অনলাইনে পাপের উপাদান থেকে সতর্কতা প্রয়োজন

শরিফ আহমাদ
শরিফ আহমাদ
শেয়ার
অনলাইনে পাপের উপাদান থেকে সতর্কতা প্রয়োজন
ছবি : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি

অনলাইনের সঠিক ব্যবহার জীবনকে সহজ, তথ্যবহুল ও উপকারী করে তুলছে। এর অপব্যবহার আবার ব্যক্তি ও সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বর্তমানে অনলাইনের অপব্যবহার লক্ষণীয় হারে বাড়ছে। নিত্যনতুন পাপের পথ আবিষ্কার হচ্ছে।

হুমড়ি খেয়ে পাপের পথে ছুটে চলছে বেশির ভাগ মানুষ, বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অনলাইন ব্যবহার করা উচিত।

 

সময় ও অর্থ অপচয়

অনলাইনে সবচেয়ে বেশি হয় সময়ের অপচয়। সময়ের অপচয় মানেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।

আমল থেকে বঞ্চিত হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন, সময়ের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে। (সুরা : আসর, আয়াত : ১-২)

অনলাইনে অনেক টাকা অনর্থক কাজে ব্যয় হয়। ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনতে হুলুস্থুল কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়।

বিচার দিবসে এসব অনর্থক ব্যয়ের হিসাব দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছ থেকে আদম সন্তানের পা সরবে না। সেগুলোর অন্যতম হলোবনি আদমের সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, কোথা থেকে সে তা অর্জন করেছে আর কী কাজে সে তা ব্যয় করেছে? (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৬)

 

সুপার এডিটের কারসাজি

ইসলাম মিথ্যা, অপবাদ ও মানুষের সম্মানহানিকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে কিংবা প্রতিশোধ নিতে কারো পিকচার সংগ্রহ করে সুপার এডিটের দ্বারা নগ্ন বানিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে প্রকাশ করা এবং মানুষকে দেখানো কবিরা গুনাহ। এডিটের দক্ষতা দেখাতে গিয়ে কারো ছবি বিকৃত করে অপপ্রচার চালানো, চরিত্রহনন করাও গুনাহের কাজ।

কিয়ামতের দিন শরিয়তবিরোধী কাজকর্ম করার জন্য সেই ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হবে। আল্লাহ বলেন, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই কান, চক্ষু ও অন্তরএসবের প্রতিটির জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

(সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬)

 

অশ্লীলতার জয়জয়কার

আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় অশ্লীলতা ছড়ানো যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ স্বেচ্ছায় এসব কনটেন্ট শেয়ার, লাইক ও কমেন্টের মাধ্যমে অশ্লীলতা প্রচারে সহযোগিতা করছে। অথচ এগুলো ইসলামে গুরুতর অপরাধ। তাদের জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারিত আছে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না। (সুরা : নুর, আয়াত : ১৯)

যারা আগে এসব কাজে লিপ্ত হয়েছে তাদের উচিত দ্রুত তাওবা করা, এসব কনটেন্ট ডিলেট করা এবং অশ্লীলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম ঘোষণা করা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিবাচক, নৈতিক ও ইসলামী কনটেন্ট ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ভালো কাজের প্রতি আহ্বান জানায় তার জন্য সে পথের অনুসারীদের সওয়াবের অনুরূপ সওয়াব রয়েছে। এতে তাদের সওয়াব থেকে কিছুমাত্র ঘাটতি হবে না। আর যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান জানাবে তার ওপর তার অনুসারীদের গুনাহের অনুরূপ গুনাহ বর্তাবে। এতে তাদের গুনাহ থেকে কিছুমাত্র কম হবে না।

(মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬০ )

 

ব্ল্যাকমেইল প্রবণতা বৃদ্ধি

মিডিয়ায় হ্যাকিং, ব্ল্যাকমেইলিং বা অন্য কোনো প্রতারণার খবর নিয়মিত শিরোনাম হচ্ছে। অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের প্রবণতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারো গোপন তথ্যের পেছনে পড়া এবং স্ক্যান্ডাল ভিডিও ফাঁস করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদাররা! তোমরা অধিক অনুমান থেকে বেঁচে থাকো। নিশ্চয়ই কিছু অনুমান পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপন বিষয় অনুসন্ধান কোরো না। (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)

