রাষ্ট্রায়ত্ত বেশ কয়েকটি সংস্থা বেশ ভালো মুনাফা করলেও অনেক প্রতিষ্ঠান লোকসানে রয়েছে। এর ফলে সামগ্রিকভাবে লোকসানের মুখে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান খাত। যদিও ২০২২-২৩ অর্থবছরে সামগ্রিকভাবে এই খাত মুনাফায়ই ছিল বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
চলতি অর্থবছরে এসে টানা ৯ বছর পর সামগ্রিকভাবে বড় লোকসানের মুখে পড়েছে এই খাত।
তাই আগামী অর্থবছরে এই লোকসানের হিসাব আরো বাড়ছে। সংস্থাগুলোর প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামগ্রিক লোকসানের জন্য ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব করা হবে ২৮ হাজার কোটি টাকা।
সামগ্রিক এই লোকসানের বোঝা ভারী করছে তিনটি প্রতিষ্ঠান। এদের লোকসান মেটাতে বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে ২৯ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা।
এই প্রস্তাব গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেট সমীক্ষায় এই তিন প্রতিষ্ঠানের লোকসানের সাময়িক হিসাব দেওয়া হয়েছিল ১৯ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এর আগে লোকসানের এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। এটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাময়িক হিসাব। অর্থবছরের পুরো চিত্র নিয়ে চূড়ান্ত হিসাব শেষে এতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, দুই বছর ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের লোকসান বাড়াচ্ছে ডলারের উচ্চমূল্য। সার্বিকভাবে ডলারের বাড়তি বিনিময় মূল্য ও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির কারণে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে সরকারের ভর্তুকি অনেক বেড়েছে। তা ছাড়া পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে। তবে ব্যয় কমাতে সরকার মূল্য সমন্বয় শুরু করেছে, পুরোপুরি সমন্বয় করতে সময় লাগবে।
এর বাইরে রাষ্ট্রায়ত্ত এসব প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। সব মিলিয়ে বড় লোকসানে পড়েছে কিছু প্রতিষ্ঠান।
২০২২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ৮৯ টাকায় ডলার দেওয়া হয়েছিল। গত বছরেও ডলার কিনতে হয়েছে ১০৬ টাকায়, আর তা এখন ১১৭ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনতেই অনেক বেশি বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে।
আগামী বৃহস্পতিবার বাজেট পেশের দিন অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় (২০২৪) রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর লাভ-লোকসান সম্পর্কিত এসব তথ্য তুলে ধরা হবে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, সরকারি ৪৯টি সংস্থার মধ্যে লোকসান করেছে ১০টি। আর মুনাফায় রয়েছে ৩৯টি প্রতিষ্ঠান। সামগ্রিকভাবে এবার পাঁচ হাজার ৯৯০ কোটি টাকার লোকসানে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো, গত অর্থবছর যেখানে পুরো খাতে সামগ্রিকভাবে মুনাফা ছিল ১৩৮ কোটি টাকা। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে মুনাফা হয়েছিল ১৫ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। এর আগে সর্বশেষ ২০১২-১৩ অর্থবছরে পুরো খাত লোকসান করেছিল। ওই অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।