সারা দিন রোজা রাখার পর সন্ধ্যায় সেরা মানের সেরা স্বাদের খাবারটি খেতে চান সবাই। সযত্নে বানানো ঘরের খাবারে সব সময় মন ভরে না। আবার বাইরের সব ইফতারির ওপর পূর্ণ আস্থাও রাখা যায় না। এসব বিষয় মাথায় রেখে আইসিসিবির ইফতারির বাজারকে বেছে নেওয়া বলে জানালেন নায়লা রহমান।
তিনি স্বাদ ও মানে আস্থা অর্জন করতে পারা এই বাজার থেকে ইফতারি কিনতে এসেছিলেন বসুন্ধরা থেকে।
প্রশস্ত তিন শ ফিট সড়কসংলগ্ন ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) পুষ্পাঞ্জলি হলে বসেছে ‘নবম আইসিসিবি পুরান ঢাকার ইফতার বাজার’। ঢাকার উত্তরাংশের মানুষের নাগালে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতারসামগ্রী পৌঁছে দিতে প্রায় ১০ বছর আগে আয়োজনটি শুরু হয়েছিল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ইফতারি সাজিয়ে বসা এখানকার ব্যবসায়ীরা মনে করেন, এ কয় বছরে তাঁরা ভোক্তাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন।
পবিত্র রমজানে পুরান ঢাকার ইফতারির প্রতি রয়েছে মানুষের বিশেষ আকর্ষণ। ঐতিহ্যবাহী এই ইফতারির স্বাদ নিতে অনেকেই ছুটে চলেন চকবাজারে। কিন্তু যানজটের এই শহরে চাইলেও পুরান ঢাকায় গিয়ে ইফতারি কেনা সম্ভব হয় না। এ কারণেও ঢাকার উত্তর অংশের রোজাদারদের পছন্দের বাজার হয়ে উঠেছে এটি।
রমজানের মাঝামাঝি এসে ব্যাপক ক্রেতাসমাগমে জমে উঠেছে এই বাজার। শুধু ইফতারি নয়, আইসিসিবিতে রয়েছে সাহরিরও আয়োজন। তবে এই বাজারে পুরান ঢাকার মতো হাঁকডাক নেই। ধুলো, ধোঁয়া আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশমুক্ত।
আইসিসিবির ডেপুটি ব্র্যান্ড ম্যানেজার মেহেদী হাসান মোল্লা কালের কণ্ঠকে জানান, আইসিসিবি নবমবারের মতো আয়োজন করেছে পুরান ঢাকার ইফতারি বাজারের।
ঢাকাই ঐতিহ্যের স্বাদের সঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে নতুন ঢাকার ভোজনরসিকদের পরিচিত করাতেই আইসিসিবির এই উদ্যোগ। যানজটের ভোগান্তি ছাড়াই এখানে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, ধুলাবালিমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে পুরান ঢাকার ইফতারি পাওয়া যাচ্ছে। রয়েছে নানা ধরনের শাহি আইটেম, আচার ও তাজা ফলের জুসের সমাহার। দামও মোটামুটি নাগালের ভেতর। আইসিসিবি নবম পুরান ঢাকার ইফতার বাজার চলবে ২৭ রমজান পর্যন্ত। মেহেদী হাসান মোল্লা জানান, এবার ২০টি প্রতিষ্ঠান ইফতারি নিয়ে বসেছে। প্রতিদিন বাজার শুরু হয় বিকেল ৩টা থেকে। রয়েছে বসে ইফতারি গ্রহণের ব্যবস্থাও।
আইসিসিবির ৫ নম্বর হলে আয়োজিত এই বাজারে এক ছাদের নিচে পাওয়া যাচ্ছে নানা রকম কাবাব, ডিমের চপ, আস্ত খাসির রোস্ট, খাসির লেগ রোস্ট, হোল চিকেন মুসাল্লাম, চিকেন রোস্ট, মাটন কাচ্চি (বাসমতী ও চিনিগুঁড়া), বিফ তেহারি ও বিফ পাক্কি, ভেজিটেবল আইটেমসহ বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন ও শরবত। আছে আনারস, তরমুজ, বাঙ্গি, আঙুর, পেঁপে, স্ট্রবেরি, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফল ও ফলের সালাদ।
ঢাকায় মোগলাই খাবারের জন্য খ্যাতি রয়েছে আইসিসিবি হেরিটেজ রেস্টুরেন্টের। এই ইফতারির বাজারে রয়েছে তাদেরও বড় একটি স্টল। তাদের রয়েছে চার ধরনের বিরিয়ানি, চার ধরনের রোস্ট, ৯ ধরনের কাবাব। এ ছাড়া রয়েছে আরো ১৭ পদের ইফতারির আয়োজন। বিরিয়ানির মধ্যে রয়েছে মাটন কাচ্চি বিরিয়ানি (বাসমতী ও চিনিগুঁড়া), মোরগ-পোলাও, বিফ তেহারি। চিকেন রোস্ট বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ১৭০ টাকা দরে। রোস্টের মধ্যে আরো রয়েছে হোল চিকেন মুসাল্লাম, মাটন লেগ রোস্ট ও হোল মাটন রোস্ট। এ ছাড়া ঢাকাই ইফতারির অতি পরিচিত পদ ছোলা ভুনা, পিঁয়াজু, বেগুনি, ডিমের চপ, আলুর চপ, লুচি-পরোটা, হালিমসহ কয়েক রকমের জিলাপি। গরুর হালিম পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০, ৫০০ ও ৭০০ টাকা দরে। খাসির হালিম বিক্রি হচ্ছে ৪৫০, ৬০০ ও ৮০০ টাকা করে।
আইসিসিবি হেরিটেজ রেস্টুরেন্টের নির্বাহী তন্ময় শিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবারও আমরা মোগল খাবার নিয়েই এসেছি। আমাদের বিখ্যাত বিরিয়ানি, আস্ত খাসির লেগ রোস্ট, বিভিন্ন রকমের কাবাব তো থাকছেই। আমাদের বিরিয়ানি, জিলাপি আর কাবাব আইটেমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।’ তিনি জানান, এবার হেরিটেজ সুইটসের রসমালাই ৬৫০ টাকা, মালাই জর্দা ১০০ থেকে ৪০০ টাকা, রেশমি জিলাপি ৭০০ টাকা, তিলের জিলাপি ৭০০ টাকা, দই ১৩০ থেকে ৩০০ টাকা ও মালাই বুন্দিয়া বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৪০০ টাকায়। আইসিসিবি হেরিটেজ রেস্টুরেন্টে বোরহানি বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ২৮০ টাকায়। লাবান বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়।
গতকাল ‘মাস্টার শেফ সুব্রত আলী’ ও জসিম উদ্দিন ক্যাটারিংয়ের কর্মীরা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। ক্রেতাদের আগ্রহ ছিল নাজিলাস কিচেন অ্যান্ড ক্যাটারিং, রাইসা লাইভ জুস বার, ঠাণ্ডা-গরমের ইফতারির বিভিন্ন পদেও। ইফতারি ছাড়াও আইসিসিবিতে অবস্থিত হেরিটেজ রেস্টুরেন্টে রয়েছে সাহরির আয়োজন। ‘মোগল-এ-মজলিস সাহরি নাইট’ শিরোনামের তাদের এই বিশেষ আয়োজনে রয়েছে মোগল খাবারের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ। রেস্টুরেন্টটি বিকেল ৫টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে খাবার গ্রহণের সুব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছে রেস্টুরেন্টটি।