সাইবার আক্রমণ চালিয়ে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাকিং করে ব্ল্যাকমেইল করার মাধ্যমে যেকোনো মানুষের সম্পদ আত্মসাত্ করা মহাপাপ। ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার অনেক ব্যক্তি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বেশির ভাগ সময় এতটাই হতাশাগ্রস্ত হয় যে তারা আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর পথও বেছে নেয়। ব্ল্যাকমেইল করার আগে সাইবার যোদ্ধারা সাবধান। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, হে মুমিনরা! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯)

 

অনলাইনে ব্যবসায় প্রতারণা করা

অনলাইনে সুন্দরী নারীর মাধ্যমে লাইভ করা, বিজ্ঞাপনের চটকদার স্লোগান, ডিসকাউন্ট এবং বিশেষ অফারের নামে মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। অনলাইন মার্কেটে বেশির ভাগ সময় কাস্টমারের অর্ডার করা পণ্য পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। পণ্যে ভেজাল মিশিয়ে দেওয়া হয়। এগুলো গুনাহের কাজ। ধোঁকাবাজ ও প্রতারকদের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ বলেন, হীন ঠকবাজরা ধ্বংস হোক! যারা লোকদের থেকে গ্রহণ করার সময় পুরোপুরি গ্রহণ করে; কিন্তু অন্যকে মেপে ও ওজন করে দেওয়ার সময় কম দেয়।

(সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত : ১৩)

ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বচ্ছতা ও ন্যায়পরায়ণতা আবশ্যক করেছে। সততা অবলম্বনের সুফল ও অসততার কুফল বর্ণিত হয়েছে।

 

অশ্লীল কনটেন্ট বানানো

অশ্লীল ভিডিও কনটেন্ট কিংবা যৌন সুড়সুড়ি মূলক অশ্লীল কাব্য, গল্প-উপন্যাস ইত্যাদি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে ইনকাম করা সম্পূর্ণ হারাম। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অ্যাপের সাহায্যে কিছু পথভ্রষ্টা নারীর শরীর দেখিয়ে অর্থোপার্জন করছে। ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামে গ্রুপিং করে অবৈধ পথে ইনভায়েট করছে। এসব নোংরামি স্পষ্ট হারাম। এগুলো পতিতাবৃত্তির নবরূপ। ওদের খপ্পর থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য। মহান আল্লাহ বলেন, শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৬৮)

ইসলাম পরিশ্রম করে উপার্জন করাকে গুরুত্ব দিয়েছে। সফলতার রাজপথ দেখিয়ে দিয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (হালাল উপার্জনের জন্য) ছড়িয়ে পড়ো, আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা : জুমা, আয়াত : আয়াত ১০)

 

সব গুনাহ থেকে বাঁচুন

অনলাইনের সব পাপ এড়ানো আজকের যুগে চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখতে না চাইলেও অনেক অবৈধ কিছু সামনে চলে আসে। এখানে কে কতটা মুত্তাকি নিজেই ভালো বুঝতে পারে। কেউ যদি শয়তানের প্ররোচনায় অশ্লীল কিছু দেখে বা অজ্ঞতাবশত মন্দ কিছু করে, এতে অবশ্যই গুনাহগার হবে। পাপী ব্যক্তি যদি খালেস দিলে তাওবা করে এবং কারো কাছে গুনাহ প্রকাশ না করে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কর্ম করে, অতঃপর তাওবা করে এবং সংশোধন করে নেয় তাহলে তো তিনি ক্ষমাপরায়ণ, দয়াশীল।

(সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৪)

 

মহান আল্লাহ আমাদের পাপমুক্ত জীবন দান করুন।

 

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব, ৭২৭
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : যদি তোমরা ঘরে কাউকেও না পাও তাহলে তাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়। যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ফিরে যাও, তবে তোমরা ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। আর তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।

যে ঘরে কেউ বাস করে না তাতে তোমাদের জন্য দ্রব্যসামগ্রী থাকলে সেখানে তোমাদের প্রবেশে কোনো পাপ নেই।... (সুরা : নুর, আয়াত : ২৮-২৯)

আয়াতদ্বয়ে অন্যের ঘরে প্রবেশের বিধান বর্ণনা করা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১. বসবাস করে এমন ঘরে যদি কেউ না থাকে তবু তাতে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না। আর যে ঘর মানুষের বসবাসের জন্য নয় একান্ত প্রয়োজনে তাতে অনুমতি ছাড়াও প্রবেশ করা যায়।

