযোগ্য, ভ্রমণ উপযোগী জায়নামাজ পাওয়া যায়, যা উপহার হিসেবে হবে দারুণ অর্থবহ।

তসবিহ শুধু জিকিরের হাতিয়ার নয়, বরং অন্তরের প্রশান্তির প্রতীকও বটে। সুন্দর পাথরের বা কাঠের তৈরি মসৃণ তসবিহ হাতে নিলে জিকিরে মনোযোগ বাড়ে। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার’—এই পবিত্র বাক্যগুলো উচ্চারণে তসবিহ যেন মনে করিয়ে দেয়, আল্লাহর স্মরণেই রয়েছে অন্তরের প্রশান্তি।

রমজানে প্রিয়জনকে এমন একটি তসবিহ উপহার দিতে পারেন, যা দেখতে নান্দনিক, হাতে রাখলে আরামদায়ক এবং প্রতিবার ব্যবহার করার সময় আপনার ভালোবাসার কথাও মনে করিয়ে দেবে।

সুবাসে মোড়ানো আতর

আতর শুধু সুগন্ধ নয়, বরং সুন্নাহর অনুসরণও। রাসুলুল্লাহ (সা.) আতর ব্যবহার করতেন এবং উম্মতকেও উৎসাহিত করেছেন।

নামাজের আগে আতর লাগানো বা ইফতারের সময় একটুখানি সুগন্ধ নেওয়াএটি শুধু মনকে সতেজ করে না, বরং ইবাদতের প্রতি এক ধরনের ইতিবাচক অনুভূতিও তৈরি করে। আজকাল অ্যালকোহলমুক্ত, মৃদু ও দীর্ঘস্থায়ী সুগন্ধিযুক্ত নানা ধরনের আতর পাওয়া যায়মেশক, ওউদ, রোজ প্রভৃতি সুগন্ধির আতর জনপ্রিয়। প্রিয়জনের পছন্দ অনুযায়ী কোনো বিশেষ সুগন্ধির আতর বেছে নিতে পারেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যাকে সুগন্ধি দান করা হয়, সে যেন তা ফিরিয়ে না দেয়। কেননা এটি হালকা জিনিস, কিন্তু সুগন্ধযুক্ত। (মুসলিম)

ইসলামিক ওয়াল আর্ট ও ক্যালিগ্রাফি

রমজানে প্রিয়জনকে উপহার দিতে চাইলে ইসলামিক ওয়াল আর্ট ও ক্যালিগ্রাফি হতে পারে একটি চমৎকার অর্থবহ উপহার। এটি শুধু ঘরের সৌন্দর্য বাড়াবে না, বরং প্রতিবার তাকালে আল্লাহর স্মরণ ও আত্মিক প্রশান্তির অনুভূতিও জাগিয়ে তুলবে।

আধুনিক ও ক্লাসিক ডিজাইনের ইসলামিক ওয়াল আর্ট আজকাল বেশ জনপ্রিয়। কোরআনের আয়াত, আল্লার ৯৯ নাম বা রাসুল (সা.)-এর নাম নিয়ে তৈরি করা দৃষ্টিনন্দন ক্যালিগ্রাফি আর্টপিস সত্যিই অনন্য।

দোয়া বোর্ড ও ইসলামিক নোটবুক

দোয়া বোর্ড ও ইসলামিক নোটবুক দৈনন্দিন জীবনে সহায়ক হবে এবং ইবাদতের প্রতি অনুপ্রাণিত করবে। সকাল-সন্ধ্যার দোয়া, খাওয়ার আগে-পরে দোয়া, ঘুমানোর দোয়া, ঘর থেকে বের হওয়া ও ঘরে প্রবেশের দোয়া, ইস্তিগফার বা বিশেষ প্রয়োজনের দোয়া প্রভৃতি দেয়ালে টাঙানো কিংবা ডেস্কে রাখার উপযোগী দোয়া বোর্ড শুধু ঘরের সৌন্দর্য বাড়াবে না, বরং প্রতিদিনের ইবাদত ও আমলকে সহজ এবং অর্থবহ করে তুলবে।

হাতঘড়ি

রমজান এমন এক মাস, যেখানে সময়ের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। সাহরি, ইফতার, নামাজ, কোরআন তিলাওয়াতপ্রতিটি আমলেই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। তাই প্রিয়জনকে একটি সুন্দর, মার্জিত হাতঘড়ি উপহার দেওয়া যেতে পারে।

রমজানে এমন একটি হাতঘড়ি উপহার দিন, যা প্রিয়জনকে প্রতিটি মুহূর্তের মূল্য বুঝতে সাহায্য করবে। ইবাদত, কাজ, বিশ্রামসব কিছুর জন্য সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে অনুপ্রাণিত করবে। সময়ের প্রতি দায়িত্ববোধ আর ইবাদতের প্রতি আন্তরিকতা জাগিয়ে তুলুক আপনার ভালোবাসায় মোড়ানো এই উপহার!

