<p>ময়মনসিংহের সীমান্ত অঞ্চলে বন্যার পানি অনেকটাই নেমে গেছে। এখন সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিধ্বস্ত বাড়িঘর। এখানকার দরিদ্র কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর নতুনভাবে ঘর নির্মাণ বা মেরামতের নেই প্রয়োজনীয় টাকা ও লোকবল। এই অবস্থায় দ্রুত বাসস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে ক্ষতিগ্রস্তরা। কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :</p> <p>ময়মনসিংহ : জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় লাখ লোক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে যাওয়া বাড়িঘরের সংখ্যা এখনো নিরূপণ করা যায়নি। বাড়িঘর পুনর্নির্মাণের কোনো বরাদ্দও এখনো পাওয়া যায়নি।</p> <p>হালুয়াঘাট পৌর এলাকার দক্ষিণ মণিকুড়া গ্রামের বাসিন্দা সীমা রিশি (৪০)। তিনি বলেন, তিন ছেলে এবং এক মেয়ে রেখে তাঁর স্বামী গত হয়েছেন এক বছর আগে। মাটির ঘরটিই ছিল তাঁদের আশ্রয়স্থল। সেই ঘরও পানির স্রোতে পড়ে যায়। ঘরে থাকা খাট, আসবাব, চালের বস্তা—সবই মাটির নিচে চাপা পড়ে। নতুন করে ঘর তৈরি করবেন, সেই সামর্থ্যও তাঁর নেই। কিভাবে সন্তানদের নিয়ে চলবেন, কিভাবেই বা ঘর তৈরি করবেন—এসব বলে বারবার কেঁদে উঠছিলেন সীমা রিশি।</p> <p>ওই এলাকার আরেক ভুক্তভোগী পলাশ রিশির (২৮) ঘরটিও ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। বর্তমানে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ভাইয়ের বাড়ির বারান্দায়। পলাশের স্ত্রী খুকি রিশি বলেন, ‘ঘর যে তৈরি করব, সেই টাকাও আমাদের নেই।’</p> <p>একই রকম অবস্থা হালুয়াঘাট সদর ইউনিয়নের টিক্কার খালপার এলাকার বৃদ্ধা বিধবা মালেকা (৬০), কৃষি শ্রমিক হেলাল উদ্দিনসহ (৩৫) আরো অনেক পরিবারের। হেলাল উদ্দিন জানান, জমিতে কাজ না থাকায় এখন কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন। নতুন ঘর তুলবেন কিভাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। </p> <p>জুগলী ও কৈচাপুর ইউনিয়নের অবস্থা আরো ভয়াবহ। সেখানে ১০০টির ওপর বসতঘর বন্যার পানিতে ধসে গেছে। মানবেতর জীবন পার করছে পরিবারের কয়েক শ মানুষ। জুগলী ইউনিয়নের ঘোষবেড় এলাকার লাভলী আক্তার (৩৫), হামিদা খাতুন (৫০) পরিবার নিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন প্রতিবেশীর বারান্দায়।</p> <p>ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়াপাড়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নরেশ হাজং। তাঁর ঘরের পুরোটাই ভেঙে ভেতরের সব জিনিস নষ্ট হয়েছে। বলতে গেলে তাঁর পরিবার এক কাপড়েই উঠেছে প্রতিবেশী এক ভাতিজার বাড়িতে।</p> <p>একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাসস্থানের সংকটই এখন তাদের কাছে বড় বিষয়। এ বিষয়ে সরকারের সহায়তা কামনা করে তারা।</p> <p> </p> <p>শেরপুর : নকলা উপজেলার পিছলাকুড়ি গ্রামে ভোগাই নদীর তীরে বসবাস করে ৪০টি হিন্দু পরিবারসহ দেড় শতাধিক পরিবার। এলাকাটি জেলেপল্লী নামেই পরিচিত। গত ৪ অক্টোবর রাতে আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে ভোগাই নদীর বাঁধ ভেঙে তাদের বাড়িঘর, ঘরের জিনিসপত্র, ফসলি জমিসহ সব কিছু তছনছ হয়ে যায়।</p> <p>ছয় দিন পানিবন্দি থাকার পর ঢলের পানি নামতে শুরু করে গত বুধবার থেকে। গতকাল শনিবার দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঘরবাড়ি থেকে পানি নামলেও তাদের দুর্ভোগ কাটেনি।</p> <p>ঢলে ভেঙে পড়েছে বিধবা বানেছ বেগমের (৭০) একমাত্র ঘরটি, ভেসে গেছে সব জিনিস। নিজ ভিটায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘আমার তো আর কিছু নাই। অহন এই ভাঙা ঘর কিবাই টিকঠাক করাম?’</p> <p>মিন্টু মিয়া (৩৪) নামের ঘরভাঙা আরেকজন বলেন, ‘একটাই ঘর, বউ-পুলাপান নিয়া থাকতাম। এহন ঢলে সেডাও ভাইঙ্গা দিল। গরিব মানুষ, ঘর ঠিক করার ট্যাহা নাই। অহন এক ভাইয়ের বাড়ি থাহি। সরকার থাইক্কা খোঁজখবর না নিলে আমার কোনো উফায় থাকব না।’</p> <p>ওই গ্রামের বাসিন্দা প্রাণেশ চন্দ্র বর্মণ (৪২) কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ঢলের পানি আইয়া সব শেষ কইরা দিল। বাড়িও গেছে, ক্ষেতের ফসলও গেছে।’</p> <p>পার্বতী রানী বর্মণ (৬৭) বলেন, ‘বাড়িঘরের ভিতর দিয়া বুকসুমান উঁচা অইয়া ঢল গেছে। চাইর দিন পুলাপাইন, নাতি-পুতি নিয়া পানিতে ভাইস্যা ছিলাম। এহন তো পানি নামছে। ঘর তো ভাঙছে, ঘরে থাকা চাইল-ডাইল, জিনিসপত্র ঢলে ভাসাই নিছে।’</p> <p>[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও হালুয়াঘাট প্রতিনিধি]</p> <p> </p> <p> </p>