২. ঘরের দরজা বন্ধ থাকুক বা খোলা তাতে প্রবেশের আগে অনুমতি গ্রহণ করা আবশ্যক।

৩. ঘরের সাবালক বাসিন্দার মতো নাবালক বাসিন্দাও ঘরে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারে।

৪. বিরান ও পরিত্যক্ত বাড়িতে প্রবেশের জন্য অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন নেই। কেননা এর সঙ্গে মানুষের আব্রু ও ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা রক্ষার প্রশ্ন জড়িত নয়।

৫. ওমর (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি দরজার ছিদ্র দিয়ে উঁকি দিল সে ফিসকে (প্রকাশ্য পাপাচার) লিপ্ত হলো।

(তাফসিরে কুরতুবি : ১৫/১৯৮)

 

 

মন্তব্য
দেশে-বিদেশে

ইফতারের বড় পাঁচ আয়োজন

    ইবাদতের পাশাপাশি বর্তমানে ইফতার হয়ে উঠেছে মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষঙ্গ। ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক মেলবন্ধনকে শক্তিশালী করতে মুসলিম বিশ্বের বহু স্থানে ইফতারের নানা আয়োজন করা হয়। মুসলিম বিশ্বের বড় পাঁচ ইফতার আয়োজন নিয়ে লিখেছেন আবরার আবদুল্লাহ
শেয়ার
ইফতারের বড় পাঁচ আয়োজন

১. মক্কা ও মদিনায় : পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইফতারের আয়োজন হয় মক্কার মসজিদুল হারামে। তারপরই রয়েছে মসজিদে নববীর স্থান। প্রতিদিন কয়েক লাখ ওমরাহ প্রার্থী এখানে ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণ করে। গত ১৭ মার্চ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, ১৭ রমজান পর্যন্ত তারা পবিত্র দুই মসজিদে ১১ মিলিয়ন (এক কোটি ১০ লাখ) ইফতারের প্যাকেট বিতরণ করেছে এবং সমপরিমাণ খেজুরের প্যাকেটও বিতরণ করেছে।

তারা আরো বলেছে, প্রতিবছর রমজানে ওমরাহ পালনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। তবু তারা চেষ্টা করছে সবাইকে যেন মানসম্মত খাবার পরিবেশন করা যায়।

(অ্যারাব নিউজ)

২. শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ : সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম নান্দনিক স্থাপনা আবুধাবির শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ। প্রতিদিন হাজার হাজার মুসল্লির ইফতারের ব্যবস্থা থাকে এখানে।

শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ সেন্টারের তত্ত্বাবধানে ‘আওয়ার ফাস্টিং ইনিশিয়েটিভ’-এর আওতায় রমজান মাসজুড়ে ২১ লাখের বেশি ইফতার বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে মসজিদ প্রাঙ্গণে সাড়ে ছয় লাখ এবং সাড়ে ১০ লাখ ইফতার আবুধাবির বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করা হয়। তা ছাড়া রমজানের শেষ ১০ রাতে ৩০ হাজার সাহরি বিতরণ করা হয়। (কালের কণ্ঠ)

৩. ইসতিকলাল মসজিদ : ইন্দোনেশিয়ার ইসতিকলাল মসজিদে হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহত্ ইফতার আয়োজন।

এখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার রোজাদার ইফতার করে থাকে। তাদের সংখ্যা সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজারে উন্নীত হয়। মসজিদ কমিটি স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এই আয়োজন করে থাকে। (এপি নিউজ)

৪. মিসরে গণ-ইফতার : প্রতিবছর রমজান মাসের ১৫ তারিখ মিসরের রাজধানী কায়রোতে আয়োজন করা হয় একটি গণ-ইফতারের। এতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়।

২০১৩ সালে শুরু হওয়া এই সামাজিক সম্প্রীতিমূলক আয়োজন এরই মধ্যে এক যুগ পার করেছে। বর্তমানে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রতিটি অঙ্গনের খ্যাতিমান ব্যক্তিরা এই আয়োজনে অংশ নেন। গণ-ইফতার মুসলিম ও অমুসলিম সবার জন্য উন্মুক্ত। বহু পর্যটকও এই ইফতার আয়োজনে অংশ নিয়ে থাকেন। গতবছর গণ-ইফতারে অংশ নিয়েছিল ৩০ হাজার ব্যক্তি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল ৭০০ টেবিল। এ বছর প্রায় ৫০ হাজার ব্যক্তি তাতে অংশ নেয়। (এসআইএস ডটগভ ডটইজি ও সিবিসি নিউজ)