টুপি ও হিজাব : শালীনতার প্রতীক, ইবাদতের সঙ্গী

টুপি ও হিজাব দুটিই রমজানের জন্য চমৎকার ইসলামী উপহার হতে পারে। এগুলো কেবল পোশাকের অংশ নয়, বরং ইবাদতের অনুষঙ্গ, যা শালীনতা ও ধর্মীয় চেতনাকে ফুটিয়ে তোলে।

মুসলিম পুরুষদের জন্য টুপি পরা শুধু ঐতিহ্য নয়, এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহর অনুসরণও বটে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, কবর জিয়ারত এবং বিভিন্ন ধর্মীয় আয়োজনে টুপি পরা ইসলামী সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্তমানে বিভিন্ন ডিজাইন ও কাপড়ে তৈরি টুপি পাওয়া যায়। যেমনতুর্কি টুপি, আরবি টুপি, কিংবা হাতে এমব্রয়ডারি করা নান্দনিক টুপি। সহজে বহনযোগ্য ও প্রতিদিনের জন্য আরামদায়ক টুপি প্রিয়জনের জন্য হতে পারে সওয়াবের সুন্দর উপহার।

নারীদের জন্য হিজাব শুধু শালীনতার প্রতীক নয়, বরং এটি আত্মমর্যাদা ও ইসলামী পর্দার সৌন্দর্যও প্রকাশ করে। রমজান এমনিতেই আত্মশুদ্ধি ও ইবাদতের মাস, এই সময় প্রিয়জনকে একটি আরামদায়ক ও মানানসই হিজাব উপহার দেওয়া হতে পারে দারুণ ব্যাপার। সফট ক্রেপ, শিফন, প্রিমিয়াম কটনএমন আরামদায়ক কাপড়ে তৈরি হিজাবগুলো আধুনিকতার সঙ্গে ধর্মীয় শালীনতাকে সুন্দরভাবে মেলাতে পারে।

টুপি ও হিজাবএগুলো কেবল সৌন্দর্যবর্ধক উপহার নয়, বরং ইবাদতের প্রতি ভালোবাসা ও শালীনতার নিদর্শন। রমজানে প্রিয়জনের জন্য এমন উপহার দিন, যা তাদের বাহ্যিক সৌন্দর্যের সঙ্গে সঙ্গে অন্তরের ঈমানকেও জাগিয়ে তুলবে।

পারস্পরিক সুসম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে হাদিয়ার আদান-প্রদান খুবই কার্যকর। এতে হৃদ্যতা ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা হাদিয়া আদান-প্রদান করো। এর মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে হৃদ্যতা সৃষ্টি হবে। (বুখারি)

উপহার বিনিময় শুধু সামাজিক শিষ্টাচার নয়, এটি ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও আন্তরিকতার নিদর্শন। ইসলামের দৃষ্টিতে উপহার দেওয়া যেমন প্রশংসনীয়, তেমনই তা সম্পর্ককে মজবুত করে এবং হৃদয়ের দূরত্ব কমিয়ে আনে, বিশেষত রমজানে ইসলামী ভাবধারায় অনুপ্রাণিত উপহার প্রিয়জনের জন্য হয়ে উঠতে পারে আত্মিক সমৃদ্ধির সোপান। তাই এবারের রমজানে উপহার হোক এমন কিছু, যা শুধু মুহূর্তের আনন্দ নয়, বরং তার ঈমান, আমল ও মনোবলকে জাগিয়ে তুলবে, জীবনকে করবে আরো অর্থবহ। উপহার হোক ভালোবাসায় মোড়ানো, কল্যাণে ভরা আর সওয়াবের উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত!