৫. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম : বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নিতে পারে যেকোনো মানুষ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুসারে বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ব্যবসায়ী, তাবলিগ জামাত, মুসল্লি ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতায় এই গণ-ইফতারের আয়োজন করা হয়। বহু বছর  ধরে বায়তুল মোকাররমের এই জনসেবামূলক কার্যক্রমটি চলছে।

 

 

মন্তব্য

রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের গুরুত্ব

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের গুরুত্ব

রহমত ও মাগফিরাতের দশক শেষ হওয়ার পর আমাদের মধ্যে হাজির হলো নাজাতের দশক। পবিত্র রমজানের এই দশক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্ভরযোগ্য মতানুযায়ী রমজানের শেষ দশকে শান্তির বার্তা নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। যে রাতকে মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদর আখ্যা দিয়েছেন।

মোবারক এই রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম করেছেন। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আমি একে নাজিল করেছি মহিমান্বিত রাতে (লাইলাতুল কদর)। আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত কী? মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে প্রতিটি কাজের জন্য ফেরেশতারা এবং রুহ তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে অবতীর্ণ হয়।
সেই রাতে শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত।

(সুরা : কদর, আয়াত : ১-৫)

বিভিন্ন হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, উল্লিখিত আয়াতে মহিমান্বিত যে রাতের কথা বলা হয়েছে, তা এই শেষ দশকেই লুকিয়ে আছে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো। (বুখারি, হাদিস : ২০১৭)

আমাদের নবীজি (সা.) নিজেও শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন।

এ সময় তিনি যেভাবে ইবাদত করতেন, যা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হতো। এমনকি ইবাদতের মাধ্যমে পূর্ণ সময় কাটানোর আশায় তিনি প্রতিবছর শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ইন্তেকাল পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন। এরপর তাঁর স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮; মুসলিম, হাদিস : ২০০৬)

শেষ দশকে অধিক ইবাদতের পাশাপাশি অধিক পরিমাণে দোয়াও করতে হবে।

কেননা নবীজি (সা.) রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি দোয়া করতেন। উম্মতকে শেষ দশকে বেশি বেশি দোয়া করার পরামর্শ দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, যদি আমি লাইলাতুল কদর জানতে পারি, তাহলে সে রাতে কী বলব? তিনি বলেন, তুমি বোলো, (উচ্চারণ) আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি। (অর্থ) হে আল্লাহ, আপনি সম্মানিত ক্ষমাকারী, আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)

এ ছাড়া যেহেতু এটি নাজাতের দশক, এই দশকে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত পাওয়ার জন্য আমরা বেশি বেশি তাওবা করতে পারি। কেননা এই মাস মহান আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ করিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার মাস। কোনো ব্যক্তি যদি রমজানে তার গুনাহ ক্ষমা করাতে ব্যর্থ হয়, তবে তার প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হুঁশিয়ারি আছে। তিনি বলেছেন, ওই ব্যক্তির নাক ধুলিধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

 

মন্তব্য
পর্ব : ২০

তারাবিতে কোরআনের বার্তা

সুরা কাসাস
সুরা কাসাস
শেয়ার
তারাবিতে কোরআনের বার্তা

এই সুরায় ফেরাউনের শক্তিমত্তা, ঔদ্ধত্য ও রাজত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। সে বনি ইসরাঈলে নারীদের দাসী বানিয়ে পুরুষদের হত্যা করত। সেই দিনগুলোতে মুসা (আ.)-এর জন্ম হয়। ফেরাউনের বাহিনীর ভয়ে মুসা (আ.)-এর মা তাঁকে সাগরে ভাসিয়ে দেন।

ফেরাউনের পরিবার এই বাচ্চাটি পেয়ে রাজপ্রাসাদে আদর-যত্নে লালন-পালন করতে থাকে। অতঃপর তিনি মিসর থেকে মাদায়ান চলে যান। সেখানে গিয়ে শোয়াইব (আ.)-এর মেয়েকে বিয়ে করেন। ১০ বছর তাঁর রাখাল হিসেবে জীবন পার করেছেন।
এই ঘোষণার মাধ্যমে সুরা শেষ করা হয়েছে যে জান্নাত তাদের জন্য, যারা দুনিয়ার জীবনে উদ্ধত হয় না এবং কোনো ফিতনা-ফ্যাসাদে লিপ্ত হয় না।