 

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব, ৭২৭
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : যদি তোমরা ঘরে কাউকেও না পাও তাহলে তাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়। যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ফিরে যাও, তবে তোমরা ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। আর তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।

যে ঘরে কেউ বাস করে না তাতে তোমাদের জন্য দ্রব্যসামগ্রী থাকলে সেখানে তোমাদের প্রবেশে কোনো পাপ নেই।... (সুরা : নুর, আয়াত : ২৮-২৯)

আয়াতদ্বয়ে অন্যের ঘরে প্রবেশের বিধান বর্ণনা করা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১. বসবাস করে এমন ঘরে যদি কেউ না থাকে তবু তাতে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না। আর যে ঘর মানুষের বসবাসের জন্য নয় একান্ত প্রয়োজনে তাতে অনুমতি ছাড়াও প্রবেশ করা যায়।

২. ঘরের দরজা বন্ধ থাকুক বা খোলা তাতে প্রবেশের আগে অনুমতি গ্রহণ করা আবশ্যক।

৩. ঘরের সাবালক বাসিন্দার মতো নাবালক বাসিন্দাও ঘরে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারে।

৪. বিরান ও পরিত্যক্ত বাড়িতে প্রবেশের জন্য অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন নেই। কেননা এর সঙ্গে মানুষের আব্রু ও ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা রক্ষার প্রশ্ন জড়িত নয়।

৫. ওমর (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি দরজার ছিদ্র দিয়ে উঁকি দিল সে ফিসকে (প্রকাশ্য পাপাচার) লিপ্ত হলো।

(তাফসিরে কুরতুবি : ১৫/১৯৮)

 

 

মন্তব্য
দেশে-বিদেশে

ইফতারের বড় পাঁচ আয়োজন

    ইবাদতের পাশাপাশি বর্তমানে ইফতার হয়ে উঠেছে মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষঙ্গ। ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক মেলবন্ধনকে শক্তিশালী করতে মুসলিম বিশ্বের বহু স্থানে ইফতারের নানা আয়োজন করা হয়। মুসলিম বিশ্বের বড় পাঁচ ইফতার আয়োজন নিয়ে লিখেছেন আবরার আবদুল্লাহ
শেয়ার
ইফতারের বড় পাঁচ আয়োজন

১. মক্কা ও মদিনায় : পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইফতারের আয়োজন হয় মক্কার মসজিদুল হারামে। তারপরই রয়েছে মসজিদে নববীর স্থান। প্রতিদিন কয়েক লাখ ওমরাহ প্রার্থী এখানে ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণ করে। গত ১৭ মার্চ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, ১৭ রমজান পর্যন্ত তারা পবিত্র দুই মসজিদে ১১ মিলিয়ন (এক কোটি ১০ লাখ) ইফতারের প্যাকেট বিতরণ করেছে এবং সমপরিমাণ খেজুরের প্যাকেটও বিতরণ করেছে।

তারা আরো বলেছে, প্রতিবছর রমজানে ওমরাহ পালনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। তবু তারা চেষ্টা করছে সবাইকে যেন মানসম্মত খাবার পরিবেশন করা যায়।

(অ্যারাব নিউজ)

২. শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ : সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম নান্দনিক স্থাপনা আবুধাবির শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ। প্রতিদিন হাজার হাজার মুসল্লির ইফতারের ব্যবস্থা থাকে এখানে।

শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ সেন্টারের তত্ত্বাবধানে ‘আওয়ার ফাস্টিং ইনিশিয়েটিভ’-এর আওতায় রমজান মাসজুড়ে ২১ লাখের বেশি ইফতার বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে মসজিদ প্রাঙ্গণে সাড়ে ছয় লাখ এবং সাড়ে ১০ লাখ ইফতার আবুধাবির বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করা হয়। তা ছাড়া রমজানের শেষ ১০ রাতে ৩০ হাজার সাহরি বিতরণ করা হয়। (কালের কণ্ঠ)

৩. ইসতিকলাল মসজিদ : ইন্দোনেশিয়ার ইসতিকলাল মসজিদে হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহত্ ইফতার আয়োজন।

এখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার রোজাদার ইফতার করে থাকে। তাদের সংখ্যা সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজারে উন্নীত হয়। মসজিদ কমিটি স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এই আয়োজন করে থাকে। (এপি নিউজ)

৪. মিসরে গণ-ইফতার : প্রতিবছর রমজান মাসের ১৫ তারিখ মিসরের রাজধানী কায়রোতে আয়োজন করা হয় একটি গণ-ইফতারের। এতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়।

২০১৩ সালে শুরু হওয়া এই সামাজিক সম্প্রীতিমূলক আয়োজন এরই মধ্যে এক যুগ পার করেছে। বর্তমানে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রতিটি অঙ্গনের খ্যাতিমান ব্যক্তিরা এই আয়োজনে অংশ নেন। গণ-ইফতার মুসলিম ও অমুসলিম সবার জন্য উন্মুক্ত। বহু পর্যটকও এই ইফতার আয়োজনে অংশ নিয়ে থাকেন। গতবছর গণ-ইফতারে অংশ নিয়েছিল ৩০ হাজার ব্যক্তি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল ৭০০ টেবিল। এ বছর প্রায় ৫০ হাজার ব্যক্তি তাতে অংশ নেয়। (এসআইএস ডটগভ ডটইজি ও সিবিসি নিউজ)

৫. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম : বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নিতে পারে যেকোনো মানুষ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুসারে বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ব্যবসায়ী, তাবলিগ জামাত, মুসল্লি ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতায় এই গণ-ইফতারের আয়োজন করা হয়। বহু বছর  ধরে বায়তুল মোকাররমের এই জনসেবামূলক কার্যক্রমটি চলছে।

 

 

মন্তব্য

রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের গুরুত্ব

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের গুরুত্ব

রহমত ও মাগফিরাতের দশক শেষ হওয়ার পর আমাদের মধ্যে হাজির হলো নাজাতের দশক। পবিত্র রমজানের এই দশক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্ভরযোগ্য মতানুযায়ী রমজানের শেষ দশকে শান্তির বার্তা নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। যে রাতকে মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদর আখ্যা দিয়েছেন।

মোবারক এই রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম করেছেন। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আমি একে নাজিল করেছি মহিমান্বিত রাতে (লাইলাতুল কদর)। আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত কী? মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে প্রতিটি কাজের জন্য ফেরেশতারা এবং রুহ তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে অবতীর্ণ হয়।
সেই রাতে শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত।

(সুরা : কদর, আয়াত : ১-৫)

বিভিন্ন হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, উল্লিখিত আয়াতে মহিমান্বিত যে রাতের কথা বলা হয়েছে, তা এই শেষ দশকেই লুকিয়ে আছে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো। (বুখারি, হাদিস : ২০১৭)

আমাদের নবীজি (সা.) নিজেও শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন।

এ সময় তিনি যেভাবে ইবাদত করতেন, যা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হতো। এমনকি ইবাদতের মাধ্যমে পূর্ণ সময় কাটানোর আশায় তিনি প্রতিবছর শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ইন্তেকাল পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন। এরপর তাঁর স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮; মুসলিম, হাদিস : ২০০৬)

শেষ দশকে অধিক ইবাদতের পাশাপাশি অধিক পরিমাণে দোয়াও করতে হবে।

কেননা নবীজি (সা.) রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি দোয়া করতেন। উম্মতকে শেষ দশকে বেশি বেশি দোয়া করার পরামর্শ দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, যদি আমি লাইলাতুল কদর জানতে পারি, তাহলে সে রাতে কী বলব? তিনি বলেন, তুমি বোলো, (উচ্চারণ) আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি। (অর্থ) হে আল্লাহ, আপনি সম্মানিত ক্ষমাকারী, আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)

এ ছাড়া যেহেতু এটি নাজাতের দশক, এই দশকে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত পাওয়ার জন্য আমরা বেশি বেশি তাওবা করতে পারি। কেননা এই মাস মহান আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ করিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার মাস। কোনো ব্যক্তি যদি রমজানে তার গুনাহ ক্ষমা করাতে ব্যর্থ হয়, তবে তার প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হুঁশিয়ারি আছে। তিনি বলেছেন, ওই ব্যক্তির নাক ধুলিধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

 

মন্তব্য
পর্ব : ২০

তারাবিতে কোরআনের বার্তা

সুরা কাসাস
সুরা কাসাস
শেয়ার
তারাবিতে কোরআনের বার্তা

এই সুরায় ফেরাউনের শক্তিমত্তা, ঔদ্ধত্য ও রাজত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। সে বনি ইসরাঈলে নারীদের দাসী বানিয়ে পুরুষদের হত্যা করত। সেই দিনগুলোতে মুসা (আ.)-এর জন্ম হয়। ফেরাউনের বাহিনীর ভয়ে মুসা (আ.)-এর মা তাঁকে সাগরে ভাসিয়ে দেন।