 

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. বিভক্তি জাতিসত্তা দুর্বল করে দেয় এবং অন্য জাতিকে কর্তৃত্ব স্থাপনের সুযোগ করে দেয়। (আয়াত : ৪)

২. আল্লাহ চাইলে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকেও শাসকের মর্যাদা দেন। (আয়াত : ৫-৬)

৩. সন্তানের জন্য মায়ের ভালোবাসা আল্লাহ প্রদত্ত।

(আয়াত : ১০)

৪. সন্তানকে মা থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া নিন্দনীয়। (আয়াত : ১৩)

৫. বয়সের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানেও পরিপক্বতা আসে। (আয়াত : ১৪)

৬. অপরাধকারীকে সাহায্য করাও অপরাধ। (আয়াত : ১৭)

৭. চলাফেরার শালীনতা নারী জীবনের সৌন্দর্য। (আয়াত : ২৫)

৮. শ্রমিক হবে শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য।

(আয়াত : ২৬)

৯. যোগ্য লোকের সহযোগিতা গ্রহণ করো। (আয়াত : ৩৪)

১০. জয় ও পরাজয় আল্লাহ নির্ধারণ করেন। (আয়াত : ৩৫)

১১. মুমিন সত্য গ্রহণে দেরি করে না।

(আয়াত : ৫৩)

১২. ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ প্রতিদান। (আয়াত : ৫৪)

১৩. অর্থহীন কাজ পরিহার করো।

(আয়াত : ৫৫)

১৪. পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করো।

(আয়াত : ৭৭)

১৫. পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি কোরো না।

(আয়াত : ৭৭)

 

সুরা আনকাবুত

আলোচ্য সুরা আনকাবুতে যুগে যুগে কিভাবে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়, তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দুর্বল-সবল ও বিশ্বাসী-অবিশ্বাসীর দ্বন্দ্ব চিরন্তন। এই সুরায় ঈমানদারদের পার্থিব জীবনে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সবর ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে বলা হয়েছে। কোরআনের অলৌকিকতা উল্লেখ করে মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত সপ্রমাণ করা হয়েছে। নির্যাতিত ঈমানদারদের হিজরতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। হারাম শরিফকে নিরাপদ নগরী ঘোষণা করা হয়েছে। এবং সবশেষে এই চিরন্তন রীতি উল্লেখ করা হয়েছে যে যারাই পরিশ্রম করবে, অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাবে, তারা সফলতা পাবে।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. পরকালীন মুক্তির জন্য ঈমানের ঘোষণাই যথেষ্ট নয়। (আয়াত : ২)

২. পাপীদের বাড়বাড়ন্তে হতাশার কিছু নেই। কেননা পাপীরা আল্লাহর আয়ত্তের বাইরে নয়। (আয়াত : ৪)

৩. মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।

(আয়াত : ৮)

৪. দ্বিন পালনের কষ্টকে শাস্তি মনে কোরো না। (আয়াত : ১০)

৫. মুনাফিকের পরিচয় গোপন থাকে না। (আয়াত : ১১)

৬. আল্লাহভীতি মুমিনের জীবনে উত্তম পাথেয়। (আয়াত : ১৬)

৭. পৃথিবীতে ভ্রমণ কোরো। কেননা তা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে। (আয়াত : ২০)

৮. সৃষ্টিজগতে আল্লাহর নির্দেশ অপরিহার্য। (আয়াত : ২২)

৯. আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। (আয়াত : ২৩)

১০. বিপর্যয়কারীদের ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য চাও। (আয়াত : ৩০)

১১. আল্লাহ ছাড়া সব শক্তিই ক্ষণস্থায়ী। (আয়াত : ৪১)

১২. নামাজ মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। (আয়াত : ৪৫)

১৩. আল্লাহর স্মরণ সবচেয়ে বড় এবং তা ইবাদতের প্রাণ। (আয়াত : ৪৫)

১৪. বিতর্কে শিষ্টাচার রক্ষা করো।

(আয়াত : ৪৬)

১৫. প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। (আয়াত : ৫৭)

১৬. জীবিক আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত।

(আয়াত : ৬২)      

গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