ফেরাউনের পরিবার এই বাচ্চাটি পেয়ে রাজপ্রাসাদে আদর-যত্নে লালন-পালন করতে থাকে। অতঃপর তিনি মিসর থেকে মাদায়ান চলে যান। সেখানে গিয়ে শোয়াইব (আ.)-এর মেয়েকে বিয়ে করেন। ১০ বছর তাঁর রাখাল হিসেবে জীবন পার করেছেন।
এই ঘোষণার মাধ্যমে সুরা শেষ করা হয়েছে যে জান্নাত তাদের জন্য, যারা দুনিয়ার জীবনে উদ্ধত হয় না এবং কোনো ফিতনা-ফ্যাসাদে লিপ্ত হয় না।

 

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. বিভক্তি জাতিসত্তা দুর্বল করে দেয় এবং অন্য জাতিকে কর্তৃত্ব স্থাপনের সুযোগ করে দেয়। (আয়াত : ৪)

২. আল্লাহ চাইলে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকেও শাসকের মর্যাদা দেন। (আয়াত : ৫-৬)

৩. সন্তানের জন্য মায়ের ভালোবাসা আল্লাহ প্রদত্ত।

(আয়াত : ১০)

৪. সন্তানকে মা থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া নিন্দনীয়। (আয়াত : ১৩)

৫. বয়সের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানেও পরিপক্বতা আসে। (আয়াত : ১৪)

৬. অপরাধকারীকে সাহায্য করাও অপরাধ। (আয়াত : ১৭)

৭. চলাফেরার শালীনতা নারী জীবনের সৌন্দর্য। (আয়াত : ২৫)

৮. শ্রমিক হবে শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য।

(আয়াত : ২৬)

৯. যোগ্য লোকের সহযোগিতা গ্রহণ করো। (আয়াত : ৩৪)

১০. জয় ও পরাজয় আল্লাহ নির্ধারণ করেন। (আয়াত : ৩৫)

১১. মুমিন সত্য গ্রহণে দেরি করে না।

(আয়াত : ৫৩)

১২. ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ প্রতিদান। (আয়াত : ৫৪)

১৩. অর্থহীন কাজ পরিহার করো।

(আয়াত : ৫৫)

১৪. পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করো।

(আয়াত : ৭৭)

১৫. পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি কোরো না।

(আয়াত : ৭৭)

 

সুরা আনকাবুত

আলোচ্য সুরা আনকাবুতে যুগে যুগে কিভাবে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়, তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দুর্বল-সবল ও বিশ্বাসী-অবিশ্বাসীর দ্বন্দ্ব চিরন্তন। এই সুরায় ঈমানদারদের পার্থিব জীবনে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সবর ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে বলা হয়েছে। কোরআনের অলৌকিকতা উল্লেখ করে মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত সপ্রমাণ করা হয়েছে। নির্যাতিত ঈমানদারদের হিজরতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। হারাম শরিফকে নিরাপদ নগরী ঘোষণা করা হয়েছে। এবং সবশেষে এই চিরন্তন রীতি উল্লেখ করা হয়েছে যে যারাই পরিশ্রম করবে, অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাবে, তারা সফলতা পাবে।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. পরকালীন মুক্তির জন্য ঈমানের ঘোষণাই যথেষ্ট নয়। (আয়াত : ২)

২. পাপীদের বাড়বাড়ন্তে হতাশার কিছু নেই। কেননা পাপীরা আল্লাহর আয়ত্তের বাইরে নয়। (আয়াত : ৪)

৩. মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।

(আয়াত : ৮)

৪. দ্বিন পালনের কষ্টকে শাস্তি মনে কোরো না। (আয়াত : ১০)

৫. মুনাফিকের পরিচয় গোপন থাকে না। (আয়াত : ১১)

৬. আল্লাহভীতি মুমিনের জীবনে উত্তম পাথেয়। (আয়াত : ১৬)

৭. পৃথিবীতে ভ্রমণ কোরো। কেননা তা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে। (আয়াত : ২০)

৮. সৃষ্টিজগতে আল্লাহর নির্দেশ অপরিহার্য। (আয়াত : ২২)

৯. আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। (আয়াত : ২৩)

১০. বিপর্যয়কারীদের ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য চাও। (আয়াত : ৩০)

১১. আল্লাহ ছাড়া সব শক্তিই ক্ষণস্থায়ী। (আয়াত : ৪১)

১২. নামাজ মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। (আয়াত : ৪৫)

১৩. আল্লাহর স্মরণ সবচেয়ে বড় এবং তা ইবাদতের প্রাণ। (আয়াত : ৪৫)

১৪. বিতর্কে শিষ্টাচার রক্ষা করো।

(আয়াত : ৪৬)

১৫. প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। (আয়াত : ৫৭)

১৬. জীবিক আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত।

(আয়াত : ৬২)      

গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